ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম
…বড় কাটরা, আহসান মঞ্জিল, হোসেনী দালান, ছোট কাটবার উঁচু ইমারতের ছাদের উপর লোক সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে যেত এবং অধিক উৎসাহীরা নৌকা সহযোগে নদীর মাঝখানে যেয়ে চাঁদ দেখত।... অতঃপর এই চেষ্টা চলত যে, আমি সর্বপ্রথম চাঁদ দেখব। নীল আকাশে অবশেষে চাঁদ দেখা গেল। খুশির একটা হল্লা (হৈচৈ) উঠল এবং একে অপরকে মোবারকবাদ দেওয়া শুরু করল। পটকা, বন্দুক ও তোপধ্বনি চলল এবং এমন আওয়াজ হলো যে, যারা কানে শোনে না তারাও শুনে নিল যে চাঁদ উঠে গেছে।
…ঢাকার বর্তমান মুসলিম বাসিন্দাদের সংস্কৃতিবান অংশ মোগল যুগের স্মৃতিবাহী। আজ তার উপর এতটুকু সংযোজন করছি যে, এখানে মোগল যুগেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরমেনীয়দের বসবাস ছিল এবং সকলেই ধনী সওদাগর ছিলেন। শেষের দিকে তারা বড় বড় জমিদারী কিনে নিয়েছিলেন। এজন্য ঢাকার খাবারদাবারে আরমেনীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। অর্থাৎ এখানে কিছু প্রাচীনতম খাবার রয়েছে, কিছু ইরানি খাবার, কিছু আরমেনীয় খাবার আছে এবং কিছু ঢাকার সুন্দর রুচির উদ্ভাবন।
মিস্টার পিটারের ভাষায় পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলমানদের রুচি হচ্ছে মিশ্রিত কাবাব এবং পোলাও। পোলাও দু’ভাবে রান্না হয়। সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ‘পাশানো’, প্রথম চাউল সিদ্ধ করে নেয়া হয়, যখন সামান্য সিদ্ধ বাকি থাকে তখন দরকারি মশলাপাতি দিয়ে দমে বসান হয়। এই নিয়ম সমস্ত ভূভারতে কমবেশি প্রচলিত আছে। অন্য পদ্ধতি, যেখানে বিদ্যা এবং কৌশলের প্রয়োজন পড়ে, যাকে এখানে ‘লেপিটা’ বলে অর্থাৎ পোলাও তার প্রকৃতরূপেই পোলাও হয়ে থাকে। ঢাকাবাসী চাল সিদ্ধ করে নিয়ে পোলাও তৈরি পদ্ধতি পছন্দ করে না। …যাহোক, ঢাকার বিশিষ্ট পোলাও হচ্ছে ‘খাচ্ছা’ পোলাও, যাতে মুরগির গোশত দেয়া হয় এবং মুরগির গোশতের টুকরা আস্ত রাখা হয় না। এর পরিচয় এই যে, গোশত মিশ্রিত থাকা সত্ত্বেও পৃথক দেখা যাবে। ঘি এত হবে না যে, চাউল ঘি শুষে নিয়ে আবার বের করে দেয় এবং প্রত্যেক চালের পেট ঘিতে পূর্ণ থাকবে। এরূপ মোরগ পোলাও ঢাকা ছাড়া কোথাও রান্না হয় না এবং ঢাকাবাসী ছাড়া এটা কেউ রান্নাও করে না। অন্যান্য শহরে যাকে মোরগ পোলাও বলে তার সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। …মাছ পোলাও এর মধ্যে রুই এবং ইলিশ মাছের পোলাও রান্না হতো। রুই মাছের পোলাও খুবই সুস্বাদু হয় এবং রান্না করার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। কিন্তু ইলিশ পোলাও যেভাবে রান্না হয় তাতে কোনো অভিজ্ঞতা বা বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একজন রুচিশীল ব্যক্তি ইলিশ পোলাও বুন্দিয়া পোলাওয়ের পদ্ধতিতে তৈরি করেছিলেন, এতে করে প্রকৃতই শুধুমাত্র নতুনত্ব এবং অসাধারণই হয়নি বরং মাছ পোলাওয়ের একটি উত্তম ধরনও উদ্ভাবিত হয়ে গেছে এবং স্বাদও দ্বিগুণ হয়ে গেছে কিন্তু খরচ এবং কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। …তেহারি প্রাচীন পোলাও, মশলাদার গোশত এবং চাউল একই সঙ্গে দমে দেয়া হয়। লোকেরা এটিকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল কিন্তু এখন পুনরায় এটি নবজীবন লাভ করেছে। এবংখুব ব্যাপকভাবে চলছে এবং এখন সকাল সকাল প্রত্যেক গলিতে ফেরিওলা গরম গরম তেহারি বিক্রি করে ঢাকাবাসীদের পোলাও খাবার স্বাদ আস্বাদনের সান্ত্বনা যোগাচ্ছে। তেহারি দাওয়াতে দেখা যায় না। ঘরোয়া খাবারে এটিকে গণ্য করা হয়।
… ‘কাবুলি’ প্রকৃতপক্ষেই খিচুড়ি গোত্রের এবং এটা প্রথমত গোশত ছাড়াই রান্না হতো অথবা গোশতের আখনী প্রয়োগে রান্না হতো। অতঃপর খাসির গোশত দেওয়া শুরু হয়। …খিচুড়ির কথা যখন এসেই পড়েছে তখন এটা বলা দরকার যে, ঢাকাবাসীরা বর্ষাকালে খিচুড়ি খেতে খুবই আগ্রহী। ভাজা মুগের খিচুড়ি যেমন সব জায়গাতে রান্না হয়ে থাকে এখানেও অনুরূপ রান্না হয় কিন্তু এখানে সিদ্ধ ডিম ঘিতে ভেজে অপরিহার্যভাবে খিচুড়িতে প্রয়োগ করা হয় এবং সাধারণভাবে খিচুড়ির সঙ্গে মোরগ বা খাসির গোশতের দো-পিঁয়াজাও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবারে ভাজা মুগের ডালের খিচুড়িতে কিমাও দেয়া হয়। …খোসাসহ মাষকলাইয়ের খিচুড়ি বিশেষ বিশেষ পরিবারে রান্না হয় এবং বিশিষ্ট লোকেরাই পছন্দ করেন। ‘শেবেত’ পোলাও (শাক পোলাও) যাকে বর্তমানে ‘সোইয়া’ পোলাও বলে। এটি শুধুমাত্র বছরে এক দু’বার রান্না হয়। এদিকে আকাশের রং বদলায় এবং আশ্বিন মাসে সোইয়া শাক (শুয়ো শাক) নতুন নতুন বাজারে আসে, আর সোইয়া পোলাও দস্তরখানে হাজির হয়ে যায়।
এ যেন শীতের আগমনের বিভ্রান্তি। মিশ্রিত (মজমুয়া) পোলাও এর প্রচলন এখন কম হয়ে গেছে, কেননা এটা প্রস্তুত করা অনেক বাবুর্চিরই সাধ্যের বাইরে। এই পোলাও এর পরিচয় এই ছিল যে, একই ডেগ থেকে তিন/চার স্বাদের রং বেরংএর পোলাও বের করা হতো। এটি ছিল এক ধরনের শিল্পকলা। কিন্তু ‘মাগলুবা পোলাও’ যার প্রচলন এখন খুবই কমে গেছে, মোগল এবং আরমেনীয় পরিবারের বিশিষ্ট জিনিস ছিল। এতে মোরগের পরিবর্তে খাসির চর্বিহীন গোশত, সম ওজনের অর্থাৎ যতটা চাল তত পরিমাণ গোশত দেয়া হতো এবং কপি, গাজর, শালগম, বীট, টমেটো ভেঙ্গে দমের সঙ্গে দেয়া হতো। এটি ইরানী-পছন্দ খাবার এবং ঢাকায় মোগল এবং আরমেনীয় পরিবারে উত্তম রান্না হতো। …
...ঢাকার প্রসিদ্ধ কাবাব হচ্ছে ‘পারসন্দের’ শিক কাবাব। এতবড় ভারী কাবাব আমি কোথাও দেখিনি, দশ পনের সের গোশতের এক একটি শিক তো সাধারণ কথা, কেননা এর চেয়ে বেশি ওজনের শিক কাবাব তৈরি হয়। এই কাবাবের পরিচয় এই যে, গোশত সেদ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ভঙ্গুরতা এবং শুকনো হবে, পচপচে ভাব হবে না, কেননা খোলা বা ভাঙ্গার সময়ে চুর চুর হয়ে যাবে এবং আস্ত চাক বের করা সম্ভব হবে না। এই কাবাবে গোশত ছাড়া আর কিছু যেমন বেসন বা অন্য কিছু মিশান হয় না। শিকের ভারি কাবাব, কিমা সুতা দিয়ে পেঁচিয়েও বানানো হয়। …বকরি ঈদে তো গরিব ঘরেও শিক আগুনে ওঠে। শিক কাবাব কই, শোল এবং চিংড়ি মাছেরও তৈরি হয় এবং অত্যন্ত উত্তম হয় কিন্তু কিছু কিছু বাড়িতে ইলিশ মাছের মত নাজুক এবং মোলায়েম সম্পূর্ণ মাছের শিক কাবাৰ সত্যিই অপূর্ব হয়।
আস্ত মুরগীর কাবাব, মোরগ মুসল্লম এখানে সাধারণত দুই ধরনের তৈরি হয়ে থাকে। প্রথমত শিকের কাবাব, বড় দাওয়াতের জন্য এক শিকে পঁচিশ মোরগ পর্যন্ত সেঁকা হয়।... দ্বিতীয় নম্বরের কাবাব হচ্ছে সেটি যাকে ‘মুসল্লম’ বলে এবং বর্তমানে হাণ্ডি কাবাবও বলা শুরু হয়েছে, যদিও উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও রয়েছে। বোটি কাবার শিক কাবাবসমূহের মধ্যে অত্যন্ত উপাদেয় জিনিস এবং স্বল্পসংখ্যক বাড়িতেই প্রস্তুত হয়। নার্গিসী কাবাব ছোট দাওয়াতে দেখা যায় তবে কম কেননা এই কাবাবে তেমন কোনো বিশেষ সৌন্দর্যও নেই। অবশ্য পোয়াটাক থেকে শুরু করে একসের দু’সেরের এক এক টুকরা গোশতের টিকা প্রচুর রান্না হয় এবং কিছু কিছু বাড়ির এটি প্রস্তুতের খ্যাতি এবং শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
…বড় কাটরা, আহসান মঞ্জিল, হোসেনী দালান, ছোট কাটবার উঁচু ইমারতের ছাদের উপর লোক সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে যেত এবং অধিক উৎসাহীরা নৌকা সহযোগে নদীর মাঝখানে যেয়ে চাঁদ দেখত।... অতঃপর এই চেষ্টা চলত যে, আমি সর্বপ্রথম চাঁদ দেখব। নীল আকাশে অবশেষে চাঁদ দেখা গেল। খুশির একটা হল্লা (হৈচৈ) উঠল এবং একে অপরকে মোবারকবাদ দেওয়া শুরু করল। পটকা, বন্দুক ও তোপধ্বনি চলল এবং এমন আওয়াজ হলো যে, যারা কানে শোনে না তারাও শুনে নিল যে চাঁদ উঠে গেছে।
…ঢাকার বর্তমান মুসলিম বাসিন্দাদের সংস্কৃতিবান অংশ মোগল যুগের স্মৃতিবাহী। আজ তার উপর এতটুকু সংযোজন করছি যে, এখানে মোগল যুগেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরমেনীয়দের বসবাস ছিল এবং সকলেই ধনী সওদাগর ছিলেন। শেষের দিকে তারা বড় বড় জমিদারী কিনে নিয়েছিলেন। এজন্য ঢাকার খাবারদাবারে আরমেনীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। অর্থাৎ এখানে কিছু প্রাচীনতম খাবার রয়েছে, কিছু ইরানি খাবার, কিছু আরমেনীয় খাবার আছে এবং কিছু ঢাকার সুন্দর রুচির উদ্ভাবন।
মিস্টার পিটারের ভাষায় পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলমানদের রুচি হচ্ছে মিশ্রিত কাবাব এবং পোলাও। পোলাও দু’ভাবে রান্না হয়। সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ‘পাশানো’, প্রথম চাউল সিদ্ধ করে নেয়া হয়, যখন সামান্য সিদ্ধ বাকি থাকে তখন দরকারি মশলাপাতি দিয়ে দমে বসান হয়। এই নিয়ম সমস্ত ভূভারতে কমবেশি প্রচলিত আছে। অন্য পদ্ধতি, যেখানে বিদ্যা এবং কৌশলের প্রয়োজন পড়ে, যাকে এখানে ‘লেপিটা’ বলে অর্থাৎ পোলাও তার প্রকৃতরূপেই পোলাও হয়ে থাকে। ঢাকাবাসী চাল সিদ্ধ করে নিয়ে পোলাও তৈরি পদ্ধতি পছন্দ করে না। …যাহোক, ঢাকার বিশিষ্ট পোলাও হচ্ছে ‘খাচ্ছা’ পোলাও, যাতে মুরগির গোশত দেয়া হয় এবং মুরগির গোশতের টুকরা আস্ত রাখা হয় না। এর পরিচয় এই যে, গোশত মিশ্রিত থাকা সত্ত্বেও পৃথক দেখা যাবে। ঘি এত হবে না যে, চাউল ঘি শুষে নিয়ে আবার বের করে দেয় এবং প্রত্যেক চালের পেট ঘিতে পূর্ণ থাকবে। এরূপ মোরগ পোলাও ঢাকা ছাড়া কোথাও রান্না হয় না এবং ঢাকাবাসী ছাড়া এটা কেউ রান্নাও করে না। অন্যান্য শহরে যাকে মোরগ পোলাও বলে তার সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। …মাছ পোলাও এর মধ্যে রুই এবং ইলিশ মাছের পোলাও রান্না হতো। রুই মাছের পোলাও খুবই সুস্বাদু হয় এবং রান্না করার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। কিন্তু ইলিশ পোলাও যেভাবে রান্না হয় তাতে কোনো অভিজ্ঞতা বা বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একজন রুচিশীল ব্যক্তি ইলিশ পোলাও বুন্দিয়া পোলাওয়ের পদ্ধতিতে তৈরি করেছিলেন, এতে করে প্রকৃতই শুধুমাত্র নতুনত্ব এবং অসাধারণই হয়নি বরং মাছ পোলাওয়ের একটি উত্তম ধরনও উদ্ভাবিত হয়ে গেছে এবং স্বাদও দ্বিগুণ হয়ে গেছে কিন্তু খরচ এবং কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। …তেহারি প্রাচীন পোলাও, মশলাদার গোশত এবং চাউল একই সঙ্গে দমে দেয়া হয়। লোকেরা এটিকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল কিন্তু এখন পুনরায় এটি নবজীবন লাভ করেছে। এবংখুব ব্যাপকভাবে চলছে এবং এখন সকাল সকাল প্রত্যেক গলিতে ফেরিওলা গরম গরম তেহারি বিক্রি করে ঢাকাবাসীদের পোলাও খাবার স্বাদ আস্বাদনের সান্ত্বনা যোগাচ্ছে। তেহারি দাওয়াতে দেখা যায় না। ঘরোয়া খাবারে এটিকে গণ্য করা হয়।
… ‘কাবুলি’ প্রকৃতপক্ষেই খিচুড়ি গোত্রের এবং এটা প্রথমত গোশত ছাড়াই রান্না হতো অথবা গোশতের আখনী প্রয়োগে রান্না হতো। অতঃপর খাসির গোশত দেওয়া শুরু হয়। …খিচুড়ির কথা যখন এসেই পড়েছে তখন এটা বলা দরকার যে, ঢাকাবাসীরা বর্ষাকালে খিচুড়ি খেতে খুবই আগ্রহী। ভাজা মুগের খিচুড়ি যেমন সব জায়গাতে রান্না হয়ে থাকে এখানেও অনুরূপ রান্না হয় কিন্তু এখানে সিদ্ধ ডিম ঘিতে ভেজে অপরিহার্যভাবে খিচুড়িতে প্রয়োগ করা হয় এবং সাধারণভাবে খিচুড়ির সঙ্গে মোরগ বা খাসির গোশতের দো-পিঁয়াজাও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবারে ভাজা মুগের ডালের খিচুড়িতে কিমাও দেয়া হয়। …খোসাসহ মাষকলাইয়ের খিচুড়ি বিশেষ বিশেষ পরিবারে রান্না হয় এবং বিশিষ্ট লোকেরাই পছন্দ করেন। ‘শেবেত’ পোলাও (শাক পোলাও) যাকে বর্তমানে ‘সোইয়া’ পোলাও বলে। এটি শুধুমাত্র বছরে এক দু’বার রান্না হয়। এদিকে আকাশের রং বদলায় এবং আশ্বিন মাসে সোইয়া শাক (শুয়ো শাক) নতুন নতুন বাজারে আসে, আর সোইয়া পোলাও দস্তরখানে হাজির হয়ে যায়।
এ যেন শীতের আগমনের বিভ্রান্তি। মিশ্রিত (মজমুয়া) পোলাও এর প্রচলন এখন কম হয়ে গেছে, কেননা এটা প্রস্তুত করা অনেক বাবুর্চিরই সাধ্যের বাইরে। এই পোলাও এর পরিচয় এই ছিল যে, একই ডেগ থেকে তিন/চার স্বাদের রং বেরংএর পোলাও বের করা হতো। এটি ছিল এক ধরনের শিল্পকলা। কিন্তু ‘মাগলুবা পোলাও’ যার প্রচলন এখন খুবই কমে গেছে, মোগল এবং আরমেনীয় পরিবারের বিশিষ্ট জিনিস ছিল। এতে মোরগের পরিবর্তে খাসির চর্বিহীন গোশত, সম ওজনের অর্থাৎ যতটা চাল তত পরিমাণ গোশত দেয়া হতো এবং কপি, গাজর, শালগম, বীট, টমেটো ভেঙ্গে দমের সঙ্গে দেয়া হতো। এটি ইরানী-পছন্দ খাবার এবং ঢাকায় মোগল এবং আরমেনীয় পরিবারে উত্তম রান্না হতো। …
...ঢাকার প্রসিদ্ধ কাবাব হচ্ছে ‘পারসন্দের’ শিক কাবাব। এতবড় ভারী কাবাব আমি কোথাও দেখিনি, দশ পনের সের গোশতের এক একটি শিক তো সাধারণ কথা, কেননা এর চেয়ে বেশি ওজনের শিক কাবাব তৈরি হয়। এই কাবাবের পরিচয় এই যে, গোশত সেদ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ভঙ্গুরতা এবং শুকনো হবে, পচপচে ভাব হবে না, কেননা খোলা বা ভাঙ্গার সময়ে চুর চুর হয়ে যাবে এবং আস্ত চাক বের করা সম্ভব হবে না। এই কাবাবে গোশত ছাড়া আর কিছু যেমন বেসন বা অন্য কিছু মিশান হয় না। শিকের ভারি কাবাব, কিমা সুতা দিয়ে পেঁচিয়েও বানানো হয়। …বকরি ঈদে তো গরিব ঘরেও শিক আগুনে ওঠে। শিক কাবাব কই, শোল এবং চিংড়ি মাছেরও তৈরি হয় এবং অত্যন্ত উত্তম হয় কিন্তু কিছু কিছু বাড়িতে ইলিশ মাছের মত নাজুক এবং মোলায়েম সম্পূর্ণ মাছের শিক কাবাৰ সত্যিই অপূর্ব হয়।
আস্ত মুরগীর কাবাব, মোরগ মুসল্লম এখানে সাধারণত দুই ধরনের তৈরি হয়ে থাকে। প্রথমত শিকের কাবাব, বড় দাওয়াতের জন্য এক শিকে পঁচিশ মোরগ পর্যন্ত সেঁকা হয়।... দ্বিতীয় নম্বরের কাবাব হচ্ছে সেটি যাকে ‘মুসল্লম’ বলে এবং বর্তমানে হাণ্ডি কাবাবও বলা শুরু হয়েছে, যদিও উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও রয়েছে। বোটি কাবার শিক কাবাবসমূহের মধ্যে অত্যন্ত উপাদেয় জিনিস এবং স্বল্পসংখ্যক বাড়িতেই প্রস্তুত হয়। নার্গিসী কাবাব ছোট দাওয়াতে দেখা যায় তবে কম কেননা এই কাবাবে তেমন কোনো বিশেষ সৌন্দর্যও নেই। অবশ্য পোয়াটাক থেকে শুরু করে একসের দু’সেরের এক এক টুকরা গোশতের টিকা প্রচুর রান্না হয় এবং কিছু কিছু বাড়ির এটি প্রস্তুতের খ্যাতি এবং শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪