রজত কান্তি রায়
লালমাটিয়া বি ব্লকের ৭ নম্বর রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন তিনি। রং চটে যাওয়া হলুদ শাড়ি দিয়ে মাথার অর্ধেক ঢাকা। চোখে গাঢ় কালো চশমা। ঝুলে যাওয়া ঠোঁট। বয়স আনুমানিক ৬০। তার বেশিও হতে পারে। কম নয়। এই হাঁটায় কোনো বিশেষত্ব নেই, সেটা আছে তাঁর কণ্ঠে।
রাস্তার অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে দেখে থামলেন। একেবারে নীরব হয়ে গেলেন। কোনো কথা বললেন না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘থাকেন কোথায়?’ মিনমিনে কণ্ঠে জানালেন, ‘কৃষি মার্কেটের পেছনে।’ থাকার জায়গার পরিচয় আর বাংলা উচ্চারণে বুঝলাম, তিনি থাকেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পেছনের বিহারি কলোনির কোথাও। আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘নাম কী আপনার?’ বললেন, ‘সখিনা। সখিনা বেগম।’
চোখের অসুখে ভুগছেন তিনি। চশমা দেখে বুঝলাম, ছানি অপারেশন হয়েছে। অপারেশন-পরবর্তী ওষুধ কেনার টাকার জন্য রাস্তায় নেমেছেন সখিনা বেগম। না, শুধু ওষুধ কেনার টাকা নয়, সখিনা বেগমের ছেলে নাদিম রিকশা চালান এই শহরেই। নাদিমের সঙ্গেই থাকেন সখিনা। মাস প্রায় শেষ হতে চলল। ভাড়া দেওয়া হয়নি এখনো। তার চাপ আছে। আছে খাওয়ার খরচের চাপ। রিকশাচালক ছেলের পক্ষে একা সবকিছু করে ওঠা হয় না। তাই সপ্তাহে একদিন তিনি ভিক্ষা করেন ছেলের অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা সামাল দেওয়ার জন্য।
কথা একবার শুরু হলে শেষ হতে চায় না। সখিনা বেগমেরও জমে থাকা কথা শেষ হয় না। আমারও বেলা বয়ে যায়। বছর বিশেক আগে সখিনা বেগমের স্বামী জামাল উদ্দিন মারা গেছেন। সেই থেকে ছেলেই সম্বল। জামাল উদ্দিন ছিলেন রংমিস্ত্রি। বড় বড় দালানে রং করতেন। সে সময়ের হিসাবে হয়তো উপার্জন খুব কম ছিল না। চলে যেত দুজনের। কিন্তু তিনি মারা গেলে সব হিসাব বদলে যায় সখিনা বেগমের। অকুল দরিয়ায় পড়া বলতে যা বোঝায়, তাই। এ-বাড়ি, সে-বাড়ি কাজ করে কষ্টেসৃষ্টে চলেন। ছেলে বড় হতে থাকে। স্বপ্ন বাড়তে থাকে—এবার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বড় হয়ে ছেলে রিকশা চালানো শুরু করেন। কিন্তু সর্বগ্রাসী অভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
নিরুপায় সখিনা বেগম তাই সপ্তাহে এক দিন রাস্তায় নামেন; ভিক্ষা করতে। বয়স হয়েছে বলে বেশি হাঁটতে পারেন না। আশপাশের রাস্তাগুলোয় হাঁটতে হাঁটতে অনুচ্চ স্বরে চিৎকার করে বলেন, ‘চোখের ডাক্তার দেখামু বাবা, কয়টা টেকা দেন’, ‘মা, ভাত খামু, কয়টা টেকা দেন মা’। সখিনা বেগমের সেই চিৎকার চাপা পড়ে গাড়ির শব্দ আর মানুষের কোলাহলের নিচে। তার পরও তিনি চিৎকার জারি রাখেন। কিছু মানুষের কানে পড়লে হাতেও কিছু খুচরো টাকা মেলে। তাই নিয়ে সখিনা বেগম ফেরেন এক ঐতিহাসিক ভুল ঠিকানায়, যাকে বিহারি ক্যাম্প বলে চেনে মানুষ।
সময় গড়ায়। সখিনা বেগম কথা বলতে বলতে ক্লান্ত বোধ করেন। আমিও উসখুস করতে থাকি। খুঁজতে থাকি স্কেপরুট। সময়ের অজুহাত মেনে নেন সখিনা বেগম। আমি চলতে চলতে শুনতে পাই, সখিনা বেগম অনুচ্চস্বরে চেঁচিয়ে চলেছেন, ‘কয়টা টেকা…।’ সেই চিৎকার চাপা পড়ে যাচ্ছে শহুরে শব্দে।
লালমাটিয়া বি ব্লকের ৭ নম্বর রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন তিনি। রং চটে যাওয়া হলুদ শাড়ি দিয়ে মাথার অর্ধেক ঢাকা। চোখে গাঢ় কালো চশমা। ঝুলে যাওয়া ঠোঁট। বয়স আনুমানিক ৬০। তার বেশিও হতে পারে। কম নয়। এই হাঁটায় কোনো বিশেষত্ব নেই, সেটা আছে তাঁর কণ্ঠে।
রাস্তার অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে দেখে থামলেন। একেবারে নীরব হয়ে গেলেন। কোনো কথা বললেন না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘থাকেন কোথায়?’ মিনমিনে কণ্ঠে জানালেন, ‘কৃষি মার্কেটের পেছনে।’ থাকার জায়গার পরিচয় আর বাংলা উচ্চারণে বুঝলাম, তিনি থাকেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পেছনের বিহারি কলোনির কোথাও। আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘নাম কী আপনার?’ বললেন, ‘সখিনা। সখিনা বেগম।’
চোখের অসুখে ভুগছেন তিনি। চশমা দেখে বুঝলাম, ছানি অপারেশন হয়েছে। অপারেশন-পরবর্তী ওষুধ কেনার টাকার জন্য রাস্তায় নেমেছেন সখিনা বেগম। না, শুধু ওষুধ কেনার টাকা নয়, সখিনা বেগমের ছেলে নাদিম রিকশা চালান এই শহরেই। নাদিমের সঙ্গেই থাকেন সখিনা। মাস প্রায় শেষ হতে চলল। ভাড়া দেওয়া হয়নি এখনো। তার চাপ আছে। আছে খাওয়ার খরচের চাপ। রিকশাচালক ছেলের পক্ষে একা সবকিছু করে ওঠা হয় না। তাই সপ্তাহে একদিন তিনি ভিক্ষা করেন ছেলের অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা সামাল দেওয়ার জন্য।
কথা একবার শুরু হলে শেষ হতে চায় না। সখিনা বেগমেরও জমে থাকা কথা শেষ হয় না। আমারও বেলা বয়ে যায়। বছর বিশেক আগে সখিনা বেগমের স্বামী জামাল উদ্দিন মারা গেছেন। সেই থেকে ছেলেই সম্বল। জামাল উদ্দিন ছিলেন রংমিস্ত্রি। বড় বড় দালানে রং করতেন। সে সময়ের হিসাবে হয়তো উপার্জন খুব কম ছিল না। চলে যেত দুজনের। কিন্তু তিনি মারা গেলে সব হিসাব বদলে যায় সখিনা বেগমের। অকুল দরিয়ায় পড়া বলতে যা বোঝায়, তাই। এ-বাড়ি, সে-বাড়ি কাজ করে কষ্টেসৃষ্টে চলেন। ছেলে বড় হতে থাকে। স্বপ্ন বাড়তে থাকে—এবার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বড় হয়ে ছেলে রিকশা চালানো শুরু করেন। কিন্তু সর্বগ্রাসী অভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
নিরুপায় সখিনা বেগম তাই সপ্তাহে এক দিন রাস্তায় নামেন; ভিক্ষা করতে। বয়স হয়েছে বলে বেশি হাঁটতে পারেন না। আশপাশের রাস্তাগুলোয় হাঁটতে হাঁটতে অনুচ্চ স্বরে চিৎকার করে বলেন, ‘চোখের ডাক্তার দেখামু বাবা, কয়টা টেকা দেন’, ‘মা, ভাত খামু, কয়টা টেকা দেন মা’। সখিনা বেগমের সেই চিৎকার চাপা পড়ে গাড়ির শব্দ আর মানুষের কোলাহলের নিচে। তার পরও তিনি চিৎকার জারি রাখেন। কিছু মানুষের কানে পড়লে হাতেও কিছু খুচরো টাকা মেলে। তাই নিয়ে সখিনা বেগম ফেরেন এক ঐতিহাসিক ভুল ঠিকানায়, যাকে বিহারি ক্যাম্প বলে চেনে মানুষ।
সময় গড়ায়। সখিনা বেগম কথা বলতে বলতে ক্লান্ত বোধ করেন। আমিও উসখুস করতে থাকি। খুঁজতে থাকি স্কেপরুট। সময়ের অজুহাত মেনে নেন সখিনা বেগম। আমি চলতে চলতে শুনতে পাই, সখিনা বেগম অনুচ্চস্বরে চেঁচিয়ে চলেছেন, ‘কয়টা টেকা…।’ সেই চিৎকার চাপা পড়ে যাচ্ছে শহুরে শব্দে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২১ দিন আগেফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ দিন আগেকথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪