আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
দীর্ঘদিনের অনিয়মের বলি দেশের পুঁজিবাজার। এখন এর খেসারত দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। লাগাতার দরপতনে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা তাঁরা। গত আড়াই মাসে ১৭ শতাংশ সূচক পতনের সঙ্গে পুঁজিবাজারের মূলধন কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। পুঁজি হারানোর এই মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক ও কর্তৃপক্ষের তরফে পর্যাপ্ত বা দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখে ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতেও আশার কথা বলছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ লম্বা সময় ধরে পুঁজিবাজার পতনমুখী রয়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে বাজার এখন অবমূল্যায়িত। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমে এসেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এসবের সঙ্গে পুঁজিবাজারও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। এই জায়গায় শেয়ার কেনার চাপ আসবে। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে চরম পর্যায়ের কারসাজি, ভালো কোম্পানির অভাব, খারাপ কোম্পানির তালিকাভুক্তি, সরকারসংশ্লিষ্টদের সুবিধা প্রদান, অপরাধের শাস্তি না হওয়ার মতো নানা অনিয়ম ছিল প্রাত্যহিক ঘটনা। এসবের মধ্যে দরপতন ঠেকাতে কৃত্রিম পদ্ধতি হিসেবে আরোপ করা হয়েছিল ফ্লোর প্রাইস। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রকৃতি বিকৃত করা হয়। তবে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরপরই বড় পতনের মুখে পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। বিষয়টি সবাই মেনেও নেন বাজার সংশোধনের অংশ হিসেবে। মাঝখানে কিছুটা আশা দেখা গেলেও সেই দরপতন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার।
এই অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন সরকার, নতুন কমিশন। আশা ছিল, নানামুখী উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। শুরুটা ভালোই হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর টানা চার কর্মদিবসে ডিএসইর সূচক বাড়ে ৭৮৬ পয়েন্ট। তবে এরপর বিনিয়োগকারীর হাসি উবে যায় লাগাতার দরপতনে।
গতকালও বড় পতন, কমিটি গঠন
পতনে পতনে এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, গত দুই মাসের মধ্যেই কয়েকবার শতাধিক পয়েন্টের বেশি সূচক কমেছে। গতকাল এক দিনেই কমেছে প্রায় দেড় শ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশের কাছাকাছি। এর মধ্য দিয়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের অবস্থান নেমেছে চার বছরে আগের স্থানে। এমন পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগকারীরা আঙুল তুলেছেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৪১টির, বেড়েছে ২৯টির। ২৬টির দর অপরিবর্তিত থাকে। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। সূচকের অবস্থান এর চেয়ে কম ছিল ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর। ওই দিন ৪ হাজার ৯৩৪ পয়েন্টে নেমেছিল সাধারণ সূচক।
অবশ্য টানা দরপতনকে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে বিএসইসি। তাই গতকাল দরপতনের কারণ তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। বড় পতনের কারণ, বাজার অস্থিতিশীল করতে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করতে কমিটিকে ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা রাজপথে
দরপতনের প্রতিবাদ ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে চলতি অক্টোবরের শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করে আসছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ৩ অক্টোবর বিএসইসিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। গতকালও রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীরা। আজ সোমবার ফের মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমার পোর্টফোলিও প্রায় ৫০ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। কী যে করব, কী করা উচিত—বুঝতে পারছি না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হচ্ছে না?’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘১৫ বছরে অসুস্থ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে এনে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যতগুলো কোম্পানির শেয়ার ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেককে ধরে বিনিয়োগকারীর টাকা উদ্ধার করে দিতে হবে। তবেই বাজার আস্থা ও আপন গতি ফিরে পাবে। তা ছাড়া আর উপায় নেই।’
কেন এমন হচ্ছে?
আতঙ্ক ও আস্থাহীনতাই চলমান দরপতনের কারণ বলে জানান মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবশ্যই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গত ১৫ বছরের অনিয়মের প্রতিফলন আছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি। আবার যাঁরা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁদেরকে ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
আশেকুর রহমানের মতে, ‘বাজারে আস্থা বড় ইস্যু। গত দু-তিন দিন থেকে ভালো শেয়ারের দামও পড়ে গেছে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা আস্থা থেকে অনেকখানি দূরে চলে গেছেন। এখন তাঁরা সব শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহসভাপতি রিয়াদ মতিন বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থাও এখন পর্যন্ত ঠিক হয়ে আসেনি। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি সংবিধান, রাষ্ট্রপতি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল, সেটা বলতে পারছি না।’
তবে আশার কথা বলছেন ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন সংকট ছিল, সবাই চুপ ছিল। কিন্তু এখন ধৈর্য ধরার সময়ে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাত অনেকটা গুছিয়ে এসেছে। তবে পুঁজিবাজারের সংস্কার চলছে। এর সুফল পাব।’
বিএসইসি ও ডিএসই যা বলছে
বর্তমান দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারের এই অবস্থা দীর্ঘদিনের ভুল সিদ্ধান্ত, অনিয়মের কারণে। এখন এগুলো ঠিক করা বা নীতিগত অসংগতি দূর করতে সময় লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব কাজ যে দীর্ঘ মেয়াদে করছি, তা নয়। স্বল্প মেয়াদেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা কীভাবে আদায় করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। আজকে (গতকাল) সকালেও আমরা প্রতিনিধিদলসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছি।
ব্যক্তিগত করদাতার ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর, লেনদেনের ওপর কর, ব্রোকারেজ হাউসের লোকসান কমানোর জন্য অগ্রিম কর (এআই) কীভাবে সমন্বয় করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই কিছু ইতিবাচক প্রভাব আসবে।’
বিএসইসি কী কাজ করছে—এমন প্রশ্নে সংস্থার মুখপাত্র রেজাউল করিমের বক্তব্য, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য বৃদ্ধির জন্য কমিশন কাজ করছে। আগামীতেও করবে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তাঁদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এসব সুপারিশ সুনির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়াও পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানোর জন্য আইসিবির সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের কাছে আর্থিক বরাদ্দের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকেও সুপারিশ করা হয়েছে।’
দীর্ঘদিনের অনিয়মের বলি দেশের পুঁজিবাজার। এখন এর খেসারত দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। লাগাতার দরপতনে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা তাঁরা। গত আড়াই মাসে ১৭ শতাংশ সূচক পতনের সঙ্গে পুঁজিবাজারের মূলধন কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। পুঁজি হারানোর এই মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক ও কর্তৃপক্ষের তরফে পর্যাপ্ত বা দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখে ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতেও আশার কথা বলছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ লম্বা সময় ধরে পুঁজিবাজার পতনমুখী রয়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে বাজার এখন অবমূল্যায়িত। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমে এসেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এসবের সঙ্গে পুঁজিবাজারও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। এই জায়গায় শেয়ার কেনার চাপ আসবে। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে চরম পর্যায়ের কারসাজি, ভালো কোম্পানির অভাব, খারাপ কোম্পানির তালিকাভুক্তি, সরকারসংশ্লিষ্টদের সুবিধা প্রদান, অপরাধের শাস্তি না হওয়ার মতো নানা অনিয়ম ছিল প্রাত্যহিক ঘটনা। এসবের মধ্যে দরপতন ঠেকাতে কৃত্রিম পদ্ধতি হিসেবে আরোপ করা হয়েছিল ফ্লোর প্রাইস। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রকৃতি বিকৃত করা হয়। তবে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরপরই বড় পতনের মুখে পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। বিষয়টি সবাই মেনেও নেন বাজার সংশোধনের অংশ হিসেবে। মাঝখানে কিছুটা আশা দেখা গেলেও সেই দরপতন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার।
এই অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন সরকার, নতুন কমিশন। আশা ছিল, নানামুখী উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। শুরুটা ভালোই হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর টানা চার কর্মদিবসে ডিএসইর সূচক বাড়ে ৭৮৬ পয়েন্ট। তবে এরপর বিনিয়োগকারীর হাসি উবে যায় লাগাতার দরপতনে।
গতকালও বড় পতন, কমিটি গঠন
পতনে পতনে এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, গত দুই মাসের মধ্যেই কয়েকবার শতাধিক পয়েন্টের বেশি সূচক কমেছে। গতকাল এক দিনেই কমেছে প্রায় দেড় শ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশের কাছাকাছি। এর মধ্য দিয়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের অবস্থান নেমেছে চার বছরে আগের স্থানে। এমন পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগকারীরা আঙুল তুলেছেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৪১টির, বেড়েছে ২৯টির। ২৬টির দর অপরিবর্তিত থাকে। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। সূচকের অবস্থান এর চেয়ে কম ছিল ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর। ওই দিন ৪ হাজার ৯৩৪ পয়েন্টে নেমেছিল সাধারণ সূচক।
অবশ্য টানা দরপতনকে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে বিএসইসি। তাই গতকাল দরপতনের কারণ তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। বড় পতনের কারণ, বাজার অস্থিতিশীল করতে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করতে কমিটিকে ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা রাজপথে
দরপতনের প্রতিবাদ ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে চলতি অক্টোবরের শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করে আসছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ৩ অক্টোবর বিএসইসিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। গতকালও রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীরা। আজ সোমবার ফের মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমার পোর্টফোলিও প্রায় ৫০ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। কী যে করব, কী করা উচিত—বুঝতে পারছি না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হচ্ছে না?’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘১৫ বছরে অসুস্থ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে এনে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যতগুলো কোম্পানির শেয়ার ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেককে ধরে বিনিয়োগকারীর টাকা উদ্ধার করে দিতে হবে। তবেই বাজার আস্থা ও আপন গতি ফিরে পাবে। তা ছাড়া আর উপায় নেই।’
কেন এমন হচ্ছে?
আতঙ্ক ও আস্থাহীনতাই চলমান দরপতনের কারণ বলে জানান মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবশ্যই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গত ১৫ বছরের অনিয়মের প্রতিফলন আছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি। আবার যাঁরা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁদেরকে ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
আশেকুর রহমানের মতে, ‘বাজারে আস্থা বড় ইস্যু। গত দু-তিন দিন থেকে ভালো শেয়ারের দামও পড়ে গেছে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা আস্থা থেকে অনেকখানি দূরে চলে গেছেন। এখন তাঁরা সব শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহসভাপতি রিয়াদ মতিন বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থাও এখন পর্যন্ত ঠিক হয়ে আসেনি। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি সংবিধান, রাষ্ট্রপতি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল, সেটা বলতে পারছি না।’
তবে আশার কথা বলছেন ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন সংকট ছিল, সবাই চুপ ছিল। কিন্তু এখন ধৈর্য ধরার সময়ে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাত অনেকটা গুছিয়ে এসেছে। তবে পুঁজিবাজারের সংস্কার চলছে। এর সুফল পাব।’
বিএসইসি ও ডিএসই যা বলছে
বর্তমান দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারের এই অবস্থা দীর্ঘদিনের ভুল সিদ্ধান্ত, অনিয়মের কারণে। এখন এগুলো ঠিক করা বা নীতিগত অসংগতি দূর করতে সময় লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব কাজ যে দীর্ঘ মেয়াদে করছি, তা নয়। স্বল্প মেয়াদেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা কীভাবে আদায় করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। আজকে (গতকাল) সকালেও আমরা প্রতিনিধিদলসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছি।
ব্যক্তিগত করদাতার ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর, লেনদেনের ওপর কর, ব্রোকারেজ হাউসের লোকসান কমানোর জন্য অগ্রিম কর (এআই) কীভাবে সমন্বয় করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই কিছু ইতিবাচক প্রভাব আসবে।’
বিএসইসি কী কাজ করছে—এমন প্রশ্নে সংস্থার মুখপাত্র রেজাউল করিমের বক্তব্য, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য বৃদ্ধির জন্য কমিশন কাজ করছে। আগামীতেও করবে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তাঁদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এসব সুপারিশ সুনির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়াও পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানোর জন্য আইসিবির সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের কাছে আর্থিক বরাদ্দের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকেও সুপারিশ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি ও যৌথ অংশীদারত্ব মিলিয়ে ৮৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের সঙ্গে করা বেশির ভাগ চুক্তিই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন
১৪ মিনিট আগেইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারাতেই আছে। চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ইউরোস্টেটের তথ্যমতে, এ সময় ইউরোপের বাজারগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর একই সময় ছি
১৬ মিনিট আগেঅন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবও পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি)। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।
১ ঘণ্টা আগে১৪৭ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে চতুর্থ দফায় ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে দুই বছর। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩১ মার্চ।
১ ঘণ্টা আগে