ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, কিন্তু কেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৩
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৫৯
Thumbnail image
মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফর করে জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বছরের নভেম্বরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের আগেই একের পর এক মন্তব্য করে বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন আলোচিত এই নেতা।

সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এমন আগ্রহের বাস্তব ভিত্তি রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) তাঁর ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ডে গিয়ে এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আজ বুধবার সিএনএনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটি বিক্রির জন্য নয়। তবে ট্রাম্প জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড সফরের পর তাঁর বাবার ইচ্ছা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেই গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গত ডিসেম্বরে সেই পরিকল্পনাই পুনরুজ্জীবিত করেছেন তিনি এবং এটিকে ‘খুবই প্রয়োজনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার ট্রাম্প জুনিয়র যেদিন গ্রিনল্যান্ড সফর করেন, সেদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা উভয়ই মার্কিন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটিকে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম প্রণালি এবং গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্য জলপথ এই অঞ্চলকে কৌশলগতভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

আরেকটি বিষয় হলো—গ্রিনল্যান্ডে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার ট্রাম্পের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশাল এই দ্বীপে রয়েছে তেল, গ্যাস এবং বিরল খনিজ পদার্থ। এসব খনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ি, উন্নত ব্যাটারি, উইন্ড টারবাইন এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বে বিরল খনিজ পদার্থের উৎপাদনে বর্তমানে চীনের আধিপত্য রয়েছে। ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টারা চীনের এই প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রিনল্যান্ডের সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি সম্ভাব্য সমাধান।

সিএনএন জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলে যাওয়ার ফলে গ্রিনল্যান্ডে নতুন জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তন পরিবেশগত ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। বরফ গলে যাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণকে সহজ করবে, এমন ধারণা করা হলেও জলবায়ু পরিবর্তন এই সম্পদগুলোর প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এদিকে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক উভয়ই ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে অ্যাগেদে বলেছেন, ‘আমরা বিক্রির জন্য নই এবং কখনোই বিক্রি হব না।’

ডেনমার্কের সাম্প্রতিক সামরিক খরচ বৃদ্ধি এবং রাজকীয় প্রতীক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট নেতৃত্বাধীন সরকার ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার জন্য চাপ দিচ্ছে।

গ্রিনল্যান্ড এখনো ডেনমার্কের বার্ষিক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক অনুদানের প্রস্তাব দিলে তা গ্রিনল্যান্ডের জন্য একটি নতুন ধরনের সম্পর্কের সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে গ্রিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কুপিক ভি ক্লেইস্ট এই ধরনের কোনো সম্পর্কের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনাটি কত দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তা এখনো অস্পষ্ট। এটি শুধু হুমকি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল নাকি আসলেই ক্রয়ের ইচ্ছা, তা বোঝা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত