অনলাইন ডেস্ক
প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনো মহাকাশযান অবতরণ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রচেষ্টায় সফল ভারত। কারণ ভারতের কিছুদিন পর একই এলাকায় মহাকাশযান লুনা-২৫ পাঠায় রাশিয়া। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাশিয়ার মহাকাশযান অবতরণের আগেই বিধ্বস্ত হয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠে। তাই এখন চাঁদে মহাকাশযান পাঠানো কেবল আর বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতা নয় একই সঙ্গে এটি মর্যাদার প্রতিযোগিতাও। পাশাপাশি অর্থের প্রতিযোগিতাও বটে।
আজ বুধবার ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা। এটি সফল হলে, এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের প্রথম সফল চন্দ্র মিশন। যা ভারতের মহাকাশ শিল্পের প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। বিপরীতে রুশ মহাকাশযান ধ্বংস হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির এই খাতে পুরো বিনিয়োগই জলে গিয়েছে।
তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে রাশিয়া এবং ভারতের মহাকাশযান পাঠানোর বিষয়টি যেন বিগত শতকের ৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার প্রতিযোগিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় বিষয়টি কেবল দেশের মর্যাদা এবং প্রভাব বিস্তারের হলেও এখন আর তা নয়। কারণ, মহাকাশকে ঘিরে এখন ব্যবসায় শুরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে এর বাড়তি গুরুত্বও রয়েছে। কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফ এবং জীবনধারণের উপযোগী অন্যান্য উপাদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যা চাঁদে মানব বসতি গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া এই সাফল্য মঙ্গলকে ঘিরে গবেষণাকেও বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
যা হোক, ভারতে মহাকাশ শিল্প খাত বেশ বিকশিত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদি এরই মধ্যে দেশটির মহাকাশযান উৎক্ষেপণের বিষয়টি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী দশকের মধ্যে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ অন্তত পাঁচগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে দেশটি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চন্দ্রযান-৩ সফল হলে ভারতে বিশ্বজুড়ে মহাকাশ শিল্পে স্বল্প ব্যয়ের জন্য প্রসিদ্ধি পাবে। কারণ, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এই মিশনের জন্য মাত্র ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছিল। বিপরীতে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তির অধিকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৫ সালে নির্ধারিত চন্দ্র মিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছে ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
কেবল ভারতের মহাকাশ শিল্পই যে প্রসিদ্ধি পাবে তাই নয়, এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার প্রোফাইলই আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারী হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ভারতের নয়া দিল্লির মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের পরামর্শক অজয় লিলি বলেন, ‘যে মুহূর্ত থেকে এই মিশন সফল হয়ে যাবে তখন থেকেই এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার প্রোফাইলও আগের তুলনায় অনেক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। ফলে বিশ্ববাসী যখন এই মিশনের দিকে নজর দেয় তখন তাঁরা কেবল ইসরোকে এককভাবে দেখে না, সমগ্র ভারতকে দেখে।’
এদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের গাদা গাদা নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়া চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, লুনা-২৫ এর পরবর্তী কোনো প্রকল্পে রাশিয়া পর্যাপ্ত অর্থ লগ্নি করতে পারবে না। এমনকি দেশটি লুনা-২৫ মিশনে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তাও প্রকাশ করেনি।
রাশিয়া অর্থ সংকটের কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই মহাকাশ গবেষণায় কম অর্থ বরাদ্দ করেছে এমনটাই জানালেন মস্কোভিত্তিক মহাকাশ বিশেষজ্ঞ ভাদিম লুকাশেভিচ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর মহাকাশ গবেষণায় ব্যয় ব্যবস্থাগতভাবে কমানো হয়েছে।’ তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার কারণে লুনা-২৫ এর মতো আরেকটি মহাকাশ মিশন পাঠানো রাশিয়ার জন্য ‘খুবই অসম্ভব’।
রাশিয় ২০২১ সাল পর্যন্ত নাসার সঙ্গে মিলে মহাকাশ গবেষণা এগিয়ে নিতে চেয়েছিল। সে সময় দেশটি ঘোষণা দিয়েছিল তাঁরা চীনের চন্দ্র মিশনের বদলে নাসার আর্টেমিস প্রকল্পে সহযোগিতা করবে। তবে এই বিষয়ে পরে আর বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি দেশটি। উল্লেখ্য, চীন ২০১৯ সালে প্রথমবারের চাঁদে মহাকাশযান পাঠায়। দেশটি আরও একাধিক মিশনের পরিকল্পনা করে রেখেছে। মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠা ইউরোকনসাল্টের অনুমান, চীন ২০২২ সালে মহাকাশ গবেষণায় ১২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে
এদিকে, রাশিয়া যেখানে এককভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে মহাকাশ গবেষণা চালায় সেখানে নাসা তথা যুক্তরাষ্ট্র সেটিকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সেই একই পরামর্শ তাঁরা ভারতেও দিয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, ভারত তার মহাকাশ শিল্পকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তরিত করতে চায়।
নাসার এই উদ্যোগের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সকে। প্রতিষ্ঠানটি স্টারশিপ রকেট বানাচ্ছে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য। এমনকি নাসার মহাকাশচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে পাঠাতে একটি মহাকাশ ফেরিও প্রস্তুত করছে। এ লক্ষ্যে স্পেসএক্স এবং নাসা ৩০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিও করেছে। এই চুক্তির বাইরেও চলতি বছরে ইলন মাস্ক স্টারশিপ রকেটের পেছনে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন বলে মাস্ক নিজেই জানিয়েছেন।
স্পেসএক্স ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে আরও একাধিক স্পেস ফার্ম রয়েছে। যার মধ্যে অ্যাস্ট্রোবটিক এবং ইনটিউটিভ মেশিনস উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিষ্ঠান দুটি চাঁদে পাঠানোর জন্য মহাকাশযান বানাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সেগুলোকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো হতে পারে।
এ ছাড়া, এক্সিওম এবং জেফ বেজোসের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনও মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি পরবর্তী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগ করেছে। গত শনিবারই এক্সিওম জানিয়েছে, তাঁরা সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ৩৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে।
তবে ব্যাপক বিনিয়োগ হলেও মহাকাশ গবেষণা এখনো নিশ্ছিদ্র হয়ে ওঠেনি, যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। যেমন, ভারত ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করলে সেটি ব্যর্থ হয়। বেসরকারি অর্থায়নে ইসরায়েলি একটি প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় একই বছরে। এমনকি চলতি বছরে জাপানের একটি উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে।
মহাকাশ গবেষণা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি উল্লেখ করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক বেথানি এলম্যান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, চাঁদে অবতরণ করা এখনো কঠিন।’ এলম্যান ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠানোর নাসার যে প্রকল্প তার সঙ্গে কাজ করছেন। এই মিশনও সেখানে পানি এবং বরফের সন্ধানে কাজ করবে। তাঁর মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁদে মিশন পাঠানোর অনেক চেষ্টাই হয়েছে কিন্তু এর বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি বলছেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁদ যেন মহাকাশযান খাদক হয়ে উঠছে।’
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যেসব দেশের কথা বলা হলো সেগুলোর অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। মূলত আর্থিক সক্ষমতার কারণেই দেশগুলো মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ করার পথে এগিয়ে গেছে। বিপরীতে সংকুচিত অর্থনীতির কারণে রাশিয়া সেই ক্ষেত্রে ব্যয় অনেকটাই কমিয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, মহাকাশ গবেষণা কেবল এখন আর মর্যাদা বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতার নয় বরং একই সঙ্গে আর্থিক সক্ষমতারও প্রতিযোগিতা।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনো মহাকাশযান অবতরণ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রচেষ্টায় সফল ভারত। কারণ ভারতের কিছুদিন পর একই এলাকায় মহাকাশযান লুনা-২৫ পাঠায় রাশিয়া। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাশিয়ার মহাকাশযান অবতরণের আগেই বিধ্বস্ত হয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠে। তাই এখন চাঁদে মহাকাশযান পাঠানো কেবল আর বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতা নয় একই সঙ্গে এটি মর্যাদার প্রতিযোগিতাও। পাশাপাশি অর্থের প্রতিযোগিতাও বটে।
আজ বুধবার ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা। এটি সফল হলে, এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের প্রথম সফল চন্দ্র মিশন। যা ভারতের মহাকাশ শিল্পের প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। বিপরীতে রুশ মহাকাশযান ধ্বংস হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির এই খাতে পুরো বিনিয়োগই জলে গিয়েছে।
তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে রাশিয়া এবং ভারতের মহাকাশযান পাঠানোর বিষয়টি যেন বিগত শতকের ৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার প্রতিযোগিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় বিষয়টি কেবল দেশের মর্যাদা এবং প্রভাব বিস্তারের হলেও এখন আর তা নয়। কারণ, মহাকাশকে ঘিরে এখন ব্যবসায় শুরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে এর বাড়তি গুরুত্বও রয়েছে। কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফ এবং জীবনধারণের উপযোগী অন্যান্য উপাদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যা চাঁদে মানব বসতি গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া এই সাফল্য মঙ্গলকে ঘিরে গবেষণাকেও বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
যা হোক, ভারতে মহাকাশ শিল্প খাত বেশ বিকশিত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদি এরই মধ্যে দেশটির মহাকাশযান উৎক্ষেপণের বিষয়টি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী দশকের মধ্যে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ অন্তত পাঁচগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে দেশটি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চন্দ্রযান-৩ সফল হলে ভারতে বিশ্বজুড়ে মহাকাশ শিল্পে স্বল্প ব্যয়ের জন্য প্রসিদ্ধি পাবে। কারণ, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এই মিশনের জন্য মাত্র ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছিল। বিপরীতে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তির অধিকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৫ সালে নির্ধারিত চন্দ্র মিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছে ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
কেবল ভারতের মহাকাশ শিল্পই যে প্রসিদ্ধি পাবে তাই নয়, এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার প্রোফাইলই আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারী হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ভারতের নয়া দিল্লির মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের পরামর্শক অজয় লিলি বলেন, ‘যে মুহূর্ত থেকে এই মিশন সফল হয়ে যাবে তখন থেকেই এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার প্রোফাইলও আগের তুলনায় অনেক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। ফলে বিশ্ববাসী যখন এই মিশনের দিকে নজর দেয় তখন তাঁরা কেবল ইসরোকে এককভাবে দেখে না, সমগ্র ভারতকে দেখে।’
এদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের গাদা গাদা নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়া চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, লুনা-২৫ এর পরবর্তী কোনো প্রকল্পে রাশিয়া পর্যাপ্ত অর্থ লগ্নি করতে পারবে না। এমনকি দেশটি লুনা-২৫ মিশনে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তাও প্রকাশ করেনি।
রাশিয়া অর্থ সংকটের কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই মহাকাশ গবেষণায় কম অর্থ বরাদ্দ করেছে এমনটাই জানালেন মস্কোভিত্তিক মহাকাশ বিশেষজ্ঞ ভাদিম লুকাশেভিচ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর মহাকাশ গবেষণায় ব্যয় ব্যবস্থাগতভাবে কমানো হয়েছে।’ তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার কারণে লুনা-২৫ এর মতো আরেকটি মহাকাশ মিশন পাঠানো রাশিয়ার জন্য ‘খুবই অসম্ভব’।
রাশিয় ২০২১ সাল পর্যন্ত নাসার সঙ্গে মিলে মহাকাশ গবেষণা এগিয়ে নিতে চেয়েছিল। সে সময় দেশটি ঘোষণা দিয়েছিল তাঁরা চীনের চন্দ্র মিশনের বদলে নাসার আর্টেমিস প্রকল্পে সহযোগিতা করবে। তবে এই বিষয়ে পরে আর বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি দেশটি। উল্লেখ্য, চীন ২০১৯ সালে প্রথমবারের চাঁদে মহাকাশযান পাঠায়। দেশটি আরও একাধিক মিশনের পরিকল্পনা করে রেখেছে। মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠা ইউরোকনসাল্টের অনুমান, চীন ২০২২ সালে মহাকাশ গবেষণায় ১২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে
এদিকে, রাশিয়া যেখানে এককভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে মহাকাশ গবেষণা চালায় সেখানে নাসা তথা যুক্তরাষ্ট্র সেটিকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সেই একই পরামর্শ তাঁরা ভারতেও দিয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, ভারত তার মহাকাশ শিল্পকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তরিত করতে চায়।
নাসার এই উদ্যোগের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সকে। প্রতিষ্ঠানটি স্টারশিপ রকেট বানাচ্ছে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য। এমনকি নাসার মহাকাশচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে পাঠাতে একটি মহাকাশ ফেরিও প্রস্তুত করছে। এ লক্ষ্যে স্পেসএক্স এবং নাসা ৩০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিও করেছে। এই চুক্তির বাইরেও চলতি বছরে ইলন মাস্ক স্টারশিপ রকেটের পেছনে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন বলে মাস্ক নিজেই জানিয়েছেন।
স্পেসএক্স ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে আরও একাধিক স্পেস ফার্ম রয়েছে। যার মধ্যে অ্যাস্ট্রোবটিক এবং ইনটিউটিভ মেশিনস উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিষ্ঠান দুটি চাঁদে পাঠানোর জন্য মহাকাশযান বানাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সেগুলোকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো হতে পারে।
এ ছাড়া, এক্সিওম এবং জেফ বেজোসের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনও মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি পরবর্তী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগ করেছে। গত শনিবারই এক্সিওম জানিয়েছে, তাঁরা সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ৩৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে।
তবে ব্যাপক বিনিয়োগ হলেও মহাকাশ গবেষণা এখনো নিশ্ছিদ্র হয়ে ওঠেনি, যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। যেমন, ভারত ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করলে সেটি ব্যর্থ হয়। বেসরকারি অর্থায়নে ইসরায়েলি একটি প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় একই বছরে। এমনকি চলতি বছরে জাপানের একটি উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে।
মহাকাশ গবেষণা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি উল্লেখ করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক বেথানি এলম্যান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, চাঁদে অবতরণ করা এখনো কঠিন।’ এলম্যান ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠানোর নাসার যে প্রকল্প তার সঙ্গে কাজ করছেন। এই মিশনও সেখানে পানি এবং বরফের সন্ধানে কাজ করবে। তাঁর মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁদে মিশন পাঠানোর অনেক চেষ্টাই হয়েছে কিন্তু এর বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি বলছেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁদ যেন মহাকাশযান খাদক হয়ে উঠছে।’
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যেসব দেশের কথা বলা হলো সেগুলোর অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। মূলত আর্থিক সক্ষমতার কারণেই দেশগুলো মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ করার পথে এগিয়ে গেছে। বিপরীতে সংকুচিত অর্থনীতির কারণে রাশিয়া সেই ক্ষেত্রে ব্যয় অনেকটাই কমিয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, মহাকাশ গবেষণা কেবল এখন আর মর্যাদা বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতার নয় বরং একই সঙ্গে আর্থিক সক্ষমতারও প্রতিযোগিতা।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৬ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে