চট্টগ্রামের পাহাড়

নাগিনে শেষ ছোবল বিএনপি নেতাদের

  • ১০ একর জায়গাজুড়ে থাকা পাহাড় বর্তমানে ২ একরে দাঁড়িয়েছে।
  • কৌশল হিসেবে কলাগাছ রোপণ করে জায়গাটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
  • এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: পরিবেশ অধিদপ্তর
সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম 
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ৪৭
Thumbnail image
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে নাগিন পাহাড়। গত শনিবার অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে একের পর এক টিলা নিয়ে চট্টগ্রামের নাগিন পাহাড়। বছরের পর বছর এই পাহাড়ের ওপর এক্সকাভেটর ও কোদালের কোপ পড়ার পর এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সরকারের সময়ই ঐতিহ্যবাহী এ পাহাড় কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে পাহাড়ের সামান্য যে অংশটি দাঁড়িয়ে আছে, তাতে চোখ পড়েছে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার। রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে সমতল করে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

পরিবেশকর্মী মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, একসময় ঐতিহ্যবাহী নাগিন পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে প্রাণ ভরে যেত। এখন এসব আর নেই। পাহাড়ের সঙ্গে পাহাড় লাগানো এই নাগিন পাহাড় একসময় ২০-২২ কানি জায়গাজুড়ে ছিল। ভূমিদস্যুরা বিভিন্ন সময় পাহাড়টি কেটে সাবাড় করেছে। এখানে বর্তমানে ৪টি পাহাড় মিলিয়ে এই নাগিন পাহাড়ের আয়তন হবে চার কানির মতো। নাগিন পাহাড় নিশ্চিহ্ন হলে এখানে এই নামে কিছু ছিল, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখে মুখে জানতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আসলে পাহাড়ে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বন্ধ না হলে এভাবে একের পর এক পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এগুলোর সুবিধা পাওয়ায় লোকজন পাহাড় কেটে ঘর তুলছে। সেখানে বসতি করছে।’

গত শুক্রবার রাতে নাগিন পাহাড়ের ওপর সর্বশেষ এক্সকাভেটর ও কোদালের কোপ পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়টির একটি বড় অংশ কেটে ফেলেছে। গত বছর পাহাড় কাটা নিষেধাজ্ঞার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জেলা প্রশাসন যে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে, তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে ভোর হওয়ার আগেই পাহাড় কাটার বিষয়টি যাতে বুঝতে না পারে, সে জন্য কৌশল হিসেবে কলাগাছ রোপণ করে জায়গাটি ঘেরাও করে রাখা হয়।

এদিকে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে গত শনিবার সকালে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল অভিযান চালায়।

অভিযানে যাওয়া চট্টগ্রামের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, ‘অভিযানে গিয়ে সেখানে পাহাড় কাটার আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু পাহাড় কাটায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে পাহাড় কাটার জন্য দুটি বেড়ার ঘর তোলা হয়েছিল, সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি নিয়মিত মামলা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আজম উদ্দিনের নেতৃত্বে এই পাহাড় কাটা হয়েছে। তাঁকে সহায়তা করছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানা বিএনপির সহসভাপতি মকবুল হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বায়েজিদ থানার যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সুমন। বিএনপির নেতা সৈয়দ আজম উদ্দিন জায়গার মালিক হলেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আজম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনো পাহাড় কাটায় যুক্ত ছিলাম না। আমি জায়গার মালিকও না। এই ধরনের অভিযোগ মিথ্যা। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে, সেখানে আমাদের গ্রিনভ্যালি নামে একটি আবাসিক এলাকা রয়েছে। আমিও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় এখানে কোনো কিছু হলে আমার ওপর দোষারোপ করা হয়। আসলে এখানে ভিন্ন ভিন্ন প্লটের ভিন্ন ভিন্ন মালিক। তাঁদের হয়তো কেউ এটা করে থাকতে পারেন।’ অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের আমি চিনি। এরা আমার রাজনৈতিক কর্মী।’

এর আগে গত এপ্রিলে নাগিন পাহাড় কাটার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি পাহাড় কাটার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলার পরও সুযোগ বুঝে চক্রটি আবারও পাহাড় কেটেছিল। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন ও গ্রিনভ্যালি নামে আবাসিক এলাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী নাগিন পাহাড় ৬৬ প্রভাবশালীর দখলে জানিয়ে ২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি তালিকা করেছিল। তখন তালিকা ধরে অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি করা হয়েছে জরিমানাও। কিন্তু এরপরও থামেনি পাহাড় কাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যে, এই পর্যন্ত অর্ধশতের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। পাহাড়খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা বিভিন্ন সময় পার পেয়ে যাচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাহার উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামসুদ্দিনসহ তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা পাহাড় কেটে আসছিলেন। এখন বিএনপি নেতা-কর্মীরা কাটছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রেডিমেড ব্লেজারে বাজার মাত

বাসচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, লাশ উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে চান সুজান হল

বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান-জার্মানির আদলে গাজাকেও গড়ার আহ্বান মাস্কের

স্মার্টফোনের যুগ শেষ হচ্ছে দ্রুতই, নতুন যে বিকল্প দেখালেন জাকারবার্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত