রিমন রহমান, রাজশাহী
শীতের রাতে গরম কালাই রুটি আর হাঁসের কষানো মাংস এখন ঢাকা শহরের ট্রেন্ডি খাবার। ঝাঁ-চকচকে রেস্তোরাঁয় বেশ দাম দিয়েই এখন বিকোয়। এই ট্রেন্ডি হয়ে ওঠা আমাদের খাবারের ইতিহাসে বেশ চমকপ্রদ ঘটনাই বটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী, তারপর ঢাকা। এখন সবখানে জনপ্রিয় হলেও মাষকলাইয়ের রুটি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের খাবার; বিশেষ করে কৃষকেরা সকালবেলা কালাই রুটি খেয়ে বেরিয়ে পড়তেন কাজে। দেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে এর প্রচলন ঠিক কবে, দিন-তারিখ ধরে তার হিসাব করা কঠিন। তবে হাঁসের মাংসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এর শহরযাত্রা নিতান্তই নতুন ঘটনা।
কালাই রুটির প্রচলন
ইতিহাস-ঐতিহ্যের গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মাতীরবর্তী গ্রামগুলোতে প্রথম কালাই রুটির প্রচলন শুরু হয়েছিল। পদ্মার উজান থেকে প্রতিবছর বানের পানির সঙ্গে প্রচুর পলিমাটি আসে। শীতের শুরুতে নদীতে জেগে ওঠে চর। সেই চরের উর্বর পলিমাটিতে প্রায় পরিচর্যা ছাড়াই ফলে মাষকলাই। এই কালাই দানা পিষে আটা করে তার সঙ্গে চালের আটা মিশিয়ে কালাই রুটি তৈরি হয়। এ রুটি ৬-৭ ঘণ্টা পেটে থাকে। সে জন্যই কৃষিজীবী সমাজে খাবার হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা পায়। বহু পরে শ্রমিকশ্রেণির মানুষের খাবার হিসেবে শহরের ফুটপাতে এ রুটি বিক্রি শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে রাজশাহী শহরে চার আনায় এ রুটি পাওয়া যেত বলে জানান মাহবুব সিদ্দিকী। এখন এটি খাবার অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে হাঁসের মাংস।
রাজশাহীতেও চাঁপাইয়ের কারিগর
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে কালাই রুটি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কিছুসংখ্যক নারী। তাঁদের কাছে অবশ্য মাংস থাকে না। লবণ কিংবা ধনেপাতার চাটনিসহযোগে সে রুটি খেয়ে থাকেন দিনমজুর আর শ্রমিক কিংবা রিকশাচালকেরা।
শহরে রুটি বিক্রেতা এমন নারীর সংখ্যা কম নয়। আবার এখন কালাই রুটি বিক্রি করে এমন মাঝারি মানের হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর সংখ্যাও অনেক। তবে ফুটপাতের মতো এখানে নারীরা রুটি বানান না। সারি সারি চুলা বসিয়ে রুটি বানান পুরুষেরাই। এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারিগরদের কদর বেশি। কয়েক বছর আগে নগরীর উপশহরে সারি সারি কালাই রুটির হোটেল গড়ে ওঠে। সেগুলোতেই কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারিগরেরা।দিনে ৫০০ রুটি বানান মোতালেব
রাজশাহী উপশহরের একটি রুটির দোকানের কারিগর মো. মোতালেব। রুটি বানানোর অভিজ্ঞতা তাঁর ২১ বছরের। এর মধ্যে টানা ১৫ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এক রেস্তোরাঁয় রুটি বানিয়েছেন তিনি। মোতালেব জানান, ছয় বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবশেষ পারিশ্রমিক পেয়েছেন দিনে ২৭০ টাকা। এখন রাজশাহীতে এসে পান ৮০০ টাকা। দুপুর ১২টায় তাঁর রুটি বানানো শুরু হয়। চলে রাত ২টা পর্যন্ত। দুই কারিগরে মিলে বানান প্রায় ৮০০ রুটি। তবে মোতালেব একাই বানান ৫০০টি। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী এসে ৬ বছরে যা রুটি বানিয়েছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ বছরেও তা বানাইনি!’
‘এডাই হচ্ছে রাশশাহীর বিখ্যাত “কালাই বাড়ি”। খাবার ভালো, পরিবেশ ভালো। রুটি আছে, হাঁসের মাংস আছে। চলে আসেন মামা...’। রাজশাহীর উপশহরের এক হোটেলের সামনে এভাবেই মানুষকে ডেকে যাচ্ছিলেন শহীদুল ইসলাম। তাঁর বাড়িও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শহীদুলের দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে তাঁর বাবা ময়েজ উদ্দিন দোকানে প্রথম কালাই রুটি বিক্রি শুরু করেছিলেন। সেটি ১৯৮৩ সালের কথা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় ছিল সে দোকান। দোকানের নাম ছিল ময়েজ কালাই রুটি।
ছোটবেলায় খেয়েছি পেঁয়াজকুচি, সরিষার তেল, লবণ আর শুকনো মরিচ দিয়ে। তেলটা থাকত আচারের। আমের আচারও থাকত। বেগুনভর্তা থাকত। খেজুরের গুড়ও খাওয়া হতো। হোটেলে বেগুনভর্তা, লবণে কাঁচা মরিচবাটা থাকলেও তেল সাধারণ। হোটেলে হাঁস, গরুর মাংস কিংবা বট দিয়ে কালাই রুটি খাওয়া ইদানীং শুরু হয়েছে।
আকবর হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
শহীদুল ইসলাম জানালেন, কালাই রুটি ছিল চরাঞ্চলের মানুষের খাবার। পরে বাড়িতে সেই রুটি বানানো শুরু হয়। শহীদুল জানান, তাঁর আব্বা ময়েজ উদ্দিনের সঙ্গে তিনিও দোকানে বসতেন। প্রথম দিকে দোকানে রুটি খেতে মানুষ ডাকতে খানিক লজ্জা পেতেন। ধীরে ধীরে আরও দোকান হলো। তারপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেল। ময়েজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর শহীদুল বা তাঁর ভাইয়েরা আর দোকান চালাতে পারেননি। তিনি রাজশাহী চলে আসেন। এখানেই তিনি এখন রুটি বানান, মানুষ ডাকেন।দরদাম
হোটেলগুলোতে সাধারণত কালাই রুটি বিক্রি হয় প্রতিটি ৩০ টাকায়। তবে স্পেশাল রুটি আকারে একটু বড়, দাম ৫০ টাকা। কাঁচা মরিচ-লবণবাটা আর পেঁয়াজকুচি দেওয়া হয় ফ্রি। বেগুনভর্তার দাম ১০ টাকা। কয়েক টুকরা পাতিহাঁসের মাংস বিক্রি হয় ১২০ আর রাজহাঁস ১৫০ টাকায়। গরুর মাংসের ভুনা কিংবা কালাভুনা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।
শীতের রাতে গরম কালাই রুটি আর হাঁসের কষানো মাংস এখন ঢাকা শহরের ট্রেন্ডি খাবার। ঝাঁ-চকচকে রেস্তোরাঁয় বেশ দাম দিয়েই এখন বিকোয়। এই ট্রেন্ডি হয়ে ওঠা আমাদের খাবারের ইতিহাসে বেশ চমকপ্রদ ঘটনাই বটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী, তারপর ঢাকা। এখন সবখানে জনপ্রিয় হলেও মাষকলাইয়ের রুটি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের খাবার; বিশেষ করে কৃষকেরা সকালবেলা কালাই রুটি খেয়ে বেরিয়ে পড়তেন কাজে। দেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে এর প্রচলন ঠিক কবে, দিন-তারিখ ধরে তার হিসাব করা কঠিন। তবে হাঁসের মাংসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এর শহরযাত্রা নিতান্তই নতুন ঘটনা।
কালাই রুটির প্রচলন
ইতিহাস-ঐতিহ্যের গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মাতীরবর্তী গ্রামগুলোতে প্রথম কালাই রুটির প্রচলন শুরু হয়েছিল। পদ্মার উজান থেকে প্রতিবছর বানের পানির সঙ্গে প্রচুর পলিমাটি আসে। শীতের শুরুতে নদীতে জেগে ওঠে চর। সেই চরের উর্বর পলিমাটিতে প্রায় পরিচর্যা ছাড়াই ফলে মাষকলাই। এই কালাই দানা পিষে আটা করে তার সঙ্গে চালের আটা মিশিয়ে কালাই রুটি তৈরি হয়। এ রুটি ৬-৭ ঘণ্টা পেটে থাকে। সে জন্যই কৃষিজীবী সমাজে খাবার হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা পায়। বহু পরে শ্রমিকশ্রেণির মানুষের খাবার হিসেবে শহরের ফুটপাতে এ রুটি বিক্রি শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে রাজশাহী শহরে চার আনায় এ রুটি পাওয়া যেত বলে জানান মাহবুব সিদ্দিকী। এখন এটি খাবার অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে হাঁসের মাংস।
রাজশাহীতেও চাঁপাইয়ের কারিগর
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে কালাই রুটি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কিছুসংখ্যক নারী। তাঁদের কাছে অবশ্য মাংস থাকে না। লবণ কিংবা ধনেপাতার চাটনিসহযোগে সে রুটি খেয়ে থাকেন দিনমজুর আর শ্রমিক কিংবা রিকশাচালকেরা।
শহরে রুটি বিক্রেতা এমন নারীর সংখ্যা কম নয়। আবার এখন কালাই রুটি বিক্রি করে এমন মাঝারি মানের হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর সংখ্যাও অনেক। তবে ফুটপাতের মতো এখানে নারীরা রুটি বানান না। সারি সারি চুলা বসিয়ে রুটি বানান পুরুষেরাই। এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারিগরদের কদর বেশি। কয়েক বছর আগে নগরীর উপশহরে সারি সারি কালাই রুটির হোটেল গড়ে ওঠে। সেগুলোতেই কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারিগরেরা।দিনে ৫০০ রুটি বানান মোতালেব
রাজশাহী উপশহরের একটি রুটির দোকানের কারিগর মো. মোতালেব। রুটি বানানোর অভিজ্ঞতা তাঁর ২১ বছরের। এর মধ্যে টানা ১৫ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এক রেস্তোরাঁয় রুটি বানিয়েছেন তিনি। মোতালেব জানান, ছয় বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবশেষ পারিশ্রমিক পেয়েছেন দিনে ২৭০ টাকা। এখন রাজশাহীতে এসে পান ৮০০ টাকা। দুপুর ১২টায় তাঁর রুটি বানানো শুরু হয়। চলে রাত ২টা পর্যন্ত। দুই কারিগরে মিলে বানান প্রায় ৮০০ রুটি। তবে মোতালেব একাই বানান ৫০০টি। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী এসে ৬ বছরে যা রুটি বানিয়েছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ বছরেও তা বানাইনি!’
‘এডাই হচ্ছে রাশশাহীর বিখ্যাত “কালাই বাড়ি”। খাবার ভালো, পরিবেশ ভালো। রুটি আছে, হাঁসের মাংস আছে। চলে আসেন মামা...’। রাজশাহীর উপশহরের এক হোটেলের সামনে এভাবেই মানুষকে ডেকে যাচ্ছিলেন শহীদুল ইসলাম। তাঁর বাড়িও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শহীদুলের দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে তাঁর বাবা ময়েজ উদ্দিন দোকানে প্রথম কালাই রুটি বিক্রি শুরু করেছিলেন। সেটি ১৯৮৩ সালের কথা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় ছিল সে দোকান। দোকানের নাম ছিল ময়েজ কালাই রুটি।
ছোটবেলায় খেয়েছি পেঁয়াজকুচি, সরিষার তেল, লবণ আর শুকনো মরিচ দিয়ে। তেলটা থাকত আচারের। আমের আচারও থাকত। বেগুনভর্তা থাকত। খেজুরের গুড়ও খাওয়া হতো। হোটেলে বেগুনভর্তা, লবণে কাঁচা মরিচবাটা থাকলেও তেল সাধারণ। হোটেলে হাঁস, গরুর মাংস কিংবা বট দিয়ে কালাই রুটি খাওয়া ইদানীং শুরু হয়েছে।
আকবর হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
শহীদুল ইসলাম জানালেন, কালাই রুটি ছিল চরাঞ্চলের মানুষের খাবার। পরে বাড়িতে সেই রুটি বানানো শুরু হয়। শহীদুল জানান, তাঁর আব্বা ময়েজ উদ্দিনের সঙ্গে তিনিও দোকানে বসতেন। প্রথম দিকে দোকানে রুটি খেতে মানুষ ডাকতে খানিক লজ্জা পেতেন। ধীরে ধীরে আরও দোকান হলো। তারপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেল। ময়েজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর শহীদুল বা তাঁর ভাইয়েরা আর দোকান চালাতে পারেননি। তিনি রাজশাহী চলে আসেন। এখানেই তিনি এখন রুটি বানান, মানুষ ডাকেন।দরদাম
হোটেলগুলোতে সাধারণত কালাই রুটি বিক্রি হয় প্রতিটি ৩০ টাকায়। তবে স্পেশাল রুটি আকারে একটু বড়, দাম ৫০ টাকা। কাঁচা মরিচ-লবণবাটা আর পেঁয়াজকুচি দেওয়া হয় ফ্রি। বেগুনভর্তার দাম ১০ টাকা। কয়েক টুকরা পাতিহাঁসের মাংস বিক্রি হয় ১২০ আর রাজহাঁস ১৫০ টাকায়। গরুর মাংসের ভুনা কিংবা কালাভুনা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে