নির্বাচন সংস্কার কমিশনকে যেসব পরামর্শ দিলেন সম্পাদকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০৬
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ২৩
নির্বাচন সংস্কার কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকেরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকেরা। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা এসব সুপারিশ করেন।

বৈঠক শেষে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমার প্রস্তাব হচ্ছে—অনাবাসী প্রতিনিধিত্ব হবে না। ঢাকায় থেকে খাগড়াছড়ি বা দিনাজপুরের প্রতিনিধিত্ব করবে না। এটা ওই এলাকা জনগণের বঞ্চিত করা। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধে রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে। অথবা তিনটি আসন মিলে একটি নারী আসন হবে, যেখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। সব নাগরিক যাতে তাঁর পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে—সেটাই আমাদের চাওয়া।’

আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যমকে গুরুত্ব দিয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে অনেক আগেই থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য আইনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে দেখেছি যেভাবে (নির্বাচন) প্রভাবিত করা হয়, সেই সুযোগ যেন না থাকে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এই সময়ে তো সম্ভব না, এটা সংসদ থেকে করতে হবে। কেননা, সেখান থেকে করতে না পারলে কার্যকর হবে না।’

সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হয়, দলীয় সরকারের অধীনে হলে তারা কমিশনকে প্রভাবিত করে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে না হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। এমন সিস্টেম যদি করতে পারি যে এনআইডি পাঞ্চ করে যদি জানতে পারি সে ভোটার কি না এবং ভোট দিতে পারব কি না। কেননা, ভোটার লিস্ট হওয়ার ছয় মাস পর কিন্তু অনেকের ১৮ বছর হয়ে যায়। এতে তিনি কিন্তু ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এ ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ডকেই ভোটার কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভোটার লিস্টটাতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়।’

প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি বলেন, ‘সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসার সম্ভব। এটা সবার আগে ভাবতে হবে। এর সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনকেও ভাবতে হবে। তাদের প্রস্তাব সরকারকে দেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও দেওয়া। যাতে দলগুলো বা সরকার কতটুকু মানল তা আমরা জানতে পারব।’

দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ভালোভাবে করতে চাই আমরা। পূর্বের অভিজ্ঞতা যদি নিতে চাই তাহলে পূর্বের তিন কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বসে প্রকৃত তথ্যটা জানা দরকার। যেসব গণমাধ্যম সম্পাদকেরা বলেছিলেন যে নির্বাচন ভালো হয়েছিল, তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন যে—কেন তারা বলেছিল, নির্বাচন ভালো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বে যারা অপকর্মকে বা দুর্বল নির্বাচন বা ভোটারবিহীন নির্বাচন ও রাতের ভোটের নির্বাচনকে কেন তারা জাস্টিফাই করেছিল—এগুলো তাদের কাছ থেকে জানা দরকার।’

গোলাম মর্তুজা আরও বলেন, ‘নির্বাচনী অপরাধের বড় শাস্তির সুপারিশ থাকা দরকার। ২০১৪ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন কেন ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, সেটা তাঁর কাছে জানতে চান। সরকার তাঁকে কী নির্দেশনা দিয়েছিল? ২০১৮ সালে নূরুল হুদার কমিশন রাতের ভোট কোন প্রেক্ষাপটে করেছিল, সেটা তাঁর কাছে জানতে চান। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কেন ভোটারের সংখ্যা বেড়ে গেল, সেটা কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কাছে জানতে চান। এই বিষয়গুলো জানার আলোকে আপনার সুপারিশগুলো দেন। পূর্বে যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছিল, তাদের যেন শাস্তির আওতায় আনা যায়, সেই সুপারিশ থাকা দরকার।’

গত তিন কমিশনকে সংস্কার কমিশন ডাকবে কি না, তাদের সময় যে অনিয়ম তা শুনবেন কি না—জানতে চাইলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সাবেক তিন কমিশন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আবার পর্যালোচনা করছি। নির্বাচনী অপরাধগুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আর এটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেটা নিয়েও আমরা পর্যালোচনা করেছি। গণমাধ্যমও যেন গত তিন নির্বাচনে কী অনিয়ম হয়েছে, তারা কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন নাই, সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যেন করে। আমরাও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। গত তিন নির্বাচন পর্যালোচনা করে ওই শিক্ষা নিয়ে আমরা প্রস্তাব করব।’

তাঁরা (সাবেক কমিশনগুলো) কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেননি, আপনারা তাঁদের ডেকে জানতে চাইবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘উনারা কি আসবেন? আমার তো মনে হয় না। আমরা বিবেচনায় নেব।’

এ ছাড়া বৈঠকে কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয় ছিল, স্থানীয় পর্যবেক্ষকেরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, তাদের যে নিবন্ধনগুলো হয় কী কী চ্যালেঞ্জ ফেস করে হয়—সেটা তাদের কাছ থেকে শুনেছি। সমাধানটা কীভাবে করা যায় সেটা তাদের কাছে শুনেছি।’

ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘তারা যেটা বলেছে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তাদের একটা জেনারেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের যে ফান্ড, সেটা যদি রেভিনিউ ফান্ড থেকে আসে তাহলে ভালো হয়। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রে, কেন্দ্রের বাইরে, বিনা বাধায় হয়রানি ছাড়া যাতে এক্সেস পায় সেটা তারা বলেছেন। নির্বাচনের পরে তাদের প্রতিবেদনগুলো যেন কমিশন কাজে লাগায় এই দাবিও তাঁরা করেছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত