জাহীদ রেজা নূর
এক তরুণ হন্যে হয়ে ঘুরছেন পুলিশের এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে। বিচার চাইছেন। তাঁকে বিপদে ফেলেছেন এক তরুণী। সেই তরুণী, যাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ ফেসবুকে। তারপর ভার্চুয়াল প্রেম। ভার্চুয়াল প্রেমে নানা ধরনের ঘটনার সঙ্গে পরিচিত হয় মানুষ। নিজের চেহারা বা আচরণ–সবই লুকিয়ে ফেলা যায়। মেরিলিন মনরো, দীপিকা পাড়ুকোন কিংবা জয়া আহসানের কাছাকাছি চেহারা নিয়ে ফেসবুকে হাজির হওয়া খুব সহজ। উল্টোদিকে, টম ক্রুজ, হৃতিক রোশন কিংবা শাকিব খানের আদলে ছবি দিয়ে নারী-হৃদয় জয় করাও খুব কঠিন কাজ নয়। আগে তো দর্শনধারী! কিন্তু ট্র্যাজেডির জন্ম হয় তখনই, যখন কেউ দুর্বলতার সুযোগে কারও সঙ্গে প্রতারণা করে, কাউকে ব্ল্যাকমেল করে।
আমরা যে তরুণের কথা বলছি, তিনি খুব বিপদে আছেন। সাত মাস ধরেও পুলিশ কোনো পথ দেখাতে পারেনি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের ভূরি ভূরি ঘটনা রয়েছে, যার বেশির ভাগেরই শিকার হন নারীরা। অনেকেই গোপন করেন। আড়ালে রাখার একটি বড় কারণ হলো, প্রকাশ পেলে সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরও একটি বড় কারণ, প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা।
২.
কী করেছিল ছেলেটা?
মেয়েটার অনুরোধে নিজের একটা ছবি পাঠিয়েছিল।
কী ছবি?
এমন কোনো ছবি, যা আমাদের মতো দেশে সাধারণত কেউ কাউকে পাঠায় না (যেসব দেশে যৌনতা নিয়ে গোপনীয়তা কম, সেখানে পরিস্থিতি ভিন্ন, সে আলোচনায় পরে আসছি)। যা নিয়ে অনায়াসে ব্ল্যাকমেইল করা যায়, সে রকমই এক ছবি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
অনেকেই হয়তো বলবেন, ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা। একজন মানুষ কোন ভঙ্গিমায় কোন ছবি তুলবেন, কাকে পাঠাবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সুতরাং এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
প্রশ্ন আমিও তুলতাম না, যদি এটাকে স্বাভাবিক প্রবণতা ভাবতে পারতাম। দুঃখিত, পারছি না। সামাজিক একটা দেয়াল রয়েছে, তার মধ্যে মূল্যবোধ (যা বদলায়ও) বলে যা আছে, তা সব সময় সব দেশে সব ধরনের আচরণকে ছাড়পত্র দেয় না। যৌনতা বিষয়ে রুদ্ধ দেশে মানুষের মধ্যে একধরনের দ্বিচারিতা বেড়ে উঠতে পারে, যা তাঁর আচরণেও দেখা যায়। এমন কি হয় না, যে বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন কেউ, ব্যক্তিজীবনে দেখা যায়, তার ঠিক বিপরীত আচরণই করছেন তিনি?
ব্যক্তিগত বিষয় জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়লে তখন তা আর ব্যক্তিগত থাকে না। প্রযুক্তির রমরমার যুগে কোনটা ব্যক্তিগত আর কোনটা সবার জন্য বা পাবলিক, সে-ই বাছবিচার করার ক্ষমতা না থাকলে সমূহ বিপদ। গোপন ব্যাপারটি যদি গোপন না থেকে প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তাহলে যে সংকটগুলো এসে হাজির হয়, তা সামাল দেওয়া কম ঝক্কিপূর্ণ নয়। আমাদের আলোচিত তরুণটি এখন সেই ঝক্কির মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন।
৩.
এ ব্যাপারে নানা মাধ্যমে যেটুকু পড়াশোনা করেছি, তার একটা নির্যাস এখানে রাখছি। ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে সারা বিশ্বেই কিছু প্রবণতার দেখা পাওয়া যায়। ছোট করে সেগুলো নিয়ে বলি।
এমন কোনো ঘটনা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে, যা তিনি ঘটাননি। আবার এমনও হতে পারে, যা তিনি অত্যন্ত গোপনে রেখে দিয়েছেন তাঁর মোবাইলে বা ল্যাপটপে, অন্যের কাছে প্রকাশ করেননি। অথবা খুব কাছের কারও কাছে পাঠিয়েছেন এমন কোনো ছবি, যা একান্তই গোপন। হ্যাকারের কবলে পড়লে তাঁর টেলিফোন বা ল্যাপটপ অরক্ষিত হয়ে যেতে পারে। যেকোনো বদমায়েশের কাছে তা হয়ে উঠতে পারে সোনার খনি। রুশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় আরতিওম জুবি তাঁর মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও রেখেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন ‘ঝরনা’। হ্যাকাররা সেটা পেয়ে ফুটবল খেলোয়াড়কে জানিয়েছিল, ৫ মিলিয়ন ডলার না দিলে এই ভিডিও তারা ছড়িয়ে দেবে ইন্টারনেটে। ‘ঝরনা’ প্রকাশিত হয়ে পড়লে শুধু ফুটবলার হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই নষ্ট হবে না, সামাজিকভাবেও তিনি আর কোনো শক্ত
অবস্থান পাবেন না। ফলে তাঁকে একটা রফায় আসতে হয়েছিল।
কেউ যদি কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিজের এমন কোনো ছবি পাঠিয়ে থাকেন, যা শুধু তিনিই দেখবেন, তাহলেও বিপদ কম নয়। এই বন্ধুটির টেলিফোনও হ্যাক হতে পারে। ফলে যিনি পাঠালেন এবং যিনি পেলেন, তাঁদের দুজনের ফোন থেকেই বিপদ ঘনায়মান হয়ে উঠতে পারে। তাঁদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কে ভাঙন এলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। তখন এই বন্ধুটিই প্রাক্তন কাছের মানুষটির সম্মান ধুলায় লুটিয়ে দেওয়ার কাজটি করতে পারেন। আমাদের দেশেই তো এক তারকা দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের পর অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে বিপদে পড়েছিলেন তাঁদের একজন। নতুন সম্পর্ক হয়েছিল যাঁর সঙ্গে, তাঁর সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অন্তরঙ্গ ছবি।
৪.
উঠতি বয়সী মানুষের হাতে এখন স্মার্টফোন। কখনো কখনো তাঁরা এ ধরনের বিপদে পড়েন। জীবনে অভিজ্ঞতার অভাবে তাঁরা দ্রুতই পড়তে পারেন বদমাশদের খপ্পরে।
এখানে বলে রাখা দরকার, শুধু ব্রিটেনেই ২০১৮-১৯ সালে উঠতি বয়সীদের মধ্যে ১৯ হাজার শিশু এই ধরনের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছিল। কেউ ছবি তুলে, কেউ কোনো উত্তেজক কথা লিখে, কেউ যৌনগন্ধি ভিডিও করে বিপদে পড়েছে। ফলে তার সঙ্গে বুলিং করা হয়েছে কিংবা পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করতে বাধ্য করা হয়েছে তাকে। ইউরোপ-আমেরিকায় সেক্সটিং অনেকদূর ছড়িয়ে গেছে, আমাদের দেশে গবেষণা নেই বলে এবং লুকিয়ে রাখার প্রবণতা থাকায় জানা যায় না–শিশুদের কত অংশ এই অনাচারের খপ্পরে পড়েছে।
৫.
যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় সেক্সটিং বিষয়ে রয়েছে কড়া আইন। উঠতি বয়সীরা যদি যৌন-উত্তেজক ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান করে, তবে রয়েছে শাস্তি—৫০০ ডলার জরিমানা বা ৩০ দিনের বন্দিজীবন। ফ্লোরিডায় এ জন্য শাস্তি হলো বাধ্যতামূলক সামাজিক কাজ বা জরিমানা। দ্বিতীয়বার একইভাবে ধরা পড়লে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কানাডায় শিশুদের সেক্সটিংকে দেখা হয় পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে।
৬
কেউ যদি তার স্মার্টফোনে গোপন করার মতো কোনো ছবি-ভিডিও না রেখে থাকেন, তারপরও ব্ল্যাকমেলারদের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, এটা তাঁর ছবির মাথা কেটে গ্রাফিক্সের সাহায্যে অন্য কোনো ছবিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। নিজের কাছে সৎ থাকুন, তাতেই হবে।
আর যদি সত্যিই কারও মোবাইলে বা ল্যাপটপে সে রকম কোনো ছবি বা ভিডিও থেকে থাকে এবং তা হ্যাকারদের হাতে গিয়ে থাকে, তাহলে ভেঙে পড়া ঠিক হবে না। যদি তা দুজন মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে হয়ে থাকে, তবে তাতে কোনো দোষ নেই। পিউ রিসার্চ সেন্টার জানাচ্ছে, ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ৫৬ শতাংশ মার্কিনি সেক্সটিং করে থাকেন। রাশিয়ার ৬৩ শতাংশ যুব বয়সের ছেলে-মেয়ে তাদের নগ্ন ছবি পাঠিয়ে থাকেন অন্তরঙ্গ মানুষের কাছে। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস আছে বলেই তাঁরা তা করেন। আমাদের সমাজ এসব কমই মেনে নেয়। প্রযুক্তির বিকাশ নানা ধরনের গহ্বরের সৃষ্টি করেছে সমাজে, যা নিয়ে এখনো ভালো কোনো গবেষণা হয়নি।
ব্ল্যাকমেলারদের হুমকিতে বিচলিত হয়ে টাকা দেওয়া শুরু করলে বিপদ বাড়তেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে যা করণীয়–সেটাই করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাঁরা ডিজিটাল অপরাধ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের কাছেই যেতে হবে আপনাকে। তাঁদের খুলে বলতে হবে সব কথা। তাঁরা দক্ষ হলে অপরাধী ধরা পড়বে–মুক্তি পাবেন আপনি।
আর যদি তাঁরা আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে না ওঠেন, তখন কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে–সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। নিজের সঞ্চিত থেকে অথবা ধার করে ব্ল্যাকমেলারকে টাকা দিতে দিতেই জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠে তাঁর।
৭.
স্বাধীন মানুষ কী করবে, সেটা তাঁর নিজের ব্যাপার। তবে স্বাধীনতার একটা মানে যে স্ব-অধীনতা, সে কথা মেনে নিলে মানুষ অনেক ব্যাপারেই নিজের দৃষ্টিকে পরিষ্কার রাখতে
পারে। শুধু একটা কথাই বলার থাকে, যে ছবি বা ভিডিও প্রকাশ্যে দেখা বা দেখানো সম্ভব নয়, যেগুলো পাবলিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা মোবাইলের নিভৃত কোণে রেখে দেওয়া কি ঠিক?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এক তরুণ হন্যে হয়ে ঘুরছেন পুলিশের এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে। বিচার চাইছেন। তাঁকে বিপদে ফেলেছেন এক তরুণী। সেই তরুণী, যাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ ফেসবুকে। তারপর ভার্চুয়াল প্রেম। ভার্চুয়াল প্রেমে নানা ধরনের ঘটনার সঙ্গে পরিচিত হয় মানুষ। নিজের চেহারা বা আচরণ–সবই লুকিয়ে ফেলা যায়। মেরিলিন মনরো, দীপিকা পাড়ুকোন কিংবা জয়া আহসানের কাছাকাছি চেহারা নিয়ে ফেসবুকে হাজির হওয়া খুব সহজ। উল্টোদিকে, টম ক্রুজ, হৃতিক রোশন কিংবা শাকিব খানের আদলে ছবি দিয়ে নারী-হৃদয় জয় করাও খুব কঠিন কাজ নয়। আগে তো দর্শনধারী! কিন্তু ট্র্যাজেডির জন্ম হয় তখনই, যখন কেউ দুর্বলতার সুযোগে কারও সঙ্গে প্রতারণা করে, কাউকে ব্ল্যাকমেল করে।
আমরা যে তরুণের কথা বলছি, তিনি খুব বিপদে আছেন। সাত মাস ধরেও পুলিশ কোনো পথ দেখাতে পারেনি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের ভূরি ভূরি ঘটনা রয়েছে, যার বেশির ভাগেরই শিকার হন নারীরা। অনেকেই গোপন করেন। আড়ালে রাখার একটি বড় কারণ হলো, প্রকাশ পেলে সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরও একটি বড় কারণ, প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা।
২.
কী করেছিল ছেলেটা?
মেয়েটার অনুরোধে নিজের একটা ছবি পাঠিয়েছিল।
কী ছবি?
এমন কোনো ছবি, যা আমাদের মতো দেশে সাধারণত কেউ কাউকে পাঠায় না (যেসব দেশে যৌনতা নিয়ে গোপনীয়তা কম, সেখানে পরিস্থিতি ভিন্ন, সে আলোচনায় পরে আসছি)। যা নিয়ে অনায়াসে ব্ল্যাকমেইল করা যায়, সে রকমই এক ছবি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
অনেকেই হয়তো বলবেন, ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা। একজন মানুষ কোন ভঙ্গিমায় কোন ছবি তুলবেন, কাকে পাঠাবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সুতরাং এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
প্রশ্ন আমিও তুলতাম না, যদি এটাকে স্বাভাবিক প্রবণতা ভাবতে পারতাম। দুঃখিত, পারছি না। সামাজিক একটা দেয়াল রয়েছে, তার মধ্যে মূল্যবোধ (যা বদলায়ও) বলে যা আছে, তা সব সময় সব দেশে সব ধরনের আচরণকে ছাড়পত্র দেয় না। যৌনতা বিষয়ে রুদ্ধ দেশে মানুষের মধ্যে একধরনের দ্বিচারিতা বেড়ে উঠতে পারে, যা তাঁর আচরণেও দেখা যায়। এমন কি হয় না, যে বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন কেউ, ব্যক্তিজীবনে দেখা যায়, তার ঠিক বিপরীত আচরণই করছেন তিনি?
ব্যক্তিগত বিষয় জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়লে তখন তা আর ব্যক্তিগত থাকে না। প্রযুক্তির রমরমার যুগে কোনটা ব্যক্তিগত আর কোনটা সবার জন্য বা পাবলিক, সে-ই বাছবিচার করার ক্ষমতা না থাকলে সমূহ বিপদ। গোপন ব্যাপারটি যদি গোপন না থেকে প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তাহলে যে সংকটগুলো এসে হাজির হয়, তা সামাল দেওয়া কম ঝক্কিপূর্ণ নয়। আমাদের আলোচিত তরুণটি এখন সেই ঝক্কির মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন।
৩.
এ ব্যাপারে নানা মাধ্যমে যেটুকু পড়াশোনা করেছি, তার একটা নির্যাস এখানে রাখছি। ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে সারা বিশ্বেই কিছু প্রবণতার দেখা পাওয়া যায়। ছোট করে সেগুলো নিয়ে বলি।
এমন কোনো ঘটনা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে, যা তিনি ঘটাননি। আবার এমনও হতে পারে, যা তিনি অত্যন্ত গোপনে রেখে দিয়েছেন তাঁর মোবাইলে বা ল্যাপটপে, অন্যের কাছে প্রকাশ করেননি। অথবা খুব কাছের কারও কাছে পাঠিয়েছেন এমন কোনো ছবি, যা একান্তই গোপন। হ্যাকারের কবলে পড়লে তাঁর টেলিফোন বা ল্যাপটপ অরক্ষিত হয়ে যেতে পারে। যেকোনো বদমায়েশের কাছে তা হয়ে উঠতে পারে সোনার খনি। রুশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় আরতিওম জুবি তাঁর মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও রেখেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন ‘ঝরনা’। হ্যাকাররা সেটা পেয়ে ফুটবল খেলোয়াড়কে জানিয়েছিল, ৫ মিলিয়ন ডলার না দিলে এই ভিডিও তারা ছড়িয়ে দেবে ইন্টারনেটে। ‘ঝরনা’ প্রকাশিত হয়ে পড়লে শুধু ফুটবলার হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই নষ্ট হবে না, সামাজিকভাবেও তিনি আর কোনো শক্ত
অবস্থান পাবেন না। ফলে তাঁকে একটা রফায় আসতে হয়েছিল।
কেউ যদি কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিজের এমন কোনো ছবি পাঠিয়ে থাকেন, যা শুধু তিনিই দেখবেন, তাহলেও বিপদ কম নয়। এই বন্ধুটির টেলিফোনও হ্যাক হতে পারে। ফলে যিনি পাঠালেন এবং যিনি পেলেন, তাঁদের দুজনের ফোন থেকেই বিপদ ঘনায়মান হয়ে উঠতে পারে। তাঁদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কে ভাঙন এলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। তখন এই বন্ধুটিই প্রাক্তন কাছের মানুষটির সম্মান ধুলায় লুটিয়ে দেওয়ার কাজটি করতে পারেন। আমাদের দেশেই তো এক তারকা দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের পর অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে বিপদে পড়েছিলেন তাঁদের একজন। নতুন সম্পর্ক হয়েছিল যাঁর সঙ্গে, তাঁর সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অন্তরঙ্গ ছবি।
৪.
উঠতি বয়সী মানুষের হাতে এখন স্মার্টফোন। কখনো কখনো তাঁরা এ ধরনের বিপদে পড়েন। জীবনে অভিজ্ঞতার অভাবে তাঁরা দ্রুতই পড়তে পারেন বদমাশদের খপ্পরে।
এখানে বলে রাখা দরকার, শুধু ব্রিটেনেই ২০১৮-১৯ সালে উঠতি বয়সীদের মধ্যে ১৯ হাজার শিশু এই ধরনের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছিল। কেউ ছবি তুলে, কেউ কোনো উত্তেজক কথা লিখে, কেউ যৌনগন্ধি ভিডিও করে বিপদে পড়েছে। ফলে তার সঙ্গে বুলিং করা হয়েছে কিংবা পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করতে বাধ্য করা হয়েছে তাকে। ইউরোপ-আমেরিকায় সেক্সটিং অনেকদূর ছড়িয়ে গেছে, আমাদের দেশে গবেষণা নেই বলে এবং লুকিয়ে রাখার প্রবণতা থাকায় জানা যায় না–শিশুদের কত অংশ এই অনাচারের খপ্পরে পড়েছে।
৫.
যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় সেক্সটিং বিষয়ে রয়েছে কড়া আইন। উঠতি বয়সীরা যদি যৌন-উত্তেজক ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান করে, তবে রয়েছে শাস্তি—৫০০ ডলার জরিমানা বা ৩০ দিনের বন্দিজীবন। ফ্লোরিডায় এ জন্য শাস্তি হলো বাধ্যতামূলক সামাজিক কাজ বা জরিমানা। দ্বিতীয়বার একইভাবে ধরা পড়লে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কানাডায় শিশুদের সেক্সটিংকে দেখা হয় পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে।
৬
কেউ যদি তার স্মার্টফোনে গোপন করার মতো কোনো ছবি-ভিডিও না রেখে থাকেন, তারপরও ব্ল্যাকমেলারদের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, এটা তাঁর ছবির মাথা কেটে গ্রাফিক্সের সাহায্যে অন্য কোনো ছবিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। নিজের কাছে সৎ থাকুন, তাতেই হবে।
আর যদি সত্যিই কারও মোবাইলে বা ল্যাপটপে সে রকম কোনো ছবি বা ভিডিও থেকে থাকে এবং তা হ্যাকারদের হাতে গিয়ে থাকে, তাহলে ভেঙে পড়া ঠিক হবে না। যদি তা দুজন মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে হয়ে থাকে, তবে তাতে কোনো দোষ নেই। পিউ রিসার্চ সেন্টার জানাচ্ছে, ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ৫৬ শতাংশ মার্কিনি সেক্সটিং করে থাকেন। রাশিয়ার ৬৩ শতাংশ যুব বয়সের ছেলে-মেয়ে তাদের নগ্ন ছবি পাঠিয়ে থাকেন অন্তরঙ্গ মানুষের কাছে। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস আছে বলেই তাঁরা তা করেন। আমাদের সমাজ এসব কমই মেনে নেয়। প্রযুক্তির বিকাশ নানা ধরনের গহ্বরের সৃষ্টি করেছে সমাজে, যা নিয়ে এখনো ভালো কোনো গবেষণা হয়নি।
ব্ল্যাকমেলারদের হুমকিতে বিচলিত হয়ে টাকা দেওয়া শুরু করলে বিপদ বাড়তেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে যা করণীয়–সেটাই করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাঁরা ডিজিটাল অপরাধ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের কাছেই যেতে হবে আপনাকে। তাঁদের খুলে বলতে হবে সব কথা। তাঁরা দক্ষ হলে অপরাধী ধরা পড়বে–মুক্তি পাবেন আপনি।
আর যদি তাঁরা আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে না ওঠেন, তখন কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে–সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। নিজের সঞ্চিত থেকে অথবা ধার করে ব্ল্যাকমেলারকে টাকা দিতে দিতেই জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠে তাঁর।
৭.
স্বাধীন মানুষ কী করবে, সেটা তাঁর নিজের ব্যাপার। তবে স্বাধীনতার একটা মানে যে স্ব-অধীনতা, সে কথা মেনে নিলে মানুষ অনেক ব্যাপারেই নিজের দৃষ্টিকে পরিষ্কার রাখতে
পারে। শুধু একটা কথাই বলার থাকে, যে ছবি বা ভিডিও প্রকাশ্যে দেখা বা দেখানো সম্ভব নয়, যেগুলো পাবলিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা মোবাইলের নিভৃত কোণে রেখে দেওয়া কি ঠিক?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে