হার্ভার্ডে পড়ার স্বপ্নপূরণ শিহাবের

আহমেদ ফাহিম শিহাব ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন এবং নানা বাধা পেরিয়ে বৃত্তি পেয়ে সেখানে পড়ার সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি অর্থনীতি ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তাঁর এই অসাধারণ যাত্রার গল্প শুনেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

আনিসুল ইসলাম নাঈম
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৭
আহমেদ ফাহিম শিহাব। ছবি: সংগৃহীত

শিহাবের শৈশব কেটেছে ঢাকার ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায়। পরিবারে বাবা-মা ও দুই বোন আছে। ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু কৈশোরে স্বপ্ন পরিবর্তন হয়ে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা জন্মায়। বাবা ছিলেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা, আর মা একসময় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, বর্তমানে গৃহিণী। বড় বোন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছোট বোন কানাডায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম

শিহাবের প্রাথমিক শিক্ষা ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলে। সেখান থেকেই এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সপ্তম শ্রেণি থেকে বিতর্কে যুক্ত হন এবং স্কুল ডিবেট ক্লাবের সভাপতি হন। দুবার বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড স্কুল ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপ জাতীয় ক্যাম্পেইনে অংশ নেন। এসএসসি-পরবর্তী সময়ে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ইংরেজি বিতর্ক দলের অধিনায়ক ছিলেন। পাশাপাশি কুইজ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ‘স্পেকর্প’ নামের একটি বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন বিজনেস কেস প্রতিযোগিতায় জেতেন। এ ছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক একটি রিসার্চে যুক্ত হন। শুধু পড়াশোনাই নয়, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ এবং ইংরেজি পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ২০২২ সালের শেষে এইচএসসি পরীক্ষা দেন।

হার্ভার্ডে পড়ার স্বপ্ন

শুরুতে হার্ভার্ডে পড়ার স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষার চিন্তা মাথায় আসে শিহাবের। বাংলাদেশের এনসিটিবি কারিকুলাম যথেষ্ট ছিল না তাঁর জানার আগ্রহ মেটানোর জন্য। তাই উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার দিকে যাওয়ার কথা ভাবেন। এরপর ধীরে ধীরে আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে পড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

যেভাবে হার্ভার্ডে

আমেরিকার লিবারেল আর্টস কলেজ ও হার্ভার্ডে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া প্রায় একই। ‘কমন অ্যাপ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। এখানে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে জীবনের সেরা পাঁচটি অর্জন এবং পরীক্ষা স্কোর যোগ করতে হয়। হার্ভার্ডে কিছু সাপ্লিমেন্টারি এসে লিখতে হয়। তিনি রুমমেট-সম্পর্কিত একটি এসে, নিজের এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস এবং হার্ভার্ডে চান্স পেলে কী করব—এগুলো নিয়ে লিখেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। তাঁর ইন্টারভিউ নেন হার্ভার্ডের একজন অ্যালামনাই। এটি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে। এখানে ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। হার্ভার্ডে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ প্রয়োজন ছিল, তাই ‘কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিস’ (সিএসএস)-এ আবেদন করি। দুই মাস পর অফার লেটার হাতে আসে।

অনুভূতি

২০২৩ সালের ৩১ মার্চ অফার লেটার পান। সেদিন ছিল রমজান মাস। সাহ্‌রি খাওয়ার পর মেসেজটি দেখেন। উত্তেজনায় ঘুমাতে পারেননি। মা-বাবা, বোন, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

সুযোগ-সুবিধা

হার্ভার্ড থেকে তাঁকে ফুল রাইড স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এর আওতায় তাঁর পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াত খরচ বহন করা হয়। এ ছাড়া এফ-১ ভিসায় সেমিস্টার চলাকালে ২০ ঘণ্টা এবং বন্ধের সময় ৪০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে শিহাব হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের এক প্রফেসরের অধীনে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

নতুনদের একাডেমিক জার্নি উপভোগ করতে হবে। পড়াশোনার বাইরে নতুন কিছু জানার আগ্রহ থাকতে হবে। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন থাকলে নিয়মিত প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। হার্ভার্ডে পড়ার ইচ্ছা থাকলে নিজেকে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস এবং এসে লেখার ক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলতে হবে। রিকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহে আগে থেকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় না করার অনুরোধ মহাপরিচালকের, ক্ষোভ জানালেন মামুনুর রশীদ

আদালতের নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী চান বিচারকেরা

ইস্টার্ন রিফাইনারি: ১৮ কোটি টাকার কুলিং টাওয়ারের সবই নকল

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত