‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূরণ হলো। সামগ্রিকভাবে এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
এ সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য আছে। একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বিদায়ের পরে দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল, একধরনের আধা নৈরাজ্যিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল আর মানুষের মধ্যে বিপুল প্রত্যাশা ছিল। এ সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং ১০০ দিন অতিবাহিত করাটা একটা সাফল্য বলা উচিত।
এ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আছে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার এটা একেবারে তলানিতে নিয়ে গিয়েছিল। সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য এবং অর্থনীতির স্বাভাবিক ধারা সচল করার ক্ষেত্রে তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা আশাব্যঞ্জক। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণটা ক্রমেই বাড়ছে। রিজার্ভে হাত না দিয়ে একসঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। তারপর বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছে না। প্রধান স্টেকহোল্ডার হলো পার্টিগুলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পার্টিগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। সেটা হচ্ছে না। এ ছাড়া অতীত সরকারের যাঁরা টাকা পাচার, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে বিচারের যে উদ্যোগ, সেটা জনপ্রত্যাশিত।
আর দুর্বলতা ও ঘাটতিরও বেশ কিছু ব্যাপার আছে। সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণের পরেও বাজার পরিস্থিতি বেসামাল। বাজার এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিন মাসেও তারা কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের এখনো লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। এ পরিস্থিতি সরকার সামাল দিতে পারছে না। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে আছে। সরকারি কোনো উদ্যোগই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না। অনেক পণ্যের শুল্ক কমানোর পরেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি।
এ ছাড়া জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তির জায়গাগুলোতেও দুশ্চিন্তার ব্যাপার আছে। প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকেই পেশাদারত্বের জায়গায় আনা যায়নি। নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো রোডম্যাপ না দেওয়াটা তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। আমি মনে করি, এসব হলো সরকারের দুর্বলতার দিক।
এ সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে তখন আপনারা কী করবেন?
এ সরকারের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। কারণ, এটি হলো অন্তর্বর্তী সরকার। একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে উচ্ছেদ করার পর নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা উচিত। সুতরাং তাদের একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত থাকাটা স্বাভাবিক। যদি রাজনৈতিক দল এবং জনগণের কাছে মনে হয় তারা অযৌক্তিক সময় নিচ্ছে এবং কোনো না কোনোভাবে তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, তখন প্রশ্ন উঠবে তাদের কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য আছে কি না। সমালোচনার মুখে পড়বে। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট এ সরকারের নেই। এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার না। এ সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে, তবে আমরা এ সরকার গঠন করিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন, ছাত্র-জনতা তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন দিয়েছে, তারা যেন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে একটা নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবে। সেদিক থেকে যদি কোনো ব্যত্যয় দেখা দেয়, আশঙ্কাটা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ বা বৈরিতার সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। যেটা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না।
আমরা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি এবং সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছি। কারণ এ সরকার ব্যর্থ হোক, তা আমরা দেখতে চাই না। কিন্তু সরকারের কারও কারও মধ্যে যদি উচ্চাশা কাজ করে, তাদের অন্য কোনো অ্যাজেন্ডা থাকে, তাহলে কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমি আশা করব, এ সরকারে অনেক দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ মানুষ আছেন, তাঁরা কোনোভাবে যেন অন্য অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন না করেন।
রাষ্ট্রে বহু চিন্তা থাকবে। সরকারের ভূমিকা হবে সব ধরনের চিন্তাগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন করা।
আপনাদের দল হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ছিল। বিএনপির সঙ্গে এখন আপনাদের সম্পর্কটা কী রকম?
আমরা মানে গণতন্ত্র মঞ্চ এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন। সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন বিএনপির সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ আছে, সাধারণভাবে বোঝাপড়ার জায়গাটা আছে। কারণ, বিএনপির ৩১ দফা তো আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ফল। সেটা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বোঝাপড়ার জায়গাটা আছে। বিএনপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আলাদা দল আর গণতন্ত্র মঞ্চ হলো আলাদা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিএনপি তাদের মতো করে কাজ করছে। তবে কিছু প্রশ্নে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য যেমন আছে, তেমনি ভিন্নতাও আছে। বিএনপির সঙ্গে এখন মোটাদাগে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক আছে।
বিগত হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকার কি এর বাইরে আছে?
পুরোনো ফ্যাসিবাদী সরকারের যাঁরা প্রশাসনিক সহযোগী ছিলেন, তাঁদের অপসারণ করা তো আমাদের আন্দোলনের একটা দাবি ছিল। আর কিছু জায়গায় গত ১৫ বছরে যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, পদায়ন বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের এখন আবার পদায়ন করা যৌক্তিক মনে করি। কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে।
সরকারকে তো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গতি ফেরাতে হবে। সরকারের কাজ করার জন্য নতুনভাবে পদায়ন করা জরুরি ছিল। তা না হলে তো সরকার চলতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অনিয়ম হতে পারে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার রাজনীতি দ্বারাও প্রভাবিত হতে পারে। সেসবের কিছু কথা আমরাও শুনতে পাচ্ছি। সবই যে
অমূলক, সেটা অস্বীকার করছি না। এ সরকারের চরিত্র হলো নির্দলীয় এবং অন্তর্বর্তী। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতি থাকার কথা না। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ পালন করার কথা নয়। এটা যদি তারা করে থাকে, তাহলে তাদের একধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে। সরকার যদি নিজেই বিতর্কিত হয়ে যায়, তাহলে সামনের নির্বাচনও বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের জন্য কী করা উচিত?
প্রথমত, যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা সেই দায়িত্বের জন্য নিশ্চিতভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। এটা আসলে তাঁদের কাজ না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। মানে তাঁরা এই ক্ষেত্রের লোক নন। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের পছন্দের জায়গা থেকে তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন।
রাষ্ট্র একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এটা চালাতে গেলে একটা ‘পলিটিক্যাল অথরিটি’ লাগে। তবে এই অভ্যুত্থান তাদের একটা নৈতিক ‘অথরিটি’ দিয়েছে। রাজনৈতিক বৈধতাও দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে শক্তির পাশাপাশি সামাজিক ভিত্তি থাকা দরকার পড়ে। কিন্তু এ সরকারের তো রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি নেই। তবে তাদের প্রতি দেশের মানুষের সমর্থন আছে। এ কারণে হয়তো আমাদের একটা দুর্বল সরকার নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। তাই এ সরকারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তাদের কাছে এত প্রত্যাশা করাও উচিত হবে না। আগেও বলেছি, এ সরকার দীর্ঘমেয়াদি থাকলে মানুষের অসন্তোষ বাড়ার আশঙ্কা আছে। মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ কিন্তু দানা বাঁধতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূরণ হলো। সামগ্রিকভাবে এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
এ সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য আছে। একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বিদায়ের পরে দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল, একধরনের আধা নৈরাজ্যিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল আর মানুষের মধ্যে বিপুল প্রত্যাশা ছিল। এ সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং ১০০ দিন অতিবাহিত করাটা একটা সাফল্য বলা উচিত।
এ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আছে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার এটা একেবারে তলানিতে নিয়ে গিয়েছিল। সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য এবং অর্থনীতির স্বাভাবিক ধারা সচল করার ক্ষেত্রে তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা আশাব্যঞ্জক। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণটা ক্রমেই বাড়ছে। রিজার্ভে হাত না দিয়ে একসঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। তারপর বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছে না। প্রধান স্টেকহোল্ডার হলো পার্টিগুলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পার্টিগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। সেটা হচ্ছে না। এ ছাড়া অতীত সরকারের যাঁরা টাকা পাচার, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে বিচারের যে উদ্যোগ, সেটা জনপ্রত্যাশিত।
আর দুর্বলতা ও ঘাটতিরও বেশ কিছু ব্যাপার আছে। সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণের পরেও বাজার পরিস্থিতি বেসামাল। বাজার এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিন মাসেও তারা কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের এখনো লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। এ পরিস্থিতি সরকার সামাল দিতে পারছে না। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে আছে। সরকারি কোনো উদ্যোগই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না। অনেক পণ্যের শুল্ক কমানোর পরেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি।
এ ছাড়া জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তির জায়গাগুলোতেও দুশ্চিন্তার ব্যাপার আছে। প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকেই পেশাদারত্বের জায়গায় আনা যায়নি। নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো রোডম্যাপ না দেওয়াটা তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। আমি মনে করি, এসব হলো সরকারের দুর্বলতার দিক।
এ সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে তখন আপনারা কী করবেন?
এ সরকারের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। কারণ, এটি হলো অন্তর্বর্তী সরকার। একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে উচ্ছেদ করার পর নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা উচিত। সুতরাং তাদের একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত থাকাটা স্বাভাবিক। যদি রাজনৈতিক দল এবং জনগণের কাছে মনে হয় তারা অযৌক্তিক সময় নিচ্ছে এবং কোনো না কোনোভাবে তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, তখন প্রশ্ন উঠবে তাদের কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য আছে কি না। সমালোচনার মুখে পড়বে। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট এ সরকারের নেই। এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার না। এ সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে, তবে আমরা এ সরকার গঠন করিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন, ছাত্র-জনতা তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন দিয়েছে, তারা যেন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে একটা নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবে। সেদিক থেকে যদি কোনো ব্যত্যয় দেখা দেয়, আশঙ্কাটা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ বা বৈরিতার সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। যেটা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না।
আমরা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি এবং সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছি। কারণ এ সরকার ব্যর্থ হোক, তা আমরা দেখতে চাই না। কিন্তু সরকারের কারও কারও মধ্যে যদি উচ্চাশা কাজ করে, তাদের অন্য কোনো অ্যাজেন্ডা থাকে, তাহলে কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমি আশা করব, এ সরকারে অনেক দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ মানুষ আছেন, তাঁরা কোনোভাবে যেন অন্য অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন না করেন।
রাষ্ট্রে বহু চিন্তা থাকবে। সরকারের ভূমিকা হবে সব ধরনের চিন্তাগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন করা।
আপনাদের দল হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ছিল। বিএনপির সঙ্গে এখন আপনাদের সম্পর্কটা কী রকম?
আমরা মানে গণতন্ত্র মঞ্চ এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন। সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন বিএনপির সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ আছে, সাধারণভাবে বোঝাপড়ার জায়গাটা আছে। কারণ, বিএনপির ৩১ দফা তো আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ফল। সেটা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বোঝাপড়ার জায়গাটা আছে। বিএনপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আলাদা দল আর গণতন্ত্র মঞ্চ হলো আলাদা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিএনপি তাদের মতো করে কাজ করছে। তবে কিছু প্রশ্নে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য যেমন আছে, তেমনি ভিন্নতাও আছে। বিএনপির সঙ্গে এখন মোটাদাগে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক আছে।
বিগত হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকার কি এর বাইরে আছে?
পুরোনো ফ্যাসিবাদী সরকারের যাঁরা প্রশাসনিক সহযোগী ছিলেন, তাঁদের অপসারণ করা তো আমাদের আন্দোলনের একটা দাবি ছিল। আর কিছু জায়গায় গত ১৫ বছরে যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, পদায়ন বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের এখন আবার পদায়ন করা যৌক্তিক মনে করি। কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে।
সরকারকে তো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গতি ফেরাতে হবে। সরকারের কাজ করার জন্য নতুনভাবে পদায়ন করা জরুরি ছিল। তা না হলে তো সরকার চলতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অনিয়ম হতে পারে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার রাজনীতি দ্বারাও প্রভাবিত হতে পারে। সেসবের কিছু কথা আমরাও শুনতে পাচ্ছি। সবই যে
অমূলক, সেটা অস্বীকার করছি না। এ সরকারের চরিত্র হলো নির্দলীয় এবং অন্তর্বর্তী। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতি থাকার কথা না। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ পালন করার কথা নয়। এটা যদি তারা করে থাকে, তাহলে তাদের একধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে। সরকার যদি নিজেই বিতর্কিত হয়ে যায়, তাহলে সামনের নির্বাচনও বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের জন্য কী করা উচিত?
প্রথমত, যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা সেই দায়িত্বের জন্য নিশ্চিতভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। এটা আসলে তাঁদের কাজ না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। মানে তাঁরা এই ক্ষেত্রের লোক নন। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের পছন্দের জায়গা থেকে তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন।
রাষ্ট্র একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এটা চালাতে গেলে একটা ‘পলিটিক্যাল অথরিটি’ লাগে। তবে এই অভ্যুত্থান তাদের একটা নৈতিক ‘অথরিটি’ দিয়েছে। রাজনৈতিক বৈধতাও দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে শক্তির পাশাপাশি সামাজিক ভিত্তি থাকা দরকার পড়ে। কিন্তু এ সরকারের তো রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি নেই। তবে তাদের প্রতি দেশের মানুষের সমর্থন আছে। এ কারণে হয়তো আমাদের একটা দুর্বল সরকার নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। তাই এ সরকারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তাদের কাছে এত প্রত্যাশা করাও উচিত হবে না। আগেও বলেছি, এ সরকার দীর্ঘমেয়াদি থাকলে মানুষের অসন্তোষ বাড়ার আশঙ্কা আছে। মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ কিন্তু দানা বাঁধতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’
১ দিন আগেতিন মাস পার হলো, আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের অধীনে আছি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল—সামাজিক সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে, আমাদের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা..
১ দিন আগেচট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনা এলাকায় যাওয়া-আসা করতে গেলে বোঝা যায় সেটি দুর্গম এলাকা। এ কারণেই সেখানে বসানো হয়েছিল ফাঁড়ি। কিন্তু ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলোয় যখন আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন নুরু আলম নুরু নামের এক সন্ত্রাসীও সে সুযোগ নেন। তিনি পুলিশের ফাঁড়ি দখল করে...
১ দিন আগেশেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায়
২ দিন আগে