অনলাইন ডেস্ক
প্রায় তিন দশক ধরে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিরোধের মূলে রয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। সম্প্রতি এই অঞ্চলে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ। তবে জাতিগতভাবে আর্মেনিয়ান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দারাই তিন দশক ধরে অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ।
নাগর্নো-কারাবাখের অবস্থান কোথায়
অঞ্চলটি পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যে অবস্থিত। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আবারও বড় আকার ধারণ করে ২০২০ সালে। ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষে তখন প্রাণ হারায় কয়েক হাজার মানুষ। রুশ শান্তিরক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তখন যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তাতে কমেনি।
সবশেষ সংঘাতের কারণ কী
২০২২ সালের ডিসেম্বরে নাগর্নো-কারাবাখের লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করে আজারবাইজান। লাচিন করিডরটিই নাগর্নো-কারাবাখের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দার সঙ্গে আর্মেনিয়াকে যুক্ত করার একমাত্র পথ। লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করায় অঞ্চলটিতে খাদ্য ও ওষুধের অভাব দেখা দেয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আজারবাইজান দাবি করেছে, করিডরটি ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো আর্মেনিয়ানদের কাছে। অন্য একটি পথ দিয়ে খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ানরা তা প্রত্যাখ্যান করে বলে দাবি করেছে বাকু।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সাহায্য নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের কয়েকটি গাড়িকে লাচিন করিডর দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে উত্তেজনা কমে যাওয়ার আশা দেখা দেয়। কিন্তু লাচিন করিডর খোলা রাখা অনেকটাই নির্ভর করে অঞ্চলটিতে রুশ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবস্থানের ওপর। কিন্তু ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর মনোযোগ নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে যায়। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘রুশ সৈন্যরা নাগর্নো-কারাবাখ ছেড়ে যাচ্ছে।’
এই যুদ্ধের কারণ কী
১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। নাগর্নো-কারাবাখে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করত আজারবাইজান। অঞ্চলটির বাসিন্দারা যে আর্মেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায়, তা প্রমাণিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় নাগর্নো-কারাবাখের আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলোকে বরাবরই দমিয়ে রাখতে চেয়েছে আজারবাইজান। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছে আর্মেনিয়া। ফলে হয়েছে অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগর্নো-কারাবাখে অবস্থিত আজারবাইজানের শহর খোজালির বড়সংখ্যক বাসিন্দা নিহত হয়েছিল আর্মেনিয়ান বাহিনীর হাতে। বাকুর মতে, আজারবাইজানের ছয় শতাধিক মানুষকে সে সময় হত্যা করা হয়। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। এরপর কয়েক বছর ধরে চলা উভয় পক্ষের দ্বারা সংঘটিত জাতিগত সহিংসতা ও গণহত্যায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখ এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ লাভ করার পর ১৯৯৪ সালে রাশিয়ান মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে প্রথম নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। সেই চুক্তিতে বলা হয়, নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসেবেই থেকে যাবে। যদিও এর বেশির ভাগ অধিবাসীই জাতিগত আর্মেনিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত এবং আর্মেনিয়ান সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি ‘স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রের’ শাসনের অধীন রয়ে যায়।
২০২০ সালে কী ঘটেছিল
যুদ্ধবিরতি খুব একটা কার্যকর হয়নি অঞ্চলটিতে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষটি ঘটে ২০২০ সালে। ৬ সপ্তাহের তুমুল যুদ্ধের পর আবারও অঞ্চলটি দখল করে নেয় আজারবাইজান। ২০২০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে সই করে দুই দেশ। এর মাধ্যমে, ১৯৯৪ সাল থেকে নাগর্নো-কারাবাখের যেসব অঞ্চল আর্মেনিয়ার দখলে ছিল, সেসব আবার আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ চুক্তির অধীনে আর্মেনিয়ান বাহিনীকে এলাকাগুলো থেকে প্রত্যাহার করে একটি ছোট অংশে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাশিয়া ও তুরস্কের ভূমিকা পালনের কারণ কী
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলটিতে আঞ্চলিক শক্তিগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তাদের দৃষ্টি রেখেছে। আজারবাইজানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে তুরস্কের সম্পর্ক বেশ গভীর। তুরস্কে তৈরি বায়রাক্টার ড্রোনগুলো ২০২০ সালের লড়াইয়ে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজারবাইজানকে আবারও অঞ্চলটির দখল ফিরিয়ে আনতে এই ড্রোনগুলো সাহায্য করেছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই সুসম্পর্ক ছিল আর্মেনিয়ার। একটি রুশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আর্মেনিয়ায় এবং উভয়ই দেশই সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রের সামরিক জোট সিএসটিওর সদস্য। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকারবিরোধী বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী নিকোল পাশিনিয়ান আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আর্মেনিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
সম্প্রতি পাশিনিয়ান বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য কেবল রাশিয়ার ওপর নির্ভর করা ছিল তাদের ‘কৌশলগত ভুল’। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ মহড়ার আয়োজন করেছে আর্মেনিয়া। এই উদ্যোগকে মস্কো ‘অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
আর্মেনিয়া রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা ত্যাগ করেছে বলে স্বীকার করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি দাবি করেছেন, ইয়েরেভান নাকি নাগর্নো-কারাবাখের ওপর আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে। ভ্লাদিভোস্তকে ইকোনমিক ফোরামে পুতিন বলেন, ‘আর্মেনিয়া নিজেই যদি স্বীকার করে নেয় যে কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ, তবে আমাদের কী করা উচিত?’
এরপর কী ঘটবে
১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যুদ্ধের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আজারবাইজানের বাহিনী অনেক দূর এগিয়ে যায়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। বলা হয়, কারাবাখের সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র ও ভেঙে দেওয়া হবে এবং আলোচনা হবে এই ছিটমহলকে আজারবাইজানের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে। স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনার ফলাফল নাগর্নো-কারাবাখের ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ অতীতে বারবার বলেছেন, কারাবাখের বাসিন্দারা আজারবাইজানের অন্যান্য নাগরিকের মতো একই অধিকার ভোগ করবে। ২০২০ সালে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি কারাবাখের বাসিন্দাদের সীমিত মাত্রায় ‘স্বশাসনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আলিয়েভ আরও বলেছেন, আজারবাইজানের যেসব মানুষ গত কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতে অঞ্চলটি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, তাদের ফিরে যাওয়ার বিকল্পও এতে থাকা উচিত।
কিন্তু নাগর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ আজারবাইজান নিলে জাতিগত নির্মূলের শিকার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে আর্মেনিয়ানদের। সেই সঙ্গে কারাবাখ থেকে আর্মেনীয়রা পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারে বলেও তারা শঙ্কিত। তবে এই আশঙ্কার কথা অস্বীকার করেছে বাকু।
উল্লেখ্য, দুই দেশ কখনোই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং বছরের পর বছর ধরে আলোচনা সত্ত্বেও উভয় দেশের মধ্যে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক।
প্রায় তিন দশক ধরে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিরোধের মূলে রয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। সম্প্রতি এই অঞ্চলে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ। তবে জাতিগতভাবে আর্মেনিয়ান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দারাই তিন দশক ধরে অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ।
নাগর্নো-কারাবাখের অবস্থান কোথায়
অঞ্চলটি পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যে অবস্থিত। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আবারও বড় আকার ধারণ করে ২০২০ সালে। ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষে তখন প্রাণ হারায় কয়েক হাজার মানুষ। রুশ শান্তিরক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তখন যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তাতে কমেনি।
সবশেষ সংঘাতের কারণ কী
২০২২ সালের ডিসেম্বরে নাগর্নো-কারাবাখের লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করে আজারবাইজান। লাচিন করিডরটিই নাগর্নো-কারাবাখের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দার সঙ্গে আর্মেনিয়াকে যুক্ত করার একমাত্র পথ। লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করায় অঞ্চলটিতে খাদ্য ও ওষুধের অভাব দেখা দেয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আজারবাইজান দাবি করেছে, করিডরটি ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো আর্মেনিয়ানদের কাছে। অন্য একটি পথ দিয়ে খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ানরা তা প্রত্যাখ্যান করে বলে দাবি করেছে বাকু।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সাহায্য নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের কয়েকটি গাড়িকে লাচিন করিডর দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে উত্তেজনা কমে যাওয়ার আশা দেখা দেয়। কিন্তু লাচিন করিডর খোলা রাখা অনেকটাই নির্ভর করে অঞ্চলটিতে রুশ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবস্থানের ওপর। কিন্তু ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর মনোযোগ নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে যায়। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘রুশ সৈন্যরা নাগর্নো-কারাবাখ ছেড়ে যাচ্ছে।’
এই যুদ্ধের কারণ কী
১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। নাগর্নো-কারাবাখে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করত আজারবাইজান। অঞ্চলটির বাসিন্দারা যে আর্মেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায়, তা প্রমাণিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় নাগর্নো-কারাবাখের আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলোকে বরাবরই দমিয়ে রাখতে চেয়েছে আজারবাইজান। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছে আর্মেনিয়া। ফলে হয়েছে অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগর্নো-কারাবাখে অবস্থিত আজারবাইজানের শহর খোজালির বড়সংখ্যক বাসিন্দা নিহত হয়েছিল আর্মেনিয়ান বাহিনীর হাতে। বাকুর মতে, আজারবাইজানের ছয় শতাধিক মানুষকে সে সময় হত্যা করা হয়। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। এরপর কয়েক বছর ধরে চলা উভয় পক্ষের দ্বারা সংঘটিত জাতিগত সহিংসতা ও গণহত্যায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখ এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ লাভ করার পর ১৯৯৪ সালে রাশিয়ান মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে প্রথম নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। সেই চুক্তিতে বলা হয়, নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসেবেই থেকে যাবে। যদিও এর বেশির ভাগ অধিবাসীই জাতিগত আর্মেনিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত এবং আর্মেনিয়ান সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি ‘স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রের’ শাসনের অধীন রয়ে যায়।
২০২০ সালে কী ঘটেছিল
যুদ্ধবিরতি খুব একটা কার্যকর হয়নি অঞ্চলটিতে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষটি ঘটে ২০২০ সালে। ৬ সপ্তাহের তুমুল যুদ্ধের পর আবারও অঞ্চলটি দখল করে নেয় আজারবাইজান। ২০২০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে সই করে দুই দেশ। এর মাধ্যমে, ১৯৯৪ সাল থেকে নাগর্নো-কারাবাখের যেসব অঞ্চল আর্মেনিয়ার দখলে ছিল, সেসব আবার আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ চুক্তির অধীনে আর্মেনিয়ান বাহিনীকে এলাকাগুলো থেকে প্রত্যাহার করে একটি ছোট অংশে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাশিয়া ও তুরস্কের ভূমিকা পালনের কারণ কী
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলটিতে আঞ্চলিক শক্তিগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তাদের দৃষ্টি রেখেছে। আজারবাইজানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে তুরস্কের সম্পর্ক বেশ গভীর। তুরস্কে তৈরি বায়রাক্টার ড্রোনগুলো ২০২০ সালের লড়াইয়ে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজারবাইজানকে আবারও অঞ্চলটির দখল ফিরিয়ে আনতে এই ড্রোনগুলো সাহায্য করেছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই সুসম্পর্ক ছিল আর্মেনিয়ার। একটি রুশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আর্মেনিয়ায় এবং উভয়ই দেশই সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রের সামরিক জোট সিএসটিওর সদস্য। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকারবিরোধী বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী নিকোল পাশিনিয়ান আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আর্মেনিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
সম্প্রতি পাশিনিয়ান বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য কেবল রাশিয়ার ওপর নির্ভর করা ছিল তাদের ‘কৌশলগত ভুল’। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ মহড়ার আয়োজন করেছে আর্মেনিয়া। এই উদ্যোগকে মস্কো ‘অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
আর্মেনিয়া রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা ত্যাগ করেছে বলে স্বীকার করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি দাবি করেছেন, ইয়েরেভান নাকি নাগর্নো-কারাবাখের ওপর আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে। ভ্লাদিভোস্তকে ইকোনমিক ফোরামে পুতিন বলেন, ‘আর্মেনিয়া নিজেই যদি স্বীকার করে নেয় যে কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ, তবে আমাদের কী করা উচিত?’
এরপর কী ঘটবে
১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যুদ্ধের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আজারবাইজানের বাহিনী অনেক দূর এগিয়ে যায়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। বলা হয়, কারাবাখের সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র ও ভেঙে দেওয়া হবে এবং আলোচনা হবে এই ছিটমহলকে আজারবাইজানের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে। স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনার ফলাফল নাগর্নো-কারাবাখের ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ অতীতে বারবার বলেছেন, কারাবাখের বাসিন্দারা আজারবাইজানের অন্যান্য নাগরিকের মতো একই অধিকার ভোগ করবে। ২০২০ সালে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি কারাবাখের বাসিন্দাদের সীমিত মাত্রায় ‘স্বশাসনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আলিয়েভ আরও বলেছেন, আজারবাইজানের যেসব মানুষ গত কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতে অঞ্চলটি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, তাদের ফিরে যাওয়ার বিকল্পও এতে থাকা উচিত।
কিন্তু নাগর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ আজারবাইজান নিলে জাতিগত নির্মূলের শিকার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে আর্মেনিয়ানদের। সেই সঙ্গে কারাবাখ থেকে আর্মেনীয়রা পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারে বলেও তারা শঙ্কিত। তবে এই আশঙ্কার কথা অস্বীকার করেছে বাকু।
উল্লেখ্য, দুই দেশ কখনোই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং বছরের পর বছর ধরে আলোচনা সত্ত্বেও উভয় দেশের মধ্যে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে