নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতায় দেশের ৪ বৈষম্য তুলে ধরলেন রেহমান সোবহান

বিজ্ঞপ্তি  
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ৪৭
নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতায় দেশের ৪ বৈষম্য তুলে ধরলেন রেহমান সোবহান। ছবি: সংগৃহীত

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘৬ষ্ঠ নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুর এলাহী অডিটোরিয়ামে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ‘বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ’ শিরোনামে বক্তৃতায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান দেশের চারটি বৈষম্য তুলে ধরেন। এসব হচ্ছে বাজার বৈষম্য, অসম সমাজ, রাজনৈতিক বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য।

অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে, দেশের উৎপাদকেরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তাঁরা পরিশ্রম করেও ভাগ্য বদল করতে পারছেন না। অথচ মধ্যস্বত্বভোগী কিছু মানুষ পুঁজির দাপটে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এখান থেকে ব্যাপক মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এখানে বাজার ব্যবস্থায় তথ্য, সম্পদ, ঋণ এসব ক্ষেত্রেও প্রচুর বৈষম্য রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যাপক বৈষম্য আমাদের একদেশে দুটি পৃথক সমাজ তৈরি করে ফেলছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা গুণগত ভালো মানের শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছেন, অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি সংসদ সদস্যদের উদাহরণ দিয়ে বলেন রাজনীতিতে শুধুমাত্র পয়সাওয়ালারা অংশ নিতে পারছেন। সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী এবং পরে বাকিরাও ব্যবসায়ী হয়ে যান। ক্ষমতা তাঁদের ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় ভাবেই বাংলাদেশ ব্যবসায়ী, আমলা, সামরিক বাহিনীর সদস্য এমন কিছু গ্রুপকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। সে জন্য রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধাগুলো গরিব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেনি।

বক্তৃতায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান আশার কথা ও সুপারিশও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্ন দেখা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্য দূর করতে বিভিন্ন সংস্কারকাজ শুরু করেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য দূর করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বলেন। দেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন। ভূমিহীনদের হাতে খাস জমি তুলে দিলে দেশে উৎপাদন বাড়বে, শ্রমিকদের শিল্প কারখানায় মালিকানার অংশ দিলে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অসন্তোষ দূর হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। সবশেষে, তিনি জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং স্বাস্থ্য খাতের জন্য সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা করার পরামর্শ দেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত ডক্টর আকবর আলী খানের কন্যা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্রী প্রয়াত নেহরীন খানের স্মরণে এই বক্তব্যের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের (অব.) অধ্যাপক ফকরুল আলম, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রয়াত নেহরীন খানের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত