জাহাঙ্গীর আলম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশই নিরাপদ দূরত্বে থেকে দর্শক সারিতে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই সামরিক অভিযানকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়া সরাসরি সমর্থন করেছে। আর বাকি উপসাগরীয় অঞ্চলের সরকারগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে নীরব।
দামেস্ক বাদে সবাই রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার চেয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রতীকী প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল। পাশাপাশি কেউই কিন্তু মস্কোর বিরুদ্ধে অবরোধ আনতে পশ্চিমের সঙ্গে যোগ দেয়নি। শুধু ওয়াশিংটনের ইরানের মতো শত্রুই নয়; তুরস্ক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দীর্ঘদিনের মিত্রও এই অবস্থান জানান দিয়েছে। শেষোক্ত দুটি, এমনকি যুদ্ধের কারণে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য স্থিতিশীল রাখতে তেলের উৎপাদন বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই আপেক্ষিক নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা কী? এর একটি অন্যতম কারণ হলো ভূরাজনীতি। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোকে প্ররোচিত করা সত্ত্বেও কেউই (সিরিয়া বাদে) রাশিয়ার পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি, এটি মস্কোকে প্রত্যাখ্যানেরই ইঙ্গিত। অন্যরা বিপরীত যুক্তি দিয়েছেন: পুতিনকে ঠেকাতে এ অঞ্চলের প্রধান মিত্রদের রাজি করাতে ওয়াশিংটনের অক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমের প্রভাব হ্রাসেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উভয়ই সত্য, কিন্তু কোনোটা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস দেখানোটা বাড়াবাড়িই হবে। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের আপেক্ষিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে, তবে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা খুব কম। পশ্চিমা মিত্ররা, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে এখনো তাদের নিরাপত্তা কৌশল এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র অদূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাঁটিতে থাকবে, যদিও ইরাক এবং লিবিয়ার মতো এ অঞ্চলে সামরিক অভিযান এবং হস্তক্ষেপের খায়েশ আর নেই।
পশ্চিমের আপেক্ষিক প্রভাব হ্রাস তার মিত্রদের নিঃসন্দেহে সাবেক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে আরও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে তারা এখনই এ ধরনের মনোভাব প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান মনোভাব বুঝতে আরও দুটি বিষয় এখানে বিবেচনা করা দরকার। এর একটি হলো মতাদর্শগত মিল। ঠিক এ কারণেই রাশিয়া সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে খেলোয়াড় হিসেবে টিকবে। এতে করে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতি পুতিন কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন।
তবে এই অঞ্চলে রাশিয়ার বিনিয়োগ আমেরিকান উপস্থিতির চাপে নমনীয়, অস্থিতিস্থাপক এবং ক্ষুদ্রায়তনে থাকবে। বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি সিরিয়ার কয়েকটি ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। আর ইসরায়েল, মিসর, ইরান, তুরস্ক এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই সুযোগে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
নিকট ভবিষ্যতের চিত্রটা যখন এমন, আর সেটা সম্ভবত মোটামুটি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলো। ঠিক এমন উপলব্ধি থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর কাছে পুতিনকে চ্যালেঞ্জ করা বা তাঁকে পুরোপুরি সমর্থন করা দুটিই খুব সামান্য অর্থবহ।
কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ একটি আংশিক ব্যাখ্যা মাত্র। এখানে আঞ্চলিক বিষয়গুলোও গেমের মধ্যে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার ইউক্রেন সংকটকে সুবিধা আদায়ের সুযোগ হিসেবে দেখছে।
উদাহরণস্বরূপ, রিয়াদ আশা করছে, সাংবাদিক জামাল খাসোজি হত্যা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনা ফিরিয়ে নেবেন এবং তেল উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করার আগে ইয়েমেনে সৌদি আরবের অবস্থানের প্রতি সমর্থন বাড়াবেন। একইভাবে, হুতিদের সঙ্গে সংঘাত মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও প্রতিরক্ষা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আগ্রহী হয়েছে ইউএই।
তবে অন্যদিকে ইরানকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছে। রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি তাদের পরমাণু চুক্তির পুনরালোচনাকে লাইনচ্যুত করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। বিশেষ করে তেহরানের রুশপন্থী অবস্থান এখানে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
এখানে একটা আদর্শিক উপাদানও রয়েছে। কারও কারও জন্য, দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন বিরোধিতা রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করেছে। যা আলজেরিয়া, ইরাক এবং ইরানকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব থেকে বিরত রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদের জন্য, পুতিনের সঙ্গে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সংহতি রয়েছে। পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেন যুদ্ধকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের একটি লড়াই হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অবশ্যই, বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের সরকারের সঙ্গেই রাশিয়ার মিল রয়েছে। গত এক দশকে তারা নিজেদের অঞ্চলে গণতন্ত্রের বিস্তার সক্রিয়ভাবে দমন করেছে।
এই মিল হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের সরকারদের তাদের ট্যাংকে ইংরেজি ‘জি’ (Z) চিহ্ন আঁকতে প্ররোচিত করবে না, কিন্তু ইউক্রেনের বিজয়ের সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলবে।
এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও জড়িত। পুতিনের এই সামরিক অভিযান কয়েক দশকের মধ্যে ব্যতিক্রম। কিন্তু এই অভিযানের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় পরিচিত অজুহাতই খাড়া করা হচ্ছে: যখন হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জন্মায়।
মস্কোর ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা সরকারগুলোর ভণ্ডামিও কিন্তু সামনে আসছে। এটা তারা বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত করে এসেছে। তারা নিজেরাও এ দোষে দুষ্ট। অনেকে বলছেন, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পেছনে পশ্চিমারা অন্তত এক দশক ধরে উসকানি দিয়ে আসছে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক হস্তক্ষেপ একটি প্রিয় বিকল্প নীতি। তুরস্ক, ইরান, ইসরায়েল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন নীতির প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন এর মধ্যে কিছু সরকার পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে পুতিনকে নিন্দামন্দ করাটা বক-ধার্মিকতা এবং ভণ্ডামি হিসেবে দেখতে পারে। তারা মনে করে, এই যুদ্ধ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের নিরপেক্ষতার এই কারণগুলো পর্যালোচনা করলে অবাক হতে হয় যে, পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করেছিল। সিরিয়া বাদে আঞ্চলিক (মধ্যপ্রাচ্য) খেলোয়াড়দের বিভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। এমনকি রাশিয়া বা পশ্চিমা সরকারগুলোরও বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের সরকারকে তাদের লাইনে আসতে বাধ্য করার ক্ষমতা নেই। ফলে নিরাপদ দূরত্ব থেকে খেলা দেখাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে দৃশ্যমান।
এই অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে যদি রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্রদের বেড়া ডিঙিয়ে মাঠে নামার জন্য সম্মতি আদায়ে নতুন কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারে। তবে এটা অত সস্তায় হবার নয়! ফলে বলাই যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর এই সতর্ক নিরপেক্ষতা তাদের মধ্যে কারও কারও জন্য দামি পুরস্কার এনে দিতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশই নিরাপদ দূরত্বে থেকে দর্শক সারিতে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই সামরিক অভিযানকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়া সরাসরি সমর্থন করেছে। আর বাকি উপসাগরীয় অঞ্চলের সরকারগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে নীরব।
দামেস্ক বাদে সবাই রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার চেয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রতীকী প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল। পাশাপাশি কেউই কিন্তু মস্কোর বিরুদ্ধে অবরোধ আনতে পশ্চিমের সঙ্গে যোগ দেয়নি। শুধু ওয়াশিংটনের ইরানের মতো শত্রুই নয়; তুরস্ক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দীর্ঘদিনের মিত্রও এই অবস্থান জানান দিয়েছে। শেষোক্ত দুটি, এমনকি যুদ্ধের কারণে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য স্থিতিশীল রাখতে তেলের উৎপাদন বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই আপেক্ষিক নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা কী? এর একটি অন্যতম কারণ হলো ভূরাজনীতি। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোকে প্ররোচিত করা সত্ত্বেও কেউই (সিরিয়া বাদে) রাশিয়ার পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি, এটি মস্কোকে প্রত্যাখ্যানেরই ইঙ্গিত। অন্যরা বিপরীত যুক্তি দিয়েছেন: পুতিনকে ঠেকাতে এ অঞ্চলের প্রধান মিত্রদের রাজি করাতে ওয়াশিংটনের অক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমের প্রভাব হ্রাসেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উভয়ই সত্য, কিন্তু কোনোটা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস দেখানোটা বাড়াবাড়িই হবে। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের আপেক্ষিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে, তবে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা খুব কম। পশ্চিমা মিত্ররা, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে এখনো তাদের নিরাপত্তা কৌশল এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র অদূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাঁটিতে থাকবে, যদিও ইরাক এবং লিবিয়ার মতো এ অঞ্চলে সামরিক অভিযান এবং হস্তক্ষেপের খায়েশ আর নেই।
পশ্চিমের আপেক্ষিক প্রভাব হ্রাস তার মিত্রদের নিঃসন্দেহে সাবেক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে আরও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে তারা এখনই এ ধরনের মনোভাব প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান মনোভাব বুঝতে আরও দুটি বিষয় এখানে বিবেচনা করা দরকার। এর একটি হলো মতাদর্শগত মিল। ঠিক এ কারণেই রাশিয়া সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে খেলোয়াড় হিসেবে টিকবে। এতে করে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতি পুতিন কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন।
তবে এই অঞ্চলে রাশিয়ার বিনিয়োগ আমেরিকান উপস্থিতির চাপে নমনীয়, অস্থিতিস্থাপক এবং ক্ষুদ্রায়তনে থাকবে। বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি সিরিয়ার কয়েকটি ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। আর ইসরায়েল, মিসর, ইরান, তুরস্ক এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই সুযোগে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
নিকট ভবিষ্যতের চিত্রটা যখন এমন, আর সেটা সম্ভবত মোটামুটি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলো। ঠিক এমন উপলব্ধি থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর কাছে পুতিনকে চ্যালেঞ্জ করা বা তাঁকে পুরোপুরি সমর্থন করা দুটিই খুব সামান্য অর্থবহ।
কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ একটি আংশিক ব্যাখ্যা মাত্র। এখানে আঞ্চলিক বিষয়গুলোও গেমের মধ্যে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার ইউক্রেন সংকটকে সুবিধা আদায়ের সুযোগ হিসেবে দেখছে।
উদাহরণস্বরূপ, রিয়াদ আশা করছে, সাংবাদিক জামাল খাসোজি হত্যা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনা ফিরিয়ে নেবেন এবং তেল উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করার আগে ইয়েমেনে সৌদি আরবের অবস্থানের প্রতি সমর্থন বাড়াবেন। একইভাবে, হুতিদের সঙ্গে সংঘাত মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও প্রতিরক্ষা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আগ্রহী হয়েছে ইউএই।
তবে অন্যদিকে ইরানকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছে। রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি তাদের পরমাণু চুক্তির পুনরালোচনাকে লাইনচ্যুত করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। বিশেষ করে তেহরানের রুশপন্থী অবস্থান এখানে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
এখানে একটা আদর্শিক উপাদানও রয়েছে। কারও কারও জন্য, দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন বিরোধিতা রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করেছে। যা আলজেরিয়া, ইরাক এবং ইরানকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব থেকে বিরত রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদের জন্য, পুতিনের সঙ্গে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সংহতি রয়েছে। পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেন যুদ্ধকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের একটি লড়াই হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অবশ্যই, বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের সরকারের সঙ্গেই রাশিয়ার মিল রয়েছে। গত এক দশকে তারা নিজেদের অঞ্চলে গণতন্ত্রের বিস্তার সক্রিয়ভাবে দমন করেছে।
এই মিল হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের সরকারদের তাদের ট্যাংকে ইংরেজি ‘জি’ (Z) চিহ্ন আঁকতে প্ররোচিত করবে না, কিন্তু ইউক্রেনের বিজয়ের সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলবে।
এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও জড়িত। পুতিনের এই সামরিক অভিযান কয়েক দশকের মধ্যে ব্যতিক্রম। কিন্তু এই অভিযানের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় পরিচিত অজুহাতই খাড়া করা হচ্ছে: যখন হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জন্মায়।
মস্কোর ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা সরকারগুলোর ভণ্ডামিও কিন্তু সামনে আসছে। এটা তারা বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত করে এসেছে। তারা নিজেরাও এ দোষে দুষ্ট। অনেকে বলছেন, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পেছনে পশ্চিমারা অন্তত এক দশক ধরে উসকানি দিয়ে আসছে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক হস্তক্ষেপ একটি প্রিয় বিকল্প নীতি। তুরস্ক, ইরান, ইসরায়েল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন নীতির প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন এর মধ্যে কিছু সরকার পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে পুতিনকে নিন্দামন্দ করাটা বক-ধার্মিকতা এবং ভণ্ডামি হিসেবে দেখতে পারে। তারা মনে করে, এই যুদ্ধ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের নিরপেক্ষতার এই কারণগুলো পর্যালোচনা করলে অবাক হতে হয় যে, পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করেছিল। সিরিয়া বাদে আঞ্চলিক (মধ্যপ্রাচ্য) খেলোয়াড়দের বিভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। এমনকি রাশিয়া বা পশ্চিমা সরকারগুলোরও বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের সরকারকে তাদের লাইনে আসতে বাধ্য করার ক্ষমতা নেই। ফলে নিরাপদ দূরত্ব থেকে খেলা দেখাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে দৃশ্যমান।
এই অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে যদি রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্রদের বেড়া ডিঙিয়ে মাঠে নামার জন্য সম্মতি আদায়ে নতুন কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারে। তবে এটা অত সস্তায় হবার নয়! ফলে বলাই যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর এই সতর্ক নিরপেক্ষতা তাদের মধ্যে কারও কারও জন্য দামি পুরস্কার এনে দিতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
২ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৬ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১০ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১২ দিন আগে