ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

  • চাপানো সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে গভর্নরকে চিঠি।
  • নীতিমালা সংশোধন বা বাতিলের সিদ্ধান্ত কমিটির সুপারিশের পর: মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যদি নতুন নির্দেশনা আসে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা: এফআইডি
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৩৮
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ১১
ফাইল ছবি

ব্যাংকিং খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দীর্ঘদিনের প্রথা। তবে এবার নতুন নীতিমালায় আরোপিত কঠোর শর্ত—ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ডিগ্রি ও গবেষণাপত্র প্রকাশের বাধ্যবাধকতা—সরকারি ব্যাংকের ২৫৮ কর্মকর্তার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

এই নতুন শর্ত শুধু কর্মকর্তাদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করেনি; বরং ব্যাংকিং খাতে শুরু করেছে তীব্র বিতর্ক। ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা এই নীতিমালাকে ‘বাস্তবতাবর্জিত ও বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

নীতিমালার এই বেড়াজাল ব্যাংকিং কার্যক্রম ও পেশাদারত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে?

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) থেকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতির জন্য ২৫৮ জনের প্যানেল চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ৪ নভেম্বর থেকে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হয়েছে, যা ২৭ নভেম্বর শেষ হবে। এর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করা নীতিমালায় ব্যাংকিং ডিপ্লোমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেশাগত মাস্টার্স এবং গবেষণা-সংক্রান্ত নতুন নিয়ম চালু করা হয়। এতে নতুন নীতিমালায় জিএম পদে পদোন্নতির জন্য প্রার্থীদের ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুটি পর্ব পাস করা, দুই বছরের পেশাগত মাস্টার্স সম্পন্ন করা এবং গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এখন আইবিবির আরোপিত এসব শর্ত নিয়েই বড় আপত্তি তুলেছেন পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা। তাদের একটি বড় অংশ মনে করছে, এসব শর্ত কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করবে এবং অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করবে।

পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মধ্যে একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, এই নতুন শর্ত বাস্তবায়ন হলে জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতা এবং মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে না। এতে ব্যাংকিং খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে পদোন্নতির নীতিমালা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন এফআইডির অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংকিং অনুবিভাগ) বদরে মুনির ফেরদৌস। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতির জন্য সরকারী ব্যাংকের ২৫৮ জন কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে ভাইভার জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান নীতিমালার ভিত্তিতেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন এলে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী পদোন্নতির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, পদোন্নতির বর্তমান প্রক্রিয়ায় কিছুটা স্থিতিশীলতা থাকলেও নীতিমালার পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

যদিও ব্যাংকারদের এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (আইবিবি) মহাসচিব লাইলা বিলকিস আরা। একই সঙ্গে নতুন শর্তারোপের পক্ষে সাফাই গেয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাস্তবতার আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাস পরিবর্তন এবং পরীক্ষার পদ্ধতিতে উন্নয়ন আনা হয়েছে। ফলে পাসের হারও বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পরিবর্তন দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক, তাই এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমীচীন নয়।’

অন্যদিকে, ক্ষুব্ধ ব্যাংকারদের মতে, ‘এটি একটি বৈষম্যমূলক নীতি।’ তাঁদের দাবি, বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যাংকারদের ওপর ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন নেই। এ ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বাস্তব পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পেশাদারত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য আইবিবির কাউন্সিলের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এসব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেন।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘ব্যাংকারদের দাবি যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পেলে নীতিমালা সংশোধন বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত