গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত ইসরায়েল, যুদ্ধবিরতির নতুন পরিকল্পনা

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৪০
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৪৬
Thumbnail image
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত এলাকা থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছেড়া পলিথিনে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাজার এক ছোট্ট শিশু। ছবি: আনাদোলু

গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির মাঝে অবস্থিত সীমারেখায় তেল আবিবের সেনা উপস্থিতি বজায় থাকবে। এমনই একটি নতুন পরিকল্পনা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জমা দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে, জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এতে।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-কুদস আল-আরাবি জানিয়েছে, ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনারত মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। যেখানে গাজা উপত্যকায় সম্ভাব্য জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের সময় ও পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে এবং এই বাফার জোন তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি করেছে। এর আগে, মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে ৩০০ মিটার এলাকাকে বাফার জোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সরাসরি উপস্থিতি না থাকলেও অনুপ্রবেশকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর বিষয়টির উল্লেখ ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আইডিএফ যেসব এলাকা থেকে সরে যাবে, তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে যে চুক্তির বর্তমান প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রথম দুই পর্যায়ে সব জিম্মি এবং চুক্তিকৃত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখনো আলোচনার অধীন বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের সংখ্যা এবং কঠোর শাস্তি ভোগকারীদের কোথায় ও কীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আগে তারা জানতে চায় কতজন জিম্মি জীবিত রয়েছেন। তবে, গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে মানবিক সহায়তা পরিচালনার বিষয়ে ইতিমধ্যেই সমঝোতা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।

এদিকে, গতকাল রোববার গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তাঁর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জিম্মি মুক্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনার দায়িত্বে থাকা দলকে দেওয়া নির্দেশনা তুলে ধরেছেন।

বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, যুক্তরাষ্ট্র কাতার ও মিসরের সঙ্গে যৌথভাবে গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে। গত সপ্তাহে কাতারে পুনরায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি আলোচনা শুরু করেছে ইসরায়েল ও হামাস।

ট্রাম্প এর আগে হামাসকে সতর্ক করে বলেছিলেন, যদি ২০ জানুয়ারি তাঁর শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে এর জন্য ‘চরম মূল্য দিতে হবে’। বাইডেনও চান, তাঁর প্রশাসন ক্ষমতায় থাকার সময়ের মধ্যেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়ে যাক।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর শুরু হয় গাজা যুদ্ধের। হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ২১০ জনের মৃত্যু হয়। একই দিনে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

চলমান এ অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বর মাসে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক নিরাপত্তামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত