সাঁতার না জানা কেউ হঠাৎ পানিতে পড়ে গেলে খড়কুটো ধরেই বাঁচার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার বেলায়ও কি তাই হয়েছে? এত দিন ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশকে ম্যানেজ করে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করার মতো যোগ্যতা আওয়ামী লীগের ছিল না।
এ কে এম শামসুদ্দিন
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায় সারিবদ্ধভাবে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়ার দৃশ্য আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাই। শত শত মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এক আদালত থেকে আরেক আদালতে দৌড়ানোর দৃশ্য দেখে আওয়ামী লীগ নেতারা যেমন হাসি-তামাশা করতেন; এখন হেলমেট পরা আওয়ামী লীগ নেতাদের আদালতপাড়ায় দেখে বিএনপির নেতারা নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ধানের সঙ্গে সঙ্গে জেলা-উপজেলা ও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এলাকায় কোনোরকমে টিকে আছেন।
৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে। যাঁদের ওপর ভরসা করে তিনি এত দিন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন, তাঁরা যখন আর কোনো ভরসা দিতে পারলেন না, তখন তিনি দেশত্যাগ করে নিজের জীবন বাঁচালেন। পেছনে পড়ে রইলেন তাঁর এত দিনের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। দেশত্যাগের আগে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের কোনো নির্দেশনাও দিয়ে যাননি। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে এখন চরম নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দলটি রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই এখনো উদ্বেগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দলের শীর্ষ নেতাসহ শেখ হাসিনার এভাবে চলে যাওয়া দলের তৃণমূল কর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। এ বিষয়ে বিবিসি নিউজ বাংলা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চমকপ্রদ কিছু বক্তব্যের উল্লেখ আছে, ‘নেত্রী যদি এভাবে দেশত্যাগ না করে দেশেই থেকে যেতেন, তাহলে পরিস্থিতি আজ অন্য রকম হতে পারত। ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা জিয়া তো দেশ ছেড়ে যাননি।
এমনকি এরশাদের মতো ব্যক্তিও দেশত্যাগ না করে কারাবরণ মেনে নিয়েছিলেন। এরশাদ জেলে বসেই তাঁর দলকে গুছিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছিলেন। অথচ নেত্রী তা না করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেন। যেসব শীর্ষস্থানীয় নেতার নির্দেশ মেনে আমরা যাঁরা গত ১৫ বছর রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছিলাম, আজ এই বিপর্যয়ের দিনে তাঁরা সবাই আমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দেশত্যাগ করলেন!’ বর্তমানে আওয়ামী লীগের ওপরের সারির কোনো নেতাই এখন দেশে নেই। মাঝের সারিরও কেউ নেই। নিচের সারির যে নেতাদের দলের নীতিনির্ধারকদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত, তাঁরাও বর্ডার ক্রস করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী শেখ পরিবারের কেউই এখন আর দেশের মাটিতে নেই। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের যেসব নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি, তাঁরা এখন মহাবিপদে আছেন।
আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। মামলায় জড়ানোর কারণে পুলিশ এখন তাঁদের খুঁজছে। অপর দিকে দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হাতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরাও এখন দেখামাত্রই তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। লোকজনের কাছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী পরিচয় দেওয়াই এখন বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে জিরো পয়েন্টে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের জড়ো হতে বলা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে বলা হয়েছিল, অপশাসন, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, মৌলবাদী শক্তির উত্থানের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আহ্বান করা হয়েছিল। ১০ নভেম্বরের ঠিক আগে শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। তাতে তিনি সমর্থকদের শেখ মুজিব এবং তাঁর কোনো ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন না করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবির প্ল্যাকার্ড বহন করতে নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের ছবি বহনকারী কাউকে বাধা দিলে তার ভিডিও কিংবা ছবি তুলতেও নির্দেশ দেন, যা ট্রাম্পের কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হবে। নানাবিধ কারণে আওয়ামী লীগের সেদিনের সমাবেশ আর হতে পারেনি।
বরং আওয়ামী লীগের যে কয়জন কর্মী সাহস করে সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য এবং অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন। এ নিয়ে কর্মীদের ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিদেশে নিরাপদে থেকে শীর্ষ নেতারা মাঠে মার খাওয়ার জন্য কর্মীদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া বক্তব্য এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘কোথায় এখন দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃবৃন্দ? স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি করার পর, দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড বিপদের মধ্যে ফেলে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আজকে যখন সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের ত্যাগী এবং নিবেদিত কর্মীরা প্রচণ্ড অত্যাচারের শিকার, তখন তারা নিজেরা দেশে না এসে বিদেশ থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্টাপাল্টা বক্তব্য এবং আহ্বান দিয়ে এইসব ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। এইসব ধান্দাবাজ, লোভী, দুর্নীতিবাজ নেতৃবৃন্দ কি মনে করে নিজেদের?’
অনেকেই বলছেন শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড নাকি ভুয়া। ‘এআই টেকনোলজি’ ব্যবহার করে শেখ হাসিনার ভয়েস বসিয়ে দিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মত ভিন্ন। যদি অডিও রেকর্ডটি শেখ হাসিনার না হয়েই থাকে, তাহলে ১০ নভেম্বর অডিও রেকর্ডে হাসিনা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবেই ট্রাম্পের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে লোকজন তৈরি হয়েছিল কীভাবে? হাসিনা বর্তমানে যাদের আশ্রয়ে আছেন, তারা যাতে কোনো প্রকার দোষারোপে না পড়ে, সে জন্যই এখন এআইয়ের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। ভারতের মাটিতে বসে হাসিনা রাজনৈতিক উসকানি দিচ্ছেন—এমন বদনাম যাতে তাদের না হয়। অথচ সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পরপরই ভারতীয় মিডিয়াগুলো ভিডিও দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আওয়ামী লীগ কর্মী উল্লেখ না করে, অন্তর্বর্তী সরকার ট্রাম্প সমর্থকদের সমাবেশ করতে দেয়নি বলে ব্যাপক প্রচার শুরু করে দেয়।
১০ নভেম্বর শেখ হাসিনার সমাবেশ আহ্বান করা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণও আছে। দলের এই ভঙ্গুর অবস্থায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যেখানে কোনো নেতাই দেশে উপস্থিত নেই। মামলা ও হামলার কারণে মাঠপর্যায়ের সব নেতা-কর্মী যেখানে ঘরছাড়া, দেশের পরিস্থিতি যেখানে আওয়ামী লীগ রাজনীতির অনুকূলে নেই, সেখানে ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার পরপরই হুট করে এমন একটা সমাবেশ ডাকার পেছনে শেখ হাসিনার নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশের অনেকেই শেখ হাসিনার এমন উদ্যোগকে ‘হাসিনার ট্রাম্প কার্ড ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিতও করেছেন। সেন্ট মার্টিনে সেনাঘাঁটি করতে দেয়নি বলে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে; এত দিন শেখ হাসিনা যে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছেন; রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য সেই যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পাওয়ার জন্য এখন তিনি অস্থির হয়ে পড়েছেন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে এর চেয়ে দৈন্য আর কী হতে পারে!
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদ্ভাব এবং ড. ইউনূসের প্রতি ট্রাম্পের কিছুটা বৈরী মনোভাব আছে বিবেচনায় রেখে শেখ হাসিনা হয়তো ভেবেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে এলে তাঁর জন্য মঙ্গলজনকই হবে। মোদিকে ব্যবহার করে ট্রাম্পকে যদি একবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি বোঝানো যায়, তাহলে তাঁর হয়তো দ্রুত দেশে ফেরার পথ খুলে যেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাসিনার পুনর্বাসনের বিষয়ে ভারতও কি তাই মনে করে? ট্রাম্পের জয়লাভের পর ভারতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে তো তাই মনে হয়। কলকাতার ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ কিংবা ‘দৈনিক বর্তমান’-এর মতো বিখ্যাত বাংলা পত্রিকার শিরোনাম দেখলে তো মনে হয়, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণার পরদিনই আনন্দবাজারের ৭ নভেম্বরের শিরোনাম ছিল ‘ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস’। দৈনিক বর্তমান ৮ নভেম্বরের সংখ্যায় শিরোনাম দিয়েছে, ‘আমেরিকায় পালাবদলে উদ্বেগ বাড়ছে ইউনূসের, ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশে ফেরার পথ সুগম হবে হাসিনার?’ তারা প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘...বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ‘হাসিনা পরিবার’ যাতে অংশ নিতে পারে, সেই চাপও পরোক্ষে দেওয়া হবে। অতএব মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর ভারতবিরোধী সরকার আপাতত যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।’
সাঁতার না জানা কেউ হঠাৎ পানিতে পড়ে গেলে খড়কুটো ধরেই বাঁচার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার বেলায়ও কি তাই হয়েছে? এত দিন ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশকে ম্যানেজ করে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করার মতো যোগ্যতা আওয়ামী লীগের ছিল না। গত ১৫ বছর নানাবিধ অপকর্মের ফলে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েও সেই ভারতেই আশ্রয় নিয়ে ভারতের সাহায্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। দেশবাসী বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না। আওয়ামী লীগকে দলীয় আদর্শে পুনর্গঠিত না করে পরের ওপর নির্ভর করে শেখ হাসিনা কত দূর যেতে পারবেন, ভবিষ্যতেই হয়তো বোঝা যাবে। তবে এভাবে আওয়ামী লীগকে পরাশ্রয়ী দলে পরিণত করে তিনি বেশি দূর এগোতে পারবেন বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দুটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই।
বিবিসি নিউজ বাংলার সেই প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফরিদপুরের একজন তৃণমূল কর্মী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ক্রিম খাইলো নেতারা, কোটি কোটি টাকা বানাইলো তারা; আর তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করতে হইতেছে আমাদের মতো তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের?’ আমার পরিচিত আত্মগোপনে থাকা ঢাকা জেলার এক মধ্যম সারির আওয়ামী লীগ নেতা একটি সুন্দর মন্তব্য করেছেন, ‘বিদেশে পালিয়ে না থেকে নেত্রীর দ্রুত দেশে ফিরে আসা উচিত। এভাবে বিদেশেই যদি থাকতে হয় তাহলে তারেক জিয়া আর তাঁর মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়? এত দিন তারেক জিয়াকে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হতে শেখ হাসিনাই তো গালাগাল করেছেন। এবার ওনার পালা। বিচারের মুখোমুখি হতে হলেও এখন শেখ হাসিনার দেশে ফেরা উচিত।’
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায় সারিবদ্ধভাবে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়ার দৃশ্য আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাই। শত শত মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এক আদালত থেকে আরেক আদালতে দৌড়ানোর দৃশ্য দেখে আওয়ামী লীগ নেতারা যেমন হাসি-তামাশা করতেন; এখন হেলমেট পরা আওয়ামী লীগ নেতাদের আদালতপাড়ায় দেখে বিএনপির নেতারা নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ধানের সঙ্গে সঙ্গে জেলা-উপজেলা ও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এলাকায় কোনোরকমে টিকে আছেন।
৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে। যাঁদের ওপর ভরসা করে তিনি এত দিন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন, তাঁরা যখন আর কোনো ভরসা দিতে পারলেন না, তখন তিনি দেশত্যাগ করে নিজের জীবন বাঁচালেন। পেছনে পড়ে রইলেন তাঁর এত দিনের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। দেশত্যাগের আগে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের কোনো নির্দেশনাও দিয়ে যাননি। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে এখন চরম নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দলটি রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই এখনো উদ্বেগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দলের শীর্ষ নেতাসহ শেখ হাসিনার এভাবে চলে যাওয়া দলের তৃণমূল কর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। এ বিষয়ে বিবিসি নিউজ বাংলা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চমকপ্রদ কিছু বক্তব্যের উল্লেখ আছে, ‘নেত্রী যদি এভাবে দেশত্যাগ না করে দেশেই থেকে যেতেন, তাহলে পরিস্থিতি আজ অন্য রকম হতে পারত। ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা জিয়া তো দেশ ছেড়ে যাননি।
এমনকি এরশাদের মতো ব্যক্তিও দেশত্যাগ না করে কারাবরণ মেনে নিয়েছিলেন। এরশাদ জেলে বসেই তাঁর দলকে গুছিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছিলেন। অথচ নেত্রী তা না করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেন। যেসব শীর্ষস্থানীয় নেতার নির্দেশ মেনে আমরা যাঁরা গত ১৫ বছর রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছিলাম, আজ এই বিপর্যয়ের দিনে তাঁরা সবাই আমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দেশত্যাগ করলেন!’ বর্তমানে আওয়ামী লীগের ওপরের সারির কোনো নেতাই এখন দেশে নেই। মাঝের সারিরও কেউ নেই। নিচের সারির যে নেতাদের দলের নীতিনির্ধারকদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত, তাঁরাও বর্ডার ক্রস করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী শেখ পরিবারের কেউই এখন আর দেশের মাটিতে নেই। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের যেসব নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি, তাঁরা এখন মহাবিপদে আছেন।
আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। মামলায় জড়ানোর কারণে পুলিশ এখন তাঁদের খুঁজছে। অপর দিকে দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হাতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরাও এখন দেখামাত্রই তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। লোকজনের কাছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী পরিচয় দেওয়াই এখন বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে জিরো পয়েন্টে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের জড়ো হতে বলা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে বলা হয়েছিল, অপশাসন, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, মৌলবাদী শক্তির উত্থানের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আহ্বান করা হয়েছিল। ১০ নভেম্বরের ঠিক আগে শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। তাতে তিনি সমর্থকদের শেখ মুজিব এবং তাঁর কোনো ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন না করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবির প্ল্যাকার্ড বহন করতে নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের ছবি বহনকারী কাউকে বাধা দিলে তার ভিডিও কিংবা ছবি তুলতেও নির্দেশ দেন, যা ট্রাম্পের কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হবে। নানাবিধ কারণে আওয়ামী লীগের সেদিনের সমাবেশ আর হতে পারেনি।
বরং আওয়ামী লীগের যে কয়জন কর্মী সাহস করে সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য এবং অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন। এ নিয়ে কর্মীদের ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিদেশে নিরাপদে থেকে শীর্ষ নেতারা মাঠে মার খাওয়ার জন্য কর্মীদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া বক্তব্য এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘কোথায় এখন দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃবৃন্দ? স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি করার পর, দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড বিপদের মধ্যে ফেলে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আজকে যখন সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের ত্যাগী এবং নিবেদিত কর্মীরা প্রচণ্ড অত্যাচারের শিকার, তখন তারা নিজেরা দেশে না এসে বিদেশ থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্টাপাল্টা বক্তব্য এবং আহ্বান দিয়ে এইসব ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। এইসব ধান্দাবাজ, লোভী, দুর্নীতিবাজ নেতৃবৃন্দ কি মনে করে নিজেদের?’
অনেকেই বলছেন শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড নাকি ভুয়া। ‘এআই টেকনোলজি’ ব্যবহার করে শেখ হাসিনার ভয়েস বসিয়ে দিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মত ভিন্ন। যদি অডিও রেকর্ডটি শেখ হাসিনার না হয়েই থাকে, তাহলে ১০ নভেম্বর অডিও রেকর্ডে হাসিনা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবেই ট্রাম্পের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে লোকজন তৈরি হয়েছিল কীভাবে? হাসিনা বর্তমানে যাদের আশ্রয়ে আছেন, তারা যাতে কোনো প্রকার দোষারোপে না পড়ে, সে জন্যই এখন এআইয়ের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। ভারতের মাটিতে বসে হাসিনা রাজনৈতিক উসকানি দিচ্ছেন—এমন বদনাম যাতে তাদের না হয়। অথচ সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পরপরই ভারতীয় মিডিয়াগুলো ভিডিও দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আওয়ামী লীগ কর্মী উল্লেখ না করে, অন্তর্বর্তী সরকার ট্রাম্প সমর্থকদের সমাবেশ করতে দেয়নি বলে ব্যাপক প্রচার শুরু করে দেয়।
১০ নভেম্বর শেখ হাসিনার সমাবেশ আহ্বান করা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণও আছে। দলের এই ভঙ্গুর অবস্থায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যেখানে কোনো নেতাই দেশে উপস্থিত নেই। মামলা ও হামলার কারণে মাঠপর্যায়ের সব নেতা-কর্মী যেখানে ঘরছাড়া, দেশের পরিস্থিতি যেখানে আওয়ামী লীগ রাজনীতির অনুকূলে নেই, সেখানে ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার পরপরই হুট করে এমন একটা সমাবেশ ডাকার পেছনে শেখ হাসিনার নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশের অনেকেই শেখ হাসিনার এমন উদ্যোগকে ‘হাসিনার ট্রাম্প কার্ড ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিতও করেছেন। সেন্ট মার্টিনে সেনাঘাঁটি করতে দেয়নি বলে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে; এত দিন শেখ হাসিনা যে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছেন; রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য সেই যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পাওয়ার জন্য এখন তিনি অস্থির হয়ে পড়েছেন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে এর চেয়ে দৈন্য আর কী হতে পারে!
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদ্ভাব এবং ড. ইউনূসের প্রতি ট্রাম্পের কিছুটা বৈরী মনোভাব আছে বিবেচনায় রেখে শেখ হাসিনা হয়তো ভেবেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে এলে তাঁর জন্য মঙ্গলজনকই হবে। মোদিকে ব্যবহার করে ট্রাম্পকে যদি একবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি বোঝানো যায়, তাহলে তাঁর হয়তো দ্রুত দেশে ফেরার পথ খুলে যেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাসিনার পুনর্বাসনের বিষয়ে ভারতও কি তাই মনে করে? ট্রাম্পের জয়লাভের পর ভারতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে তো তাই মনে হয়। কলকাতার ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ কিংবা ‘দৈনিক বর্তমান’-এর মতো বিখ্যাত বাংলা পত্রিকার শিরোনাম দেখলে তো মনে হয়, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণার পরদিনই আনন্দবাজারের ৭ নভেম্বরের শিরোনাম ছিল ‘ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস’। দৈনিক বর্তমান ৮ নভেম্বরের সংখ্যায় শিরোনাম দিয়েছে, ‘আমেরিকায় পালাবদলে উদ্বেগ বাড়ছে ইউনূসের, ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশে ফেরার পথ সুগম হবে হাসিনার?’ তারা প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘...বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ‘হাসিনা পরিবার’ যাতে অংশ নিতে পারে, সেই চাপও পরোক্ষে দেওয়া হবে। অতএব মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর ভারতবিরোধী সরকার আপাতত যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।’
সাঁতার না জানা কেউ হঠাৎ পানিতে পড়ে গেলে খড়কুটো ধরেই বাঁচার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার বেলায়ও কি তাই হয়েছে? এত দিন ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশকে ম্যানেজ করে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করার মতো যোগ্যতা আওয়ামী লীগের ছিল না। গত ১৫ বছর নানাবিধ অপকর্মের ফলে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েও সেই ভারতেই আশ্রয় নিয়ে ভারতের সাহায্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। দেশবাসী বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না। আওয়ামী লীগকে দলীয় আদর্শে পুনর্গঠিত না করে পরের ওপর নির্ভর করে শেখ হাসিনা কত দূর যেতে পারবেন, ভবিষ্যতেই হয়তো বোঝা যাবে। তবে এভাবে আওয়ামী লীগকে পরাশ্রয়ী দলে পরিণত করে তিনি বেশি দূর এগোতে পারবেন বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দুটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই।
বিবিসি নিউজ বাংলার সেই প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফরিদপুরের একজন তৃণমূল কর্মী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ক্রিম খাইলো নেতারা, কোটি কোটি টাকা বানাইলো তারা; আর তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করতে হইতেছে আমাদের মতো তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের?’ আমার পরিচিত আত্মগোপনে থাকা ঢাকা জেলার এক মধ্যম সারির আওয়ামী লীগ নেতা একটি সুন্দর মন্তব্য করেছেন, ‘বিদেশে পালিয়ে না থেকে নেত্রীর দ্রুত দেশে ফিরে আসা উচিত। এভাবে বিদেশেই যদি থাকতে হয় তাহলে তারেক জিয়া আর তাঁর মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়? এত দিন তারেক জিয়াকে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হতে শেখ হাসিনাই তো গালাগাল করেছেন। এবার ওনার পালা। বিচারের মুখোমুখি হতে হলেও এখন শেখ হাসিনার দেশে ফেরা উচিত।’
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে নীতিনির্ধারণী একটি বিষয় অগ্রাধিকার বিবেচনার জন্য অপেক্ষমাণ আছে, আর তা হলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন করা, নাকি যথাশিগগির নির্বাচন আয়োজন করা? অনেক ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদের বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না।
৯ মিনিট আগেকিছু কিছু বিতর্ক তৈরি করা হয় সমসাময়িক বিষয় থেকে দৃষ্টি দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। পুরো পাকিস্তান আমলেই রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বিতর্ক জারি রাখা হয়েছিল। আমলাতন্ত্র আর সামরিক আমলাতন্ত্র মিলে পাকিস্তান নামক দেশটায় যে স্বৈরশাসন কায়েম করে রেখেছিল, সেদিকে যেন সচেতন মানুষের চোখ না যায়, সে অভিসন্ধি থেকেই রবীন্দ্রনাথ
১৪ মিনিট আগেএকটি কলা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। একটি সাধারণ কলা, যা নিলামে বিক্রি হলো ৭৪ কোটি টাকায়। এটি শিল্প, না কৌতুক, না সামাজিক শ্লেষ—নাকি তিনটির মিশেল? ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটালানের এই ‘কমেডিয়ান’ আমাদের শিল্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আর বাজারজাত সৃজনশীলতার প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
২৩ মিনিট আগে‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
১ দিন আগে