ভজন সরকার
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন বেশ নাটকীয়তা দিয়েই শেষ হয়েছে। অনেকে ভেবেছিলেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিই জিতবে রাজ্যের এ নির্বাচনে। কিন্তু সবার ভাবনাকে উল্টে দিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসই ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় লাভ করেছে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে চারিদিকে। ভারত তো বটেই, বাংলাদেশেও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। শুধু ভাষাগত মিল নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যসহ নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের সমাধান এই প্রাদেশিক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ওপরেই নির্ভর করে। তাই কে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিতবে, সেটি নিয়ে আগ্রহ তো থাকবেই। তা ছাড়া এ দুই দেশের হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠীর অস্থি-মজ্জায় মিশে থাকা যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, সেটির পারদও এই নির্বাচনের ওপরে অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই তো তৃণমূল কংগ্রেস জেতার পরে বাংলাদেশেও উচ্ছ্বাস। যদিও এ উচ্ছ্বাসের কারণ যে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক তৃণমূলের জয়, তা ভাবার তেমন কারণ নেই। কারণ, বাংলাদেশে যারা চরম সাম্প্রদায়িক তারাও চায় প্রতিবেশী ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক দল ক্ষমতায় আসুক। এসব বাঙালির এ এক আশ্চর্য দ্বিচারিতা।
এত গেল এপার বাংলা তথা বাংলাদেশের বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা। ওপার বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আরও বিচিত্র।
অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ তো আছেই, সেইসঙ্গে আছে ওপার বাংলার সংখ্যাগুরু হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে বর্ণভেদ তথা জাতপাতের কষ্টিপাথরের নিক্তির মাপ।
বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত নিজেই সাম্প্রদায়িকতার তুরুপের তাস খেলছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলমান ভোটের লক্ষ্য নির্ধারণ করে অনেক আগে থেকেই তিনি মুসলিম তোষণ নীতি নিয়েছিলেন। তা ছাড়া বাঙালি-অবাঙালি বিভাজনের বাতাবরণও তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এসব সূক্ষ্ম কৌশল নির্ধারণ করে দিয়েছে আরেক নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোর নামের এক ভদ্রলোকের সংস্থা। খুব অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করা গেছে, বিজেপি তৃণমূলের এসব কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে ধাপে ধাপে। তার প্রতিফলন ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলেও প্রতিফলিত হয়েছে। মোটা দাগে এগুলোই বিজেপির হারের প্রধান কারণ হলেও এর পেছনে আছে অসংখ্য নিয়ামক, যা তৃণমূল কংগ্রেসকে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এনেছে।
ভোটের গণতন্ত্রে সংখ্যাই শেষ কথা। ছলেবলে-কূটকৌশলে, জোরে-জবরদস্তিতে কিংবা নৈতিকতায়-অনৈতিকতায় সংখ্যাকে নিজের পক্ষে টেনে আনার মধ্যেই গণতন্ত্রের সার্থকতা। তাই তো প্রশান্ত কিশোরের মতো ধূর্ত মানুষেরা গুজরাটে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসার পথ দেখায়। তামিলনাড়ুতে প্রাদেশিকতাকে উসকে দিয়ে প্রাদেশিক দলকে ক্ষমতায় আনে। আবার সেই প্রশান্ত কিশোরই পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের জন্য অন্য ধরনের দাবার ছক সাজায়। অথচ এগুলোর একটিও গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, উপকারীও নয় জনগণের ক্ষমতায়নে। কিন্তু বলতে বাধা নেই, এই নোংরা কৌশল খুব কার্যকরী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফাঁকফোকরকে কাজে লাগাতে। তাই তো প্রশান্ত কিশোরদের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হয়, যা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের প্রধান অস্ত্র ছিল বিজেপিকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানো। এটি বলতে দ্বিধা নেই যে বিজেপি নিজেই সে কথা বলে থাকে। কিন্তু বিষয় হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কিন্তু এই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে স্থান করে দিয়েছেন। কয়েক যুগ ক্ষমতায় থাকা বাম ফ্রন্টকে গদিচ্যুত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে কয়েকবার জোট করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পরপর দুবার বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বাম রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়ই ঠুকেছেন। বিজেপি মমতাকে বলতে পারত, ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে’।
বিজেপি বারবার ভোটের কৌশলে হেরে গেছে মমতার কাছে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠের রাজনীতি করা লড়াকু নেতা। অকুতোভয়ের নামে একগুয়ে, গোয়াড়, একরোখা এবং চরম অসহিষ্ণু এক নারী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নিজের একগুয়েমির জন্য হেন কাজ নেই মমতা করতে পারেন না। এবারও সে রকম নাটক করেছেন অনেক। কিন্তু সবই করেছেন দক্ষ অভিনেত্রীর মতো। এবার মমতার পেছনে ছিল প্রশান্ত কিশোর নামের আরেকজন। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যাঁরা বাংলা ও বাঙালির চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরা হেরে গেছেন এবং কাঙ্ক্ষিত ফল নিজের ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কলকাতা, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী; সেখানকার বনেদি শিক্ষিত অধিকাংশ বাঙালি বর্ণহিন্দু। এই উচ্চবর্ণের বর্ণহিন্দু বাবুরা হরভোলার মতো রং বদলাতে সিদ্ধহস্ত। একসময় কংগ্রেস করতেন। তারপর কমিউনিস্ট। এখন তৃণমূল। নিজেরা বলেন অসাম্প্রদায়িক।
কিন্তু নিজের ধর্মের নিম্নবর্ণের মানুষদের হিন্দু বলেই মনে করেন না। এই বিপুলসংখ্যক প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের হিন্দু বিজেপিকে মনে করেছেন নিম্নবর্ণ বা নিচু জাতের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বকারী দল। তাই নিজেদের আত্মশ্লাঘার জন্য সবাই একযোগে ভোট দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। সেইসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট একাট্টা হয়ে তৃণমূলের পক্ষে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জেতা বিধায়কদের গোত্রপরিচয় থেকে সহজেই এর সত্যাসত্য নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
বিজেপির অভ্যন্তরের কোন্দল, অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া নেতাদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া, করোনাভাইরাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাও তৃণমূল কংগ্রেসের জেতার অন্যতম কারণ। তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমপর্যায়ের একজন নেতা যে বিজেপির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন, বিজেপি সেটিও তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে এটাই পশ্চিমবঙ্গের ভোটরঙ্গের সালতামামি। ভবিষ্যৎই বলে দেবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাবে। তবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষের আশা ও স্বস্তির কারণ এটুকুই—বাংলাদেশেও যেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না হয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন তার উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন বেশ নাটকীয়তা দিয়েই শেষ হয়েছে। অনেকে ভেবেছিলেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিই জিতবে রাজ্যের এ নির্বাচনে। কিন্তু সবার ভাবনাকে উল্টে দিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসই ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় লাভ করেছে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে চারিদিকে। ভারত তো বটেই, বাংলাদেশেও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। শুধু ভাষাগত মিল নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যসহ নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের সমাধান এই প্রাদেশিক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ওপরেই নির্ভর করে। তাই কে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিতবে, সেটি নিয়ে আগ্রহ তো থাকবেই। তা ছাড়া এ দুই দেশের হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠীর অস্থি-মজ্জায় মিশে থাকা যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, সেটির পারদও এই নির্বাচনের ওপরে অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই তো তৃণমূল কংগ্রেস জেতার পরে বাংলাদেশেও উচ্ছ্বাস। যদিও এ উচ্ছ্বাসের কারণ যে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক তৃণমূলের জয়, তা ভাবার তেমন কারণ নেই। কারণ, বাংলাদেশে যারা চরম সাম্প্রদায়িক তারাও চায় প্রতিবেশী ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক দল ক্ষমতায় আসুক। এসব বাঙালির এ এক আশ্চর্য দ্বিচারিতা।
এত গেল এপার বাংলা তথা বাংলাদেশের বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা। ওপার বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আরও বিচিত্র।
অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ তো আছেই, সেইসঙ্গে আছে ওপার বাংলার সংখ্যাগুরু হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে বর্ণভেদ তথা জাতপাতের কষ্টিপাথরের নিক্তির মাপ।
বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত নিজেই সাম্প্রদায়িকতার তুরুপের তাস খেলছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলমান ভোটের লক্ষ্য নির্ধারণ করে অনেক আগে থেকেই তিনি মুসলিম তোষণ নীতি নিয়েছিলেন। তা ছাড়া বাঙালি-অবাঙালি বিভাজনের বাতাবরণও তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এসব সূক্ষ্ম কৌশল নির্ধারণ করে দিয়েছে আরেক নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোর নামের এক ভদ্রলোকের সংস্থা। খুব অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করা গেছে, বিজেপি তৃণমূলের এসব কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে ধাপে ধাপে। তার প্রতিফলন ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলেও প্রতিফলিত হয়েছে। মোটা দাগে এগুলোই বিজেপির হারের প্রধান কারণ হলেও এর পেছনে আছে অসংখ্য নিয়ামক, যা তৃণমূল কংগ্রেসকে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এনেছে।
ভোটের গণতন্ত্রে সংখ্যাই শেষ কথা। ছলেবলে-কূটকৌশলে, জোরে-জবরদস্তিতে কিংবা নৈতিকতায়-অনৈতিকতায় সংখ্যাকে নিজের পক্ষে টেনে আনার মধ্যেই গণতন্ত্রের সার্থকতা। তাই তো প্রশান্ত কিশোরের মতো ধূর্ত মানুষেরা গুজরাটে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসার পথ দেখায়। তামিলনাড়ুতে প্রাদেশিকতাকে উসকে দিয়ে প্রাদেশিক দলকে ক্ষমতায় আনে। আবার সেই প্রশান্ত কিশোরই পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের জন্য অন্য ধরনের দাবার ছক সাজায়। অথচ এগুলোর একটিও গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, উপকারীও নয় জনগণের ক্ষমতায়নে। কিন্তু বলতে বাধা নেই, এই নোংরা কৌশল খুব কার্যকরী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফাঁকফোকরকে কাজে লাগাতে। তাই তো প্রশান্ত কিশোরদের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হয়, যা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের প্রধান অস্ত্র ছিল বিজেপিকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানো। এটি বলতে দ্বিধা নেই যে বিজেপি নিজেই সে কথা বলে থাকে। কিন্তু বিষয় হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কিন্তু এই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে স্থান করে দিয়েছেন। কয়েক যুগ ক্ষমতায় থাকা বাম ফ্রন্টকে গদিচ্যুত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে কয়েকবার জোট করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পরপর দুবার বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বাম রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়ই ঠুকেছেন। বিজেপি মমতাকে বলতে পারত, ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে’।
বিজেপি বারবার ভোটের কৌশলে হেরে গেছে মমতার কাছে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠের রাজনীতি করা লড়াকু নেতা। অকুতোভয়ের নামে একগুয়ে, গোয়াড়, একরোখা এবং চরম অসহিষ্ণু এক নারী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নিজের একগুয়েমির জন্য হেন কাজ নেই মমতা করতে পারেন না। এবারও সে রকম নাটক করেছেন অনেক। কিন্তু সবই করেছেন দক্ষ অভিনেত্রীর মতো। এবার মমতার পেছনে ছিল প্রশান্ত কিশোর নামের আরেকজন। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যাঁরা বাংলা ও বাঙালির চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরা হেরে গেছেন এবং কাঙ্ক্ষিত ফল নিজের ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কলকাতা, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী; সেখানকার বনেদি শিক্ষিত অধিকাংশ বাঙালি বর্ণহিন্দু। এই উচ্চবর্ণের বর্ণহিন্দু বাবুরা হরভোলার মতো রং বদলাতে সিদ্ধহস্ত। একসময় কংগ্রেস করতেন। তারপর কমিউনিস্ট। এখন তৃণমূল। নিজেরা বলেন অসাম্প্রদায়িক।
কিন্তু নিজের ধর্মের নিম্নবর্ণের মানুষদের হিন্দু বলেই মনে করেন না। এই বিপুলসংখ্যক প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের হিন্দু বিজেপিকে মনে করেছেন নিম্নবর্ণ বা নিচু জাতের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বকারী দল। তাই নিজেদের আত্মশ্লাঘার জন্য সবাই একযোগে ভোট দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। সেইসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট একাট্টা হয়ে তৃণমূলের পক্ষে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জেতা বিধায়কদের গোত্রপরিচয় থেকে সহজেই এর সত্যাসত্য নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
বিজেপির অভ্যন্তরের কোন্দল, অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া নেতাদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া, করোনাভাইরাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাও তৃণমূল কংগ্রেসের জেতার অন্যতম কারণ। তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমপর্যায়ের একজন নেতা যে বিজেপির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন, বিজেপি সেটিও তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে এটাই পশ্চিমবঙ্গের ভোটরঙ্গের সালতামামি। ভবিষ্যৎই বলে দেবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাবে। তবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষের আশা ও স্বস্তির কারণ এটুকুই—বাংলাদেশেও যেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না হয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন তার উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে