অনলাইন ডেস্ক
ভারত, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ এখনো মাথাব্যথার কারণ হয়ে রয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাত ধরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে স্বামী ও স্ত্রী উভয় পক্ষের সমান আগ্রহের অভাবের কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকছে। ভারতের সর্বশেষ জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় (এনএফএইচএস-৫) এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। উত্তর ভারতীয় শহর লখনৌয়ের উপকণ্ঠের বাসিন্দা রঞ্জনী শর্মা (২৭)। তিন সন্তানের জননী তিনি। স্বামী বন্ধ্যাকরণের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই স্বামীকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, এতে স্বামীর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
যদিও রঞ্জনী স্বীকার করেন, তিনি বিরক্ত। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর সন্তান নেবেন না। কনডম ব্যবহার করছেন। কিন্তু কনডম ‘ফুলপ্রুফ পদ্ধতি’ প্রমাণিত হয়নি। দুবার গর্ভপাতের বড়ি খেতে হয়েছে তাঁকে।
রঞ্জনী বলেন, ‘আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। মাথা ঘুরছিল, চোখে অন্ধকার দেখছিলাম, সারাক্ষণ কিছু করতে পারিনি, প্রচণ্ড ক্লান্ত ছিলাম। তাই আমি তাঁকে (স্বামী) বলেছিলাম, এই বড়িগুলো খাওয়ার চেয়ে বন্ধ্যাকরণ ভালো।’
এই দম্পতি একবার ভেবেছিলেন, রঞ্জনীর পরিবর্তে স্বামীই বন্ধ্যাকরণ করবেন কি না। রঞ্জনী বলেন, ‘কিন্তু আমি তাঁকে না করেছি। তিনি তো পরিবারের উপার্জনকারী। বন্ধ্যাকরণ তাঁকে দুর্বল করে দেবে, তখন ভারী কাজ করতে পারবেন না।’ পরে রঞ্জনীই বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
বন্ধ্যাকরণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের এই ধারণার ব্যাপারে ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটিস অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ডক্টর এস শান্তা কুমারী বিবিসিকে বলেন, পুরুষদের বন্ধ্যাকরণ বা ভ্যাসেকটমি পুরুষত্বকে প্রভাবিত করবে—এ ধরনের ‘মিথ এবং ভুল ধারণা’ রয়েছে। এমন ধারণা পুরুষদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়, গর্ভনিরোধের দায়িত্ব থেকে পুরুষেরা দায়মুক্তি নেন। এভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় পুরোটাই নারীদের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে।
শান্তা কুমারী বলেন, ‘ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো পরিচালিত পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্পেইনগুলো শুধু নারীদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আমি বিশ্বাস করি, এটি পুরুষ এবং নারী উভয়েরই দায়িত্ব হওয়া উচিত। তাদের উভয়ের এই সিদ্ধান্তের অংশীদার হওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যায় দায় থাকে সব সময় নারীদের।’
২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে পরিচালিত সরকারের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সূচকগুলোর ব্যাপক পারিবারিক সমীক্ষায় শান্তা কুমারীর দাবির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে ৯৯ শতাংশের বেশি বিবাহিত পুরুষ এবং নারী গর্ভনিরোধের অন্তত একটি আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুরুষ এবং নারীদের নির্বীজকরণ, কনডম, বড়ি, ইনজেকশন এবং প্রেগনেন্সি ডিভাইস। দেখা গেছে, এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ২০১৫-১৬ ও ২০১৯-২১ সালের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
পরিসংখ্যানটি আশাব্যঞ্জক হলেও সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো অধরা। দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে একজনের কম পুরুষ—৯ দশমিক ৫ শতাংশ—কনডম ব্যবহার করেন। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে নির্বীজকরণ গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে রয়ে গেছে। এমনকি গত পাঁচ বছরে এই পদ্ধতির ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পুরুষদের নির্বীজকরণ, একটি নিরাপদ এবং সহজ পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহার মাত্র দশমিক ৩ শতাংশেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
সমীক্ষায় উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের ৫০ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, গর্ভনিরোধ হলো নারীদের ব্যাপার। পুরুষ কেন এটা নিয়ে চিন্তা করবে? অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রতি তিনজনের একজন পুরুষ এবং কর্ণাটকের ৪৫ শতাংশ পুরুষ একই মত পোষণ করেন।
অভিনব পাণ্ডে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির এই অসম দায় নিয়ে ২০১৭-১৯ সালে পাঁচটি রাজ্যে—উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থান—গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা এখনো নারীদের দায়িত্ব হিসেবেই রয়ে গেছে। সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য, এই মনোভাবটিকে আগে পরিবর্তন করতে হবে। সমস্ত রাজ্যে আমরা দেখেছি যে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে পুরুষদের অংশগ্রহণ খুবই কম। প্রধানত সচেতনতার অভাবে এমন হয়েছে।
গ্রামে এবং শহুরে দরিদ্রদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি এনজিও কর্মীরা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা হিসেবে বিনা মূল্যে কনডম বিতরণ করে।
কিন্তু জিবি পান্ট ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজ ইন রুরাল ডেভেলপমেন্টের আকাঙ্ক্ষা যাদব বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ কনডম বা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানার কারণে অনেক নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। অনেকের স্বামী রাতে মাতাল অবস্থায় বাড়িতে আসেন এবং সুরক্ষা ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সেটি নারীর একার মাথাব্যথার কারণে হয়ে দাঁড়ায়।
ডা. শান্তা কুমারী প্রথম উল্লেখ করা উদাহরণটির প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কেবল দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত গর্ভনিরোধের পক্ষে কথা বলেন, স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ নয়। তিনি বলেন, ‘একবার কোনো দম্পতির দুটি সন্তান হলে, আমি তাঁদের একটি অস্থায়ী কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ্যাকরণে যেতে বলি। কয়েক বছর পরে তাঁরা স্থায়ী বন্ধ্যাকরণে যেতে চান কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
শান্তা কুমারী বলেন, নারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক প্রেগনেন্সি ডিভাইস বা বড়ি আছে। কিন্তু পুরুষদের জন্য অনুরূপ কোনো কিছুই এখনো বাজারে নেই। পুরুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত গর্ভনিরোধক খুঁজে বের করার জন্য বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে।
অভিনব পাণ্ডে বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে অবশ্যই পুরুষদের কাছে পৌঁছানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। পুরুষেরা উন্মুক্ত ফোরামে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায় সবাই নারী। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি কনডম পৌঁছে দেন। পুরুষদের কাছে তাঁদের খুব কমই অ্যাকসেস থাকে। তাই আমরা পরামর্শ দিয়েছি যে সরকার পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করুক। এতে পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।’
পাণ্ডে বলেন, ২০১৬ সালে ভারতজুড়ে ১৪৮টি জেলায় একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছিল যেখানে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলার জন্য শাশুড়ি এবং পুত্রবধূদের ডাকা হয়। ২০১৯ সালে এই সভাগুলোতে স্বামীদেরও ডাকতে শুরু করে রাজস্থান রাজ্য। এর এক বছর পরে এটি উত্তর প্রদেশেও চালু করা হয়। এই উদ্যোগ পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতিতে বেশ ভূমিকা রেখেছিল। আমরা দেখেছি কিছু পুরুষ স্ত্রীর সঙ্গে কাউন্সেলিং সেশনে যেতে শুরু করেছিলেন। অবশ্য তাঁরা তখনো গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
শান্তা কুমারীর পরামর্শ হলো, এটি পরিবর্তন করার জন্য সরকার, চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমকে একযোগে প্রচারণা চালাতে হবে। তরুণদের বোঝাতে হবে যে, ভ্যাসেকটমি নিরাপদ এবং সহজ। এটি যতক্ষণ না ঘটছে, পুরুষেরা পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব এড়াতে থাকবে এবং গর্ভনিরোধের ভার শুধু নারীরই থাকবে।
ভারত, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ এখনো মাথাব্যথার কারণ হয়ে রয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাত ধরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে স্বামী ও স্ত্রী উভয় পক্ষের সমান আগ্রহের অভাবের কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকছে। ভারতের সর্বশেষ জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় (এনএফএইচএস-৫) এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। উত্তর ভারতীয় শহর লখনৌয়ের উপকণ্ঠের বাসিন্দা রঞ্জনী শর্মা (২৭)। তিন সন্তানের জননী তিনি। স্বামী বন্ধ্যাকরণের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই স্বামীকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, এতে স্বামীর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
যদিও রঞ্জনী স্বীকার করেন, তিনি বিরক্ত। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর সন্তান নেবেন না। কনডম ব্যবহার করছেন। কিন্তু কনডম ‘ফুলপ্রুফ পদ্ধতি’ প্রমাণিত হয়নি। দুবার গর্ভপাতের বড়ি খেতে হয়েছে তাঁকে।
রঞ্জনী বলেন, ‘আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। মাথা ঘুরছিল, চোখে অন্ধকার দেখছিলাম, সারাক্ষণ কিছু করতে পারিনি, প্রচণ্ড ক্লান্ত ছিলাম। তাই আমি তাঁকে (স্বামী) বলেছিলাম, এই বড়িগুলো খাওয়ার চেয়ে বন্ধ্যাকরণ ভালো।’
এই দম্পতি একবার ভেবেছিলেন, রঞ্জনীর পরিবর্তে স্বামীই বন্ধ্যাকরণ করবেন কি না। রঞ্জনী বলেন, ‘কিন্তু আমি তাঁকে না করেছি। তিনি তো পরিবারের উপার্জনকারী। বন্ধ্যাকরণ তাঁকে দুর্বল করে দেবে, তখন ভারী কাজ করতে পারবেন না।’ পরে রঞ্জনীই বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
বন্ধ্যাকরণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের এই ধারণার ব্যাপারে ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটিস অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ডক্টর এস শান্তা কুমারী বিবিসিকে বলেন, পুরুষদের বন্ধ্যাকরণ বা ভ্যাসেকটমি পুরুষত্বকে প্রভাবিত করবে—এ ধরনের ‘মিথ এবং ভুল ধারণা’ রয়েছে। এমন ধারণা পুরুষদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়, গর্ভনিরোধের দায়িত্ব থেকে পুরুষেরা দায়মুক্তি নেন। এভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় পুরোটাই নারীদের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে।
শান্তা কুমারী বলেন, ‘ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো পরিচালিত পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্পেইনগুলো শুধু নারীদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আমি বিশ্বাস করি, এটি পুরুষ এবং নারী উভয়েরই দায়িত্ব হওয়া উচিত। তাদের উভয়ের এই সিদ্ধান্তের অংশীদার হওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যায় দায় থাকে সব সময় নারীদের।’
২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে পরিচালিত সরকারের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সূচকগুলোর ব্যাপক পারিবারিক সমীক্ষায় শান্তা কুমারীর দাবির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে ৯৯ শতাংশের বেশি বিবাহিত পুরুষ এবং নারী গর্ভনিরোধের অন্তত একটি আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুরুষ এবং নারীদের নির্বীজকরণ, কনডম, বড়ি, ইনজেকশন এবং প্রেগনেন্সি ডিভাইস। দেখা গেছে, এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ২০১৫-১৬ ও ২০১৯-২১ সালের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
পরিসংখ্যানটি আশাব্যঞ্জক হলেও সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো অধরা। দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে একজনের কম পুরুষ—৯ দশমিক ৫ শতাংশ—কনডম ব্যবহার করেন। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে নির্বীজকরণ গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে রয়ে গেছে। এমনকি গত পাঁচ বছরে এই পদ্ধতির ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পুরুষদের নির্বীজকরণ, একটি নিরাপদ এবং সহজ পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহার মাত্র দশমিক ৩ শতাংশেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
সমীক্ষায় উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের ৫০ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, গর্ভনিরোধ হলো নারীদের ব্যাপার। পুরুষ কেন এটা নিয়ে চিন্তা করবে? অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রতি তিনজনের একজন পুরুষ এবং কর্ণাটকের ৪৫ শতাংশ পুরুষ একই মত পোষণ করেন।
অভিনব পাণ্ডে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির এই অসম দায় নিয়ে ২০১৭-১৯ সালে পাঁচটি রাজ্যে—উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থান—গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা এখনো নারীদের দায়িত্ব হিসেবেই রয়ে গেছে। সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য, এই মনোভাবটিকে আগে পরিবর্তন করতে হবে। সমস্ত রাজ্যে আমরা দেখেছি যে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে পুরুষদের অংশগ্রহণ খুবই কম। প্রধানত সচেতনতার অভাবে এমন হয়েছে।
গ্রামে এবং শহুরে দরিদ্রদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি এনজিও কর্মীরা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা হিসেবে বিনা মূল্যে কনডম বিতরণ করে।
কিন্তু জিবি পান্ট ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজ ইন রুরাল ডেভেলপমেন্টের আকাঙ্ক্ষা যাদব বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ কনডম বা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানার কারণে অনেক নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। অনেকের স্বামী রাতে মাতাল অবস্থায় বাড়িতে আসেন এবং সুরক্ষা ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সেটি নারীর একার মাথাব্যথার কারণে হয়ে দাঁড়ায়।
ডা. শান্তা কুমারী প্রথম উল্লেখ করা উদাহরণটির প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কেবল দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত গর্ভনিরোধের পক্ষে কথা বলেন, স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ নয়। তিনি বলেন, ‘একবার কোনো দম্পতির দুটি সন্তান হলে, আমি তাঁদের একটি অস্থায়ী কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ্যাকরণে যেতে বলি। কয়েক বছর পরে তাঁরা স্থায়ী বন্ধ্যাকরণে যেতে চান কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
শান্তা কুমারী বলেন, নারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক প্রেগনেন্সি ডিভাইস বা বড়ি আছে। কিন্তু পুরুষদের জন্য অনুরূপ কোনো কিছুই এখনো বাজারে নেই। পুরুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত গর্ভনিরোধক খুঁজে বের করার জন্য বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে।
অভিনব পাণ্ডে বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে অবশ্যই পুরুষদের কাছে পৌঁছানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। পুরুষেরা উন্মুক্ত ফোরামে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায় সবাই নারী। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি কনডম পৌঁছে দেন। পুরুষদের কাছে তাঁদের খুব কমই অ্যাকসেস থাকে। তাই আমরা পরামর্শ দিয়েছি যে সরকার পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করুক। এতে পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।’
পাণ্ডে বলেন, ২০১৬ সালে ভারতজুড়ে ১৪৮টি জেলায় একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছিল যেখানে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলার জন্য শাশুড়ি এবং পুত্রবধূদের ডাকা হয়। ২০১৯ সালে এই সভাগুলোতে স্বামীদেরও ডাকতে শুরু করে রাজস্থান রাজ্য। এর এক বছর পরে এটি উত্তর প্রদেশেও চালু করা হয়। এই উদ্যোগ পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতিতে বেশ ভূমিকা রেখেছিল। আমরা দেখেছি কিছু পুরুষ স্ত্রীর সঙ্গে কাউন্সেলিং সেশনে যেতে শুরু করেছিলেন। অবশ্য তাঁরা তখনো গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
শান্তা কুমারীর পরামর্শ হলো, এটি পরিবর্তন করার জন্য সরকার, চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমকে একযোগে প্রচারণা চালাতে হবে। তরুণদের বোঝাতে হবে যে, ভ্যাসেকটমি নিরাপদ এবং সহজ। এটি যতক্ষণ না ঘটছে, পুরুষেরা পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব এড়াতে থাকবে এবং গর্ভনিরোধের ভার শুধু নারীরই থাকবে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৯ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে