চালের বাজারে অস্থিরতা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ০৭
Thumbnail image

চালের দাম এবং বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জনগণের নিত্যদিনের বাস্তবতা। আমনের ভরা মৌসুমে গত কয়দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চড়া দর নিয়ে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা এবং মিলাররা একে অপরকে দুষছেন। ১০ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে এ নিয়ে সরকারের অসহায়ত্ব। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে সুইচ দিলেন আর বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’ সরকারের হাতে আলাদিনের চেরাগ যেমন নেই, তেমনি ক্রতা-ভোক্তাদের পকেটও তো কোনো জাদুর বাক্স নয়!

সরকার চালের দাম কমাতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু সেসব উদ্যোগ কতটা কার্যকর তা স্পষ্ট নয়। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি এবং খাদ্যগুদামে মজুত বাড়ানোর চেষ্টা ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো যথেষ্ট কার্যকর মনে হচ্ছে না। ধানের মৌসুমে চালের দাম বাড়া স্বাভাবিক নিয়ম নয়। এটা মজুতদারি, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি এবং আমদানিনির্ভরতার জটিল প্রভাবের ফল।

ধারণা করা হয়, সরকারের নজরদারির অভাবে বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন; সেই সঙ্গে ভোক্তা অধিকারের দুর্বলতা ক্রেতাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে।

ব্যবসায়িক সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির একটি প্রচলিত পন্থা। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা ব্যয়ের পাশাপাশি জনগণের দুর্ভোগও বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তারা প্রত্যক্ষভাবে এই চাপ সহ্য করেন। মানুষ যখন সংসার চালাতে গিয়ে কষ্টে পড়ে, তখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়ানো। উপদেষ্টা এবং নীতিনির্ধারকদের বিরক্ত না হয়ে সমস্যার সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করা জরুরি।

চালের বাজার স্থিতিশীল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ দরকার। সরকার ধান সংগ্রহের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে কৃষকের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করতে পারে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সরকারি খাদ্যগুদামের মজুত আরও উন্নত করা এবং দুর্নীতি ঠেকানো প্রয়োজন। মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিদেশি চালের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা বন্ধ করা এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা উচিত। এতে দেশের ভেতরেই সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারের অস্থিরতা কমানো সম্ভব। চালের বাজারে অনিয়ম ও মজুতদারির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

‘আলাদিনের চেরাগ’ নেই—এই বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর মোক্ষম কৌশল, সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষ সব ব্যাপারেই সরকারের ওপর নির্ভরশীল এবং সে কারণেই সব সংকটে সরকারেরই দায়িত্ব বেশি। অর্থনীতি এবং ন্যায্যমূল্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা, দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দরকার। অন্যথায় ‘ক্ষুধার দুনিয়া’র এই বাস্তবতা মানুষের ক্ষোভ ও হতাশাকেই বাড়াবে।

নেতিবাচক পরিস্থিতি যেমন ভয়াবহ, ইতিবাচক পদক্ষেপ ততটাই জরুরি। সমাধান সম্ভব—শুধু দরকার আলাদিনের চেরাগের স্বপ্ন দেখানো নয়, বাস্তব চিন্তাভাবনায় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দ্রুত তা বাস্তবায়নের মানসিকতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত