ট্রাম্পের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা

এএফপি, ওয়াশিংটন 
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৫০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক দিন পর থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, এবার মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণও যাচ্ছে রিপাবলিকানদের হাতে। শেষমেশ তা-ই হলো। গত বুধবার মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে, এই হাউসের নিয়ন্ত্রণও পেল নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল।

২০২৪ সালের নির্বাচনে মার্কিনরা যেন রিপাবলিকানদের হাত ভরে দিলেন। দলটি প্রেসিডেন্ট পদে জয় পেয়েছে। উচ্চকক্ষ সিনেট জিতেছে। এবার প্রতিনিধি পরিষদও জিতল তারা। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন তিনি।

প্রতিনিধি পরিষদের আসনসংখ্যা ৪৩৫টি। এর মধ্যে ৪২৬টি আসনের ফল পাওয়া গেছে প্রাথমিকভাবে। এতে ২১৮টি আসন জিতেছে রিপাবলিকানরা। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কমলা হ্যারিসের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি জিতেছে ২০৮টি। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, এবারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফল হিসেবে, কমলার চেয়ে ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। এই জয়ের যখন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসবে, তখন ইতিহাসে নাম লিখবেন ট্রাম্প। কারণ গত ২০ বছরে কোনো রিপাবলিকান এত বড় জয় পাননি।

৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইলেকটোরাল কলেজে জয়লাভ করেছেন। যেখানে তিনি ৩১২টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন, আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৬টি ভোট। ট্রাম্প সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে জয়লাভ করেছেন, যা মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণকারী গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প পপুলার ভোটেও জিতেছেন। ফলে তাঁর সংস্কারমূলক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে বড় ধরনের বৈধতা পেতে সক্ষম হবেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচনের রাতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা আমাদের একটি শক্তিশালী এবং অভূতপূর্ব ম্যান্ডেট দিয়েছে।’ যদিও দুই বছর পর মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করার থাকছে ডেমোক্র্যাটদের।

গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদেও নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেন রিপাবলিকানরা, যা গত সপ্তাহের নির্বাচনে তাঁদের পূর্ণ জয়ের একটি অংশ। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোট গণনার পর সিএনএন এবং এনবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের দল সিনেট দখলের পর প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে।

কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার ফলে প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় ট্রাম্পের দেওয়া মনোনীত প্রার্থীর বিষয়ে কংগ্রেসের সম্মতি আদায় সহজ হবে। এটা তাঁর অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়া, কর কর্তনসহ কট্টরপন্থী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নেও সহায়ক হতে পারে।

‘সবার আগে আমেরিকা’ ট্রাম্পের এই নীতির সঙ্গে রিপাবলিকানদের অনেকেই এক মত ছিলেন না। তবে তাঁদের অধিকাংশকেই বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ট্রাম্পের দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধের মুখে পড়ার আশঙ্কাও খুব কম। ফলে নিজের অবস্থান আরও সুসংহত হতে যাচ্ছে। যদিও অধিকাংশ আইনগত প্রস্তাবের জন্য সিনেটে ৬০টি ভোটের সুপার-মেজরিটির প্রয়োজন হয়, যা রিপাবলিকানরা অর্জন করতে পারবে না। কারণ সিনেটে ৬০টি আসন জেতেনি তারা।

সিনেটে নতুন নেতা

রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটের নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হিসেবে সাউথ ডাকোটার প্রবীণ সিনেটর জন থুনকে বেছে নিলেন দলটির সিনেটররা। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে আইনপ্রণেতাদের জোর প্রস্তুতি চলার মধ্যেই গতকাল বুধবার ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে থুনকে বেছে নেন তাঁরা।

বর্তমানে কনিষ্ঠ নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা জন থুন সিনেটে অনুষ্ঠিত ওই ভোটাভুটিতে টেক্সাসের সিনেটর জন কর্নিনকে পরাজিত করেন। থুন বিদায়ী দলনেতা মিচ ম্যাককনেলের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এর আগে থুন কট্টর রক্ষণশীল নেতা ও ট্রাম্পের অনুগত ফ্লোরিডার সিনেটর রিক স্কটের বিরুদ্ধে জেতেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত