শায়খ আহমাদুল্লাহ
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়। এখানে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের প্রতি কিছু পরামর্শমূলক প্রস্তাব দিয়েছেন খ্যাতিমান ইসলামি আলোচক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াজের উত্তম সময়
ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা
ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।
বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার
অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
আলোচক কেমন হবেন
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ
ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।
মাহফিল চলাকালীন করণীয়
মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।
মাহফিলের প্রচারনীতি
মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
আলোচকদের সম্মানী
আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।
হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা
মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াজের উত্তম সময়
ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা
ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।
বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার
অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
আলোচক কেমন হবেন
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ
ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।
মাহফিল চলাকালীন করণীয়
মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।
মাহফিলের প্রচারনীতি
মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
আলোচকদের সম্মানী
আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।
হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা
মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়। এখানে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের প্রতি কিছু পরামর্শমূলক প্রস্তাব দিয়েছেন খ্যাতিমান ইসলামি আলোচক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াজের উত্তম সময়
ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা
ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।
বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার
অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
আলোচক কেমন হবেন
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ
ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।
মাহফিল চলাকালীন করণীয়
মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।
মাহফিলের প্রচারনীতি
মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
আলোচকদের সম্মানী
আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।
হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা
মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।
ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য হওয়া চাই কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, সামাজিক অসংগতি এবং ত্রুটিবিচ্যুতি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দূর করার প্রয়াস চালানো, নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এর বিপরীতে অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ যেন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াজের উত্তম সময়
ওয়াজ মাহফিলের জন্য আদর্শ সময় হওয়া উচিত বাদ আসর থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তারপর মাহফিলস্থলে এশার সালাত আদায়ের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হলে সেটা হবে সব দিক থেকে সুন্নাহসম্মত ও যথার্থ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে যাওয়া পছন্দ করতেন এবং এশার পর আলাপচারিতা অপছন্দ করতেন। তাহাজ্জুদ ও ফজরের সালাত আদায়ের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বচ্ছতা
ওয়াজ মাহফিলের লক্ষ্যই যেখানে নৈতিকতার দীক্ষা দেওয়া, সেখানে মাহফিল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার অসততা বা অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অবশ্যকর্তব্য। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলে তা নিয়েই মাহফিল আয়োজন করা সুশৃঙ্খল মাহফিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গোঁজামিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাহফিল করার চেষ্টা ইসলাম অনুমোদন করে না।
বিদ্যুৎ ও মাইকের ব্যবহার
অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা মোটেও ঠিক হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে আশপাশের কোনো বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ও ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে মাহফিলের মাইক অনেক বেশি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত স্থাপন করার কারণে যদি অন্য ধর্মের মানুষের বিরক্তি কিংবা কোনো রোগী বা কারও কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। কারণ কাউকে ওয়াজ শুনতে বাধ্য করা কিংবা সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ও কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
আলোচক কেমন হবেন
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের কল্যাণ ও দায়িত্ববোধ থেকে ওয়াজ করতে চান এবং কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, বিনম্রভাবে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় আলোচনা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন—এমন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ আলেমদেরই দাওয়াত দেওয়া উচিত। ওয়াজের নামে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অযাচিত সমালোচনা, দৃষ্টিকটু আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করা, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি, বানোয়াট-ভিত্তিহীন উক্তি ও মন্তব্য মাহফিলের গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। আলোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ
ওয়াজ মাহফিলে শুধু বক্তা বক্তব্য দিলেন আর শ্রোতারা শুনলেন বা সায় দিলেন, এতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। সে জন্য আলোচনা শেষে শ্রোতাদের মনের জিজ্ঞাসাগুলো তুলে আনতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে মাহফিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। অবশ্য প্রশ্নগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে উত্তরদাতা দেখে প্রস্তুতি নিয়ে নিলে সেটা হবে অনেক বেশি অর্থবহ ও নির্ভুল। আর সবশেষে শ্রোতারা কতটা শিখতে বা জানতে পারলেন, সেটা পরখ করার জন্য উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।
মাহফিল চলাকালীন করণীয়
মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও আগত শ্রোতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের দায়িত্ব। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। ওয়াজ মাহফিলে যেন ইসলামের সুমহান দাওয়াতের আবহ থাকে এবং তা যেন প্রদর্শনপ্রিয়তা, লৌকিকতা ও এ-জাতীয় কোনো মন্দ কাজের প্ল্যাটফর্ম না হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাড়ি থামিয়ে ডোনেশন কালেকশন করা অপমানজনক ও বিরক্তিকর কাজ, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব হালাল উপার্জনকারীদের ডোনেশন নেওয়া উচিত।
মাহফিলের প্রচারনীতি
মাহফিলের প্রচারণার জন্য তৈরি করা ব্যানার-পোস্টার ইত্যাদির ভাষা যেন শুদ্ধ ও নির্ভুল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পোস্টার বা ব্যানারে কোনো আলোচকের পরিচয়-পদবি লিখতে গিয়ে ভুল ও অতিরঞ্জন করা চরম অন্যায়। উপস্থাপনার সময় কোনো আলোচকের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও অত্যুক্তি করা বেমানান। মাহফিলের আলোচনার অডিও-ভিডিও ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। এ কাজটি আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে এবং বক্তার পূর্ণ সম্মতি নিয়ে করা আবশ্যক। অন্য কাউকে অনুমতি দিলেও তা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। যারা বিভিন্ন মাহফিলের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব-ফেসবুকে দর্শক বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিকটু, মিথ্যা ও আপত্তিকর থাম্বনেইল কিংবা শিরোনাম দেয়, কোনো অবস্থাতেই তাদের রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
আলোচকদের সম্মানী
আলোচকদের উচিত, দ্বীন প্রচারের মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ করা। ওয়াজকে যদি অন্য দশটা পেশার মতো একটা পেশা বানানো হয়, তাহলে সেই ওয়াজ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে যেসব দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রায় পুরো সময় সে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় এবং দ্বীনের জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কাজ করে পারিশ্রমিক নেওয়াকে বিশ্বের প্রায় সব ইসলামিক স্কলারই জায়েজ মনে করেন। তাই আয়োজকদের উচিত, আলোচকের গাড়িভাড়া, পথখরচ এবং অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সম্মানজনক হাদিয়া পেশ করা। তবে এ বিষয়ে দর-কষাকষি করা ও চড়া মূল্য হাঁকানো কখনোই প্রকৃত আলেমের কাজ হতে পারে না।
হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা
মাহফিল উপলক্ষে উত্তোলন করা আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই জরুরি। অনেক সময় আয়োজকেরা মাহফিলের জন্য বিস্তর টাকা তুলে আলোচকদের যৎসামান্য হাদিয়া দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে নেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মাহফিলের কথা বলে টাকা তুলে মাহফিলে কম খরচ করে সেটা দিয়ে অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করেন—এগুলো গর্হিত কাজ। তবে সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরও যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে দানকারীদের মৌন সম্মতি বিবেচনায় তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করা যাবে।
ক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৩ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
৩ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগেইসলামের পরিভাষায় নফস একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এটি মূলত প্রবৃত্তিকে বোঝায়। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এটি ভালো-মন্দ উভয় কাজের দিকে ধাবিত করে। তাই এর সঠিক পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একে উন্নত করার বিকল্প নেই।
২ দিন আগে