অনলাইন ডেস্ক
ভুটানে হাতি-বাঘ পাওয়া যায় এই কথা শুনে আমেরিকার অনেকে নাক সিটকাতেন। অধিকাংশ বিদেশির মতো মার্কিনরাও বিশ্বাস করে, ভুটান হলো তুষারাবৃত পৃর্বত চূড়ায় অবস্থিত একটি তৃণভূমি। এমনকি যারা দেশটিতে ভ্রমণ করেছে, তারাও মনে করে, ভুটান ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত একটি উপক্রান্তীয় সমতলভূমি। ভুটানের রাজা জিগমে আমেরিকায় তাঁর ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এভাবেই বলেছিলেন।
সেই সময়ের দীর্ঘ ২৫ বছর পর, রাজা জিগমে নতুন এক মিশনে নেমেছেন। তিনি তাঁর দেশের দক্ষিণ অংশকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন। যেখানে কেবল বন্য প্রাণী নয়, থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত আনকোরা নতুন শহর। গত বছরের ডিসেম্বরে রাজা জিগমে নতুন এক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি ১ হাজার বর্গকিলোমিটারের এক সুবৃহৎ শহরে নির্মাণ করা হবে, যা আয়তনে সিঙ্গাপুরের চেয়েও বড় হবে। যেখানে থাকবে ১০ লাখের বেশি মানুষ। জায়গা দেওয়া হবে ডিজিটাল দুনিয়ার সব কর্মী—যারা এক দেশে থেকে অন্য দেশে কাজ করেন, বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী, ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা এবং ধনাঢ্য প্রবাসীদের এখানে আশ্রয় দেওয়া হবে। সুবিশাল এই শহরে জ্বালানি চাহিদা মেটানো হবে জলবিদ্যুৎ থেকে। মজার ব্যাপার হলো, ভুটানের বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ ৮০ হাজার।
রাজা জিগমেই একমাত্র ব্যক্তি নন, যার চোখধাঁধানো শহর বানানোর খায়েশ আছে। সৌদি আরবের নিওম, ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানী নুসানতারা এমন বড় শহর নির্মাণেরই উদ্যোগ। তবে ভুটানের গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি তিনটি কারণে, উল্লিখিত প্রকল্পগুলো থেকে আলাদা।
প্রথম বিষয়টি হলো ভূরাজনীতি। ভুটান চীন-ভারতের মাঝে অবস্থিত স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। সম্প্রতি মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গে বেইজিং-নয়াদিল্লির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রভাব বিস্তারের লড়াই তীব্রতর হয়েছে। ভুটান দীর্ঘদিন ধরে ভারত শিবিরে। কিন্তু গত এক দশকে দেশটি সীমান্ত বিরোধ সমাধানের দিকে এগিয়ে গিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য সংযোগ বাড়িয়ে নিয়েছে। ২০২৩ সালে ভুটান চীনের সঙ্গে ভূখণ্ড অদলবদলের খুব কাছাকাছি উপস্থিত হয়েছিল এবং সম্ভবত থিম্পু বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করেছে।
তবে ভারত ভুটানের এই অবস্থানের আপত্তি জানিয়েছে। ভুটানে শত শত ভারতীয় সেনা আছে এবং নয়াদিল্লির আশঙ্কা, দেশটিতে চীনের উপস্থিতি কোনো যুদ্ধের সময় চীনা বাহিনীকে ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। যাহোক, ভারত আগামী পাঁচ বছরে ভুটানে ১২০ কোটি ডলার উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
ভারত ভুটানের সবচেয়ে বড় সহায়তাকারী দেশ। ভুটানের মোট বৈদেশিক সাহায্যের ৩৬ শতাংশই ভারতীয়, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। ভারতও রাজা জিগমের গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি প্রকল্পকে সমর্থন করেছে। ভারত সেখানে সড়ক ও রেল যোগাযোগ নির্মাণ করছে এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির বিষয়েও আলোচনা করছে। ভারতের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো থেকে ধনকুবেররা গেলেফু সিটির বিলাসবহুল বাড়ি ও কম করের প্রতিশ্রুতির কারণে আকৃষ্ট হয়েছেন। তাঁরাও সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। ২ অক্টোবর ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ ভুটানের দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে, যার একটি গেলেফু সিটির কাছাকাছি। ভারতের আরেক জায়ান্ট, আদানি গ্রুপও সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটির গভর্নর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, ‘ভারতের নৈকট্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে দেশটির ঠিকাদারদের অনুমতি দেওয়ার শর্ত অনেক কম হবে।’ তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পে চীনের জড়িত থাকার বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে কাউকে বাদ দেওয়া হবে, এমন কোনো মানদণ্ড ভুটান নির্ধারণ করেনি বলেও জানান তিনি। মূলত চীন চাইলে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই বিষয়টির ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।
এই শহরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত করা। ভুটানে আড়াই গিগাওয়াটের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। কিন্তু দেশটির পক্ষে ৩০ গিগাওয়াটের বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। জিএমসির পরিচালকেরা বলছেন, তাঁরা বড় বড় ডেটা সেন্টার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন; যাঁরা পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসসহ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে জায়গা অনুসন্ধান করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বাধা হতে পারে, এআই-সম্পর্কিত প্রযুক্তিতে আমেরিকান রপ্তানি বিধিনিষেধ। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আত্মবিশ্বাসী যে তিনি মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন এবং ভারতকে ভুটানে তার ডেটা সংরক্ষণের অনুমতি দিতে রাজি করাতে পারবেন।
এই শহরে প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো শিথিল নিয়ন্ত্রণ। জিএমসি এমন এক ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’ হবে, যা সাধারণ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দেবে। এখানকার আইনগুলো তৈরি হবে সিঙ্গাপুরের ওপর ভিত্তি করে এবং আর্থিক বিধি তৈরি করা হবে আবুধাবির ওপর ভিত্তি করে; যাতে বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে, এআই, বায়োটেক এবং ক্রিপ্টোর মতো সেক্টরে সহজে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিষয়টি কল্পনাপ্রসূত মনে হলেও বাস্তবতা হলো—ভুটান এরই মধ্যে বিটকয়েনের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। দেশটির ছয়টি বিটকয়েন আছে অপারেশনাল মাইনসহ। গত সেপ্টেম্বরে ভুটানের বিটকয়েন হোল্ডিংয়ের মূল্য ছিল ৭৫ কোটি ডলার, যা বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
এই উদ্যোগের গোপনীয়তা কিছু ভুটানিকে উদ্বিগ্ন করেছে। বিদেশি কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন যে ভুটান অবৈধ উৎস বা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন দেশগুলো থেকেও বিনিয়োগ পেতে পারে। তবে ভুটান বলেছে, তারা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বাছাই করবে। কিন্তু সীমিত সম্পদ এবং ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশটি কতটা সফলভাবে তা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের সঙ্গে ভুটানের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
এই প্রকল্পের তৃতীয় অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর অতীতের অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন। ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া সুখী মানুষের সূচক প্রবর্তনের পর থেকে ভুটান উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটি জাতিসংঘের ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে। দেশটির তরুণ-যুবকসমাজের ৯৭ শতাংশই শিক্ষিত। তবে ২০১৫ সাল থেকে দেশটির অন্তত ৬ শতাংশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ায়। রাজা জিগমের আশা, জিএমসি প্রকল্প এই প্রবাসীদের আকৃষ্ট করবে। একই সঙ্গে অন্যান্য ভুটানিকে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শেখাবে। এই প্রকল্প সফল হলে সারা দেশে একই ধরনের নীতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এই শহরের সমর্থকেরা এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। শহরটিতে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ সাধন করা হবে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই শহরের মূল ধারণা আসলে জটিল। মূলত শহরটিকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এটি একটি ‘অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে এবং ভারতে প্রবেশে একটি দুয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেমনটা সিঙ্গাপুর ও হংকং চীনের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। এটি একটি সুদূরপ্রসারী প্রকল্প। কিন্তু তারপরও এটি ভুটানের ভবিষ্যতের একমাত্র আশা এখন—যেমনটা রাজা জিগমে বলেছেন কিছুদিন আগেই।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ভুটানে হাতি-বাঘ পাওয়া যায় এই কথা শুনে আমেরিকার অনেকে নাক সিটকাতেন। অধিকাংশ বিদেশির মতো মার্কিনরাও বিশ্বাস করে, ভুটান হলো তুষারাবৃত পৃর্বত চূড়ায় অবস্থিত একটি তৃণভূমি। এমনকি যারা দেশটিতে ভ্রমণ করেছে, তারাও মনে করে, ভুটান ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত একটি উপক্রান্তীয় সমতলভূমি। ভুটানের রাজা জিগমে আমেরিকায় তাঁর ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এভাবেই বলেছিলেন।
সেই সময়ের দীর্ঘ ২৫ বছর পর, রাজা জিগমে নতুন এক মিশনে নেমেছেন। তিনি তাঁর দেশের দক্ষিণ অংশকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন। যেখানে কেবল বন্য প্রাণী নয়, থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত আনকোরা নতুন শহর। গত বছরের ডিসেম্বরে রাজা জিগমে নতুন এক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি ১ হাজার বর্গকিলোমিটারের এক সুবৃহৎ শহরে নির্মাণ করা হবে, যা আয়তনে সিঙ্গাপুরের চেয়েও বড় হবে। যেখানে থাকবে ১০ লাখের বেশি মানুষ। জায়গা দেওয়া হবে ডিজিটাল দুনিয়ার সব কর্মী—যারা এক দেশে থেকে অন্য দেশে কাজ করেন, বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী, ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা এবং ধনাঢ্য প্রবাসীদের এখানে আশ্রয় দেওয়া হবে। সুবিশাল এই শহরে জ্বালানি চাহিদা মেটানো হবে জলবিদ্যুৎ থেকে। মজার ব্যাপার হলো, ভুটানের বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ ৮০ হাজার।
রাজা জিগমেই একমাত্র ব্যক্তি নন, যার চোখধাঁধানো শহর বানানোর খায়েশ আছে। সৌদি আরবের নিওম, ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানী নুসানতারা এমন বড় শহর নির্মাণেরই উদ্যোগ। তবে ভুটানের গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি তিনটি কারণে, উল্লিখিত প্রকল্পগুলো থেকে আলাদা।
প্রথম বিষয়টি হলো ভূরাজনীতি। ভুটান চীন-ভারতের মাঝে অবস্থিত স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। সম্প্রতি মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গে বেইজিং-নয়াদিল্লির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রভাব বিস্তারের লড়াই তীব্রতর হয়েছে। ভুটান দীর্ঘদিন ধরে ভারত শিবিরে। কিন্তু গত এক দশকে দেশটি সীমান্ত বিরোধ সমাধানের দিকে এগিয়ে গিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য সংযোগ বাড়িয়ে নিয়েছে। ২০২৩ সালে ভুটান চীনের সঙ্গে ভূখণ্ড অদলবদলের খুব কাছাকাছি উপস্থিত হয়েছিল এবং সম্ভবত থিম্পু বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করেছে।
তবে ভারত ভুটানের এই অবস্থানের আপত্তি জানিয়েছে। ভুটানে শত শত ভারতীয় সেনা আছে এবং নয়াদিল্লির আশঙ্কা, দেশটিতে চীনের উপস্থিতি কোনো যুদ্ধের সময় চীনা বাহিনীকে ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। যাহোক, ভারত আগামী পাঁচ বছরে ভুটানে ১২০ কোটি ডলার উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
ভারত ভুটানের সবচেয়ে বড় সহায়তাকারী দেশ। ভুটানের মোট বৈদেশিক সাহায্যের ৩৬ শতাংশই ভারতীয়, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। ভারতও রাজা জিগমের গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি প্রকল্পকে সমর্থন করেছে। ভারত সেখানে সড়ক ও রেল যোগাযোগ নির্মাণ করছে এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির বিষয়েও আলোচনা করছে। ভারতের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো থেকে ধনকুবেররা গেলেফু সিটির বিলাসবহুল বাড়ি ও কম করের প্রতিশ্রুতির কারণে আকৃষ্ট হয়েছেন। তাঁরাও সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। ২ অক্টোবর ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ ভুটানের দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে, যার একটি গেলেফু সিটির কাছাকাছি। ভারতের আরেক জায়ান্ট, আদানি গ্রুপও সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটির গভর্নর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, ‘ভারতের নৈকট্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে দেশটির ঠিকাদারদের অনুমতি দেওয়ার শর্ত অনেক কম হবে।’ তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পে চীনের জড়িত থাকার বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে কাউকে বাদ দেওয়া হবে, এমন কোনো মানদণ্ড ভুটান নির্ধারণ করেনি বলেও জানান তিনি। মূলত চীন চাইলে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই বিষয়টির ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।
এই শহরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত করা। ভুটানে আড়াই গিগাওয়াটের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। কিন্তু দেশটির পক্ষে ৩০ গিগাওয়াটের বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। জিএমসির পরিচালকেরা বলছেন, তাঁরা বড় বড় ডেটা সেন্টার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন; যাঁরা পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসসহ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে জায়গা অনুসন্ধান করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বাধা হতে পারে, এআই-সম্পর্কিত প্রযুক্তিতে আমেরিকান রপ্তানি বিধিনিষেধ। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আত্মবিশ্বাসী যে তিনি মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন এবং ভারতকে ভুটানে তার ডেটা সংরক্ষণের অনুমতি দিতে রাজি করাতে পারবেন।
এই শহরে প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো শিথিল নিয়ন্ত্রণ। জিএমসি এমন এক ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’ হবে, যা সাধারণ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দেবে। এখানকার আইনগুলো তৈরি হবে সিঙ্গাপুরের ওপর ভিত্তি করে এবং আর্থিক বিধি তৈরি করা হবে আবুধাবির ওপর ভিত্তি করে; যাতে বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে, এআই, বায়োটেক এবং ক্রিপ্টোর মতো সেক্টরে সহজে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিষয়টি কল্পনাপ্রসূত মনে হলেও বাস্তবতা হলো—ভুটান এরই মধ্যে বিটকয়েনের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। দেশটির ছয়টি বিটকয়েন আছে অপারেশনাল মাইনসহ। গত সেপ্টেম্বরে ভুটানের বিটকয়েন হোল্ডিংয়ের মূল্য ছিল ৭৫ কোটি ডলার, যা বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
এই উদ্যোগের গোপনীয়তা কিছু ভুটানিকে উদ্বিগ্ন করেছে। বিদেশি কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন যে ভুটান অবৈধ উৎস বা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন দেশগুলো থেকেও বিনিয়োগ পেতে পারে। তবে ভুটান বলেছে, তারা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বাছাই করবে। কিন্তু সীমিত সম্পদ এবং ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশটি কতটা সফলভাবে তা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের সঙ্গে ভুটানের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
এই প্রকল্পের তৃতীয় অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর অতীতের অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন। ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া সুখী মানুষের সূচক প্রবর্তনের পর থেকে ভুটান উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটি জাতিসংঘের ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে। দেশটির তরুণ-যুবকসমাজের ৯৭ শতাংশই শিক্ষিত। তবে ২০১৫ সাল থেকে দেশটির অন্তত ৬ শতাংশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ায়। রাজা জিগমের আশা, জিএমসি প্রকল্প এই প্রবাসীদের আকৃষ্ট করবে। একই সঙ্গে অন্যান্য ভুটানিকে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শেখাবে। এই প্রকল্প সফল হলে সারা দেশে একই ধরনের নীতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এই শহরের সমর্থকেরা এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। শহরটিতে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ সাধন করা হবে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই শহরের মূল ধারণা আসলে জটিল। মূলত শহরটিকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এটি একটি ‘অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে এবং ভারতে প্রবেশে একটি দুয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেমনটা সিঙ্গাপুর ও হংকং চীনের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। এটি একটি সুদূরপ্রসারী প্রকল্প। কিন্তু তারপরও এটি ভুটানের ভবিষ্যতের একমাত্র আশা এখন—যেমনটা রাজা জিগমে বলেছেন কিছুদিন আগেই।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে