প্রযুক্তি সচেতনতা জরুরি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭: ৪২

সরকার পরিবর্তনের ঘটনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কিছু প্রতারক চক্র দুস্থ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার হওয়া অভিযোগকারীরা এখন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে এ থেকে পরিত্রাণের আকুতি জানাচ্ছেন। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় প্রায় দুই হাজার লোকের টাকা প্রতারকেরা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার ধরনে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রতারকেরা ভুক্তভোগীদের বোকা বানিয়ে বলেছে, ‘আমি সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা বলছি। সরকার পরিবর্তনের কারণে আপনার নগদ অ্যাকাউন্টে পিনকোড সমস্যাজনিত কারণে টাকা যাচ্ছে না। তাই টাকা পাঠানোর জন্য আপনার গোপন পিনকোডটা লাগবে।’ এদিকে ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে প্রতারকদের কাছে নিজের পিনকোড দিয়ে দিয়েছেন। এরপর প্রতারকেরা তাঁদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিগত সরকারের সময়ে গ্রহণ করা ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি’র আওতায় এ উপজেলায় ২৯ হাজার ৯৭৭ জন ভাতা পেয়ে থাকেন। এই কর্মসূচির আওতায় আছেন বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর বিশেষ গোষ্ঠী ও সমতল জাতিগোষ্ঠী। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এসব ভাতাভোগীকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নগদ, বিকাশ, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ভাতা দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস পরপর ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত মোবাইলে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা চলে যায়। পরে তাঁরা তাঁদের সুবিধামতো টাকা তুলে নেন।

ক্রমাগত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে আমাদের জীবনযাপন সহজতর হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক জটিল কাজ সহজে করা সম্ভব হচ্ছে। জগতের প্রতিটি আবিষ্কারের ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। তবে প্রযুক্তির খারাপ দিকটাকেই কাজে লাগায় ও ভালো দিকটাকে নষ্ট করে এই সমাজের কিছু বিপথগামী ব্যক্তি। চৌদ্দগ্রামের ঘটনাই তার বড় প্রমাণ।

বিগত সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ৫ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই প্রকল্প গ্রহণের ফলে দেশের লাখ লাখ দুস্থ ও অসহায় মানুষ এখনো উপকার পাচ্ছেন। কিন্তু কিছু প্রতারকের কারণে অসহায় মানুষ তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা দেশে নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা জায়গায় এ রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে ঘটনাগুলো রোধ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন অ্যাপ এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদ দিয়ে প্রতারকদের ধরা কি অসম্ভব? আর একটা ব্যাপার হলো, সরকারিভাবে যদি উপকারভোগীদের আগে সচেতন করা হতো, তাহলে এই সরল মানুষগুলো প্রতারিত হতেন না।

এখন সময় এসেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার। ভাতাভোগীদের জন্য সুরক্ষিত ও সহজ ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করতে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত। পাশাপাশি প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন প্রতারকদের হাতে বারবার ভূলুণ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত