অনলাইন ডেস্ক
ভারতের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং পররাষ্ট্রনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানে যোগ দেওয়ার বাংলাদেশ বরাবরই আগ্রহী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সম্প্রতি আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নিয়ে সালিসের অভিজ্ঞতা ও এই অঞ্চলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোটে বাংলাদেশের যোগদানের পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। আপাতত বাংলাদেশের এই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয় বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে না।
মালয়েশিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস বা আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবে আগামী বছর। গত বুধবার ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গে বৈঠকের সময় আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিষয়টি মালয়েশিয়ার সরকারকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন হাইকমিশনার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর গত মাসের প্রথম দিকে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আসেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংকটে থাকা দেশের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁর সামনে।
মালয়েশিয়ার প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা ওহ ই সান বলেন, ‘বিরাজমান রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ আসিয়ান দেশ বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং দেশটির উন্নয়নের দুর্দান্ত সম্ভাবনা দেখে। তবে এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ পেতে আবেদনের আগে বাংলাদেশকে অবশ্যই রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিকভাবে স্থিতিশীল হতে হবে।’
এছাড়া আসিয়ানের সামনে মিয়ানমারের সংকটের মতো বেশ কিছু ‘মাথা ঘামানোর’ বিষয় থাকায় বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়াটা এখন সহজ হবে না বলে মনে করেন সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো ওহ ই সান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সংকট এখনো চলছে। এই অবস্থায় আসিয়ান নিশ্চয়ই নতুন কোনো সদস্য নিতে চাইবে না যারা নিজেরাই এখনো অনেক সমস্যার মধ্যে আছে। তাড়াহুড়োর তো প্রশ্নই আসে না।’
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা আগামী বছর আসিয়ানের সদস্য হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়টি যোগ করে ওহ বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্বও বাংলাদেশের জোটে যোগদানের পথে বাধা হতে পারে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত আসিয়ান জোট। একদিকে মিয়ানমারের জান্তার কড়া সমালোচক জোটের সদস্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। অন্যদিকে সরাসরি জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় থাইল্যান্ড।
আসিয়ানের দৃষ্টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে নিবদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের আসিয়ানের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের গবেষক ইশরাত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কারণ, ঢাকা এর আগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্ত হওয়ার মতো বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।’
তাঁর মতে, আসিয়ানে যোগদানে বাংলাদেশের পরিকল্পনা হাসিনার ‘ভারতকেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি’ থেকে দূরে সরে গিয়ে পূর্বের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
হাসিনা তাঁর শাসনামলে ভারতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। জুলাই মাসে নয়া দিল্লি সফরের সময় তাঁর প্রশাসন মেরিটাইম সহযোগিতা, ডিজিটাল অংশীদারত্ব এবং মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে রেল সংযোগের মতো বিষয়ে ১০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেয়ারব্যাংক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক ফেলো অণু আনোয়ার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতি ক্ষোভও আসিয়ানের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্ররোচিত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ভারতের অপ্রতিরোধ্য হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া থেকে উৎসারিত। সেই বিবেচনায় ভারতের প্রভাব প্রশমিত করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থানকে শক্তিশালী করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আসিয়ানকে বিবেচনা করছে ঢাকা।
শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বশেষ তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ২৫ হাজারেরও বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়। তবে ভারত এই নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানায়। এ কারণে বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান বেশ জোরালো। নয়া দিল্লি তার স্বার্থ রক্ষায় হাসিনাকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে গেছে।
অণু বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে ঢাকার প্রত্যাশার ভিত্তিকে জোরালো করে তুলেছে। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধেও বিগত কয়েক মাসে আরও প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
মাদক ও মানব পাচারের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও আসিয়ান ও বাংলাদেশ হাত মেলাতে পারে বলে মনে করেন অণু। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সির (ইটলস) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আসিয়ান সদস্যদের মূল্যবান দক্ষতা প্রদান করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক এই আদালত ২০১৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রসীমার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে একটি মামলায় ঢাকার পক্ষে রায় দেয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইটলসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলায় জেতে। এর ফলে মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারায়। দক্ষিণ চীন সাগরে অঞ্চল, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্পদ অনুসন্ধান নিয়ে যেখানে আসিয়ানের সদস্য দেশ মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ। সেখানে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে।
অণু আনোয়ার বলেন, ‘তাই, কৌশলগত অবস্থান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের কারণে আসিয়ানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আসিয়ানের স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জ মিলে যাওয়াও সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ঢাকা আগ্রহকে ন্যায্যতা দিতে পারে।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
ভারতের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং পররাষ্ট্রনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানে যোগ দেওয়ার বাংলাদেশ বরাবরই আগ্রহী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সম্প্রতি আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নিয়ে সালিসের অভিজ্ঞতা ও এই অঞ্চলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোটে বাংলাদেশের যোগদানের পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। আপাতত বাংলাদেশের এই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয় বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে না।
মালয়েশিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস বা আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবে আগামী বছর। গত বুধবার ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গে বৈঠকের সময় আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিষয়টি মালয়েশিয়ার সরকারকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন হাইকমিশনার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর গত মাসের প্রথম দিকে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আসেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংকটে থাকা দেশের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁর সামনে।
মালয়েশিয়ার প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা ওহ ই সান বলেন, ‘বিরাজমান রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ আসিয়ান দেশ বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং দেশটির উন্নয়নের দুর্দান্ত সম্ভাবনা দেখে। তবে এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ পেতে আবেদনের আগে বাংলাদেশকে অবশ্যই রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিকভাবে স্থিতিশীল হতে হবে।’
এছাড়া আসিয়ানের সামনে মিয়ানমারের সংকটের মতো বেশ কিছু ‘মাথা ঘামানোর’ বিষয় থাকায় বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়াটা এখন সহজ হবে না বলে মনে করেন সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো ওহ ই সান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সংকট এখনো চলছে। এই অবস্থায় আসিয়ান নিশ্চয়ই নতুন কোনো সদস্য নিতে চাইবে না যারা নিজেরাই এখনো অনেক সমস্যার মধ্যে আছে। তাড়াহুড়োর তো প্রশ্নই আসে না।’
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা আগামী বছর আসিয়ানের সদস্য হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়টি যোগ করে ওহ বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্বও বাংলাদেশের জোটে যোগদানের পথে বাধা হতে পারে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত আসিয়ান জোট। একদিকে মিয়ানমারের জান্তার কড়া সমালোচক জোটের সদস্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। অন্যদিকে সরাসরি জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় থাইল্যান্ড।
আসিয়ানের দৃষ্টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে নিবদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের আসিয়ানের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের গবেষক ইশরাত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কারণ, ঢাকা এর আগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্ত হওয়ার মতো বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।’
তাঁর মতে, আসিয়ানে যোগদানে বাংলাদেশের পরিকল্পনা হাসিনার ‘ভারতকেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি’ থেকে দূরে সরে গিয়ে পূর্বের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
হাসিনা তাঁর শাসনামলে ভারতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। জুলাই মাসে নয়া দিল্লি সফরের সময় তাঁর প্রশাসন মেরিটাইম সহযোগিতা, ডিজিটাল অংশীদারত্ব এবং মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে রেল সংযোগের মতো বিষয়ে ১০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেয়ারব্যাংক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক ফেলো অণু আনোয়ার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতি ক্ষোভও আসিয়ানের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্ররোচিত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ভারতের অপ্রতিরোধ্য হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া থেকে উৎসারিত। সেই বিবেচনায় ভারতের প্রভাব প্রশমিত করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থানকে শক্তিশালী করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আসিয়ানকে বিবেচনা করছে ঢাকা।
শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বশেষ তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ২৫ হাজারেরও বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়। তবে ভারত এই নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানায়। এ কারণে বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান বেশ জোরালো। নয়া দিল্লি তার স্বার্থ রক্ষায় হাসিনাকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে গেছে।
অণু বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে ঢাকার প্রত্যাশার ভিত্তিকে জোরালো করে তুলেছে। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধেও বিগত কয়েক মাসে আরও প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
মাদক ও মানব পাচারের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও আসিয়ান ও বাংলাদেশ হাত মেলাতে পারে বলে মনে করেন অণু। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সির (ইটলস) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আসিয়ান সদস্যদের মূল্যবান দক্ষতা প্রদান করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক এই আদালত ২০১৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রসীমার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে একটি মামলায় ঢাকার পক্ষে রায় দেয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইটলসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলায় জেতে। এর ফলে মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারায়। দক্ষিণ চীন সাগরে অঞ্চল, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্পদ অনুসন্ধান নিয়ে যেখানে আসিয়ানের সদস্য দেশ মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ। সেখানে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে।
অণু আনোয়ার বলেন, ‘তাই, কৌশলগত অবস্থান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের কারণে আসিয়ানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আসিয়ানের স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জ মিলে যাওয়াও সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ঢাকা আগ্রহকে ন্যায্যতা দিতে পারে।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৩ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে