বিচিত্র /মাঝ আকাশে উড়োজাহাজের দরজা খোলার চেষ্টা, টেপ দিয়ে বেঁধে রাখলেন যাত্রীরা

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৭
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ১২
মাঝ আকাশে উড়োজাহাজের দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় এক যাত্রীকে টেপ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ছবি: এআই ব্যবহার করে তৈরি

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এক ফ্লাইটের যাত্রীরা অপর এক যাত্রীকে মাঝপথে চেপে ধরে হাত-পা টেপ দিয়ে আটকে দেন। অবশ্য ওই যাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তিনি উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

মিলওয়াকি-ডালাস ফোর্ট ওয়র্থ ফ্লাইটের এই কাণ্ড বিমানযাত্রীদের অসংলগ্ন আচরণের সর্বশেষ উদাহরণ। এই সমস্যা করোনা মহামারির আগে থেকে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফএএ) কমপক্ষে ১ হাজার ৮৫৪টি এমন ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।

ডালাস ফোর্ট ওয়র্থ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনের সূত্রে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে আমেরিকান এয়ারলাইনসের এএ ১৯১৫ ফ্লাইটে। এই বেপরোয়া যাত্রী একজন এটেনডেন্টকে জানান, তিনি এই মুহূর্তে উড়োজাহাজ থেকে নেমে যেতে চান। একপর্যায়ে লোকটি আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে ওই নারী এটেনডেন্ট কাছাকাছি বসা যাত্রীদের সাহায্য চান।

ওই নারী উড়োজাহাজের এক্সিট দরজা এবং যাত্রীটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান। তখন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তাঁর এবং দরজার দিকে এগিয়ে যান ওই যাত্রী এবং এটেনডেন্টের গলা ও কবজিতে আঘাত করেন।

এই পরিস্থিতিতে ডগ ম্যাকক্রাইটসহ আশপাশের যাত্রীরা ছুটে আসেন বলে সিএনএন অনুমোদিত সংবাদ সংস্থা ডব্লিউডিজেটিকে জানান ম্যাকক্রাইট।

ম্যাকক্রাইট উন্মত্ত আচরণ করা লোকটিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন এবং মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন।

‘তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, যেভাবেই হোক উড়োজাহাজ থেকে নামবেন। আর আমি তাঁকে নামতে না দেওয়ার বিষয়ে অটল ছিলাম।’ বলেন ম্যাকক্রাইট।

প্রতিবেদন এবং ম্যাকক্রাইটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, তাঁর সাহায্যে অন্য যাত্রীরাও এগিয়ে আসেন। অপর এক ফ্লাইট এটেনডেন্টের কাছ থেকে ডাক্ট টেপ পেয়ে লোকটির কবজি, হাঁটু এবং গোড়ালি একত্রে মুড়ে তাঁকে বাগে আনা হয়। তারপর তাঁকে প্রায় ৩০ মিনিট চেপে থরে রাখা হয়।

ডালাস ফোর্ট ওয়র্থ বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি নিরাপদে অবতরণের পর এফবিআই এবং বিমানবন্দরের জননিরাপত্তা বিভাগের এজেন্টরা তাতে ওঠে ওই যাত্রীকে নিজেদের হেফাজতে নেন। পরে মানসিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় লোকটিকে।

এদিকে এফএএ এয়ারবাস এ৩১৯-এর ভেতরের এ ঘটনা তদন্ত করবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিএনএনকে।

‘আমরা গ্রাহক এবং ক্রুদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিই। আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আমাদের সদস্য ও গ্রাহকদের ধন্যবাদ জানাই।’ সিএনএনকে এক বিবৃতিতে জানায় আমেরিকান এয়ারলাইনস।

এফএএর যাত্রীদের এমন অসংলগ্ন আচরণের জন্য শূন্য সহনশীলতা নীতি রয়েছে। ২০২১ সালে এটি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়, প্রায় ৬ হাজার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। তারপর এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। তার পরও ২০২৩ সালে ২ হাজারের বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে এফএএর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ২০২৩ সালে চার শতাধিক ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৭৫ লাখ ডলার জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।

গত মাসে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে একজন যাত্রীকে বিনা প্ররোচনায় মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছিল। রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত বারবার সেই ব্যক্তিকে ঘুষি মেরেই যাচ্ছিল লোকটি।

সেপ্টেম্বরে ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে একজন যাত্রী এক ফ্লাইট এটেনডেন্টকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং ‘বলেছিলেন যে তিনি সবাইকে হত্যা করে ফেলবেন।’ প্লেনটি ঘুরিয়ে যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সেখানে ফিরিয়ে আনা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত