হুসাইন আহমদ
চীন ও আরব বিশ্বের মধ্যে হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সফরের পরপরই আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেন থেকে এ ঘোষণা এল। গত মার্চেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সৌদি আরামকোর সঙ্গে চীনের দুটি বড় বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। নতুন এই বিনিয়োগের ঘোষণায় সৌদি আরব সরকারের প্রতিনিধিরা যেভাবে কথা বলেছেন, তা এমনিতেই উদ্বেগে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন সালমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘পশ্চিমা দুনিয়ার সমালোচনার তোয়াক্কা আমরা করি না। যেখানে সুবিধা পাব, সুবিধাজনক চুক্তি মিলবে, আমরা সেখানেই যাব। চীনে তেলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তার কিছুটা সৌদি আরব পূরণ করছে।’
পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির যুবরাজ বলেন, ‘চীন আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোগী। আমরা সহযোগিতার ভিত্তিতে এগোচ্ছি।’
একই সুরে গলা মিলিয়ে দেশটির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফলিহ বলেন, চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমাদের সন্দেহকে তাঁরা ‘আমলে’ নিচ্ছেন না। তাঁর মতে, চীনের সঙ্গে আরব দুনিয়ার প্রতিটি চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তেল ছাড়া অন্য শিল্পক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগ চুক্তি হবে, তা আরব দুনিয়ার চেহারা বদলে দিতে পারে।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব আর শীর্ষ জ্বালানি ভোক্তা দেশ চীন। দুই দেশকে একসঙ্গে জুড়েছে হাইড্রোকার্বন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, উষ্ণ রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্পর্শকাতর প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।
রাজধানী রিয়াদে গত রোববার শুরু হয়েছে আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেন। এটা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বেইজিং ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন- চীনের মধ্যস্ততায় ক্ষমতাধর বৈরী প্রতিবেশী ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন এবং এর ফলে আঞ্চলিক সম্পর্কে নতুন মোড়।
প্রায় ‘এক শতকের পুরোনো সম্পর্ক ঠিক করতে’ কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সৌদি আরব ঘুরে গেছেন। তার রেশ না কাটতেই চীনা বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিরা দলে দলে রিয়াদের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
এটি আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেনের দশম আসর হলেও তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব এবারই প্রথম আয়োজন করছে। দুই দিনের সম্মেলনে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন বলে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য।
শুরুর দিনেই ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগ সৌদি আরবসংশ্লিষ্ট। ইলেকট্রিক ও স্বচালিত গাড়ির নির্মাতা চীনা কোম্পানি হিউম্যান হরাইজন ও সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তার মূল্য ৫৬০ কোটি ডলার। এ ছাড়া প্রযুক্তি, কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আবাসন, প্রাকৃতিক সম্পদ, পর্যটনসহ নানা খাতে সহযোগিতার জন্য এমওইউ চুক্তি হয়েছে।
চীনে কয়েক শ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এবং দেশটির অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে নিজের অবস্থান জোরদারের ঘোষণা গত মার্চে দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো।
গত ডিসেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং সৌদি আরবে সফরের পর এটাই সবচেয়ে বড় ঘোষণা। তখন ডলারের আধিপত্য খর্ব করার লক্ষ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল কেনার প্রস্তাব দেন। চীনে তেলের চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়বে। আর তাই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার নীতি নিয়েছে সৌদি আরব।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা চীন ও সৌদি আরব নিয়ন্ত্রিত উপসাগরীয় জোট গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মধ্যে প্রায় দুই দশক ধরে চলা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা হয়তো সফল পরিণতির দিকে যাবে।
আঞ্চলিক ও উদীয়মান শিল্প খাত রক্ষার পাশাপাশি রপ্তানি সক্ষমতা তৈরিতে জোর দিয়ে জ্বালানিমন্ত্রী ফলিহ বলেন, চীন ও জিসিসির মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই সই হবে বলে তিনি আশা করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার অবসানের লক্ষ্যে বেইজিংয়ের মধ্যস্ততায় গত মার্চে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছিল, তারপরই সতর্কঘণ্টা বেজেছে ওয়াশিংটনে। ওই সময়ই চীনের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক ব্যাপক মজবুত করার উদ্যোগ নেয় সৌদি আরব। ৩৬০ কোটি ডলারে চীনের রংশেং পেট্রোক্যামিক্যালের ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়। এর আওতায় ওই কোম্পানিতে দিনে ৪ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করার কথা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা যখন তীব্রতর হচ্ছে, তখন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বৈশ্বিক অংশীদারত্বে ভিন্ন মিত্র বেছে নিচ্ছে। তবে সৌদি আরবের মতো রাষ্ট্র চীনের ঘনিষ্ট হলেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া থেকে দেশটি এখনো বহু দূরে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে দূরত্ব যাই হোক, সম্পর্ক যে গভীরতর হচ্ছে তা স্পষ্ট। এরই মধ্যে চীনের নেতৃত্বে এশীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতি বিষয়ক জোটে যোগ দেওয়ার পথে বেশ এগিয়েছে সৌদি আরব। বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতির অংশ হিসেবে মার্চের শেষ সপ্তাহে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) ‘সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই দেশ। বেশিরভার সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ নিয়ে গঠিত এসসিওতে রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের মতো বড় অর্থনৈতিক শক্তিও আছে। শিগগিরই এই জোটে পূর্ণাঙ্গ সদস্য পদ পেতে পারে সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গতানুগতিক একরৈখিক সম্পর্কের’ দিন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন সৌদি বিশ্লেষক ও লেখক আলি শিহাবি। তিনি বলেন, ‘আমরা আরো মুক্ত সম্পর্কের পথে যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার রেখেও চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যদের সঙ্গে সমান সম্পর্ক তৈরি হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে শিহাবি বলেন, এই মেরুকরণের কারণে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন রূপের প্রভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসে। সৌদি রাজতন্ত্রের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে নানাভাবে নিজের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এমন ধরনের কৌশলগত সম্পর্কের পোর্টফোলিও সামনে রাখা।’
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এই রাজতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা বিনতে বন্দর আল সৌদও অক্টোবরে সিএনএনের বেকি অ্যান্ডারসনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্কের মূল্যায়ন ‘ইতিবাচক বিষয়’।
‘এই রাজতন্ত্র পাঁচ বছর বা ১০ বছর আগের অবস্থায় নেই। কাজেই এখন যেসব বিশ্লেষণ বিদ্যমান, তার সবটাই মেয়াদোত্তীর্ণ।’
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওয়ালি নাসর মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, এই নীতি যে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, সৌদি আরবের আজকের বাস্তবতা তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তবে মধ্যপ্রাচ্য এখনই যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, তা না। কারণ, এখন পর্যন্ত দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্র ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র মূলত এই অঞ্চলে ভূ-রাজনীতি নিয়ে খেলে। অন্যদিকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে না জড়িয়ে অর্থনীতিমুখী নীতি বেইজিংয়ের। তাই এখনই সৌদি-চীন সম্পর্ক এখনই পূর্ণ বিকশিত রূপ পাবে না।
কিন্তু ইরান-সৌদি আরব পুনর্মিলনের মধ্যস্থতা করে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে জড়ানোর ইঙ্গিত কি দিচ্ছে না চীন?
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন
চীন ও আরব বিশ্বের মধ্যে হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সফরের পরপরই আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেন থেকে এ ঘোষণা এল। গত মার্চেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সৌদি আরামকোর সঙ্গে চীনের দুটি বড় বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। নতুন এই বিনিয়োগের ঘোষণায় সৌদি আরব সরকারের প্রতিনিধিরা যেভাবে কথা বলেছেন, তা এমনিতেই উদ্বেগে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন সালমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘পশ্চিমা দুনিয়ার সমালোচনার তোয়াক্কা আমরা করি না। যেখানে সুবিধা পাব, সুবিধাজনক চুক্তি মিলবে, আমরা সেখানেই যাব। চীনে তেলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তার কিছুটা সৌদি আরব পূরণ করছে।’
পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির যুবরাজ বলেন, ‘চীন আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোগী। আমরা সহযোগিতার ভিত্তিতে এগোচ্ছি।’
একই সুরে গলা মিলিয়ে দেশটির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফলিহ বলেন, চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমাদের সন্দেহকে তাঁরা ‘আমলে’ নিচ্ছেন না। তাঁর মতে, চীনের সঙ্গে আরব দুনিয়ার প্রতিটি চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তেল ছাড়া অন্য শিল্পক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগ চুক্তি হবে, তা আরব দুনিয়ার চেহারা বদলে দিতে পারে।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব আর শীর্ষ জ্বালানি ভোক্তা দেশ চীন। দুই দেশকে একসঙ্গে জুড়েছে হাইড্রোকার্বন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, উষ্ণ রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্পর্শকাতর প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।
রাজধানী রিয়াদে গত রোববার শুরু হয়েছে আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেন। এটা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বেইজিং ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন- চীনের মধ্যস্ততায় ক্ষমতাধর বৈরী প্রতিবেশী ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন এবং এর ফলে আঞ্চলিক সম্পর্কে নতুন মোড়।
প্রায় ‘এক শতকের পুরোনো সম্পর্ক ঠিক করতে’ কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সৌদি আরব ঘুরে গেছেন। তার রেশ না কাটতেই চীনা বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিরা দলে দলে রিয়াদের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
এটি আরব-চীন বাণিজ্য সম্মেলেনের দশম আসর হলেও তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব এবারই প্রথম আয়োজন করছে। দুই দিনের সম্মেলনে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন বলে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য।
শুরুর দিনেই ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগ সৌদি আরবসংশ্লিষ্ট। ইলেকট্রিক ও স্বচালিত গাড়ির নির্মাতা চীনা কোম্পানি হিউম্যান হরাইজন ও সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তার মূল্য ৫৬০ কোটি ডলার। এ ছাড়া প্রযুক্তি, কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আবাসন, প্রাকৃতিক সম্পদ, পর্যটনসহ নানা খাতে সহযোগিতার জন্য এমওইউ চুক্তি হয়েছে।
চীনে কয়েক শ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এবং দেশটির অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে নিজের অবস্থান জোরদারের ঘোষণা গত মার্চে দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো।
গত ডিসেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং সৌদি আরবে সফরের পর এটাই সবচেয়ে বড় ঘোষণা। তখন ডলারের আধিপত্য খর্ব করার লক্ষ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল কেনার প্রস্তাব দেন। চীনে তেলের চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়বে। আর তাই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার নীতি নিয়েছে সৌদি আরব।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা চীন ও সৌদি আরব নিয়ন্ত্রিত উপসাগরীয় জোট গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মধ্যে প্রায় দুই দশক ধরে চলা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা হয়তো সফল পরিণতির দিকে যাবে।
আঞ্চলিক ও উদীয়মান শিল্প খাত রক্ষার পাশাপাশি রপ্তানি সক্ষমতা তৈরিতে জোর দিয়ে জ্বালানিমন্ত্রী ফলিহ বলেন, চীন ও জিসিসির মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই সই হবে বলে তিনি আশা করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার অবসানের লক্ষ্যে বেইজিংয়ের মধ্যস্ততায় গত মার্চে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছিল, তারপরই সতর্কঘণ্টা বেজেছে ওয়াশিংটনে। ওই সময়ই চীনের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক ব্যাপক মজবুত করার উদ্যোগ নেয় সৌদি আরব। ৩৬০ কোটি ডলারে চীনের রংশেং পেট্রোক্যামিক্যালের ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়। এর আওতায় ওই কোম্পানিতে দিনে ৪ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করার কথা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা যখন তীব্রতর হচ্ছে, তখন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বৈশ্বিক অংশীদারত্বে ভিন্ন মিত্র বেছে নিচ্ছে। তবে সৌদি আরবের মতো রাষ্ট্র চীনের ঘনিষ্ট হলেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া থেকে দেশটি এখনো বহু দূরে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে দূরত্ব যাই হোক, সম্পর্ক যে গভীরতর হচ্ছে তা স্পষ্ট। এরই মধ্যে চীনের নেতৃত্বে এশীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতি বিষয়ক জোটে যোগ দেওয়ার পথে বেশ এগিয়েছে সৌদি আরব। বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতির অংশ হিসেবে মার্চের শেষ সপ্তাহে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) ‘সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই দেশ। বেশিরভার সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ নিয়ে গঠিত এসসিওতে রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের মতো বড় অর্থনৈতিক শক্তিও আছে। শিগগিরই এই জোটে পূর্ণাঙ্গ সদস্য পদ পেতে পারে সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গতানুগতিক একরৈখিক সম্পর্কের’ দিন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন সৌদি বিশ্লেষক ও লেখক আলি শিহাবি। তিনি বলেন, ‘আমরা আরো মুক্ত সম্পর্কের পথে যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার রেখেও চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যদের সঙ্গে সমান সম্পর্ক তৈরি হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে শিহাবি বলেন, এই মেরুকরণের কারণে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন রূপের প্রভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসে। সৌদি রাজতন্ত্রের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে নানাভাবে নিজের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এমন ধরনের কৌশলগত সম্পর্কের পোর্টফোলিও সামনে রাখা।’
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এই রাজতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা বিনতে বন্দর আল সৌদও অক্টোবরে সিএনএনের বেকি অ্যান্ডারসনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্কের মূল্যায়ন ‘ইতিবাচক বিষয়’।
‘এই রাজতন্ত্র পাঁচ বছর বা ১০ বছর আগের অবস্থায় নেই। কাজেই এখন যেসব বিশ্লেষণ বিদ্যমান, তার সবটাই মেয়াদোত্তীর্ণ।’
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওয়ালি নাসর মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, এই নীতি যে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, সৌদি আরবের আজকের বাস্তবতা তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তবে মধ্যপ্রাচ্য এখনই যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, তা না। কারণ, এখন পর্যন্ত দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্র ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র মূলত এই অঞ্চলে ভূ-রাজনীতি নিয়ে খেলে। অন্যদিকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে না জড়িয়ে অর্থনীতিমুখী নীতি বেইজিংয়ের। তাই এখনই সৌদি-চীন সম্পর্ক এখনই পূর্ণ বিকশিত রূপ পাবে না।
কিন্তু ইরান-সৌদি আরব পুনর্মিলনের মধ্যস্থতা করে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে জড়ানোর ইঙ্গিত কি দিচ্ছে না চীন?
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে