অনলাইন ডেস্ক
ভারত ও বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে, গত জুনে ভারতের ওডিশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় আরও ১৩ জন। অক্টোবরের ২৩ তারিখে বাংলাদেশের ভৈরব বাজারের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় ২০ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আরও বেশ কিছু দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের দুর্ঘটনাগুলো বাদ দিলে ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার হার বিগত কয়েক দশকে বেশ কমেছে। মাত্র দুই দশক আগেও যেখানে ভারতে প্রতিবছর গড়ে ৩ শতাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটত, সেখানে ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ১৯৮০–এর দশকের তুলনায় ভারতে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও কমেছে অনেকটাই। তবে রেল অবকাঠামো খাতে ভারত সরকারের বিপুল বিনিয়োগের তুলনায় দুর্ঘটনার হার মোটেও বাস্তবিক নয়।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্যাটিসটিকস ব্যুরো বলছে, ২০২১ সালে ভারতে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ছোটখাটো রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ১৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশের ট্রেন দুর্ঘটনার চিত্রও আতঙ্কজনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশই—সংখ্যার বিচারে ১৪৫ জন—নিহত হয়েছে বিভিন্ন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। ট্রেনে–ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
অপরদিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৪০২টি রেল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩৯৬ জন নিহত হয়েছে। আর ২০২২ সালে ৬০৬টি রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫৫০ জনের। এই সংখ্যার মধ্যে রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনাও রয়েছে।
ভারত সরকার দেশটির শিল্পায়ন নীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের প্রতি নজর দিয়েছে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে দেশটি পুরোনো ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে যেসব ঝুঁকি তৈরি হয়েছে সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। দেশটি নতুন নতুন অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামোর দিকে নজর দেয়নি।
ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭–২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে যে ২ হাজার ১৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে এর ৭০ শতাংশই পুরোনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা, দুর্বল অবকাঠামো, রেললাইনে ত্রুটি কিংবা দায়িত্বরতদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদন বলছে, পুরোনো অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ বা উন্নত করার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত বাজেট, পুরোনো লাইন সংস্কারে বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনীহা ইত্যাদি কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভারতেই যে কেবল পুরোনো, দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় একই। সর্বশেষ ভৈরবে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে গরমে লাইন বেঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গরমে আবারও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরও আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে তেলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হলে পড়ে যায় ৩০ হাজার লিটার তেল। এর বাইরে, বিগত বছর ও চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভারত সরকার ২০২২ অর্থবছরে রেলওয়ে ব্যবস্থা উন্নয়নে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই বাজেটের অধিকাংশই ছিল অবকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য। ২০১৬ সাল থেকে এ খাতে বাজেট ঘাটতি ছিল বলে জানায় ভারত সরকার।
যার ফলে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা বেড়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—জনগণের টাকা শ্রাদ্ধ করে নতুন উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে সরকার মন দিলেও বিদ্যমান অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ তাদের খুব একটা টানেনি।
ভারতের রেল খাতে বিনিয়োগের মূল বিষয় হওয়ার কথা ছিল মৌলিক সেবা বৃদ্ধি, একই সঙ্গে এর অন্যতম বড় লক্ষ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগ টানা। যা আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। মোদির ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির আলোকে ভারত চায়, বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসুক এবং এর মাধ্যমে যেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিদেশিদের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এই নীতি আংশিক হলেও কাজে দিয়েছে। ব্যাপকভাবে না হলেও, বিশ্বের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে।
ভারত ব্যবসায়বান্ধব শিল্পনীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি এখনো খসড়ার পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, এই শিল্পনীতিতে ভারতীয় উদ্যোগগুলোকে সহজে অর্থায়ন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব পরিকল্পনার আওতায় ভারত সরকার উচ্চগতির ও দূর পাল্লার ট্রেনের প্রতি আগ্রহী। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতের জন্য এসব প্রকল্প সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এককভাবে কেবল নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে আধুনিকায়ন করতে গিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামোতে নজর না দেওয়ার ফলে ঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ট্রেন দুর্ঘটনা এর সর্বশেষ উদাহরণ।
বিষয়টি যে কেবল ভারতেই হচ্ছে তা নয়। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। বর্তমান সরকারের আমলে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন রেলপথ–রেল স্টেশন চালু হয়েছে। পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্পে রেল সংযোগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু দেশের অনেক বিদ্যমান অবকাঠামো যেমন—ঢাকা–ময়মনসিংহ–জামালপুর রেলপথের বয়স প্রায় শত বছর হয়ে গেলেও এই লাইনে ট্রেন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এ ছাড়া এখনো দেশের রেল সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হয়নি। যার সর্বশেষ উদাহরণ ভৈরব বাজারের কাছে রেল দুর্ঘটনা।
যাই হোক, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ এবং নীতি প্রণয়নের বিষয়ে আগ্রহী। জাতীয় নির্বাচনের আর এক বছর বাকি। রেলের অবকাঠামো সংস্কার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা মোদি সরকারের জন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে। সর্বোপরী, রেলে চলাচলকারী ভারতের অধিকাংশ মানুষ ব্যয়বহুল নতুন ট্রেনে ভ্রমণ করতে সক্ষম নন। তাঁরা তুলনামূলক কম ভাড়ার পুরোনো ট্রেনেই ভ্রমণ করেন।
ভারত সরকার রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন তথা এ খাতে নতুন প্রকল্প আনতে চায় আরও একটি কারণে। বিশেষ করে এর পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে। মোদি সরকার চায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এরই মধ্যে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালুর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্প ভারতের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে গতি আনবে। তবে সেই সঙ্গে ক্রমাগত রেল দুর্ঘটনা সম্ভাব্য অংশদারদের জন্য বিপদ সংকেতও হতে পারে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস ও ফরেইন পলিসি
ভারত ও বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে, গত জুনে ভারতের ওডিশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় আরও ১৩ জন। অক্টোবরের ২৩ তারিখে বাংলাদেশের ভৈরব বাজারের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় ২০ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আরও বেশ কিছু দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের দুর্ঘটনাগুলো বাদ দিলে ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার হার বিগত কয়েক দশকে বেশ কমেছে। মাত্র দুই দশক আগেও যেখানে ভারতে প্রতিবছর গড়ে ৩ শতাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটত, সেখানে ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ১৯৮০–এর দশকের তুলনায় ভারতে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও কমেছে অনেকটাই। তবে রেল অবকাঠামো খাতে ভারত সরকারের বিপুল বিনিয়োগের তুলনায় দুর্ঘটনার হার মোটেও বাস্তবিক নয়।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্যাটিসটিকস ব্যুরো বলছে, ২০২১ সালে ভারতে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ছোটখাটো রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ১৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশের ট্রেন দুর্ঘটনার চিত্রও আতঙ্কজনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশই—সংখ্যার বিচারে ১৪৫ জন—নিহত হয়েছে বিভিন্ন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। ট্রেনে–ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
অপরদিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৪০২টি রেল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩৯৬ জন নিহত হয়েছে। আর ২০২২ সালে ৬০৬টি রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫৫০ জনের। এই সংখ্যার মধ্যে রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনাও রয়েছে।
ভারত সরকার দেশটির শিল্পায়ন নীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের প্রতি নজর দিয়েছে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে দেশটি পুরোনো ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে যেসব ঝুঁকি তৈরি হয়েছে সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। দেশটি নতুন নতুন অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামোর দিকে নজর দেয়নি।
ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭–২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে যে ২ হাজার ১৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে এর ৭০ শতাংশই পুরোনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা, দুর্বল অবকাঠামো, রেললাইনে ত্রুটি কিংবা দায়িত্বরতদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদন বলছে, পুরোনো অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ বা উন্নত করার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত বাজেট, পুরোনো লাইন সংস্কারে বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনীহা ইত্যাদি কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভারতেই যে কেবল পুরোনো, দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় একই। সর্বশেষ ভৈরবে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে গরমে লাইন বেঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গরমে আবারও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরও আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে তেলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হলে পড়ে যায় ৩০ হাজার লিটার তেল। এর বাইরে, বিগত বছর ও চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভারত সরকার ২০২২ অর্থবছরে রেলওয়ে ব্যবস্থা উন্নয়নে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই বাজেটের অধিকাংশই ছিল অবকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য। ২০১৬ সাল থেকে এ খাতে বাজেট ঘাটতি ছিল বলে জানায় ভারত সরকার।
যার ফলে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা বেড়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—জনগণের টাকা শ্রাদ্ধ করে নতুন উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে সরকার মন দিলেও বিদ্যমান অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ তাদের খুব একটা টানেনি।
ভারতের রেল খাতে বিনিয়োগের মূল বিষয় হওয়ার কথা ছিল মৌলিক সেবা বৃদ্ধি, একই সঙ্গে এর অন্যতম বড় লক্ষ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগ টানা। যা আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। মোদির ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির আলোকে ভারত চায়, বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসুক এবং এর মাধ্যমে যেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিদেশিদের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এই নীতি আংশিক হলেও কাজে দিয়েছে। ব্যাপকভাবে না হলেও, বিশ্বের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে।
ভারত ব্যবসায়বান্ধব শিল্পনীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি এখনো খসড়ার পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, এই শিল্পনীতিতে ভারতীয় উদ্যোগগুলোকে সহজে অর্থায়ন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব পরিকল্পনার আওতায় ভারত সরকার উচ্চগতির ও দূর পাল্লার ট্রেনের প্রতি আগ্রহী। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতের জন্য এসব প্রকল্প সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এককভাবে কেবল নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে আধুনিকায়ন করতে গিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামোতে নজর না দেওয়ার ফলে ঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ট্রেন দুর্ঘটনা এর সর্বশেষ উদাহরণ।
বিষয়টি যে কেবল ভারতেই হচ্ছে তা নয়। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। বর্তমান সরকারের আমলে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন রেলপথ–রেল স্টেশন চালু হয়েছে। পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্পে রেল সংযোগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু দেশের অনেক বিদ্যমান অবকাঠামো যেমন—ঢাকা–ময়মনসিংহ–জামালপুর রেলপথের বয়স প্রায় শত বছর হয়ে গেলেও এই লাইনে ট্রেন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এ ছাড়া এখনো দেশের রেল সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হয়নি। যার সর্বশেষ উদাহরণ ভৈরব বাজারের কাছে রেল দুর্ঘটনা।
যাই হোক, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ এবং নীতি প্রণয়নের বিষয়ে আগ্রহী। জাতীয় নির্বাচনের আর এক বছর বাকি। রেলের অবকাঠামো সংস্কার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা মোদি সরকারের জন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে। সর্বোপরী, রেলে চলাচলকারী ভারতের অধিকাংশ মানুষ ব্যয়বহুল নতুন ট্রেনে ভ্রমণ করতে সক্ষম নন। তাঁরা তুলনামূলক কম ভাড়ার পুরোনো ট্রেনেই ভ্রমণ করেন।
ভারত সরকার রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন তথা এ খাতে নতুন প্রকল্প আনতে চায় আরও একটি কারণে। বিশেষ করে এর পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে। মোদি সরকার চায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এরই মধ্যে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালুর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্প ভারতের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে গতি আনবে। তবে সেই সঙ্গে ক্রমাগত রেল দুর্ঘটনা সম্ভাব্য অংশদারদের জন্য বিপদ সংকেতও হতে পারে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস ও ফরেইন পলিসি
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৩ ঘণ্টা আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৪ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১০ দিন আগে