অনলাইন ডেস্ক
১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন দক্ষিণ এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটি তাঁর ‘প্রতিবেশী সবার আগে’—পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। এই নীতির মূল ভিত্তি—ভারতের ছোট ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ, দ্বিপক্ষীয় মতানৈক্য, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেরি এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে নীতিটি মার খেয়ে যায় শিগগির।
তারপরও বাংলাদেশে ভারতের এই নীতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছিল। কারণ, টানা ১৫ বছরের অপশাসনে পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি ঘনিষ্ঠভাবেই কাজ করেছেন। দুই পক্ষের সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ বা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা হতো।
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার বিপক্ষে জনরোষ বাড়তে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন তাঁর শাসনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকে। এই আন্দোলন একপর্যায়ে তাঁর পতনের এক দফায় রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় তিনি ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে যান।
বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক অজনপ্রিয় হওয়ার পরও শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলকে ব্যাপক ধাক্কা দেয়। শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, ভারত তত দিনই তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। এই সময়ে নয়াদিল্লি অন্য অংশীদারদের উদ্বেগ এমনকি বাংলাদেশের জনগণকেও উপেক্ষা করেছে। মোদির শাসনামলে ভারত অন্যান্য ছোট প্রতিবেশীর বেলায়ও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করেছে।
এটি স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের এই নীতিগত ব্যর্থতা কেবল বাহ্যিক ঘটনাবলি বা প্রভাবকের কারণে নয়, এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিফলনও বটে। কূটনীতিকে কেবল নিরাপত্তাকেন্দ্রিক করা থেকে শুরু করে মোদির ‘লৌহমানব’ ভাবমূর্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের উদারনৈতিক চিত্রের মুখোশ খসে পড়েছে। শেখ হাসিনার মতো সরকারগুলো মোদির অনুগ্রহধন্য ব্যবসায়িক বিভিন্ন স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরও সন্দেহপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদের প্রতি পক্ষপাত বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্যাতিত নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করেছিল, সেখানে বিদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। কেবল তা-ই নয়, ভারতে মুসলিমদের প্রতি বিজেপি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও দেশের বাইরে মোদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় মোদিকে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ভারত সরকারকে আত্মসমালোচনার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দেশটি নীতি সংশোধনের মতো জায়গায় যেতে পারেনি বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা নয়, শেষও নয়। একটি প্রকৃত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নীতি বা দর্শন অনুসরণ কেবল ভারতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও তা বিপর্যয়কর ফল বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। মাঝে এক মেয়াদ বিরতির পর ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন তিনি। ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁর শাসন ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীদের কঠোর হস্তে দমন করতে থাকেন।
বিরোধী দলগুলোর মতোই শেখ হাসিনা সরকার দেশের কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করে। তিনি ভারতের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়া থেকে দূরে রাখেন। বিপরীতে ভারত শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে থাকে। দেশটির কর্মকর্তাদের যুক্তি, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালে বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হবে। কেবল তা-ই নয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর ভারত বাইডেন প্রশাসনের কাছে লবিং করে, যেন গণতন্ত্র ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে চাপ না দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সামরিক বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে ভারত ধরেই নিয়েছিল, চলমান আন্দোলনের চাপের পরও তিনি টিকে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বলার পর ভারত বিশাল ধাক্কা খায়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য বিরাট গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কোনো পশ্চিমা দেশই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।
শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি এরই মধ্যে এই অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও অবনমন হয়েছে।
উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। মিয়ানমারে ভারত গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ নিয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ঐতিহাসিক আফগান জাতীয়তাবাদীদের বাদ দিয়ে। বাংলাদেশে অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সীমান্তে ব্যাপক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে ভারত; যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
মোদির ‘লৌহমানব’ রাজনৈতিক কৌশল ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতির গতিপথও বদলে দিয়েছে। চীন-ভারত সীমান্তের বেইজিংয়ের বিপরীতে চুপ থাকলেও ছোট প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ভারত শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অভিযান চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোহাই দিয়ে। একই বছরে নেপাল নিজেদের সেক্যুলার ঘোষণার পর ভারত দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। মালদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদির সমালোচনার পর তাঁর সমর্থকেরা মালদ্বীপ বয়কটের ধুয়ো তোলে।
সীমান্তে কঠোর অবস্থান, পানিবণ্টন, ট্রানজিট সুবিধা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ইস্যুতে ভারতের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। যার প্রকাশ ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর জনগণের তীব্র ক্ষোভের মাধ্যমে।
ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরা নিয়মিতই মোদির সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে আদানির মতো ধনকুবেরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সরব ছিলেন। স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিদের সঙ্গে মোদি সরকারের এমন সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশেও প্রভাব ফেলেছে। গত বছর গৌতম আদানি ও শেখ হাসিনার একটি ছবি সামনে আসে। সে সময় জানা যায়, গৌতম আদানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বাংলাদেশিরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। মূলত সরকার অতিরিক্ত দামে এই বিদ্যুৎ কিনছিল, যা কেবল আদানির পকেটকেই ভারী করবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মোদিসংশ্লিষ্টদের সমর্থন শেখ হাসিনার প্রয়োজন ছিল।
জনতুষ্টিবাদ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিই বাংলাদেশে ভারতকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে মোদি সরকার যে হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেছে, তা আরও বেশি ক্ষতিকর। ২০১৯ সালে ভারত যে সিএএ আইন করেছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা। এই আইনের অঘোষিত মূল লক্ষ্য হলো—হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা (সে সময় ভারত বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ভরা আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় শেখ হাসিনার মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন)। সে সময় বিষয়টি বাংলাদেশ ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়। সে সময় মোদির ডান হাত বলে খ্যাত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উইপোকা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের এ ধরনের মন্তব্যও এই মনোভাবের আগুনে ঘি ঢালে।
বিজেপি সরকার সিএএ আইন চালু করার আগে, ভারতের বিচার বিভাগ আসামে নাগরিকদের নথিভুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কঠোর জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সমালোচকেরা এই নির্দেশকে অনথিভুক্ত ভারতীয় মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন, সিএএ ও এনআরসি লাখ লাখ ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। যদিও সিএএ এখনো সেই অর্থে কার্যকর হয়নি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল, শেখ হাসিনা সরকার এই ধারণাই পোক্ত করছিল যে তারা দিল্লি থেকে আদেশ নেয়। ২০২২ সালে বিজেপির মুখপাত্র মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনা সরকার বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়। ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতের বিরোধী মনোভাবকেই আরও উসকে দেয়। চলতি বছর নির্বাচনের সময় মোদি মুসলিম বিরোধিতাকে প্রচারণার হাতিয়ার করেন। গত বছর ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র যুক্ত করে (যেখানে সব ছোট প্রতিবেশী দেশকে ভারতের বলে দেখানো হয়) প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্ষোভ আরও উসকে দেন।
সর্বশেষ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদি বলেন, ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিক বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা। তাঁর এই প্রচেষ্টা ভারতের বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতির দেশ হওয়ার যে ঐতিহ্য, সেটাকেই নাকচ করে, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়েছে। এর কারণ মূলত মোদি সরকারের সমর্থক ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দুদের হামলা হওয়া নিয়ে ব্যাপক অপতথ্য প্রচার করেছে। কিন্তু মোদি সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এটি মোটেও অবাক করা কোনো বিষয় নয়।
এ মুহূর্তে মোদি সরকারের আত্মসমালোচনার সক্ষমতা সামান্যই বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনার জন্য পাকিস্তান, চীন বা ইসলামপন্থীদের দোষারোপ করার পরিবর্তে ভারতের স্বীকার করা উচিত, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকেরা তাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে পারে এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে। যদিও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে সমাদৃত করা হয়, তারপরও দেশটিকে প্রতিবেশীরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল শক্তি হিসেবে দেখে। ভূতত্ত্বের অলঙ্ঘনীয় নিয়মানুযায়ী, ছোট প্রতিবেশীদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে মিলেই কাজ করতে হবে। তবে এখন দেখার বিষয়, নয়াদিল্লি বিষয়টি কীভাবে সামলায়।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন দক্ষিণ এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটি তাঁর ‘প্রতিবেশী সবার আগে’—পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। এই নীতির মূল ভিত্তি—ভারতের ছোট ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ, দ্বিপক্ষীয় মতানৈক্য, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেরি এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে নীতিটি মার খেয়ে যায় শিগগির।
তারপরও বাংলাদেশে ভারতের এই নীতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছিল। কারণ, টানা ১৫ বছরের অপশাসনে পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি ঘনিষ্ঠভাবেই কাজ করেছেন। দুই পক্ষের সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ বা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা হতো।
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার বিপক্ষে জনরোষ বাড়তে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন তাঁর শাসনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকে। এই আন্দোলন একপর্যায়ে তাঁর পতনের এক দফায় রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় তিনি ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে যান।
বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক অজনপ্রিয় হওয়ার পরও শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলকে ব্যাপক ধাক্কা দেয়। শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, ভারত তত দিনই তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। এই সময়ে নয়াদিল্লি অন্য অংশীদারদের উদ্বেগ এমনকি বাংলাদেশের জনগণকেও উপেক্ষা করেছে। মোদির শাসনামলে ভারত অন্যান্য ছোট প্রতিবেশীর বেলায়ও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করেছে।
এটি স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের এই নীতিগত ব্যর্থতা কেবল বাহ্যিক ঘটনাবলি বা প্রভাবকের কারণে নয়, এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিফলনও বটে। কূটনীতিকে কেবল নিরাপত্তাকেন্দ্রিক করা থেকে শুরু করে মোদির ‘লৌহমানব’ ভাবমূর্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের উদারনৈতিক চিত্রের মুখোশ খসে পড়েছে। শেখ হাসিনার মতো সরকারগুলো মোদির অনুগ্রহধন্য ব্যবসায়িক বিভিন্ন স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরও সন্দেহপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদের প্রতি পক্ষপাত বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্যাতিত নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করেছিল, সেখানে বিদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। কেবল তা-ই নয়, ভারতে মুসলিমদের প্রতি বিজেপি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও দেশের বাইরে মোদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় মোদিকে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ভারত সরকারকে আত্মসমালোচনার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দেশটি নীতি সংশোধনের মতো জায়গায় যেতে পারেনি বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা নয়, শেষও নয়। একটি প্রকৃত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নীতি বা দর্শন অনুসরণ কেবল ভারতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও তা বিপর্যয়কর ফল বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। মাঝে এক মেয়াদ বিরতির পর ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন তিনি। ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁর শাসন ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীদের কঠোর হস্তে দমন করতে থাকেন।
বিরোধী দলগুলোর মতোই শেখ হাসিনা সরকার দেশের কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করে। তিনি ভারতের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়া থেকে দূরে রাখেন। বিপরীতে ভারত শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে থাকে। দেশটির কর্মকর্তাদের যুক্তি, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালে বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হবে। কেবল তা-ই নয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর ভারত বাইডেন প্রশাসনের কাছে লবিং করে, যেন গণতন্ত্র ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে চাপ না দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সামরিক বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে ভারত ধরেই নিয়েছিল, চলমান আন্দোলনের চাপের পরও তিনি টিকে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বলার পর ভারত বিশাল ধাক্কা খায়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য বিরাট গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কোনো পশ্চিমা দেশই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।
শেখ হাসিনার ওপর ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের মাধ্যমে কূটনীতির ক্ষেত্রে ‘অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভূতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত এই প্রতিফলন ছিল দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। দেশটি এরই মধ্যে এই অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও অবনমন হয়েছে।
উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। মিয়ানমারে ভারত গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ নিয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ঐতিহাসিক আফগান জাতীয়তাবাদীদের বাদ দিয়ে। বাংলাদেশে অতি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সীমান্তে ব্যাপক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে ভারত; যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
মোদির ‘লৌহমানব’ রাজনৈতিক কৌশল ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতির গতিপথও বদলে দিয়েছে। চীন-ভারত সীমান্তের বেইজিংয়ের বিপরীতে চুপ থাকলেও ছোট প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ভারত শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অভিযান চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোহাই দিয়ে। একই বছরে নেপাল নিজেদের সেক্যুলার ঘোষণার পর ভারত দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। মালদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদির সমালোচনার পর তাঁর সমর্থকেরা মালদ্বীপ বয়কটের ধুয়ো তোলে।
সীমান্তে কঠোর অবস্থান, পানিবণ্টন, ট্রানজিট সুবিধা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ইস্যুতে ভারতের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। যার প্রকাশ ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর জনগণের তীব্র ক্ষোভের মাধ্যমে।
ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরা নিয়মিতই মোদির সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে আদানির মতো ধনকুবেরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সরব ছিলেন। স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিদের সঙ্গে মোদি সরকারের এমন সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশেও প্রভাব ফেলেছে। গত বছর গৌতম আদানি ও শেখ হাসিনার একটি ছবি সামনে আসে। সে সময় জানা যায়, গৌতম আদানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বাংলাদেশিরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। মূলত সরকার অতিরিক্ত দামে এই বিদ্যুৎ কিনছিল, যা কেবল আদানির পকেটকেই ভারী করবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মোদিসংশ্লিষ্টদের সমর্থন শেখ হাসিনার প্রয়োজন ছিল।
জনতুষ্টিবাদ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিই বাংলাদেশে ভারতকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে মোদি সরকার যে হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেছে, তা আরও বেশি ক্ষতিকর। ২০১৯ সালে ভারত যে সিএএ আইন করেছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা। এই আইনের অঘোষিত মূল লক্ষ্য হলো—হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা (সে সময় ভারত বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ভরা আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় শেখ হাসিনার মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন)। সে সময় বিষয়টি বাংলাদেশ ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়। সে সময় মোদির ডান হাত বলে খ্যাত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উইপোকা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের এ ধরনের মন্তব্যও এই মনোভাবের আগুনে ঘি ঢালে।
বিজেপি সরকার সিএএ আইন চালু করার আগে, ভারতের বিচার বিভাগ আসামে নাগরিকদের নথিভুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কঠোর জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সমালোচকেরা এই নির্দেশকে অনথিভুক্ত ভারতীয় মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন, সিএএ ও এনআরসি লাখ লাখ ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। যদিও সিএএ এখনো সেই অর্থে কার্যকর হয়নি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল, শেখ হাসিনা সরকার এই ধারণাই পোক্ত করছিল যে তারা দিল্লি থেকে আদেশ নেয়। ২০২২ সালে বিজেপির মুখপাত্র মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনা সরকার বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়। ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতের বিরোধী মনোভাবকেই আরও উসকে দেয়। চলতি বছর নির্বাচনের সময় মোদি মুসলিম বিরোধিতাকে প্রচারণার হাতিয়ার করেন। গত বছর ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র যুক্ত করে (যেখানে সব ছোট প্রতিবেশী দেশকে ভারতের বলে দেখানো হয়) প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্ষোভ আরও উসকে দেন।
সর্বশেষ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদি বলেন, ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিক বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা। তাঁর এই প্রচেষ্টা ভারতের বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতির দেশ হওয়ার যে ঐতিহ্য, সেটাকেই নাকচ করে, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়েছে। এর কারণ মূলত মোদি সরকারের সমর্থক ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দুদের হামলা হওয়া নিয়ে ব্যাপক অপতথ্য প্রচার করেছে। কিন্তু মোদি সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এটি মোটেও অবাক করা কোনো বিষয় নয়।
এ মুহূর্তে মোদি সরকারের আত্মসমালোচনার সক্ষমতা সামান্যই বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনার জন্য পাকিস্তান, চীন বা ইসলামপন্থীদের দোষারোপ করার পরিবর্তে ভারতের স্বীকার করা উচিত, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকেরা তাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে পারে এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে। যদিও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে সমাদৃত করা হয়, তারপরও দেশটিকে প্রতিবেশীরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল শক্তি হিসেবে দেখে। ভূতত্ত্বের অলঙ্ঘনীয় নিয়মানুযায়ী, ছোট প্রতিবেশীদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে মিলেই কাজ করতে হবে। তবে এখন দেখার বিষয়, নয়াদিল্লি বিষয়টি কীভাবে সামলায়।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে