ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক থামছেই না। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ‘আদম হাওয়া পাপ করল’ এমন পাঠসংবলিত একটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়, সেটি নতুন বইয়ের অংশ। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৃষ্ঠাটি নতুন পাঠ্যক্রমেরই নয়। এবার নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রাক, কলা চেনানো হচ্ছে! ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া ছাপানো হয়েছে।
১৩ জানুয়ারি ‘ফারজু স্টোরি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে ধারাভাষ্যকার বইটি খুলেই বলছেন, ‘এই যে ইংরেজি কবিতা, এরপরেই আবার বাংলা কবিতা। এটা তাজ্জব ব্যাপার!’ কয়েকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বড় তাজ্জব ব্যাপার, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিখবে ট্রেন কী, বাস কী, ডিএসএলআর ক্যামেরা কী!’
এরপর বইয়ের দুটি পৃষ্ঠায় থাকা জুতা, স্যান্ডেল, কলা, পাউরুটি, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির ছবি নিয়ে উপহাস করতে দেখা যায়। এ সময় সঙ্গের দুই কিশোরের উদ্দেশে নানা কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
ভিডিওটি আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৪৫ হাজার। মন্তব্য পড়েছে প্রায় ৯ হাজার।
ইংরেজি বইটির ওই পৃষ্ঠাগুলো দিয়ে ফটোকার্ড আকারে গত সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ‘ফ্রাইডে পোস্ট’ নামে আরেকটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করতে দেখা গেছে। ফটো কার্ডটিতে লেখা রয়েছে, ‘ওপরের ছবি দুইটা নবম শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে নেওয়া নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে শেখাচ্ছে—কোনটি বাস, কোনটি ট্রেন, কোনটি জুতা, কোনটি কলা।’ এতেও রিঅ্যাকশন পড়েছে ৬০০-এর বেশি। শেয়ার হয়েছে দেড় শর বেশি।
পোস্ট দুটির কমেন্ট বক্স ঘুরে দেখা যায়, পোস্ট ও ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে নবম শ্রেণির বইয়ে এসব ছবি ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
শারমিন সুলতানা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহাকারী লিখেছেন, ‘এসব তো নার্সারির বইতে থাকে।’ মুহাম্মদ আল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ‘এত এত গুরুত্বপূর্ণ লেখাপড়া থাকতে বাস, কলা, জুতা—এগুলো চেনাতে হবে কেন। নির্বোধ লোক দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।’
রাজু খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এই নবম শ্রেণির বই আমার দুই বছরের বাচ্চাটাও পরতে পারবে ইনশা আল্লাহ।’ এম রহমান শেখ নামে একজন ইংরেজিতে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘এটি একটি আহাম্মকি পাঠ্যক্রম, যা নিম্নমানের শিক্ষার সূচনা করবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা এমনিতেই পিছিয়ে। আমি ইউরোপীয় বা উত্তর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করছি না। বাংলাদেশে এমন কারিকুলাম চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়বে, তারা পিছিয়ে যাবে এবং সুবিধাবঞ্চিত হবে।’ আলমগীর হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা জাতিকে ধংস করতে হলে তাদের পরবর্তী জেনারেশনকে মূর্খ বানালেই যথেষ্ট। আমার মনে হয়, বইতে এই ভুলগুলো ইচ্ছে করে করা হয়েছে।’
ইমতিয়াজ আহমেদ জিসান নামে একজন লিখেছেন, ‘হায়রে বাংলাদেশ আজকে এই ভিডিও টা দেখার পর লজ্জা বোধ হচ্ছে, কি সব শিক্ষামন্ত্রী আমরা বাংলাদেশে রেখেছি, যে বিষয়টি আমরা শিশু শ্রেনীতে পড়তাম আর সেই বিষয়টি এখন নবম-দশম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে,আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একি উন্নতি?’ (মন্তব্যের বানান ও শব্দচয়ন অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)।
নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া কেন
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটি সংগ্রহ করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়। বইটির ২৬ পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া রয়েছে। তবে ছড়ার ওপরেই লেখা রয়েছে, এটি মূলত উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
ছড়াটি কিসের উদাহরণ, সে সম্পর্কে আগের পৃষ্ঠা অর্থাৎ ২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ২.৪.১ পাঠটিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই (বাংলা অথবা ইংরেজি) অথবা অন্য কোনো বই থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরে এমন একটি কবিতা বেছে নেয়। পরে দলীয়ভাবে কবিতায় থাকা সেসব ছবি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, যেগুলো তারা দেখতে, শুনতে এবং অনুভব করতে পেরেছে। এরপর ছবিগুলো কীভাবে তাকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভূমিকা রাখছে, তা বর্ণনা করতে বলা হয়েছে এবং তাদের উত্তরগুলো শ্রেণিতে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
২.৪.১ পাঠটি ইংরেজি বইটির নেচার’স ট্যাপেস্ট্রি নামের অধ্যায়ের মূল পাঠের অংশ। পাঠটি শুরু হয়েছে বৃষ্টির দিন, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল, ঝড়ের রাতের তিনটি আলাদা ছবি দিয়ে। ছবিগুলোর শুরুতে শিক্ষার্থীদের ছবিগুলো দেখে নিজের ভাষায় বর্ণনা দিতে বলা হয়েছে এবং এসব পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কেমন বোধ করে, তা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। এই পাঠে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়াটির আগে ইংরেজি সাহিত্যের দুজন বিখ্যাত কবি আলফ্রেড টেনিসন ও জন কিটসের দুটি কবিতা রয়েছে। কবিতা দুটি যথাক্রমে ‘ক্রসিং দ্য বার’ ও ‘অন দ্য গ্রাসহুপার অ্যান্ড ক্রিকেট’। দুটি কবিতাতেই প্রকৃতি সৌন্দর্য বর্ণনা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাইরাল পোস্টগুলোতে পুরো পাঠটি সম্পর্কে উল্লেখ না করেই শেষ অংশে কেবল উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়াটি বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
নবম শ্রেণির বইয়ে ট্রেন, বাস, জুতা বা স্যান্ডেলের ছবি কেন
নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটির ৭৯ থেকে ৮০ নম্বর পৃষ্ঠায় ট্রেন, বাস, ব্যাগ, জুতা, কলা ইত্যাদির ছবি রয়েছে। পৃষ্ঠা দুটি ‘দ্য আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স’ নামে একটি পাঠের অংশ। এটি ইংরেজি বইয়ের ষষ্ঠ পাঠ।
এর অধীনে ৬.১.১ পাঠের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘মনে করো, এখন গ্রীষ্মকালের ছুটি। তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো একটি স্থানে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছ। তোমাকে এখন বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিচের ছবিগুলো দেখো এবং তোমার ভ্রমণের জন্য প্রদত্ত বিকল্পগুলোর মধ্যে কোনটি তুমি বেছে নিবে, সে সিদ্ধান্ত নাও। পরে তোমার ভ্রমণের জন্য পছন্দের তালিকাটি শ্রেণিতে শেয়ার করো এবং কেন সেই জায়গাগুলো বেছে নিয়েছ, তা ব্যাখ্যা করো।’
এই পাঠের অধীনে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে দেখানো হয়েছে রাঙামাটির সাজেক ও কক্সবাজার। পরিবহন হিসেবে দেখানো হয়েছে ট্রেন ও বাস। জিনিসপত্র বহন করার জন্য দেখানো হয়েছে স্যুটকেস ও ব্যাগ। জুতার উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে কেডস ও স্যান্ডেল। ছবি তোলার ডিভাইস হিসেবে দেখানো হয়েছে মোবাইল ফোন ও ডিএসএলআর ক্যামেরা, ভ্রমণে খাবার হিসেবে দেখানো হয়েছে কলা, পাউরুটি ও স্যান্ডউইচ।
এরপরের ৬.১.২ পাঠে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন দলে আলোচনা করে এবং যানবাহন, লাগেজ ও খাবারের বিকল্পগুলোর মধ্য থেকে একটি পছন্দ করার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করেছে, তা নিয়ে ভাবে। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই পাঠটিতে কিছু ধাপও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আরও ধাপ যুক্ত করতে বলা হয়েছে এখানে। এরপর একটি ফ্লো চার্ট বা প্রবাহচিত্রে এ ধাপগুলো সাজিয়ে সবশেষে শ্রেণিতে শেয়ার করতে বলা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও এবং পোস্টগুলো যাচাই করে দেখা যায়, পাঠের এই বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানোর দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
যা বলছেন বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রুবাইয়াৎ জাহান
নবম শ্রেণির বইটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবিগুলো প্রসঙ্গে বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক রুবাইয়াৎ জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
তিনি মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘বাস, ট্রেনের ছবিযুক্ত যে পৃষ্ঠাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, ওখানে শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন চেনানো উদ্দেশ্য না। ওই ছবিযুক্ত পাঠটির নাম আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স। এই পাঠটির উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কীভাবে কম্পারেটিভ এ্যাসে লিখতে হয়, সেটি শেখানো। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানো। এই উদ্দেশ্যে বইগুলোকে ধাপে ধাপে সাজানো হয়েছে। বাস, ট্রেনের অংশটি আছে পাঠের শুরুতেই ৬.১.১ এ; আর এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ৬.৩.১ তে। সেখানে পাঠের কনসেপ্ট বা ধারণা নোট হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তাই যারা বলছে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানো হচ্ছে, তারা হয়তো একদমই না বুঝে বলছে।’
ইংরেজিতে বাংলা ছড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা কবিতা শেখানো হচ্ছে না। আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানোর সবশেষ ধাপ হচ্ছে বইয়ের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা। যেকোনো কবিতার মাধ্যমেই এটা হতে পারে। একটা কবিতাতে সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা আছে, সেটা আমি পড়ে আরেকটা কবিতা থেকে সেটা আমি খুঁজে বের করতে পারছি কি না, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে তাই উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে।’
সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে বইয়ের অংশবিশেষ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক থামছেই না। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ‘আদম হাওয়া পাপ করল’ এমন পাঠসংবলিত একটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়, সেটি নতুন বইয়ের অংশ। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৃষ্ঠাটি নতুন পাঠ্যক্রমেরই নয়। এবার নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রাক, কলা চেনানো হচ্ছে! ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া ছাপানো হয়েছে।
১৩ জানুয়ারি ‘ফারজু স্টোরি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে ধারাভাষ্যকার বইটি খুলেই বলছেন, ‘এই যে ইংরেজি কবিতা, এরপরেই আবার বাংলা কবিতা। এটা তাজ্জব ব্যাপার!’ কয়েকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বড় তাজ্জব ব্যাপার, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিখবে ট্রেন কী, বাস কী, ডিএসএলআর ক্যামেরা কী!’
এরপর বইয়ের দুটি পৃষ্ঠায় থাকা জুতা, স্যান্ডেল, কলা, পাউরুটি, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির ছবি নিয়ে উপহাস করতে দেখা যায়। এ সময় সঙ্গের দুই কিশোরের উদ্দেশে নানা কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
ভিডিওটি আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৪৫ হাজার। মন্তব্য পড়েছে প্রায় ৯ হাজার।
ইংরেজি বইটির ওই পৃষ্ঠাগুলো দিয়ে ফটোকার্ড আকারে গত সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ‘ফ্রাইডে পোস্ট’ নামে আরেকটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করতে দেখা গেছে। ফটো কার্ডটিতে লেখা রয়েছে, ‘ওপরের ছবি দুইটা নবম শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে নেওয়া নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে শেখাচ্ছে—কোনটি বাস, কোনটি ট্রেন, কোনটি জুতা, কোনটি কলা।’ এতেও রিঅ্যাকশন পড়েছে ৬০০-এর বেশি। শেয়ার হয়েছে দেড় শর বেশি।
পোস্ট দুটির কমেন্ট বক্স ঘুরে দেখা যায়, পোস্ট ও ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে নবম শ্রেণির বইয়ে এসব ছবি ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
শারমিন সুলতানা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহাকারী লিখেছেন, ‘এসব তো নার্সারির বইতে থাকে।’ মুহাম্মদ আল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ‘এত এত গুরুত্বপূর্ণ লেখাপড়া থাকতে বাস, কলা, জুতা—এগুলো চেনাতে হবে কেন। নির্বোধ লোক দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।’
রাজু খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এই নবম শ্রেণির বই আমার দুই বছরের বাচ্চাটাও পরতে পারবে ইনশা আল্লাহ।’ এম রহমান শেখ নামে একজন ইংরেজিতে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘এটি একটি আহাম্মকি পাঠ্যক্রম, যা নিম্নমানের শিক্ষার সূচনা করবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা এমনিতেই পিছিয়ে। আমি ইউরোপীয় বা উত্তর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করছি না। বাংলাদেশে এমন কারিকুলাম চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়বে, তারা পিছিয়ে যাবে এবং সুবিধাবঞ্চিত হবে।’ আলমগীর হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা জাতিকে ধংস করতে হলে তাদের পরবর্তী জেনারেশনকে মূর্খ বানালেই যথেষ্ট। আমার মনে হয়, বইতে এই ভুলগুলো ইচ্ছে করে করা হয়েছে।’
ইমতিয়াজ আহমেদ জিসান নামে একজন লিখেছেন, ‘হায়রে বাংলাদেশ আজকে এই ভিডিও টা দেখার পর লজ্জা বোধ হচ্ছে, কি সব শিক্ষামন্ত্রী আমরা বাংলাদেশে রেখেছি, যে বিষয়টি আমরা শিশু শ্রেনীতে পড়তাম আর সেই বিষয়টি এখন নবম-দশম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে,আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একি উন্নতি?’ (মন্তব্যের বানান ও শব্দচয়ন অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)।
নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া কেন
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটি সংগ্রহ করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়। বইটির ২৬ পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া রয়েছে। তবে ছড়ার ওপরেই লেখা রয়েছে, এটি মূলত উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
ছড়াটি কিসের উদাহরণ, সে সম্পর্কে আগের পৃষ্ঠা অর্থাৎ ২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ২.৪.১ পাঠটিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই (বাংলা অথবা ইংরেজি) অথবা অন্য কোনো বই থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরে এমন একটি কবিতা বেছে নেয়। পরে দলীয়ভাবে কবিতায় থাকা সেসব ছবি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, যেগুলো তারা দেখতে, শুনতে এবং অনুভব করতে পেরেছে। এরপর ছবিগুলো কীভাবে তাকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভূমিকা রাখছে, তা বর্ণনা করতে বলা হয়েছে এবং তাদের উত্তরগুলো শ্রেণিতে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
২.৪.১ পাঠটি ইংরেজি বইটির নেচার’স ট্যাপেস্ট্রি নামের অধ্যায়ের মূল পাঠের অংশ। পাঠটি শুরু হয়েছে বৃষ্টির দিন, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল, ঝড়ের রাতের তিনটি আলাদা ছবি দিয়ে। ছবিগুলোর শুরুতে শিক্ষার্থীদের ছবিগুলো দেখে নিজের ভাষায় বর্ণনা দিতে বলা হয়েছে এবং এসব পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কেমন বোধ করে, তা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। এই পাঠে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়াটির আগে ইংরেজি সাহিত্যের দুজন বিখ্যাত কবি আলফ্রেড টেনিসন ও জন কিটসের দুটি কবিতা রয়েছে। কবিতা দুটি যথাক্রমে ‘ক্রসিং দ্য বার’ ও ‘অন দ্য গ্রাসহুপার অ্যান্ড ক্রিকেট’। দুটি কবিতাতেই প্রকৃতি সৌন্দর্য বর্ণনা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাইরাল পোস্টগুলোতে পুরো পাঠটি সম্পর্কে উল্লেখ না করেই শেষ অংশে কেবল উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়াটি বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
নবম শ্রেণির বইয়ে ট্রেন, বাস, জুতা বা স্যান্ডেলের ছবি কেন
নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটির ৭৯ থেকে ৮০ নম্বর পৃষ্ঠায় ট্রেন, বাস, ব্যাগ, জুতা, কলা ইত্যাদির ছবি রয়েছে। পৃষ্ঠা দুটি ‘দ্য আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স’ নামে একটি পাঠের অংশ। এটি ইংরেজি বইয়ের ষষ্ঠ পাঠ।
এর অধীনে ৬.১.১ পাঠের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘মনে করো, এখন গ্রীষ্মকালের ছুটি। তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো একটি স্থানে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছ। তোমাকে এখন বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিচের ছবিগুলো দেখো এবং তোমার ভ্রমণের জন্য প্রদত্ত বিকল্পগুলোর মধ্যে কোনটি তুমি বেছে নিবে, সে সিদ্ধান্ত নাও। পরে তোমার ভ্রমণের জন্য পছন্দের তালিকাটি শ্রেণিতে শেয়ার করো এবং কেন সেই জায়গাগুলো বেছে নিয়েছ, তা ব্যাখ্যা করো।’
এই পাঠের অধীনে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে দেখানো হয়েছে রাঙামাটির সাজেক ও কক্সবাজার। পরিবহন হিসেবে দেখানো হয়েছে ট্রেন ও বাস। জিনিসপত্র বহন করার জন্য দেখানো হয়েছে স্যুটকেস ও ব্যাগ। জুতার উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে কেডস ও স্যান্ডেল। ছবি তোলার ডিভাইস হিসেবে দেখানো হয়েছে মোবাইল ফোন ও ডিএসএলআর ক্যামেরা, ভ্রমণে খাবার হিসেবে দেখানো হয়েছে কলা, পাউরুটি ও স্যান্ডউইচ।
এরপরের ৬.১.২ পাঠে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন দলে আলোচনা করে এবং যানবাহন, লাগেজ ও খাবারের বিকল্পগুলোর মধ্য থেকে একটি পছন্দ করার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করেছে, তা নিয়ে ভাবে। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই পাঠটিতে কিছু ধাপও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আরও ধাপ যুক্ত করতে বলা হয়েছে এখানে। এরপর একটি ফ্লো চার্ট বা প্রবাহচিত্রে এ ধাপগুলো সাজিয়ে সবশেষে শ্রেণিতে শেয়ার করতে বলা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও এবং পোস্টগুলো যাচাই করে দেখা যায়, পাঠের এই বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানোর দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
যা বলছেন বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রুবাইয়াৎ জাহান
নবম শ্রেণির বইটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবিগুলো প্রসঙ্গে বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক রুবাইয়াৎ জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
তিনি মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘বাস, ট্রেনের ছবিযুক্ত যে পৃষ্ঠাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, ওখানে শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন চেনানো উদ্দেশ্য না। ওই ছবিযুক্ত পাঠটির নাম আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স। এই পাঠটির উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কীভাবে কম্পারেটিভ এ্যাসে লিখতে হয়, সেটি শেখানো। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানো। এই উদ্দেশ্যে বইগুলোকে ধাপে ধাপে সাজানো হয়েছে। বাস, ট্রেনের অংশটি আছে পাঠের শুরুতেই ৬.১.১ এ; আর এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ৬.৩.১ তে। সেখানে পাঠের কনসেপ্ট বা ধারণা নোট হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তাই যারা বলছে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানো হচ্ছে, তারা হয়তো একদমই না বুঝে বলছে।’
ইংরেজিতে বাংলা ছড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা কবিতা শেখানো হচ্ছে না। আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানোর সবশেষ ধাপ হচ্ছে বইয়ের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা। যেকোনো কবিতার মাধ্যমেই এটা হতে পারে। একটা কবিতাতে সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা আছে, সেটা আমি পড়ে আরেকটা কবিতা থেকে সেটা আমি খুঁজে বের করতে পারছি কি না, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে তাই উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে।’
সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে বইয়ের অংশবিশেষ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে