আব্দুর রহমান
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় আট মাস পার করল। কিয়েভে মস্কোর ড্রোন হামলা যুদ্ধের নতুন গতিপ্রকৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতিতে জন্ম দিয়েছে একাধিক নতুন সমীকরণের। সবচেয়ে জটিল সমীকরণগুলোর একটি হলো—রাশিয়া, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক। তেল আবিব এত দিন মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করে এলেও সম্প্রতি সেই সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ইরান থেকে রাশিয়ার ড্রোন ক্রয়, সিরিয়া থেকে রুশ সৈন্য ও সমরাস্ত্র প্রত্যাহার তেল আবিব-মস্কো সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েলি নীতি নির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ের লাপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা ইউক্রেনে ইসরায়েলি সামরিক সহায়তার বিষয়ে বলেছেন। কুলেবা জানিয়েছেন, তিনি ইয়ের লাপিদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বলা হয়েছে, লাপিদ ইউক্রেনের পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত।
ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়ে ইসরায়েলের আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তেজের অফিসের বিবৃতিতেই স্পষ্ট। বিবৃতিতে অনুসারে, বেনি গান্তেজ ইউক্রেনের কাছে জানতে চেয়েছেন, দেশটি কী ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েল সম্ভবত জনসাধারণের প্রাণ রক্ষার্থে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে অগ্রিম সতর্কবার্তা দিতে সক্ষম এমন সিস্টেম সরবরাহ করবে।’ তবে ইসরায়েলে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত এর পরিবর্তে ড্রোন ভূপাতিত করার ব্যবস্থা চেয়েছেন।
ইসরায়েল ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি না তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে একটি হলো— ইরান। রাশিয়া ইরানের তৈরি কামিকাজ এবং শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করে কিয়েভে বেশ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আবার ইরান-ইসরায়েল পরস্পরের ঘোষিত প্রতিপক্ষ। দুটি দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার সম্পর্ক ইতিবাচক। ফলে মস্কো–তেহরান সহযোগিতার সম্পর্ককে উপেক্ষা করে কেবল ইরানের বিরোধিতা করতে চাইলে ইসরায়েলকে রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী হারানোর ঝুঁকিও নিতে হতে পারে।
রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক থাকলেও ইহুদি রাষ্ট্রটির মূল মিত্র কিন্তু পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল তা পরিষ্কারভাবে বলেও দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বিষয়ে আমাদের নীতি পরিষ্কার। আমরা পশ্চিমের পক্ষে। আমরা ইউক্রেনের শরণার্থী এবং হতাহতদের যত্ন নেওয়ার জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখব।’ গত বুধবার ইসরায়েলের কান রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী গান্তেজ বলেন, ‘স্পষ্ট কিছু কারণে আমরা এই যুদ্ধে নিজেদের জড়াতে চাই না। এখনো পর্যন্ত আমাদের নীতি এটাই।’ তবে গান্তেজের সর্বশেষ অবস্থান বলছে, ইসরায়েল ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সরবরাহ করতে আগ্রহী।
এটিই সম্ভবত মস্কোকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইসরায়েলের উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসার আগেই মস্কো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে সৈন্য এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। তেল আবিবকে আস্থায় নিতেই মস্কো এমন পদক্ষেপ করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে দুই পশ্চিমা কূটনৈতিক ও ইসরায়েলি এক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই প্রত্যাহার মূলত সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযান চালাতে আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফিশম্যানের মন্তব্যে। তাঁর মতে, রাশিয়ার কারণেই ইসরায়েল সিরিয়ায় সুবিধা করতে পারছে না। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘রুশরা আমাদের গোলান মালভূমির সীমান্তে অবস্থান করছে। ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত তাদের নৌবাহিনীও যুদ্ধের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। ফলে, ইসরায়েল চাইলেও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে না।’
তাহলে বুঝেশুনেই মস্কোর সঙ্গে পরোক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিচ্ছে ইসরায়েল? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল নিজের স্বার্থেই এমন অবস্থানে গেছে। প্রকাশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে শায়েস্তা করা তো বটেই সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষাও ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাশিয়ার কাছে ইরানের ড্রোন বিক্রির বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি তেল আবিব। কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের সরাসরি মাঠে নামার পক্ষে ওকালতি করেছেন দেশটির মন্ত্রী নাখমান শাই। এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়াকে ইরানের সামরিক সহায়তা দেওয়ায় এই যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটোর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনকে ইসরায়েলি সহায়তা দেওয়ার সময় এসে গেছে।’
তবে নতুন ভূরাজনৈতিক খেলায় ইসরায়েলকে খুব বুঝেশুনে পা ফেলতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে একা টিকে থাকতে হলে তাকে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হবে! ইসরায়েল এখনো কেন ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করছে না সে বিষয়ে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রবীণ কূটনীতিক অ্যালন লিওল। আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালন লিওল বলেছেন, ‘যুদ্ধের শুরুর দিন থেকেই ইসরায়েল কেবল নিজের স্বার্থই বিবেচনা করেছে। প্রথম দিকে তারা কেবল সিরিয়া যুদ্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবেছে। এরপর ভেবেছে রাশিয়ায় ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থের জায়গা থেকে। সর্বশেষ তারা ইরানের পারমাণবিক চুক্তির জায়গা থেকে বিষয়টি বিবেচনা করেছে।’
সারা দুনিয়ার ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের অবস্থান নেওয়ার সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওয়ার্ল্ড জিউয়িশ কংগ্রেসের এক হিসাব অনুসারে, ২০১৬ সাল ইউক্রেনে অন্তত ৫৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ইহুদির বাস। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেও ইহুদি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি সহায়তা না পেয়ে গত মাসে আক্ষেপ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন জেলেনস্কি। ইসরায়েলের এমন অবস্থানে হতবাক হওয়ার কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের কিছুই দেয়নি। কিছুই না!’
ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়ায়ও ইহুদি জনসংখ্যা কম না। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ায় অন্তত ১ লাখ ৬৫ হাজার ইহুদির বাস। এর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর আগস্ট অবধি অন্তত ২০ হাজার ৫০০ জন ইসরায়েলে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে, রুশ ইহুদিদের স্বার্থও ইসরায়েলকে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। ইসরায়েল তা বিবেচনায় নিতে বাধ্য। ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফিশম্যান বলেন, ‘ইসরায়েলি পররাষ্ট্রনীতির মূল কথাই হলো ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা।’
এই নৈতিক দায় থেকেই ইসরায়েল ইউক্রেন যুদ্ধে নির্বিকার থাকতে পারেনি। ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন লিওল ফরেন পলিসিকে বলেন, ‘ইয়ের লাপিদ নাফতালি বেনেতের কাছ থেকে গত জুলাইয়ে দায়িত্ব নিয়েই বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও হেলমেট পাঠিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটি রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছিল।’ লিওলের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের অবস্থান দ্বান্দ্বিক। দেশের অধিকাংশ জনগণই ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা নিরাপত্তা ইস্যুতে চাপে আছেন। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে সিরিয়ার আকাশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালন লিওলের মতে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই ইসরায়েলের সামরিক নীতি নির্ধারকেরা সিরিয়া-ইরানকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। সে অনুসারে ছক কষছে। তবে রাশিয়া সিরিয়ার বেলায় ইসরায়েলকে ছাড় দিলেও ইরানের বিষয়ে কী অবস্থান নেবে তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে যায় তাহলে রাশিয়া যে ভালো চোখে দেখবে না সেটি স্পষ্ট করে বলেছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ। মেদভেদেভকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, ইসরায়েল কিয়েভ সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। এটি খুবই বেপরোয়া পদক্ষেপ। এটি দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ধ্বংস করবে।’
অর্থাৎ মেদভেদেভের হুমকি, ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সরবরাহে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আগ্রহ, প্রধানমন্ত্রীর নীরব সম্মতি—সব মিলিয়ে আগামী দিনে মস্কো–তেল আবিব সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ থাকবে না, সেটি অনুমান করা যায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, ফরেন পলিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপি
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় আট মাস পার করল। কিয়েভে মস্কোর ড্রোন হামলা যুদ্ধের নতুন গতিপ্রকৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতিতে জন্ম দিয়েছে একাধিক নতুন সমীকরণের। সবচেয়ে জটিল সমীকরণগুলোর একটি হলো—রাশিয়া, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক। তেল আবিব এত দিন মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করে এলেও সম্প্রতি সেই সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ইরান থেকে রাশিয়ার ড্রোন ক্রয়, সিরিয়া থেকে রুশ সৈন্য ও সমরাস্ত্র প্রত্যাহার তেল আবিব-মস্কো সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েলি নীতি নির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ের লাপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা ইউক্রেনে ইসরায়েলি সামরিক সহায়তার বিষয়ে বলেছেন। কুলেবা জানিয়েছেন, তিনি ইয়ের লাপিদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বলা হয়েছে, লাপিদ ইউক্রেনের পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত।
ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়ে ইসরায়েলের আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তেজের অফিসের বিবৃতিতেই স্পষ্ট। বিবৃতিতে অনুসারে, বেনি গান্তেজ ইউক্রেনের কাছে জানতে চেয়েছেন, দেশটি কী ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েল সম্ভবত জনসাধারণের প্রাণ রক্ষার্থে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে অগ্রিম সতর্কবার্তা দিতে সক্ষম এমন সিস্টেম সরবরাহ করবে।’ তবে ইসরায়েলে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত এর পরিবর্তে ড্রোন ভূপাতিত করার ব্যবস্থা চেয়েছেন।
ইসরায়েল ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি না তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে একটি হলো— ইরান। রাশিয়া ইরানের তৈরি কামিকাজ এবং শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করে কিয়েভে বেশ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আবার ইরান-ইসরায়েল পরস্পরের ঘোষিত প্রতিপক্ষ। দুটি দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার সম্পর্ক ইতিবাচক। ফলে মস্কো–তেহরান সহযোগিতার সম্পর্ককে উপেক্ষা করে কেবল ইরানের বিরোধিতা করতে চাইলে ইসরায়েলকে রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী হারানোর ঝুঁকিও নিতে হতে পারে।
রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক থাকলেও ইহুদি রাষ্ট্রটির মূল মিত্র কিন্তু পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল তা পরিষ্কারভাবে বলেও দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বিষয়ে আমাদের নীতি পরিষ্কার। আমরা পশ্চিমের পক্ষে। আমরা ইউক্রেনের শরণার্থী এবং হতাহতদের যত্ন নেওয়ার জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখব।’ গত বুধবার ইসরায়েলের কান রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী গান্তেজ বলেন, ‘স্পষ্ট কিছু কারণে আমরা এই যুদ্ধে নিজেদের জড়াতে চাই না। এখনো পর্যন্ত আমাদের নীতি এটাই।’ তবে গান্তেজের সর্বশেষ অবস্থান বলছে, ইসরায়েল ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সরবরাহ করতে আগ্রহী।
এটিই সম্ভবত মস্কোকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইসরায়েলের উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসার আগেই মস্কো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে সৈন্য এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। তেল আবিবকে আস্থায় নিতেই মস্কো এমন পদক্ষেপ করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে দুই পশ্চিমা কূটনৈতিক ও ইসরায়েলি এক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই প্রত্যাহার মূলত সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযান চালাতে আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফিশম্যানের মন্তব্যে। তাঁর মতে, রাশিয়ার কারণেই ইসরায়েল সিরিয়ায় সুবিধা করতে পারছে না। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘রুশরা আমাদের গোলান মালভূমির সীমান্তে অবস্থান করছে। ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত তাদের নৌবাহিনীও যুদ্ধের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। ফলে, ইসরায়েল চাইলেও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে না।’
তাহলে বুঝেশুনেই মস্কোর সঙ্গে পরোক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিচ্ছে ইসরায়েল? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল নিজের স্বার্থেই এমন অবস্থানে গেছে। প্রকাশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে শায়েস্তা করা তো বটেই সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষাও ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাশিয়ার কাছে ইরানের ড্রোন বিক্রির বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি তেল আবিব। কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের সরাসরি মাঠে নামার পক্ষে ওকালতি করেছেন দেশটির মন্ত্রী নাখমান শাই। এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়াকে ইরানের সামরিক সহায়তা দেওয়ায় এই যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটোর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনকে ইসরায়েলি সহায়তা দেওয়ার সময় এসে গেছে।’
তবে নতুন ভূরাজনৈতিক খেলায় ইসরায়েলকে খুব বুঝেশুনে পা ফেলতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে একা টিকে থাকতে হলে তাকে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হবে! ইসরায়েল এখনো কেন ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করছে না সে বিষয়ে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রবীণ কূটনীতিক অ্যালন লিওল। আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালন লিওল বলেছেন, ‘যুদ্ধের শুরুর দিন থেকেই ইসরায়েল কেবল নিজের স্বার্থই বিবেচনা করেছে। প্রথম দিকে তারা কেবল সিরিয়া যুদ্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবেছে। এরপর ভেবেছে রাশিয়ায় ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থের জায়গা থেকে। সর্বশেষ তারা ইরানের পারমাণবিক চুক্তির জায়গা থেকে বিষয়টি বিবেচনা করেছে।’
সারা দুনিয়ার ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের অবস্থান নেওয়ার সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওয়ার্ল্ড জিউয়িশ কংগ্রেসের এক হিসাব অনুসারে, ২০১৬ সাল ইউক্রেনে অন্তত ৫৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ইহুদির বাস। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেও ইহুদি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি সহায়তা না পেয়ে গত মাসে আক্ষেপ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন জেলেনস্কি। ইসরায়েলের এমন অবস্থানে হতবাক হওয়ার কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের কিছুই দেয়নি। কিছুই না!’
ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়ায়ও ইহুদি জনসংখ্যা কম না। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ায় অন্তত ১ লাখ ৬৫ হাজার ইহুদির বাস। এর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর আগস্ট অবধি অন্তত ২০ হাজার ৫০০ জন ইসরায়েলে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে, রুশ ইহুদিদের স্বার্থও ইসরায়েলকে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। ইসরায়েল তা বিবেচনায় নিতে বাধ্য। ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফিশম্যান বলেন, ‘ইসরায়েলি পররাষ্ট্রনীতির মূল কথাই হলো ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা।’
এই নৈতিক দায় থেকেই ইসরায়েল ইউক্রেন যুদ্ধে নির্বিকার থাকতে পারেনি। ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন লিওল ফরেন পলিসিকে বলেন, ‘ইয়ের লাপিদ নাফতালি বেনেতের কাছ থেকে গত জুলাইয়ে দায়িত্ব নিয়েই বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও হেলমেট পাঠিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটি রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছিল।’ লিওলের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে ইসরায়েলের অবস্থান দ্বান্দ্বিক। দেশের অধিকাংশ জনগণই ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা নিরাপত্তা ইস্যুতে চাপে আছেন। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে সিরিয়ার আকাশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালন লিওলের মতে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই ইসরায়েলের সামরিক নীতি নির্ধারকেরা সিরিয়া-ইরানকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। সে অনুসারে ছক কষছে। তবে রাশিয়া সিরিয়ার বেলায় ইসরায়েলকে ছাড় দিলেও ইরানের বিষয়ে কী অবস্থান নেবে তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে যায় তাহলে রাশিয়া যে ভালো চোখে দেখবে না সেটি স্পষ্ট করে বলেছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ। মেদভেদেভকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, ইসরায়েল কিয়েভ সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। এটি খুবই বেপরোয়া পদক্ষেপ। এটি দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ধ্বংস করবে।’
অর্থাৎ মেদভেদেভের হুমকি, ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সরবরাহে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আগ্রহ, প্রধানমন্ত্রীর নীরব সম্মতি—সব মিলিয়ে আগামী দিনে মস্কো–তেল আবিব সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ থাকবে না, সেটি অনুমান করা যায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, ফরেন পলিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপি
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে