ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক  
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০২
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০৮

ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। চার বছর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনে বড় ভূমিকা ছিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার)।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষ নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এক্স। ইলন মাস্ক নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইস্যুতে একাধিক মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর দাবি করেছেন এক্সে। এবার এলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।

রাষ্ট্রসমর্থিত তথ্য কার্যক্রম, অপতথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অনলাইন গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করে থাকেন এলিস থমাস। এক্সে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সমর্থন বাড়াতে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে পরিচালিত একাধিক অ্যাকাউন্টের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কটির সন্ধান পেয়েছেন তিনি।

নির্বাচনের আগেই গত ৪ নভেম্বর নিজের এক্স হ্যান্ডলের থ্রেড পোস্টেও বিষয়টি জানান। এসব অ্যাকাউন্টের অধিকাংশই ভেরিফায়েড বলে এলিস থমাস ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছেন।

ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স
ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স

জেনারেটিভ এআই এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, যা নতুন ও মৌলিক কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম। বিদ্যমান তথ্য বা ডেটার ওপর ভিত্তি করে নতুন তথ্য, ছবি, লেখা বা অন্য কোনো কনটেন্ট তৈরি করতে পারে জেনারেটিভ এআই।

এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক শনাক্ত হলো যেভাবে

এলিস জানান, অ্যাকাউন্টগুলোতে এমন কিছু স্পষ্ট আলামত রয়েছে, যা দেখে সহজেই বুঝা যায় এটি এআই। যেমন, পুরোনো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা। কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট ট্রাম্পের প্রচারণায় ‘Trump 2020’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছিল।

আবার কিছু কিছু বট অ্যাকাউন্ট নিজেই নিজেদের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে প্রকাশ করছিল। যেমন, ‘ট্রাম্প নেশন (Trump Nation) ’ নামে খোলা একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এক টুইটে লেখা ছিল, ‘আমি ওপেন এআই দিয়ে তৈরি এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট।’ অ্যাকাউন্টটিকে সম্প্রতি এক্স থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটে বলা হয়, অ্যাকাউন্টগুলো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এআই হওয়ায় এগুলো কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা প্রার্থীর প্রচারণায় সহযোগিতা করতে পারবে না। যদিও এ ধরনের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।

ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স
ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স

এলিস নেটওয়ার্কটির কার্যক্রমের ব্যাখ্যায় বলেন, এই নেটওয়ার্কে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেসব অ্যাকাউন্ট গত জুনের শেষ থেকে সক্রিয় বলে ধারণা করা যায়। এই অ্যাকাউন্টগুলো নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় নোড (এমন অ্যাকাউন্ট, যা অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে মূল যোগাযোগ স্থাপন করে বা তাদের জন্য নির্দেশিকা সরবরাহ করে) হিসেবে কাজ করে। এরপর অন্য অ্যাকাউন্টগুলো এই মূল অ্যাকাউন্টগুলোর পোস্ট করা কনটেন্টকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে।

অর্থাৎ, কিছু অ্যাকাউন্ট প্রচারণায় মূল ভূমিকা পালন করে কনটেন্ট তৈরি বা শেয়ার করে, আর বাকি অ্যাকাউন্টগুলো সেই কনটেন্টকে আরও বিস্তৃত করে ছড়িয়ে দেয়।

এলিসা তাঁর থ্রেডে এই কেন্দ্রীয় নোড ও এর সঙ্গে যুক্ত অ্যাকাউন্টগুলোর কার্যক্রমের মধ্য বিভ্রান্তিকর সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। যেমন, ‘ট্রাম্প ওয়াজ রাইট অ্যাবাউট এভরিথিং (Trump Was Right About Everything) ’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্টের একটি কবিতা টুইট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘Distinguished’। কিন্তু পোস্টটি স্পষ্ট না হওয়ায় বা অস্বাভাবিক হওয়ায়, বাকি অ্যাকাউন্টগুলো এটি সঠিকভাবে বুঝতে না পরে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করে। যা থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায় এটি এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।

ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স
ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক। ছবি: এক্স

এলিসা ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছেন, এসব অ্যাকাউন্ট নিয়ে তিনি আরও বিস্তারিত কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।

এই নেটওয়ার্কের পেছনে কারা আছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এলিসা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘এটি এখন কেবল অনুমান করা সম্ভব। আমি জানি না কে এর পেছনে, এবং আমি মনে করি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ভালো প্রমাণ না থাকলে আমাদের সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।’

এলিসা একটি টুইটে লিখেছেন, এআই–এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই ধরনের নেটওয়ার্কগুলো প্রায় পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে। এটি একটি গ্রুপের কাজ হতে পারে আবার এক ব্যক্তির কাজও হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত