সাইরুল ইসলাম
করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ। বিশ্ববাসীর কাছে এ যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্ব যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিশালী দেশগুলোর দিকে, তখন তাইওয়ান ইস্যুতে সেই যুক্তরাষ্ট্রই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত চীনের সঙ্গে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ১৪ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে দেখা গেল একসঙ্গে, হাসিমুখে। বিশ্ববাসীর কাছে যেন এ এক আশার বার্তা।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গত মঙ্গলবার শুরু হয় বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০-এর সম্মেলন। এতে অংশ নিতে জড়ো হন বিশ্বনেতারা। সেখানেই দুই নেতার সাক্ষাৎ ও করমর্দন। বৈঠককালে দুজনেই সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেন। সেখানে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। সম্মত হয়েছেন পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে।
সির জায়গায় যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থাকতেন তবে ব্যাপারটা আরও আশাব্যঞ্জক হতো। সে আশাও ফিকে হয়ে যায়নি। জি-২০ সম্মেলনের কারণে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যখন সবার চোখ, ঠিক একই সময়ে তুরস্কের আঙ্কারাতে গত সোমবার হয় আরেক আলোচনা। আঙ্কারায় বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং রাশিয়ার বিদেশ-বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়, আঙ্কারায় সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নসের সঙ্গে রাশিয়ার ফরেইন ইনটেলিজেন্স সার্ভিস (এফআইএস) প্রধান সের্গেই নারিশকিনের বৈঠক হয়েছে। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সীমিতকরণ, বিশেষত ইউক্রেনে এ ধরনের কোনো অস্ত্রের ব্যবহার যাতে না হয় তা নিয়েই এ আলোচনা করেন তাঁরা। এ বৈঠকের পরদিনই উইলিয়াম বার্নস ছুটে যান ইউক্রেনে। তাঁর কাছ থেকে কি কোনো ইতিবাচক খবর আসতে পারে? বিশ্ববাসী কি যুদ্ধ শেষের বার্তা পাবে?
শীতের আগমনী বার্তা একই সঙ্গে নিয়ে এসেছে নতুন শঙ্কা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট আরও গভীর হবে এবারের শীতে। জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ এক খবর পায় বিশ্ববাসী। ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডে একটি গ্রামে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র। নিহত হন দুজন।
উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ পোল্যান্ডে এমন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজার আশঙ্কা করছিলেন সবাই। সেই আশঙ্কা আরও প্রকট হয় যখন পোল্যান্ড ও ইউক্রেন দাবি করে এ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এতে নড়েচড়ে বসে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো। পোল্যান্ডের নিরাপত্তায় এমন আঘাতের জবাব কি এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াবে?
তবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে অমূলক করে দেন ন্যাটোর নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়ার পক্ষে কথা বললেন তিনি। সুর অনেকটাই নরম। কথায় নেই যুদ্ধের ঝাঁঝ। গতকাল বুধবার বাইডেন বলেন, পোল্যান্ডে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি পড়েছে, তা সম্ভবত রাশিয়া থেকে ছোড়া হয়নি। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, পশ্চিমা মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে এক জরুরি বৈঠকের পর বাইডেন এ কথা বলেন।
পরে জানা গেল আসলে বাইডেনের কথাই সত্য। এ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ছোড়া নয়, এটি ইউক্রেনের ছোড়া। যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন কর্মকর্তার বরাতে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস জানিয়েছে, রাশিয়ার ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইউক্রেনের সেনারা। সেই ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামের ভেতরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গও বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছে। এটি রাশিয়ার ছোড়া নয়। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফলে উত্তেজনার পারদ চড়তে গিয়েও নেমে গেছে।
বাইডেনের এই নরম সুর চীনা প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে বৈঠকের পরও ছিল। বিবিসি, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, দুই দেশের নেতা বেশ ইতিবাচক আলোচনাই করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যেমন ‘এক চীন নীতির’ প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে জানিয়েছে, তেমনি চীন জানিয়েছে, তারা পরমাণু যুদ্ধ চায় না। বাইডেন গোটা বিশ্বকেই আশ্বস্ত করেছেন, চীনের সঙ্গে আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ইউক্রেন ইস্যুতেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। দেশটি বলেছে, ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র যেন কেউ ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে কাজ করবে তাঁরা।
বৈঠকে দুই পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে বাইডেনের প্রতিশ্রুতি আটকে যেতে পারত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের এখনো অল্প ব্যবধানে এগিয়ে রিপাবলিকানরা। তাই মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল বৈশ্বিক এই সংকটের মুহূর্তে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে বালিতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে জো বাইডেন যত প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যান না কেন তা রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যেতো।
এরই মধ্যে অবশ্য বাইডেন তাঁর প্রতিপক্ষ শিবির থেকে পেয়েছেন নতুন এক খবর। এএফপি বলছে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচের বিলাসবহুল বাসভবন মার-এ-লাগোতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। ৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন এখনই শুরু হলো।’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ট্রাম্প ইতিমধ্যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে, চলতি নভেম্বরের প্রথম দিকে হুট করেই চীনে ঝটিকা সফর করেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ। সেখানে সির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ প্রয়োগ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলার যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, এ বিষয়ে মস্কোর নিন্দা করে জার্মানি ও চীন। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের চিন্তা থেকেই হয়তো শুলজের এ চীন সফর।
হুট করেই চীনের দিকে বিশ্বনেতাদের এই ঝুঁকে পড়ার পেছনের কারণ আসলে কী? গত সোমবার সিএনএনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক স্টিফেন কলিনসন বলেন, ‘বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাইডেন ও সি আপাতত দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তপ্ত অবস্থাকে শীতল করেছেন। তবে একবিংশ শতাব্দীর এই দুই পরাশক্তি এখনো সংঘাতের পথে রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বিএমও ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কুশলী ইউং-ইউ মা সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি প্রবণতাটি আসলে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধির জন্য দেখানো হচ্ছে।’
রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকটে পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা ভাটা পড়ায় দেশটিতে দেখা গেছে মুদ্রাস্ফীতি। জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। রিজার্ভ ভেঙে ফেলতে হয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে দিতে হয়েছে ধরনা। তবুও সংকট কমছে না। এমতাবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচনেও ছিল হারের শঙ্কা। বাইডেন তাই টিকে থাকার প্রয়োজনেই হয়তো অন্যতম পরাশক্তি চীনের সঙ্গে নরম করেছেন সুর।
আর সি চিন পিংয়ের জন্যও যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। এর বৈধতা তাঁর জন্য অনেক জরুরি। আর, সবচেয়ে বেশি জরুরি অর্থনৈতিক খাত। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সংকটে পড়তে পারে। এসব চিন্তা থেকেই হয়তো সি বাইডেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকতে পারেন।
এ কারণে বলা যেতে পারে, এই নভেম্বর শুধু শীতের আগমনী বার্তা নিয়েই হাজির হয়নি, কিছুটা উষ্ণতার আশ্বাসও দিতে শুরু করেছে। জি-২০ সম্মেলনে বৈশ্বিক বাণিজ্যবিষয়ক নীতি, স্বাস্থ্য, জলবায়ুর পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও খাদ্য নিরাপত্তা। এদিকে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় অগ্রগতি।
শীতের আগমনের আগে আগে দুর্যোগের আশঙ্কা করা হয়েছিল। এখনকার পরিস্থিতি বরং বলছে, ভয় নয়, উল্টো কিছুটা আশা রয়েছে। পরাশক্তিদের এমন বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক যে স্বার্থেই হোক না কেন তাতে বিশ্ববাসীর কিছুটা হলেও লাভ হবে। চলমান এসব আলোচনা ও উদ্যোগ এবং এর পাশাপাশি পশ্চিমাদের পদক্ষেপগুলো বলে দেবে, ইউক্রেন যুদ্ধ কী শেষের পথে, নাকি নতুন ছকে এগিয়ে যাবে এ বৈরিতা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, এএফপি, সিএনবিসি এবং আল-জাজিরা
করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ। বিশ্ববাসীর কাছে এ যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্ব যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিশালী দেশগুলোর দিকে, তখন তাইওয়ান ইস্যুতে সেই যুক্তরাষ্ট্রই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত চীনের সঙ্গে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ১৪ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে দেখা গেল একসঙ্গে, হাসিমুখে। বিশ্ববাসীর কাছে যেন এ এক আশার বার্তা।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গত মঙ্গলবার শুরু হয় বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০-এর সম্মেলন। এতে অংশ নিতে জড়ো হন বিশ্বনেতারা। সেখানেই দুই নেতার সাক্ষাৎ ও করমর্দন। বৈঠককালে দুজনেই সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেন। সেখানে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। সম্মত হয়েছেন পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে।
সির জায়গায় যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থাকতেন তবে ব্যাপারটা আরও আশাব্যঞ্জক হতো। সে আশাও ফিকে হয়ে যায়নি। জি-২০ সম্মেলনের কারণে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যখন সবার চোখ, ঠিক একই সময়ে তুরস্কের আঙ্কারাতে গত সোমবার হয় আরেক আলোচনা। আঙ্কারায় বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং রাশিয়ার বিদেশ-বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়, আঙ্কারায় সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নসের সঙ্গে রাশিয়ার ফরেইন ইনটেলিজেন্স সার্ভিস (এফআইএস) প্রধান সের্গেই নারিশকিনের বৈঠক হয়েছে। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সীমিতকরণ, বিশেষত ইউক্রেনে এ ধরনের কোনো অস্ত্রের ব্যবহার যাতে না হয় তা নিয়েই এ আলোচনা করেন তাঁরা। এ বৈঠকের পরদিনই উইলিয়াম বার্নস ছুটে যান ইউক্রেনে। তাঁর কাছ থেকে কি কোনো ইতিবাচক খবর আসতে পারে? বিশ্ববাসী কি যুদ্ধ শেষের বার্তা পাবে?
শীতের আগমনী বার্তা একই সঙ্গে নিয়ে এসেছে নতুন শঙ্কা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট আরও গভীর হবে এবারের শীতে। জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ এক খবর পায় বিশ্ববাসী। ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডে একটি গ্রামে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র। নিহত হন দুজন।
উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ পোল্যান্ডে এমন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজার আশঙ্কা করছিলেন সবাই। সেই আশঙ্কা আরও প্রকট হয় যখন পোল্যান্ড ও ইউক্রেন দাবি করে এ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এতে নড়েচড়ে বসে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো। পোল্যান্ডের নিরাপত্তায় এমন আঘাতের জবাব কি এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াবে?
তবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে অমূলক করে দেন ন্যাটোর নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়ার পক্ষে কথা বললেন তিনি। সুর অনেকটাই নরম। কথায় নেই যুদ্ধের ঝাঁঝ। গতকাল বুধবার বাইডেন বলেন, পোল্যান্ডে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি পড়েছে, তা সম্ভবত রাশিয়া থেকে ছোড়া হয়নি। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, পশ্চিমা মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে এক জরুরি বৈঠকের পর বাইডেন এ কথা বলেন।
পরে জানা গেল আসলে বাইডেনের কথাই সত্য। এ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ছোড়া নয়, এটি ইউক্রেনের ছোড়া। যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন কর্মকর্তার বরাতে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস জানিয়েছে, রাশিয়ার ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইউক্রেনের সেনারা। সেই ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামের ভেতরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গও বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছে। এটি রাশিয়ার ছোড়া নয়। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফলে উত্তেজনার পারদ চড়তে গিয়েও নেমে গেছে।
বাইডেনের এই নরম সুর চীনা প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে বৈঠকের পরও ছিল। বিবিসি, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, দুই দেশের নেতা বেশ ইতিবাচক আলোচনাই করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যেমন ‘এক চীন নীতির’ প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে জানিয়েছে, তেমনি চীন জানিয়েছে, তারা পরমাণু যুদ্ধ চায় না। বাইডেন গোটা বিশ্বকেই আশ্বস্ত করেছেন, চীনের সঙ্গে আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ইউক্রেন ইস্যুতেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। দেশটি বলেছে, ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র যেন কেউ ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে কাজ করবে তাঁরা।
বৈঠকে দুই পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে বাইডেনের প্রতিশ্রুতি আটকে যেতে পারত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের এখনো অল্প ব্যবধানে এগিয়ে রিপাবলিকানরা। তাই মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল বৈশ্বিক এই সংকটের মুহূর্তে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে বালিতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে জো বাইডেন যত প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যান না কেন তা রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যেতো।
এরই মধ্যে অবশ্য বাইডেন তাঁর প্রতিপক্ষ শিবির থেকে পেয়েছেন নতুন এক খবর। এএফপি বলছে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচের বিলাসবহুল বাসভবন মার-এ-লাগোতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। ৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন এখনই শুরু হলো।’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ট্রাম্প ইতিমধ্যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে, চলতি নভেম্বরের প্রথম দিকে হুট করেই চীনে ঝটিকা সফর করেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ। সেখানে সির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ প্রয়োগ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলার যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, এ বিষয়ে মস্কোর নিন্দা করে জার্মানি ও চীন। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের চিন্তা থেকেই হয়তো শুলজের এ চীন সফর।
হুট করেই চীনের দিকে বিশ্বনেতাদের এই ঝুঁকে পড়ার পেছনের কারণ আসলে কী? গত সোমবার সিএনএনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক স্টিফেন কলিনসন বলেন, ‘বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাইডেন ও সি আপাতত দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তপ্ত অবস্থাকে শীতল করেছেন। তবে একবিংশ শতাব্দীর এই দুই পরাশক্তি এখনো সংঘাতের পথে রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বিএমও ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কুশলী ইউং-ইউ মা সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি প্রবণতাটি আসলে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধির জন্য দেখানো হচ্ছে।’
রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকটে পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা ভাটা পড়ায় দেশটিতে দেখা গেছে মুদ্রাস্ফীতি। জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। রিজার্ভ ভেঙে ফেলতে হয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে দিতে হয়েছে ধরনা। তবুও সংকট কমছে না। এমতাবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচনেও ছিল হারের শঙ্কা। বাইডেন তাই টিকে থাকার প্রয়োজনেই হয়তো অন্যতম পরাশক্তি চীনের সঙ্গে নরম করেছেন সুর।
আর সি চিন পিংয়ের জন্যও যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। এর বৈধতা তাঁর জন্য অনেক জরুরি। আর, সবচেয়ে বেশি জরুরি অর্থনৈতিক খাত। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সংকটে পড়তে পারে। এসব চিন্তা থেকেই হয়তো সি বাইডেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকতে পারেন।
এ কারণে বলা যেতে পারে, এই নভেম্বর শুধু শীতের আগমনী বার্তা নিয়েই হাজির হয়নি, কিছুটা উষ্ণতার আশ্বাসও দিতে শুরু করেছে। জি-২০ সম্মেলনে বৈশ্বিক বাণিজ্যবিষয়ক নীতি, স্বাস্থ্য, জলবায়ুর পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও খাদ্য নিরাপত্তা। এদিকে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় অগ্রগতি।
শীতের আগমনের আগে আগে দুর্যোগের আশঙ্কা করা হয়েছিল। এখনকার পরিস্থিতি বরং বলছে, ভয় নয়, উল্টো কিছুটা আশা রয়েছে। পরাশক্তিদের এমন বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক যে স্বার্থেই হোক না কেন তাতে বিশ্ববাসীর কিছুটা হলেও লাভ হবে। চলমান এসব আলোচনা ও উদ্যোগ এবং এর পাশাপাশি পশ্চিমাদের পদক্ষেপগুলো বলে দেবে, ইউক্রেন যুদ্ধ কী শেষের পথে, নাকি নতুন ছকে এগিয়ে যাবে এ বৈরিতা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, এএফপি, সিএনবিসি এবং আল-জাজিরা
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে