অরুণ কর্মকার
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে যে সব প্রশ্নের ফয়সালা হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন রয়েই গেছে এবং তা নানানভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, সম্প্রতি একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা স্থায়ী সরকার নই। উদাহরণ হিসেবে মনে করুন, আমাদের এখানে নিয়মিত সরকারের মেয়াদ হয় পাঁচ বছর। এটাই বিষয়। কিন্তু নতুন সংবিধানে হয়তো এর মেয়াদ করা হচ্ছে চার বছর। কারণ, জনগণ দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে চায়। এ জন্য এর (অন্তর্বর্তী সরকারের) মেয়াদ চার বছরের নিচে থাকা উচিত। এটা নিশ্চিত। এর চেয়ে কমও হতে পারে। তবে বিষয়টি হলো জনগণের, তারা কী চায়। রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়।’ (সূত্র: ২০ নভেম্বর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন)।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে সোজাসাপ্টাভাবেই বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এক সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তাতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরই হবে—এমন কথা বলেননি। প্রায় তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে আমি নিজে অনেকবার এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি যে অনেক সাংবাদিক বড় বড় মানুষের সব কথা সব সময় সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না বলে অভিযোগ করা হয়। ফলে সেসব কথার ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। কিন্তু ওপরে বন্ধনীর মধ্যে উদ্ধৃত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য আমরা যদি মনোযোগসহকারে দেখি তাহলে কী দেখতে পাই!
প্রথম কথা হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য বিদ্যমান সংবিধান এবং ভবিষ্যৎ সংবিধানে (প্রধান উপদেষ্টা যাকে ‘নতুন সংবিধান’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং যা হবে কি না নিশ্চিত নয়) স্থায়ী সরকারের মেয়াদের বিধান উল্লেখ করার প্রয়োজন হলো কেন? দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যেহেতু ‘নতুন সংবিধানে’ স্থায়ী সরকারের মেয়াদ চার বছর হতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তার চেয়ে কম থাকা উচিত এই কথারই বা অর্থ কী? স্থায়ী সরকারের মেয়াদের সাংবিধানিক বিধানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? তৃতীয়ত, ‘নতুন সংবিধান’ বলতে তিনি ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। হয়তো সংবিধান সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দেবে সেটাকেই প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন সংবিধান’ হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ-বর্জনের এখতিয়ার তো জাতীয় সংসদের এবং একমাত্র জাতীয় সংসদের। সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদে কী হবে, তা তো নিশ্চিত নয়?
আমরা জানি, সংবিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিশন কাজ করছে। নিশ্চয়ই তারা একটি সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করে আগামী জানুয়ারি নাগাদ সরকারের হাতে দেবে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগে যা বলা হয়েছে সে অনুযায়ী, সেই প্রস্তাব নিয়ে জনগণের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সবশেষে মতবিনিময় করা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এইসব মতবিনিময় সভায় যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হবে সেগুলোই সংবিধানে যুক্ত হবে। তাতে যদি স্থায়ী সরকারের মেয়াদ হিসেবে চার বছরের প্রস্তাব গৃহীত না হয়? বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। তবে এসব দলের অনেক নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় চার বছর মেয়াদের ধারণাটির সঙ্গে একমত নন বলেই জানিয়েছেন। এমন একটি বিষয়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কীভাবে যুক্ত করা যেতে পারে!
এর আগে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘সংস্কারের গতিই ঠিক করে দেবে নির্বাচন কবে হবে।’ অর্থাৎ সংস্কারগুলো যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি জাতীয় নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেবে। এটিই হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে যৌক্তিক অবস্থান। কেননা, গত জুলাই-আগস্টের যে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেশের ক্রিয়াশীল সব দল-মতের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়। কাজেই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, যতটুকু সময় প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকার ততটুকু সময়ই ক্ষমতায় থাকবে, এটাই এই সরকারের গ্রহণযোগ্য মেয়াদ হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার যদি যথেষ্ট সময় না পায় তাহলে সংস্কারগুলো হবে কীভাবে? সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন তো কাজ শুরু করে দিয়েছে। আরও চারটি কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন। এরপর আরও নতুন কয়েকটি সংস্কার কমিশন হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত বা ধারণা পেতে চায়। সেটা তাদেরকে দিতে হবে। আমার মনে হয় সেই ধারণা তাদের ইতিমধ্যে দেওয়াও হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, সংস্কারের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি পাশাপাশিই চলবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনও সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা, যা তারা পেতে আগ্রহী।
পাশাপাশি এ কথাও ঠিক যে গত ৫৩ বছরের নানা চড়াই-উতরাই, হানাহানি, বৈধ-অবৈধ কর্মকাণ্ড স্বাধীন বাংলাদেশকে যে দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, সেখান থেকে দেশকে তুলে আনার জন্য রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেশবাসী এই ধারণা করতেই পারেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলই খোলা দৃষ্টি নিয়ে সেই সংস্কার করবে না। তাই তাঁদের ভরসা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তাই এই সরকারকে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হলে তা হবে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনার বিপরীত।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে যে সব প্রশ্নের ফয়সালা হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন রয়েই গেছে এবং তা নানানভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, সম্প্রতি একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা স্থায়ী সরকার নই। উদাহরণ হিসেবে মনে করুন, আমাদের এখানে নিয়মিত সরকারের মেয়াদ হয় পাঁচ বছর। এটাই বিষয়। কিন্তু নতুন সংবিধানে হয়তো এর মেয়াদ করা হচ্ছে চার বছর। কারণ, জনগণ দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে চায়। এ জন্য এর (অন্তর্বর্তী সরকারের) মেয়াদ চার বছরের নিচে থাকা উচিত। এটা নিশ্চিত। এর চেয়ে কমও হতে পারে। তবে বিষয়টি হলো জনগণের, তারা কী চায়। রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়।’ (সূত্র: ২০ নভেম্বর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন)।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে সোজাসাপ্টাভাবেই বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এক সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তাতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরই হবে—এমন কথা বলেননি। প্রায় তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে আমি নিজে অনেকবার এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি যে অনেক সাংবাদিক বড় বড় মানুষের সব কথা সব সময় সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না বলে অভিযোগ করা হয়। ফলে সেসব কথার ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। কিন্তু ওপরে বন্ধনীর মধ্যে উদ্ধৃত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য আমরা যদি মনোযোগসহকারে দেখি তাহলে কী দেখতে পাই!
প্রথম কথা হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য বিদ্যমান সংবিধান এবং ভবিষ্যৎ সংবিধানে (প্রধান উপদেষ্টা যাকে ‘নতুন সংবিধান’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং যা হবে কি না নিশ্চিত নয়) স্থায়ী সরকারের মেয়াদের বিধান উল্লেখ করার প্রয়োজন হলো কেন? দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যেহেতু ‘নতুন সংবিধানে’ স্থায়ী সরকারের মেয়াদ চার বছর হতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তার চেয়ে কম থাকা উচিত এই কথারই বা অর্থ কী? স্থায়ী সরকারের মেয়াদের সাংবিধানিক বিধানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? তৃতীয়ত, ‘নতুন সংবিধান’ বলতে তিনি ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। হয়তো সংবিধান সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দেবে সেটাকেই প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন সংবিধান’ হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ-বর্জনের এখতিয়ার তো জাতীয় সংসদের এবং একমাত্র জাতীয় সংসদের। সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদে কী হবে, তা তো নিশ্চিত নয়?
আমরা জানি, সংবিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিশন কাজ করছে। নিশ্চয়ই তারা একটি সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করে আগামী জানুয়ারি নাগাদ সরকারের হাতে দেবে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগে যা বলা হয়েছে সে অনুযায়ী, সেই প্রস্তাব নিয়ে জনগণের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সবশেষে মতবিনিময় করা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এইসব মতবিনিময় সভায় যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হবে সেগুলোই সংবিধানে যুক্ত হবে। তাতে যদি স্থায়ী সরকারের মেয়াদ হিসেবে চার বছরের প্রস্তাব গৃহীত না হয়? বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। তবে এসব দলের অনেক নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় চার বছর মেয়াদের ধারণাটির সঙ্গে একমত নন বলেই জানিয়েছেন। এমন একটি বিষয়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কীভাবে যুক্ত করা যেতে পারে!
এর আগে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘সংস্কারের গতিই ঠিক করে দেবে নির্বাচন কবে হবে।’ অর্থাৎ সংস্কারগুলো যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি জাতীয় নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেবে। এটিই হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে যৌক্তিক অবস্থান। কেননা, গত জুলাই-আগস্টের যে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেশের ক্রিয়াশীল সব দল-মতের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়। কাজেই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, যতটুকু সময় প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকার ততটুকু সময়ই ক্ষমতায় থাকবে, এটাই এই সরকারের গ্রহণযোগ্য মেয়াদ হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার যদি যথেষ্ট সময় না পায় তাহলে সংস্কারগুলো হবে কীভাবে? সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন তো কাজ শুরু করে দিয়েছে। আরও চারটি কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন। এরপর আরও নতুন কয়েকটি সংস্কার কমিশন হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত বা ধারণা পেতে চায়। সেটা তাদেরকে দিতে হবে। আমার মনে হয় সেই ধারণা তাদের ইতিমধ্যে দেওয়াও হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, সংস্কারের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি পাশাপাশিই চলবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনও সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা, যা তারা পেতে আগ্রহী।
পাশাপাশি এ কথাও ঠিক যে গত ৫৩ বছরের নানা চড়াই-উতরাই, হানাহানি, বৈধ-অবৈধ কর্মকাণ্ড স্বাধীন বাংলাদেশকে যে দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, সেখান থেকে দেশকে তুলে আনার জন্য রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেশবাসী এই ধারণা করতেই পারেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলই খোলা দৃষ্টি নিয়ে সেই সংস্কার করবে না। তাই তাঁদের ভরসা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তাই এই সরকারকে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হলে তা হবে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনার বিপরীত।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
১ দিন আগেসদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’
১ দিন আগেতিন মাস পার হলো, আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের অধীনে আছি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল—সামাজিক সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে, আমাদের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা..
১ দিন আগেচট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনা এলাকায় যাওয়া-আসা করতে গেলে বোঝা যায় সেটি দুর্গম এলাকা। এ কারণেই সেখানে বসানো হয়েছিল ফাঁড়ি। কিন্তু ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলোয় যখন আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন নুরু আলম নুরু নামের এক সন্ত্রাসীও সে সুযোগ নেন। তিনি পুলিশের ফাঁড়ি দখল করে...
১ দিন আগে