বদলে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের হিসাব–নিকাশ

  • ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প: ওয়াশিংটন পোস্ট
  • এই দাবি মিথ্যা। ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়নি পুতিনের: ক্রেমলিন
  • ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা ও ইউক্রেন ইস্যুতে সতর্ক ফ্রান্স।
এএফপি, প্যারিস
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৩
যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে ফোন দিলেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের জেরে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও রুশ সরকারের দপ্তর ক্রেমলিন এই দাবি অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ফ্রান্সও।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে জয় অর্জনের পর গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় ট্রাম্প ফ্লোরিডায় তাঁর মার-এ-লাগো রিসোর্টে ছিলেন।

টেলিফোনে আলাপকালে ইউরোপের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশাল সামরিক উপস্থিতির’ বিষয়টি পুতিনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের সমাধানের লক্ষ্যে শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে আবারও কথা বলার আগ্রহের কথাও ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে ‘নিরেট গালগল্প’ বলে আখ্যা দিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ ধরনের টেলিফোন আলাপের বিষয়ে বলেন, ‘এটা সর্বৈব মিথ্যা। এটা নিরেট গালগল্প। এটি কেবলই মিথ্যা তথ্য।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধরনের ফোনালাপ হয়নি।’ পেসকভ যোগ করেন, বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য পুতিনের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে এখনো প্রস্তুত নয় পশ্চিমা বিশ্ব।

এর আগে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সংকট নিরসনে আলোচনা করতে মস্কো প্রস্তুত। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়তা করতে ট্রাম্প যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে তিনিও আগ্রহী।

এ ছাড়া গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন ট্রাম্প। এদিকে এই যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে ট্রাম্পকে ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইউক্রেনকে ত্যাগ না করে—ট্রাম্পকে এমন পরামর্শ দিতে পারেন বাইডেন। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ত্যাগ করলে ইউরোপ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

সতর্ক বার্তা ফ্রান্সের

এদিকে ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যের জেরে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট। গতকাল সোমবার প্যারিস পিস ফোরামের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় বসবে, তারা কী পদক্ষেপ নেবে, এখনো জল্পনাকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগে থেকেই আমাদের কিছু অনুমান করা ঠিক হবে না।’

ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধে খরচ কমিয়ে আনতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু করতে পারে। এই পরিস্থিতিতেই পুতিন-ট্রাম্পের ফোনালাপ ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের বিষয়টি সামনে এল। তবে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার জন্য সময় নিতে হবে আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্সও এটা চায়। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, ইউক্রেনকে আমাদের এই সুবিধা দিতে হবে, যাতে তারা রুশ বাহিনীকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

ফরাসি এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাশিয়া যদি “আমার শক্তি বেশি, তাই যা-ইচ্ছে তা-ই করব”— এই নীতিতে এগিয়ে যায়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই যুদ্ধ থেকে অনেক কিছু হারাতে হবে।’

এদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ফিনল্যান্ডও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেন বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেন ইস্যুতে আরও সুখবর আসবে।’ একই সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য ইউরোপকে আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ইউক্রেনের জন্য অবশ্য সুখবর দিচ্ছে আপাতত জো বাইডেন প্রশাসনই। তারা বলছে, ইউক্রেনের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার আগেই সেই অর্থ ছাড় দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত