আবেদীন কাদের
ছেলেবেলায় আমার বাবা বলতেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রতিকূল অবস্থা আসে এবং সেটাই আসে বেশি। কিন্তু সেই প্রতিকূল অবস্থাকে নিজের অনুকূলে আনাই সত্যিকার মেধাবী মানুষের কাজ।’ বিষয়টা আমি খুব ভালো বুঝতাম না। তিনি বলতেন, ‘ধরো তুমি কোনো কারণে জেলে গেলে। হাতে অফুরন্ত সময়, কিন্তু অবস্থা বেদনার, কষ্টের, কিছুটা জীবনকে হারানোর। সে সময় সবচেয়ে ভালো হয় ওই অবস্থাটাকে নিজের করে ব্যবহার করা। যেমন হাজার ব্যস্ততার জন্য যে ক্লাসিক বইগুলো পড়া হয়নি, সেগুলো নতুন করে পড়ে ফেলা। যে লেখাগুলোর কথা ভেবেছ, লেখা হয়নি, সেগুলো লিখে ফেলা।’ বাবার কথাগুলো সব সময় মনে পড়ত, কিন্তু আলস্য আমার মজ্জায়, তাই কোনো দিনই বকেয়া কাজগুলো করা হয়নি। এবার জানুয়ারিতে ডাক্তার যখন বললেন, ‘আমার কিডনি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তাঁর ভাষায়, ‘It may shut down any time soon!’ বুঝিয়ে বললেন, কয়েকটি সার্জারি করলে মাস তিন–চারেকের মধ্যে সুস্থ হয়ে যেতে পারি। সেদিন ডাক্তারের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেওয়ার পর ভাবলাম, অনেক অসমাপ্ত লেখা আছে, দেখি এর কিছু এ সময় গোছানো যায় কি না! তার মধ্যে একটি হলো আমাদের নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম এবং গণমাধ্যম নিয়ে কিছু লেখা আছে, যা শেষ করা যায় কি না, চেষ্টা করি। এই শারীরিক বৈকল্যের সময়টা নিজের অনুকূলে আনা যায় কি না, দেখা যাক।
আমি বিদেশে এসে প্রথম যে বিষয়টায় এমএ পড়ি, সেটি কমিউনিকেশনস। একটু ধারণা ছিল যে এটি সাংবাদিকতার অংশই বেশি। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম, তিন ভাগের এক ভাগ কট্টর তাত্ত্বিক বিষয়, যার মধ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল, কালচারাল থিওরি ও বার্মিংহাম স্কুল ইত্যাদি। বাকি দুই ভাগের এক ভাগ সিনেমা, এক ভাগ সাংবাদিকতা, কিন্তু সাংবাদিক তৈরি হওয়ার কোর্স নয়, বরং সাংবাদিকতাকে ক্রিটিক করা বা মিডিয়া স্টাডিজ। কয়েকটি সেমিনার দিতে হবে, একটি থিসিস লিখতে হবে। বিষয়টা নিয়ে প্রথমে বেশ কষ্টেই পড়লাম, যাকে বলে Bleeding nose under the grindstone, মানে নাক দিয়ে রক্ত ঝরা। আর আমি যদি কমিউনিকেশনস নিয়ে এমএ না করতাম তাহলে আমি হয়তো সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি করতাম না, দর্শনেই করতাম। কিন্তু এই বিষয়টি যেহেতু সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা, তাই আমি শেষ অবধি সমাজবিজ্ঞানেই গবেষণা করি এবং ডিসারটেসন লিখি পিএইচডির জন্য!
কমিউনিকেশনসে এমএ করার সময় আমি একটি সেমিনার দিয়েছিলাম সুচিত্রা সেনের ছবি কী করে বাঙালি মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের রোমান্টিসিজমের প্রতীক হয় তা নিয়ে, আরেকটি দিয়েছিলাম ভারতীয় কোর্ট ছবি বা রাজদরবারের বা সামন্তব্যবস্থার ক্ষয়িষ্ণু জীবন নিয়ে মোজাফফর আলীর কয়েকটি ছবি নিয়ে! আর থিসিসটি লিখেছিলাম ‘স্বৈরশাসনের সময় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা’ নিয়ে। তখন সংবাদমাধ্যমকে ক্রিটিক করার কলা কিছুটা রপ্ত করেছিলাম তাত্ত্বিক বিষয়ের আলোকে। বিষয়টা রাজনীতির সীমানা ঘেঁষে কী করে সাংস্কৃতিক রূপান্তরের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, সেই জটিল Nuances গুলোকে শনাক্ত করে বিশ্লেষণ করা ছিল আমার বিষয়! কিন্তু সেসব করতে গিয়ে কিছুটা গবেষণা করে দেখলাম বিষয়টা গভীরভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি নিজে দেশে সরকারি সংবাদমাধ্যমে বছর দশেক চাকরি করেছি এবং চোখের সামনে দেখেছি সেনাশাসক বা স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতি কী করে একটি দেশের সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ পরাধীন করে ফেলতে পারে। রাষ্ট্রীয় উৎকোচ, ভয়ভীতি এবং নানা কৌশলে স্বৈরশাসকেরা এটা করে, সেটা যে শুধু সেনাশাসকেরা করে তা–ই নয়, বেসামরিক এবং ‘নির্বাচিত’ রাজনৈতিক দলের শাসকেরাও করে, বরং নির্লজ্জভাবেই। তাই কালচারাল থিওরি এবং গণমাধ্যমের থিওরিগুলো ভালো করে পড়ে তার আলোকে আমাদের সংবাদমাধ্যমের ‘অসহায় অবস্থাকে’ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাইরে থেকে, মানে বিদেশ থেকে একজন গবেষক হিসেবে বিষয়টা যেভাবে বোঝা যায়, দেশের ভেতরে সংবাদকর্মী হলে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রতিভাত হয়। তাই আমি যেভাবে বিষয়টা দেখি, আমার সাংবাদিক বন্ধুরা বিষয়টা একেবারে ভিন্নভাবে দেখেন। তাঁরা চাকরি করেন, এটা তাঁদের জীবিকা। তাই সংবাদপত্রের মালিক এবং সাংবাদিক–এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় বিপ্রতীপ অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে হয়। আমি কয়েকজন নামকরা সাংবাদিকের সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে ফেসবুকে খানিকটা তক্কাতক্কি করতে গিয়ে দেখেছি তাঁদের অভিজ্ঞতা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার এই সাংবাদিক বন্ধুরা যে নৈতিকভাবে অসৎ, আমি তা বলব না। এখন থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তাঁদের অনেকেই আমার মতো স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন, পরবর্তী জীবনে বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁরা দিন আনে দিন খায় সৎ সাংবাদিকতা করে, কিন্তু তবু তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমার দৃষ্টিকোণ রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে কেন আলাদা হয়, কেন তাঁরা সাংবাদিকের ‘সীমাবদ্ধতা’ দেখেন আমার থেকে ভিন্নভাবে! বিষয়টা আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। তাহলে কি আমার বোঝার ভুল, নাকি আমার চিন্তায় ভিন্ন কোনো রূপান্তর হয়েছে, যা আমার এই শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক বন্ধুদের হয়নি! নাকি রূপান্তরটি তাঁদের মনোজগতে হয়েছে, যা আমার হয়নি। এসব বিষয় ভাবতে গিয়েই আমি দুটো বিষয়ে গবেষণার প্রকল্প-প্রস্তাব তৈরি করি নিজের জন্য। একটি আমাদের মিডিয়াকে বিশ্লেষণের জন্য গত পাঁচ দশকের সংবাদপত্র জগতের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক এবং দ্বিতীয়টি হলো আমাদের সংস্কৃতির একটি শাখা যে চলচ্চিত্র, তার রূপান্তর বা সমাজবিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিকে কীভাবে তাঁদের গবেষণার বিষয় করেছেন, কী তাঁদের ক্রিটিক বা গবেষণালব্ধ ফল, সে বিষয়ে কিছুটা অন্বেষণের চেষ্টা করলাম।
আজকের এই ছোট লেখাটায় আমার প্রতিপাদ্য হলো আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা আমাদের শিল্পকলার এই শাখা অর্থাৎ চলচ্চিত্রকে কীভাবে দেখেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসা হিসেবে আমি গত দুই দশকে আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা খোঁজার চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন পত্রিকা, একাডেমিক জার্নালে সমাজবিজ্ঞানীরা কোন ধরনের গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ লিখেছেন বাংলা বা ইংরেজি ভাষায়, তার কিছু খোঁজ করলাম। এরপর আমি নিজে গত পাঁচ মাস বিছানাবন্দী অবস্থায় ২০০০-২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের ছবি এবং টেলিফিল্ম বা প্যাকেজ নাটকের অবয়বে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়েছে, তার মধ্যে ইউটিউবে যা পাওয়া যায় এমন প্রায় নব্বইটি ছবি দেখলাম একাধিকবার এবং প্রয়োজনীয় নোট নেওয়ার চেষ্টা করলাম। সুতরাং আমার প্রয়াসের দুটো দিক, একটি ছবিগুলো দেখা; দ্বিতীয়, সমাজবিজ্ঞানীদের লেখাগুলো সংগ্রহ করা এবং পড়া এবং কোথায় এসব সমাজবিজ্ঞানীর সঙ্গে আমার চিন্তার বা ছবি সমালোচনা করার ক্ষেত্রে পার্থক্য তা বোঝার চেষ্টা করা।
আমি প্রথমেই আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের একটি সীমাবদ্ধতা লক্ষ করলাম, সেটি হলো আমাদের যাঁরা একাডেমিক সমাজবিজ্ঞানী তাঁদের অধিকাংশই গবেষণা করেন বা লেখেন রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বিষয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে গবেষণার জন্য কদর আছে, সেসব বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ বা মনোযোগ। সমাজের প্রান্তিক মানুষের বিষয়, বা একটু ‘কম সম্মানের’ বিষয়ে তাঁদের গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন আমাদের অপরাধজগৎ বা কারাগার বা অসহায় নারী বা পতিতালয় নিয়ে খুব ভালো গবেষণা প্রায় নেই বললেই চলে। ঠিক তেমনি লক্ষ করলাম আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কম।
আবার সাংস্কৃতিক বা কলাজগৎ, যেমন সাহিত্য বা কবিতা ও কথাশিল্প নিয়ে যতটা গবেষণা হয়েছে তার সঙ্গে তুলনা করলে চিত্রকলা বা সিনেমা নিয়ে বা নাটক নিয়ে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেননি। ছবি নিয়ে একজন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বা ছবি নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল বা আরও দুই–চারজন সাহিত্যিক লিখেছেন, কিন্তু যাঁরা খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী তাঁরা প্রায় কেউই সিনেমা শিল্পের ওপর ভালো কোনো গবেষণা করেননি বা গবেষণা হয়তো হয়েছে, কিন্তু আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। এর পেছনে কারণ কী? আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কি সিনেমাজগৎকে বারবনিতার জগৎ মনে করেন এখনো, নাকি তাদের স্কুলিংটা পশ্চিমা দেশের আদলে হয়েছে বলে আমাদের সমাজ যাকে খুব বেশি সম্মানের পেশা ভাবে না, সেসব বিষয়ে গবেষণা করতে বা সমাজের এই শাখাটা কৌলীন্যের দিক থেকে খুব উঁচুতে নয় বলে তাঁরা গবেষণা করেন না? এই প্রশ্ন আমার মনে হয়েছে। অর্থাৎ একজন একাডেমিক গবেষক কোন বিষয়ে গবেষণা করবেন, তা নির্ধারিত হয় অদৃশ্যভাবে সমাজের বা একাডেমিক জগতের কৌলীন্য বা ব্রাহ্মণত্ব দ্বারা! যদি তা হয়, তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক!
এবার আমি একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই গত পাঁচ মাসে আমার এই শখানেকের কাছাকাছি ছবি দেখার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, তা হলো আমাদের সাহিত্যজগতের মতোই আমাদের সিনেমাজগতে উল্লেখযোগ্য বা অসাধারণ শিল্পমানের কোনো পরিচালনা বা মৌলিক কাজ নেই, কিন্তু আমাদের কথাসাহিত্য বা কবিতার মতোই কিছু তরুণ শিল্পীদের কাজ ভীষণ প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর বহন করে। আমার মতো যারা কয়েক দশক দেশের বাইরে এবং দেশের ভেতরে থেকেও আমাদের সাহিত্য বা শিল্পকলা বিষয়ে ভীষণ নাক-উঁচু ক্রিটিক, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। আমাদের গত কয়েক দশকের সাহিত্য বিষয়ে একটু কম্প্রিহেনসিভ ধারণা নিতে গিয়ে গত দুই বছরে আমি কিছু সাহিত্যের নিবিড় পাঠ করি, তাতে যেমন বিস্ময়কর কিছু লেখার সন্ধান পেয়েছি, তেমনি গত কুড়ি বছরের কিছু ছবি দেখতে গিয়ে আমি কিছুসংখ্যক তরুণ–তরুণীর অসাধারণ গিফটেড মেধার পরিচয় পেয়েছি। পক্ষান্তরে যারা নামকরা ছবি নির্মাতা, বরং তাঁদের ছবি দেখেই আমার ভীষণ দুর্বল মনে হয়েছে।
বিশেষ করে পরিচালনার ক্ষেত্রে, সম্পাদনা এবং ছবিতে সংগীতের ব্যবহারে একেবারে দুর্বল মনে হয়েছে। কিন্তু অভিনেতা–অভিনেত্রীদের কাউকে কাউকে আমার সত্যিকার দ্যুতিময় এবং মেধাবী মনে হয়েছে। আমি এসব শিল্পীর নাম ধরে তাঁদের অভিনীত ছবির উল্লেখ করেই আমার প্রবন্ধে লিখতে চাই। আমার মনে হয়েছে এসব শিল্পীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জরুরি। সেটা সমাজ, রাষ্ট্র, সমালোচক গবেষক বা সমাজবিজ্ঞানী সবার পক্ষ থেকেই। আমার বন্ধুদের অনেকেই বলেন আমাদের সাহিত্যে বা শিল্পকলায় বা চলচ্চিত্রে তেমন কিছুই হয় না, তাঁরা খুবই কট্টর সমালোচক, কিছুটা নির্দয়ও। কিন্তু আমার ধারণা তাঁদের থেকে ভিন্ন, আমি ভীষণ আশাবাদী।
আমাদের সাহিত্য, আমাদের অনুবাদ সাহিত্য এবং এই কয় মাসের পাঠের এবং ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝতে পারলাম, তা হলো আমাদের চলচ্চিত্রে অনেক শিল্পীর মেধা রয়েছে, বেশ শক্তিশালী অভিনয়শিল্পী রয়েছেন, যাদের মেধার সত্যিকার ব্যবহার হয়নি পরিচালকেরা খুব মেধাবী নন বলে। সবশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, তা হলো আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কেন আমাদের সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্রজগৎ নিয়ে কম মনোযোগী, তার সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাসহ লেখা হওয়া উচিত। একজন সমাজবিজ্ঞানী কেন রাজনীতি বা সমাজের অন্য সমস্যা নিয়ে যত বেশি মনোযোগী, কেন তত বেশি মনোযোগী নন আমাদের সিনেমাশিল্প নিয়ে। সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিনেমাশিল্প, কিন্তু আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কেন তাতে গুরুত্ব দেন না, সেই প্রশ্ন বিষয়ে গবেষণা হওয়া জরুরি!
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
ছেলেবেলায় আমার বাবা বলতেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রতিকূল অবস্থা আসে এবং সেটাই আসে বেশি। কিন্তু সেই প্রতিকূল অবস্থাকে নিজের অনুকূলে আনাই সত্যিকার মেধাবী মানুষের কাজ।’ বিষয়টা আমি খুব ভালো বুঝতাম না। তিনি বলতেন, ‘ধরো তুমি কোনো কারণে জেলে গেলে। হাতে অফুরন্ত সময়, কিন্তু অবস্থা বেদনার, কষ্টের, কিছুটা জীবনকে হারানোর। সে সময় সবচেয়ে ভালো হয় ওই অবস্থাটাকে নিজের করে ব্যবহার করা। যেমন হাজার ব্যস্ততার জন্য যে ক্লাসিক বইগুলো পড়া হয়নি, সেগুলো নতুন করে পড়ে ফেলা। যে লেখাগুলোর কথা ভেবেছ, লেখা হয়নি, সেগুলো লিখে ফেলা।’ বাবার কথাগুলো সব সময় মনে পড়ত, কিন্তু আলস্য আমার মজ্জায়, তাই কোনো দিনই বকেয়া কাজগুলো করা হয়নি। এবার জানুয়ারিতে ডাক্তার যখন বললেন, ‘আমার কিডনি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তাঁর ভাষায়, ‘It may shut down any time soon!’ বুঝিয়ে বললেন, কয়েকটি সার্জারি করলে মাস তিন–চারেকের মধ্যে সুস্থ হয়ে যেতে পারি। সেদিন ডাক্তারের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেওয়ার পর ভাবলাম, অনেক অসমাপ্ত লেখা আছে, দেখি এর কিছু এ সময় গোছানো যায় কি না! তার মধ্যে একটি হলো আমাদের নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম এবং গণমাধ্যম নিয়ে কিছু লেখা আছে, যা শেষ করা যায় কি না, চেষ্টা করি। এই শারীরিক বৈকল্যের সময়টা নিজের অনুকূলে আনা যায় কি না, দেখা যাক।
আমি বিদেশে এসে প্রথম যে বিষয়টায় এমএ পড়ি, সেটি কমিউনিকেশনস। একটু ধারণা ছিল যে এটি সাংবাদিকতার অংশই বেশি। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম, তিন ভাগের এক ভাগ কট্টর তাত্ত্বিক বিষয়, যার মধ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল, কালচারাল থিওরি ও বার্মিংহাম স্কুল ইত্যাদি। বাকি দুই ভাগের এক ভাগ সিনেমা, এক ভাগ সাংবাদিকতা, কিন্তু সাংবাদিক তৈরি হওয়ার কোর্স নয়, বরং সাংবাদিকতাকে ক্রিটিক করা বা মিডিয়া স্টাডিজ। কয়েকটি সেমিনার দিতে হবে, একটি থিসিস লিখতে হবে। বিষয়টা নিয়ে প্রথমে বেশ কষ্টেই পড়লাম, যাকে বলে Bleeding nose under the grindstone, মানে নাক দিয়ে রক্ত ঝরা। আর আমি যদি কমিউনিকেশনস নিয়ে এমএ না করতাম তাহলে আমি হয়তো সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি করতাম না, দর্শনেই করতাম। কিন্তু এই বিষয়টি যেহেতু সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা, তাই আমি শেষ অবধি সমাজবিজ্ঞানেই গবেষণা করি এবং ডিসারটেসন লিখি পিএইচডির জন্য!
কমিউনিকেশনসে এমএ করার সময় আমি একটি সেমিনার দিয়েছিলাম সুচিত্রা সেনের ছবি কী করে বাঙালি মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের রোমান্টিসিজমের প্রতীক হয় তা নিয়ে, আরেকটি দিয়েছিলাম ভারতীয় কোর্ট ছবি বা রাজদরবারের বা সামন্তব্যবস্থার ক্ষয়িষ্ণু জীবন নিয়ে মোজাফফর আলীর কয়েকটি ছবি নিয়ে! আর থিসিসটি লিখেছিলাম ‘স্বৈরশাসনের সময় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা’ নিয়ে। তখন সংবাদমাধ্যমকে ক্রিটিক করার কলা কিছুটা রপ্ত করেছিলাম তাত্ত্বিক বিষয়ের আলোকে। বিষয়টা রাজনীতির সীমানা ঘেঁষে কী করে সাংস্কৃতিক রূপান্তরের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, সেই জটিল Nuances গুলোকে শনাক্ত করে বিশ্লেষণ করা ছিল আমার বিষয়! কিন্তু সেসব করতে গিয়ে কিছুটা গবেষণা করে দেখলাম বিষয়টা গভীরভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি নিজে দেশে সরকারি সংবাদমাধ্যমে বছর দশেক চাকরি করেছি এবং চোখের সামনে দেখেছি সেনাশাসক বা স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতি কী করে একটি দেশের সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ পরাধীন করে ফেলতে পারে। রাষ্ট্রীয় উৎকোচ, ভয়ভীতি এবং নানা কৌশলে স্বৈরশাসকেরা এটা করে, সেটা যে শুধু সেনাশাসকেরা করে তা–ই নয়, বেসামরিক এবং ‘নির্বাচিত’ রাজনৈতিক দলের শাসকেরাও করে, বরং নির্লজ্জভাবেই। তাই কালচারাল থিওরি এবং গণমাধ্যমের থিওরিগুলো ভালো করে পড়ে তার আলোকে আমাদের সংবাদমাধ্যমের ‘অসহায় অবস্থাকে’ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাইরে থেকে, মানে বিদেশ থেকে একজন গবেষক হিসেবে বিষয়টা যেভাবে বোঝা যায়, দেশের ভেতরে সংবাদকর্মী হলে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রতিভাত হয়। তাই আমি যেভাবে বিষয়টা দেখি, আমার সাংবাদিক বন্ধুরা বিষয়টা একেবারে ভিন্নভাবে দেখেন। তাঁরা চাকরি করেন, এটা তাঁদের জীবিকা। তাই সংবাদপত্রের মালিক এবং সাংবাদিক–এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় বিপ্রতীপ অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে হয়। আমি কয়েকজন নামকরা সাংবাদিকের সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে ফেসবুকে খানিকটা তক্কাতক্কি করতে গিয়ে দেখেছি তাঁদের অভিজ্ঞতা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার এই সাংবাদিক বন্ধুরা যে নৈতিকভাবে অসৎ, আমি তা বলব না। এখন থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তাঁদের অনেকেই আমার মতো স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন, পরবর্তী জীবনে বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁরা দিন আনে দিন খায় সৎ সাংবাদিকতা করে, কিন্তু তবু তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমার দৃষ্টিকোণ রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে কেন আলাদা হয়, কেন তাঁরা সাংবাদিকের ‘সীমাবদ্ধতা’ দেখেন আমার থেকে ভিন্নভাবে! বিষয়টা আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। তাহলে কি আমার বোঝার ভুল, নাকি আমার চিন্তায় ভিন্ন কোনো রূপান্তর হয়েছে, যা আমার এই শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক বন্ধুদের হয়নি! নাকি রূপান্তরটি তাঁদের মনোজগতে হয়েছে, যা আমার হয়নি। এসব বিষয় ভাবতে গিয়েই আমি দুটো বিষয়ে গবেষণার প্রকল্প-প্রস্তাব তৈরি করি নিজের জন্য। একটি আমাদের মিডিয়াকে বিশ্লেষণের জন্য গত পাঁচ দশকের সংবাদপত্র জগতের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক এবং দ্বিতীয়টি হলো আমাদের সংস্কৃতির একটি শাখা যে চলচ্চিত্র, তার রূপান্তর বা সমাজবিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিকে কীভাবে তাঁদের গবেষণার বিষয় করেছেন, কী তাঁদের ক্রিটিক বা গবেষণালব্ধ ফল, সে বিষয়ে কিছুটা অন্বেষণের চেষ্টা করলাম।
আজকের এই ছোট লেখাটায় আমার প্রতিপাদ্য হলো আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা আমাদের শিল্পকলার এই শাখা অর্থাৎ চলচ্চিত্রকে কীভাবে দেখেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসা হিসেবে আমি গত দুই দশকে আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা খোঁজার চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন পত্রিকা, একাডেমিক জার্নালে সমাজবিজ্ঞানীরা কোন ধরনের গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ লিখেছেন বাংলা বা ইংরেজি ভাষায়, তার কিছু খোঁজ করলাম। এরপর আমি নিজে গত পাঁচ মাস বিছানাবন্দী অবস্থায় ২০০০-২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের ছবি এবং টেলিফিল্ম বা প্যাকেজ নাটকের অবয়বে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়েছে, তার মধ্যে ইউটিউবে যা পাওয়া যায় এমন প্রায় নব্বইটি ছবি দেখলাম একাধিকবার এবং প্রয়োজনীয় নোট নেওয়ার চেষ্টা করলাম। সুতরাং আমার প্রয়াসের দুটো দিক, একটি ছবিগুলো দেখা; দ্বিতীয়, সমাজবিজ্ঞানীদের লেখাগুলো সংগ্রহ করা এবং পড়া এবং কোথায় এসব সমাজবিজ্ঞানীর সঙ্গে আমার চিন্তার বা ছবি সমালোচনা করার ক্ষেত্রে পার্থক্য তা বোঝার চেষ্টা করা।
আমি প্রথমেই আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের একটি সীমাবদ্ধতা লক্ষ করলাম, সেটি হলো আমাদের যাঁরা একাডেমিক সমাজবিজ্ঞানী তাঁদের অধিকাংশই গবেষণা করেন বা লেখেন রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বিষয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে গবেষণার জন্য কদর আছে, সেসব বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ বা মনোযোগ। সমাজের প্রান্তিক মানুষের বিষয়, বা একটু ‘কম সম্মানের’ বিষয়ে তাঁদের গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন আমাদের অপরাধজগৎ বা কারাগার বা অসহায় নারী বা পতিতালয় নিয়ে খুব ভালো গবেষণা প্রায় নেই বললেই চলে। ঠিক তেমনি লক্ষ করলাম আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কম।
আবার সাংস্কৃতিক বা কলাজগৎ, যেমন সাহিত্য বা কবিতা ও কথাশিল্প নিয়ে যতটা গবেষণা হয়েছে তার সঙ্গে তুলনা করলে চিত্রকলা বা সিনেমা নিয়ে বা নাটক নিয়ে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেননি। ছবি নিয়ে একজন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বা ছবি নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল বা আরও দুই–চারজন সাহিত্যিক লিখেছেন, কিন্তু যাঁরা খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী তাঁরা প্রায় কেউই সিনেমা শিল্পের ওপর ভালো কোনো গবেষণা করেননি বা গবেষণা হয়তো হয়েছে, কিন্তু আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। এর পেছনে কারণ কী? আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কি সিনেমাজগৎকে বারবনিতার জগৎ মনে করেন এখনো, নাকি তাদের স্কুলিংটা পশ্চিমা দেশের আদলে হয়েছে বলে আমাদের সমাজ যাকে খুব বেশি সম্মানের পেশা ভাবে না, সেসব বিষয়ে গবেষণা করতে বা সমাজের এই শাখাটা কৌলীন্যের দিক থেকে খুব উঁচুতে নয় বলে তাঁরা গবেষণা করেন না? এই প্রশ্ন আমার মনে হয়েছে। অর্থাৎ একজন একাডেমিক গবেষক কোন বিষয়ে গবেষণা করবেন, তা নির্ধারিত হয় অদৃশ্যভাবে সমাজের বা একাডেমিক জগতের কৌলীন্য বা ব্রাহ্মণত্ব দ্বারা! যদি তা হয়, তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক!
এবার আমি একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই গত পাঁচ মাসে আমার এই শখানেকের কাছাকাছি ছবি দেখার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, তা হলো আমাদের সাহিত্যজগতের মতোই আমাদের সিনেমাজগতে উল্লেখযোগ্য বা অসাধারণ শিল্পমানের কোনো পরিচালনা বা মৌলিক কাজ নেই, কিন্তু আমাদের কথাসাহিত্য বা কবিতার মতোই কিছু তরুণ শিল্পীদের কাজ ভীষণ প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর বহন করে। আমার মতো যারা কয়েক দশক দেশের বাইরে এবং দেশের ভেতরে থেকেও আমাদের সাহিত্য বা শিল্পকলা বিষয়ে ভীষণ নাক-উঁচু ক্রিটিক, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। আমাদের গত কয়েক দশকের সাহিত্য বিষয়ে একটু কম্প্রিহেনসিভ ধারণা নিতে গিয়ে গত দুই বছরে আমি কিছু সাহিত্যের নিবিড় পাঠ করি, তাতে যেমন বিস্ময়কর কিছু লেখার সন্ধান পেয়েছি, তেমনি গত কুড়ি বছরের কিছু ছবি দেখতে গিয়ে আমি কিছুসংখ্যক তরুণ–তরুণীর অসাধারণ গিফটেড মেধার পরিচয় পেয়েছি। পক্ষান্তরে যারা নামকরা ছবি নির্মাতা, বরং তাঁদের ছবি দেখেই আমার ভীষণ দুর্বল মনে হয়েছে।
বিশেষ করে পরিচালনার ক্ষেত্রে, সম্পাদনা এবং ছবিতে সংগীতের ব্যবহারে একেবারে দুর্বল মনে হয়েছে। কিন্তু অভিনেতা–অভিনেত্রীদের কাউকে কাউকে আমার সত্যিকার দ্যুতিময় এবং মেধাবী মনে হয়েছে। আমি এসব শিল্পীর নাম ধরে তাঁদের অভিনীত ছবির উল্লেখ করেই আমার প্রবন্ধে লিখতে চাই। আমার মনে হয়েছে এসব শিল্পীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জরুরি। সেটা সমাজ, রাষ্ট্র, সমালোচক গবেষক বা সমাজবিজ্ঞানী সবার পক্ষ থেকেই। আমার বন্ধুদের অনেকেই বলেন আমাদের সাহিত্যে বা শিল্পকলায় বা চলচ্চিত্রে তেমন কিছুই হয় না, তাঁরা খুবই কট্টর সমালোচক, কিছুটা নির্দয়ও। কিন্তু আমার ধারণা তাঁদের থেকে ভিন্ন, আমি ভীষণ আশাবাদী।
আমাদের সাহিত্য, আমাদের অনুবাদ সাহিত্য এবং এই কয় মাসের পাঠের এবং ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝতে পারলাম, তা হলো আমাদের চলচ্চিত্রে অনেক শিল্পীর মেধা রয়েছে, বেশ শক্তিশালী অভিনয়শিল্পী রয়েছেন, যাদের মেধার সত্যিকার ব্যবহার হয়নি পরিচালকেরা খুব মেধাবী নন বলে। সবশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, তা হলো আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কেন আমাদের সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্রজগৎ নিয়ে কম মনোযোগী, তার সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাসহ লেখা হওয়া উচিত। একজন সমাজবিজ্ঞানী কেন রাজনীতি বা সমাজের অন্য সমস্যা নিয়ে যত বেশি মনোযোগী, কেন তত বেশি মনোযোগী নন আমাদের সিনেমাশিল্প নিয়ে। সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিনেমাশিল্প, কিন্তু আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা কেন তাতে গুরুত্ব দেন না, সেই প্রশ্ন বিষয়ে গবেষণা হওয়া জরুরি!
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে