খরস্রোতা নরসুন্দা যেন ভাগাড়

শাহজাহান সাজু, (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৬: ৫৫

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে নরসুন্দা নদী। একসময়ের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খরস্রোতা নদী এখন হয়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। বেশ কয়েক বছর আগে হোসেনপুর উপজেলার কাওনা এলাকায় বাঁধ দেওয়ার পর নদীটি হারিয়েছে প্রাণ। নরসুন্দাপারের বাসিন্দারা বলছেন, নদী শুরুর স্থানেই বাঁধ দেওয়ায় নদীটিকে যেন জেনে-বুঝে হত্যা করা হয়েছে। আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীকে পরিণত করা হয়েছে ভাগাড়ে। দূষিত করা হয়েছে নরসুন্দার পরিবেশ।

নরসুন্দার যৌবন ফেরাতে ২০১২ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। শুধু তাই নয়, নদীকেন্দ্রিক কিশোরগঞ্জ শহরকে আধুনিক শহর নির্মাণে নেওয়া হয় ব্যাপক পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের বৈঠকে অনুমোদন পায় একটি প্রকল্পও। `নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর। প্রথম ধাপে বরাদ্দ আসে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। পরে আরেক দফা বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি টাকা।

বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু পরে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। পরে ২০১৬ সালের জুন মাসে কোনো রকমে কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নদী খননসহ অবকাঠামোর কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে থেকে যায় পাহাড়সম অভিযোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানির প্রবাহের জন্য নদীর ৩৩ কিলোমিটার দায়সারাভাবে খনন করা হয়েছে। কিন্তু খননের পরেও ব্রহ্মপুত্র থেকে এক বালতি পানিও পায়নি নরসুন্দা। হোসেনপুরের কাওনা এলাকার নির্মিত বাঁধ আজও থেকে গেছে। এদিকে নদীতে পানি না আসায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নরসুন্দা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল নদী খনন করে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দায় পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা। আর ওই নদীকে ঘিরে শহর সুন্দরভাবে সাজানো। এ জন্য শহরে ছয় কিলোমিটার নদীর পাড় সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা, ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, ওয়াকওয়ে, দুটি পার্ক, মুক্তমঞ্চ, সুউচ্চ নদী পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ আরও কিছু কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য কাজ কোনো রকমে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু যে নদীকে ঘিরে এত আয়োজন, সেই নদীর পানির প্রবাহ না ফেরায় হতাশ হয়েছে কিশোরগঞ্জ শহরবাসী।

নদীর পাশে অবস্থিত জেলা শহরের ছোট-বড় বাজারের ময়লা-আবর্জনা নদীর পাড়ে, ব্রিজের পাশে, নদীর পানিতে ও ওয়াকওয়েতে দিনের পর দিন অবাধে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও নদীর জমাট পানি দূষণের প্রকোপ বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ড্রেন ও স্থাপনার ময়লা-আবর্জনার পানি নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। আর নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করছে।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, ‘খরস্রোতা নরসুন্দা এখন সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছে। বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে চরম দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছে শহরবাসী। নদী খননের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট করায় নদীর তলদেশের গভীরতা ও প্রশস্তের মাপ কিছুই ঠিক নেই। এখনো সময় আছে, ব্রহ্মপুত্রের মূল প্রবাহের বাঁধ কেটে নরসুন্দাকে যুক্ত করা হলে নদীটি আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।’

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সদস্যসচিব বাঁধন রায় বলেন, ‘নরসুন্দা নদীকে এখন আর নদী বলা যাবে না। এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে কোথাও কোথাও নদীর রেখা খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীটি কিশোরগঞ্জের দুঃখ হয়ে গেছে।’

এদিকে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘নরসুন্দা নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহের জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। এই অর্থবছর যেহেতু শেষ, তাই আগামী অর্থবছরে এর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের পৌর মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, ‘নদীকে ঘিরে যে বৃহৎ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে নদীর পাড় ভেঙে পড়া, নদীতে ময়লা–আবর্জনা, পানি ও পরিবেশ দূষণ হতো না। এই প্রকল্পের নিম্নমানের কাজের দায় এখন পৌরবাসীকে বহন করতে হচ্ছে। এত বছর হয়ে গেছে, এলজিইডি এখন পর্যন্ত পৌরসভার কাছে প্রকল্পটি বুঝিয়েও দেয়নি। তবু মাঝেমধ্যে পৌরসভার উদ্যোগে আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত