স্পার্তা প্রাহার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যাক্রোবেটিক গোলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন আর্লিং হালান্ড। সেই ম্যাচে জোড়া গোলে ম্যানচেস্টার সিটির বড় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন নরওয়েজীয় স্ট্রাইকার। এবার প্রিমিয়ার লিগেও সিটিজেনদের জয় এনে দিলেন তিনি।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে প্রিমিয়ার লিগে ফিরতেই স্বরূপে ফিরলেন আর্লিং হালান্ড। পেলেন গোলের দেখা। গতকাল ঘরের মাঠ ইতিহাদে আর্সেনালের বিপক্ষে ৯ মিনিটে ম্যানচেস্টার সিটিকে এগিয়ে দেন নরওয়েজীয় স্ট্রাইকার। ম্যাচটিতে অবশ্য শেষ মুহূর্তের গোলে হার এড়িয়েছে গত চারবারের লিগ চ্যাম্
গোল ছাড়া যেন কিছুই বোঝেন না আর্লিং হালান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে তিনি মেতেছেন রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায়। সিটিজেনদের হয়ে গোলের সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার।তাঁর (হালান্ড) সঙ্গে, পরে সব খানেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
ইংল্যান্ড তো বটে, বর্তমান ফুটবল বিশ্বে আর্লিং হালান্ডের মতন গোল করতে পারেন এমন কজন আছেন? কিন্তু নরওয়েজীয় স্ট্রাইকার যখন গোল করতে পারেন না তখন প্রশ্ন ওঠে, ‘তিনি কি আদতেই ভালো ফুটবলার?’ গতকাল রাতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর সেই প্রশ্ন উঠল আবারও।
ফান্সের তো বটে, রিয়াল মাদ্রিদেরও বড় সম্পত্তি কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁকে রক্ষা করার একটা আলাদা ব্যাপার তো থাকেই। তার জন্য ২৫ বছর বয়সী তারকাকে ‘বিশ্রাম’ দিয়েছিল ফ্রান্স। দলের নিয়মিত অধিনায়ক একাদশে না থাকলেও কেভিন ডি ব্রুইনার বেলজিয়ামকে হারিয়েছে ফ্রান্স।
ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলার আগেই যেন ‘দুশ্চিন্তা’ শুরু হয় আর্লিং হালান্ডকে নিয়ে। কারণ ‘গোলমেশিন’ বনে যাওয়া এই স্ট্রাইকারকে আটকানো যে অনেক কঠিন। ম্যান সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার চোখে হালান্ড রীতিমতো অদম্য।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি ইউরোপীয় ফুটবল ছেড়ে চলে গেছেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে। তবে তাঁরা যে ইউরোপে লম্বা একটা সময় রাজত্ব করেছেন, একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন, তা চাইলেও ভোলা সম্ভব নয়। সময়ের দুই তারকা ফুটবলারের সঙ্গে এবার আর্লিং হালান্ডকে তুলনা করলেন পেপ গার্দিওলা।
ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে ‘গোলমেশিন’ তকমা জুড়ে গেছে আর্লিং হালান্ডের সঙ্গে। একের পর এক রেকর্ডও ভেঙে দিচ্ছেন নিয়মিত। নরওয়েজীয় এই স্ট্রাইকার জায়গা করে নিয়েছেন কিংবদন্তিদের তালিকায়।
আর্লিং হালান্ডের বিধ্বংসী রূপ দেখা যাচ্ছে গত দুই মৌসুম ধরেই। ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার পর গোল বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন তিনি। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙার কারণে এরই মধ্যে ‘বিস্ট’, ‘জায়ান্ট’ তকমা পেয়ে গেছেন। গোলমেশিন হালান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন কোল পালমার।
প্রিমিয়ার লিগের লড়াইটা বেশ ভালোই জমেছেন এবারের মৌসুমে। শীর্ষস্থান নিয়ে লিভারপুল, আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ লুটনকে বিধ্বস্ত করে আবারও লিগের শীর্ষে উঠছে সিটিজেনরা।
প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে আর্লিং হালান্ডের খেলা দেখে ম্যানচেস্টার সিটি তারকাকে ধুয়ে দিয়েছিলেন রয় কিন। হালান্ডকে ‘সাধারণ মানের এবং প্রায় দ্বিতীয় স্তরের লিগের খেলোয়াড়’ বলে সম্বোধন করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক অধিনায়ক।
টটেনহামের হয়ে ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে কোনো দলীয় শিরোপা জেতা হয়নি। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনবার প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন হ্যারি কেইন। এ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় এসেও দারুণ ছন্দে ইংলিশ ফরোয়ার্ড। বায়ার্ন মিউনিখ ১১ মৌসুম পর লিগ হারাতে বসলেও কেইন প্রথমবার পরতে যাচ্ছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট, যদি বা
গোলমেশিন, রেকর্ড হালান্ড—আর্লিং হালান্ডকে এসব উপাধি দিলেও হয়তো ভুল হবে না। মাঠে নামলেই যেন তাঁকে পেয়ে বসে গোলের নেশা। তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে মেতেছেন রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায়।
ফর্মে থাকলে আর্লিং হালান্ড কতটা ভয়ংকর হতে পারেন, সেটার প্রমাণ মিলেছে বহুবার। হালান্ডের ঝড় গতকাল লুটন টাউনের যে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায়ই ছিল না। নরওয়েজীয় স্ট্রাইকারের বিধ্বংসী পারফরম্যান্সে লুটন টাউনকে রীতিমতো লুটেপুটে খেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।
লিওনেল মেসির কাছে হেরে গত বছর ব্যালন ডি’অর ও ফিফা দ্য বেস্ট জেতা হয়নি আর্লিং হালান্ডের। এবার ২০২৪ লরিয়াস বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও আছেন এ দুই ফুটবলার।
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে আর্লিং হালান্ড এসেছেন ২০২২-২৩ মৌসুমে। ম্যান সিটিতে প্রথম মৌসুমে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল, ট্রেবল জয়—এসব অর্জন ও রেকর্ড সবই তাঁর প্রথম মৌসুমে।
টটেনহাম থেকে বায়ার্ন মিউনিখে হ্যারি কেইন এসেছেন ২০২৩-২৪ মৌসুমে। বায়ার্নে নিয়মিত গোল করা যেন একরকম অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড।