অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত ক্রমে পশ্চিম নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ধীরে ধীরে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদীয়মান চীনকে হীনবল করতে রাশিয়ার ওপর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রথাগত নির্ভরতা ছিন্ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুসারে, গত দুই দশক ধরে রাশিয়া ভারতের মোট অস্ত্র আমদানির ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে, যা প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অস্ত্রাগারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্ত্র ও গোলাবারুদের নিজস্ব বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে রাশিয়া। ক্রয়াদেশগুলো সময়মতো মেটাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র আমদানির উৎস হিসেবে রাশিয়া থেকে সরে ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমের দিকে ঝুঁকছে ভারত।
তবে আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে হলে যে কোনো মূল্যে চীনকে প্রতিরোধ করা ছাড়া ভারতের হাতে বিকল্প নেই। এ কারণে মস্কো ও বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার উপায় খুঁজছে নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নন্দন উন্নিকৃষ্ণন বলছেন, ‘আমরা (ভারত) রাশিয়ার সঙ্গে প্রধান কোনো সামরিক চুক্তি করব না। কারণে সেটি ওয়াশিংটনের জন্য হুমকি হতে পারে।’
মস্কো ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরিসহ আধুনিক প্রযুক্তির কামোভ হেলিকপ্টার এবং সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রস্তাব করার পরও ভারত বড় কোনো চুক্তি থেকে বিরত থাকার পথই বেছে নিয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ভারত সরকারের চারটি সূত্র এমন তথ্য দিয়েছে।
রাশিয়ার নেতাদের বক্তব্যে নয়াদিল্লির এই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। গত ২৫ জানুয়ারি ‘রাশিয়ান স্টুডেন্ট ডে’ উপলক্ষে কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ভ্লাদিমির পুতিন যেভাবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘স্বাধীন’ পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে একক ঘনিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখতে মস্কোর মরিয়া প্রচেষ্টারই প্রকাশ।
রাশিয়া ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানানোর পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে সাড়া দেননি। পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশেই অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মোদির এ ধরনের পদক্ষেপ দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করার কর্মসূচির জন্য লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গত বছর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিইএন) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন উৎপাদনের নতুন সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এটি ঘনিষ্ঠ মিত্রের বাইরে কোনো দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এমন কোনো ছাড়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সহযোগিতা ও যৌথ উৎপাদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে দুই পক্ষেরই চীন নিয়ে অসন্তোষ। পাঁচ দশকের মধ্যে ২০২০ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে একটিতে ২৪ জন সেনা নিহত হয়। এরপর থেকেই হিমালয় সীমান্তে অচলাবস্থা চলছে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন এ দুই দেশ ১৯৬২ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। দুই হাজার মাইল দীর্ঘ সীমান্তে এখনো দ্বন্দ্ব চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে ভারতকে। রুশ অস্ত্রের বৃহত্তম ক্রেতা ভারত ২০২২ সালে দেশটির জ্বালানি তেলের অন্যতম ক্রেতাও হয়ে ওঠে। এ ধরনের বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত মস্কোকে আরও বেশি বেইজিংয়ের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এটি বন্ধ করে দিলে আপনি তাদের (রাশিয়া) চীনের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবেন।’
বিশ্লেষক উন্নিকৃষ্ণান বলেন, জ্বালানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য দেশটিকে চীন থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে সহায়তা করবে।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুরুর দিকে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ব্যাহত হতে থাকে। এতে সামরিক শক্তি অর্জনের প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বেড়ে যায়। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল হলেও ভারতের উদ্বেগ পুরোপুরি দূর হয়নি।
ভারতের রাষ্ট্র পরিচালিত মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ স্বস্তি রাও বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, রাশিয়া আমাদের প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে কি না তা নিয়ে তত সংশয় বাড়ছে। রাশিয়া এখন অস্ত্রে বৈচিত্র্য আনতে ব্যস্ত।’
ভারতের নজর এখন ফরাসি জেটের ওপর এবং তারা ফরাসি, জার্মান ও স্পেনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবমেরিন তৈরি করার কথা ভাবছে। এ ছাড়া ভারত মার্কিন ও ফরাসি ইঞ্জিন ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান (ফাইটার জেট) তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে জানায় একটি সূত্র।
গত বছর ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাইডেনের ভারতের প্রতি শীতল মনোভাব অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাইডেন প্রধান অতিথি হতে না চাওয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে দাওয়াত করে আনা হয়। মাখোঁর এই সফরে
ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত কিছু চুক্তি করেছে ভারত। এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিরক্ষা খাতে একক নির্ভরশীলতা কাটাতে চাইছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
স্বস্তি রাও বলেন, ‘ভারতের বহুমুখী সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখবে, পশ্চিমের সঙ্গেও ভারসাম্য রেখে চলবে। তবে এ সম্পর্ক সবার সঙ্গে সমানতালে হবে না।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গত ২৭ ডিসেম্বর একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন। মস্কো সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি আলোচনাও করেন।
লাভরভ বলেন, তিনি জয়শঙ্করের সঙ্গে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা রাশিয়া–ভারতের যৌথ অস্ত্র উৎপাদন নিয়েও আলোচনা করেন। রাশিয়া ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যকে সমর্থন করতেও প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ দৃঢ়। এর দৃঢ়তার নেপথ্যে রয়েছে জ্বালানি, সার এবং স্টিল তৈরির কয়লা নিয়ে চুক্তি।’ তবে প্রতিরক্ষা চুক্তি উল্লেখ করার আগমুহূর্তেই তিনি থেমে যান।
২০১৫ সালের ভারত–রাশিয়া চুক্তিতে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। আলোচনায় নতুন মোড় নিয়ে দুই দেশ এখন যৌথভাবে ভারতে কামোভ কেএ–২২৬টি হেলিকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এমন ২০০টি যুদ্ধবিমান ভারতের প্রতিরক্ষা বহরে যুক্ত হওয়ার কথা।
২০২২ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (এইচআইএই. এনএস) তৈরি কমব্যাট হেলিকপ্টার ব্যবহার শুরু করে ভারত।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতের মোট সামরিক সরঞ্জামের ৬০ শতাংশই সোভিয়েত বা রুশ ট্যাংক থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ সরঞ্জামগুলো ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের জন্য কমপক্ষে আগামী দুই দশক পর্যন্ত রাশিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন নয়াদিল্লির।
ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে ভারতে ব্রাহমোস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং একে–২০৩ রাইফেল তৈরির পরিকল্পনাও করছে।
এত এত পরিকল্পনার মধ্যে বাধ সেধে বসেছে ভারতের দ্বিধা। গত বছর ভারতের বিমানবাহিনী বলে, রাশিয়া একটি বড় ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সে সরঞ্জাম ঠিক কী ছিল তা উল্লেখ করেনি তারা।
ভারত ২০১৮ সালে ৫৫০ কোটি ডলারে যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছিল, তার কিছু অংশ সরবরাহ করতে রাশিয়া এক বছরেরও বেশি বিলম্ব করেছে বলে জানিয়েছেন দুই ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন সানজিদা কাওছার ঋতু
বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত ক্রমে পশ্চিম নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ধীরে ধীরে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদীয়মান চীনকে হীনবল করতে রাশিয়ার ওপর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রথাগত নির্ভরতা ছিন্ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুসারে, গত দুই দশক ধরে রাশিয়া ভারতের মোট অস্ত্র আমদানির ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে, যা প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অস্ত্রাগারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্ত্র ও গোলাবারুদের নিজস্ব বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে রাশিয়া। ক্রয়াদেশগুলো সময়মতো মেটাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র আমদানির উৎস হিসেবে রাশিয়া থেকে সরে ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমের দিকে ঝুঁকছে ভারত।
তবে আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে হলে যে কোনো মূল্যে চীনকে প্রতিরোধ করা ছাড়া ভারতের হাতে বিকল্প নেই। এ কারণে মস্কো ও বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার উপায় খুঁজছে নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নন্দন উন্নিকৃষ্ণন বলছেন, ‘আমরা (ভারত) রাশিয়ার সঙ্গে প্রধান কোনো সামরিক চুক্তি করব না। কারণে সেটি ওয়াশিংটনের জন্য হুমকি হতে পারে।’
মস্কো ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরিসহ আধুনিক প্রযুক্তির কামোভ হেলিকপ্টার এবং সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রস্তাব করার পরও ভারত বড় কোনো চুক্তি থেকে বিরত থাকার পথই বেছে নিয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ভারত সরকারের চারটি সূত্র এমন তথ্য দিয়েছে।
রাশিয়ার নেতাদের বক্তব্যে নয়াদিল্লির এই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। গত ২৫ জানুয়ারি ‘রাশিয়ান স্টুডেন্ট ডে’ উপলক্ষে কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ভ্লাদিমির পুতিন যেভাবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘স্বাধীন’ পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে একক ঘনিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখতে মস্কোর মরিয়া প্রচেষ্টারই প্রকাশ।
রাশিয়া ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানানোর পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে সাড়া দেননি। পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশেই অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মোদির এ ধরনের পদক্ষেপ দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করার কর্মসূচির জন্য লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গত বছর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিইএন) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন উৎপাদনের নতুন সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এটি ঘনিষ্ঠ মিত্রের বাইরে কোনো দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এমন কোনো ছাড়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সহযোগিতা ও যৌথ উৎপাদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে দুই পক্ষেরই চীন নিয়ে অসন্তোষ। পাঁচ দশকের মধ্যে ২০২০ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে একটিতে ২৪ জন সেনা নিহত হয়। এরপর থেকেই হিমালয় সীমান্তে অচলাবস্থা চলছে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন এ দুই দেশ ১৯৬২ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। দুই হাজার মাইল দীর্ঘ সীমান্তে এখনো দ্বন্দ্ব চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে ভারতকে। রুশ অস্ত্রের বৃহত্তম ক্রেতা ভারত ২০২২ সালে দেশটির জ্বালানি তেলের অন্যতম ক্রেতাও হয়ে ওঠে। এ ধরনের বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত মস্কোকে আরও বেশি বেইজিংয়ের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এটি বন্ধ করে দিলে আপনি তাদের (রাশিয়া) চীনের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবেন।’
বিশ্লেষক উন্নিকৃষ্ণান বলেন, জ্বালানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য দেশটিকে চীন থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে সহায়তা করবে।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুরুর দিকে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ব্যাহত হতে থাকে। এতে সামরিক শক্তি অর্জনের প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বেড়ে যায়। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল হলেও ভারতের উদ্বেগ পুরোপুরি দূর হয়নি।
ভারতের রাষ্ট্র পরিচালিত মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ স্বস্তি রাও বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, রাশিয়া আমাদের প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে কি না তা নিয়ে তত সংশয় বাড়ছে। রাশিয়া এখন অস্ত্রে বৈচিত্র্য আনতে ব্যস্ত।’
ভারতের নজর এখন ফরাসি জেটের ওপর এবং তারা ফরাসি, জার্মান ও স্পেনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবমেরিন তৈরি করার কথা ভাবছে। এ ছাড়া ভারত মার্কিন ও ফরাসি ইঞ্জিন ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান (ফাইটার জেট) তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে জানায় একটি সূত্র।
গত বছর ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাইডেনের ভারতের প্রতি শীতল মনোভাব অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাইডেন প্রধান অতিথি হতে না চাওয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে দাওয়াত করে আনা হয়। মাখোঁর এই সফরে
ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত কিছু চুক্তি করেছে ভারত। এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিরক্ষা খাতে একক নির্ভরশীলতা কাটাতে চাইছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
স্বস্তি রাও বলেন, ‘ভারতের বহুমুখী সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখবে, পশ্চিমের সঙ্গেও ভারসাম্য রেখে চলবে। তবে এ সম্পর্ক সবার সঙ্গে সমানতালে হবে না।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গত ২৭ ডিসেম্বর একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন। মস্কো সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি আলোচনাও করেন।
লাভরভ বলেন, তিনি জয়শঙ্করের সঙ্গে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা রাশিয়া–ভারতের যৌথ অস্ত্র উৎপাদন নিয়েও আলোচনা করেন। রাশিয়া ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যকে সমর্থন করতেও প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ দৃঢ়। এর দৃঢ়তার নেপথ্যে রয়েছে জ্বালানি, সার এবং স্টিল তৈরির কয়লা নিয়ে চুক্তি।’ তবে প্রতিরক্ষা চুক্তি উল্লেখ করার আগমুহূর্তেই তিনি থেমে যান।
২০১৫ সালের ভারত–রাশিয়া চুক্তিতে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। আলোচনায় নতুন মোড় নিয়ে দুই দেশ এখন যৌথভাবে ভারতে কামোভ কেএ–২২৬টি হেলিকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এমন ২০০টি যুদ্ধবিমান ভারতের প্রতিরক্ষা বহরে যুক্ত হওয়ার কথা।
২০২২ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (এইচআইএই. এনএস) তৈরি কমব্যাট হেলিকপ্টার ব্যবহার শুরু করে ভারত।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতের মোট সামরিক সরঞ্জামের ৬০ শতাংশই সোভিয়েত বা রুশ ট্যাংক থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ সরঞ্জামগুলো ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের জন্য কমপক্ষে আগামী দুই দশক পর্যন্ত রাশিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন নয়াদিল্লির।
ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে ভারতে ব্রাহমোস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং একে–২০৩ রাইফেল তৈরির পরিকল্পনাও করছে।
এত এত পরিকল্পনার মধ্যে বাধ সেধে বসেছে ভারতের দ্বিধা। গত বছর ভারতের বিমানবাহিনী বলে, রাশিয়া একটি বড় ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সে সরঞ্জাম ঠিক কী ছিল তা উল্লেখ করেনি তারা।
ভারত ২০১৮ সালে ৫৫০ কোটি ডলারে যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছিল, তার কিছু অংশ সরবরাহ করতে রাশিয়া এক বছরেরও বেশি বিলম্ব করেছে বলে জানিয়েছেন দুই ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন সানজিদা কাওছার ঋতু
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৭ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে