ফারুক মেহেদী
বাজেট ঘোষণার পরদিন এর নানান দিক নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ ও একজন রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকের সঙ্গে আলাপ হলো। খুবই ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং খোলামেলা আলোচনা। প্রথমেই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি দিয়ে শুরু করতে চাই। এরপর রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকের বিষয়টি বলব। যেহেতু অনানুষ্ঠানিক আলোচনা তাই, তাঁর নাম উল্লেখ না করেই বলছি। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম: কেমন হলো বাজেট? তিনি বলেন, আসলে আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, বাজেট করার সময় তা ভুলে গেছি! মানে সরকারের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি ভুলে গেছেন যে, মানুষ সীমিত পরিসরে জীবনযাপন করছে। লাখো মানুষ চাকরি হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমেছে। লাখো মানুষ কাজ হারিয়েছে, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অভাবী আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ এখন বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। করোনার কারণে লকডাউন দেওয়ায় অনেকটা অবরুদ্ধ জীবনযাপন চলছে।
এমন বিশেষ পরিস্থিতিতে বাজেটেও কি আমরা তার প্রতিফলন খুব একটা দেখেছি? গরিব মানুষের জন্য বিশেষ কী আছে? সবই গতানুগতিক। আগের বাজেটটি যে রীতি মেনে করা, এবারেরটিও তা–ই। অর্থ মন্ত্রণালয় শুধু সংখ্যা আর অঙ্কের হিসাব মিলিয়ে দিয়ে বাজেট করেছে। বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ বাজেট হতে পারত। তা হয়নি। এক বছরের বাজেট করা হলো। আমরা কি জানি আমাদের সামনে কী অপেক্ষা করছে? আমরা কি বলতে পারি করোনা আরও ভয়ংকর হবে না? ইতিমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আঘাত হানতে শুরু করেছে। সামনে আরও কড়া লকডাউন আসছে কি না, এটা আমরা এখনই বলতে পারি না। সামনের দিনগুলো যেখানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ, এখনো সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির গতি–প্রকৃতিও অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে, সেখানে কীভাবে আমরা একটি স্বাভাবিক বাজেট দিই? আমি মনে করি, এখানে সরকার আরও যৌক্তিক হতে পারত। একটি বিশেষ বাজেট দিতে পারত। শুধু করোনা থেকে উত্তরণের প্যাকেজ দিয়ে বাজেটটি ঘোষণা করতে পারত।
আমি তার কথা শুনছিলাম। তিনি আবারও বলতে শুরু করলেন। তিনি মনে করেন, অর্থায়নের জন্য বিদেশি উৎস, ব্যাংক ব্যবস্থা বা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর না করে সরকার এখানেও ইনোভেটিভ হতে পারত। পুঁজিবাজারে একটি কোভিড বন্ড ছাড়তে পারত। এর মাধ্যমে সরকার পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পারত। এতে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ত। টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি সেটা কমত। পাশাপাশি পুঁজিবাজারটি আরও শক্তিশালী হতো।
বলতে বলতে তিনি সরকারের রাজস্ব ছাড়ের বিষয়টির অবতারণা করলেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য এবার ‘মিষ্টি’ বাজেট দিল সরকার! বিশেষ খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিপুল করছাড়ের মাধ্যমে তাদের ‘মিষ্টি’ স্বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা একদিকে ভালো। তবে সরকারকে নিজস্ব উৎসে আয়ের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার ছিল। আমি জানি না কোনো গবেষণা বা স্টাডি হয়েছে কি না। কারণ, আমরা বাজেটে এর কোনো হিসাব পাইনি। এর ফলে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে, কোন খাতে কত রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলো, ছাড়ের ফলে এসব খাতের অর্থনৈতিক প্রভাব কতটুকু? কত পরিমাণ বেকারের চাকরির সুযোগ হবে এবং এ সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে কী পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে, তার কোনো পর্যালোচনার তথ্য বাজেট ঘোষণায় দেখা যায়নি।
তাহলে কি এ রকম একটি বড় সিদ্ধান্ত শুধু ধারণার ওপর নেওয়া হয়েছে? আমি তাঁকে এখানে থামিয়ে দিয়ে বললাম, করোনার এই সময়ে রাজস্ব ছাড় না দিলে ওই সব খাতের খরচ বেড়ে যেত এবং হয়তো–বা সেগুলো রুগ্ণ হয়ে যেত। তিনি বলেন, আমি তো ছাড়ের বিপক্ষে নই। আমি বলছি, ছাড়ের আগে একটা স্টাডি করলে অর্থনীতিতে এর প্রভাবটি বোঝা যেত। এখন যেটা হয়েছে, একেবারে ধারণার ওপর সরকারের বিপুল রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর এ ছাড়ের সুফল যে সাধারণ ভোক্তা পাবে, এর গ্যারান্টি কী? বাংলাদেশে আমরা আগেও দেখেছি, লাখ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয় যাতে ভোক্তারা এর সুফল পান। বাস্তবে ভোক্তারা তা পান না। বরং বেশি দামেই পণ্য কিনতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এসব ছাড়ের সুফল ভোক্তাও পেল না আবার সরকারও রাজস্ব হারাল। আমার মনে হয়, এ ধরনের নীতি প্রণয়নের আগে বিশদ স্টাডি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। না–হলে এসব কৌশল দেশের অর্থনীতির পক্ষে সুখকর হবে না। আমি আরও কিছু বিষয়ে তাকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করলাম। তবে তাতে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলেই মনে হলো।
এবার এনবিআরের সাবেক এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপের বিষয়টি উল্লেখ করছি। তিনি দীর্ঘদিন এনবিআরের শুল্ক শাখায় সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। বাজেট বানিয়েছেন। তাঁর মতে, করোনাকালে একটি বিশেষ বাজেট হতে পারত। করোনা যদি আরও ভয়ংকর রূপ নেয়। আবারও কঠোর লকডাউন দিতে হয়, তবে আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এ ঝুঁকি তো আছেই। এ অবস্থায় রাজস্ব ছাড় দেওয়াটা ঠিক আছে। তারপরও যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটিও কিন্তু কম নয়। বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মানে, গেল অর্থবছরের আকারের সমান। যেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটিও বাস্তবায়ন হবে না। এমন অবস্থায় করোনায় আবারও অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়লে কীভাবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে—এটা বোধগম্য নয়।
তিনি বলতে থাকলেন। আমি মন দিয়ে তার কথাগুলো শুনছিলাম। তিনি বলেন, রাজস্ব ছাড়ের বিষয়টি ইতিবাচক হলেও সরকারকে ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচার–বিশ্লেষণ হয়েছে কি না, আমি জানি না। হলে বাজেটে আমরা তার ঘোষণা দেখিনি। না হলে অবশ্যই এর একটি গবেষণা থাকা উচিত। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, রাজস্ব ছাড়ের সুফল ভোক্তা পায় না। এর আগেও আমরা নিত্যপণ্যে নিয়মিত রাজস্ব ছাড় দিয়েছি, যাতে এর সুফল ভোক্তারা পায়। পরে দেখা যায়, পণ্যের দাম তো কমেই না; বরং বাড়ে। ফলে সরকার ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে, এর সুবিধাও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা পাবেন। এটা এখন কঠোর নজরদারি করতে হবে, যাতে ভোক্তারা এর সুফল পায়। এ বছর ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ছাড়ের সুফল পাবেন। আর যখন রাজস্ব পাওয়ার সময় হবে তখন ঠিকই এরা জোটবদ্ধ হয়ে শুল্ককর ছাড়ের দাবিতে সোচ্চার হবেন। এটা নিয়মিত সংস্কৃতি। এ বৃত্ত ভাঙতে না পারলে রাজস্ব ছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাবে না।
আরও বেশ কিছু বিষয় উঠে এল ওই বিশ্লেষকের আলাপে। তবে দুজনের আলোচনা থেকে আমার একটা বিষয় মনে হলো, করোনায় রাজস্ব আয়ের জন্য সরকার হয়তো বেশি চাপ দিতে চায়নি ব্যবসায়ীদের। এটা সরকারের ভালো চাওয়া হলেও বেশ কিছু বাস্তবতা নিয়ে আরেকটু ভাবনাচিন্তা করতে পারত বাজেটের সঙ্গে জড়িতরা। প্রথমত, কোনো নীতিকৌশল প্রণয়নের আগে এর প্রভাব বিশ্লেষণ জরুরি ছিল। এটা না হয়ে থাকলে ঠিক হয়নি। কারণ, স্টাডি না করলে বোঝা যাবে না, সরকার যে রাজস্ব ছাড় দিচ্ছে, তার কতটুকু সুবিধা ভোক্তা পাবে বা ভবিষ্যতে সরকার পাবে। আর ওই সব খাতই–বা কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করবে। রাজস্ব ছাড়ের সুফল নিয়ে অনেক সময় ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হওয়ার ঝুঁকিও কম নয়। বাজেট ঘোষণা হলো মাত্র। আরও এক মাস বিষয়গুলো পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। বাজেটের সঙ্গে জড়িতরা চাইলে এসব বিষয়ে আরও সংশোধনী আনতে পারেন এবং সরকারকে বলতে পারেন তা সংসদে নিয়ে যেতে। যা কিছুই করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত এর সুফল যেন জনগণ ও সরকার
পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাজেট ঘোষণার পরদিন এর নানান দিক নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ ও একজন রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকের সঙ্গে আলাপ হলো। খুবই ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং খোলামেলা আলোচনা। প্রথমেই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি দিয়ে শুরু করতে চাই। এরপর রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকের বিষয়টি বলব। যেহেতু অনানুষ্ঠানিক আলোচনা তাই, তাঁর নাম উল্লেখ না করেই বলছি। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম: কেমন হলো বাজেট? তিনি বলেন, আসলে আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, বাজেট করার সময় তা ভুলে গেছি! মানে সরকারের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি ভুলে গেছেন যে, মানুষ সীমিত পরিসরে জীবনযাপন করছে। লাখো মানুষ চাকরি হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমেছে। লাখো মানুষ কাজ হারিয়েছে, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অভাবী আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ এখন বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। করোনার কারণে লকডাউন দেওয়ায় অনেকটা অবরুদ্ধ জীবনযাপন চলছে।
এমন বিশেষ পরিস্থিতিতে বাজেটেও কি আমরা তার প্রতিফলন খুব একটা দেখেছি? গরিব মানুষের জন্য বিশেষ কী আছে? সবই গতানুগতিক। আগের বাজেটটি যে রীতি মেনে করা, এবারেরটিও তা–ই। অর্থ মন্ত্রণালয় শুধু সংখ্যা আর অঙ্কের হিসাব মিলিয়ে দিয়ে বাজেট করেছে। বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ বাজেট হতে পারত। তা হয়নি। এক বছরের বাজেট করা হলো। আমরা কি জানি আমাদের সামনে কী অপেক্ষা করছে? আমরা কি বলতে পারি করোনা আরও ভয়ংকর হবে না? ইতিমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আঘাত হানতে শুরু করেছে। সামনে আরও কড়া লকডাউন আসছে কি না, এটা আমরা এখনই বলতে পারি না। সামনের দিনগুলো যেখানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ, এখনো সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির গতি–প্রকৃতিও অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে, সেখানে কীভাবে আমরা একটি স্বাভাবিক বাজেট দিই? আমি মনে করি, এখানে সরকার আরও যৌক্তিক হতে পারত। একটি বিশেষ বাজেট দিতে পারত। শুধু করোনা থেকে উত্তরণের প্যাকেজ দিয়ে বাজেটটি ঘোষণা করতে পারত।
আমি তার কথা শুনছিলাম। তিনি আবারও বলতে শুরু করলেন। তিনি মনে করেন, অর্থায়নের জন্য বিদেশি উৎস, ব্যাংক ব্যবস্থা বা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর না করে সরকার এখানেও ইনোভেটিভ হতে পারত। পুঁজিবাজারে একটি কোভিড বন্ড ছাড়তে পারত। এর মাধ্যমে সরকার পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পারত। এতে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ত। টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি সেটা কমত। পাশাপাশি পুঁজিবাজারটি আরও শক্তিশালী হতো।
বলতে বলতে তিনি সরকারের রাজস্ব ছাড়ের বিষয়টির অবতারণা করলেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য এবার ‘মিষ্টি’ বাজেট দিল সরকার! বিশেষ খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিপুল করছাড়ের মাধ্যমে তাদের ‘মিষ্টি’ স্বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা একদিকে ভালো। তবে সরকারকে নিজস্ব উৎসে আয়ের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার ছিল। আমি জানি না কোনো গবেষণা বা স্টাডি হয়েছে কি না। কারণ, আমরা বাজেটে এর কোনো হিসাব পাইনি। এর ফলে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে, কোন খাতে কত রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলো, ছাড়ের ফলে এসব খাতের অর্থনৈতিক প্রভাব কতটুকু? কত পরিমাণ বেকারের চাকরির সুযোগ হবে এবং এ সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে কী পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে, তার কোনো পর্যালোচনার তথ্য বাজেট ঘোষণায় দেখা যায়নি।
তাহলে কি এ রকম একটি বড় সিদ্ধান্ত শুধু ধারণার ওপর নেওয়া হয়েছে? আমি তাঁকে এখানে থামিয়ে দিয়ে বললাম, করোনার এই সময়ে রাজস্ব ছাড় না দিলে ওই সব খাতের খরচ বেড়ে যেত এবং হয়তো–বা সেগুলো রুগ্ণ হয়ে যেত। তিনি বলেন, আমি তো ছাড়ের বিপক্ষে নই। আমি বলছি, ছাড়ের আগে একটা স্টাডি করলে অর্থনীতিতে এর প্রভাবটি বোঝা যেত। এখন যেটা হয়েছে, একেবারে ধারণার ওপর সরকারের বিপুল রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর এ ছাড়ের সুফল যে সাধারণ ভোক্তা পাবে, এর গ্যারান্টি কী? বাংলাদেশে আমরা আগেও দেখেছি, লাখ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয় যাতে ভোক্তারা এর সুফল পান। বাস্তবে ভোক্তারা তা পান না। বরং বেশি দামেই পণ্য কিনতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এসব ছাড়ের সুফল ভোক্তাও পেল না আবার সরকারও রাজস্ব হারাল। আমার মনে হয়, এ ধরনের নীতি প্রণয়নের আগে বিশদ স্টাডি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। না–হলে এসব কৌশল দেশের অর্থনীতির পক্ষে সুখকর হবে না। আমি আরও কিছু বিষয়ে তাকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করলাম। তবে তাতে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলেই মনে হলো।
এবার এনবিআরের সাবেক এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপের বিষয়টি উল্লেখ করছি। তিনি দীর্ঘদিন এনবিআরের শুল্ক শাখায় সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। বাজেট বানিয়েছেন। তাঁর মতে, করোনাকালে একটি বিশেষ বাজেট হতে পারত। করোনা যদি আরও ভয়ংকর রূপ নেয়। আবারও কঠোর লকডাউন দিতে হয়, তবে আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এ ঝুঁকি তো আছেই। এ অবস্থায় রাজস্ব ছাড় দেওয়াটা ঠিক আছে। তারপরও যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটিও কিন্তু কম নয়। বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মানে, গেল অর্থবছরের আকারের সমান। যেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটিও বাস্তবায়ন হবে না। এমন অবস্থায় করোনায় আবারও অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়লে কীভাবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে—এটা বোধগম্য নয়।
তিনি বলতে থাকলেন। আমি মন দিয়ে তার কথাগুলো শুনছিলাম। তিনি বলেন, রাজস্ব ছাড়ের বিষয়টি ইতিবাচক হলেও সরকারকে ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচার–বিশ্লেষণ হয়েছে কি না, আমি জানি না। হলে বাজেটে আমরা তার ঘোষণা দেখিনি। না হলে অবশ্যই এর একটি গবেষণা থাকা উচিত। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, রাজস্ব ছাড়ের সুফল ভোক্তা পায় না। এর আগেও আমরা নিত্যপণ্যে নিয়মিত রাজস্ব ছাড় দিয়েছি, যাতে এর সুফল ভোক্তারা পায়। পরে দেখা যায়, পণ্যের দাম তো কমেই না; বরং বাড়ে। ফলে সরকার ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে, এর সুবিধাও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা পাবেন। এটা এখন কঠোর নজরদারি করতে হবে, যাতে ভোক্তারা এর সুফল পায়। এ বছর ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ছাড়ের সুফল পাবেন। আর যখন রাজস্ব পাওয়ার সময় হবে তখন ঠিকই এরা জোটবদ্ধ হয়ে শুল্ককর ছাড়ের দাবিতে সোচ্চার হবেন। এটা নিয়মিত সংস্কৃতি। এ বৃত্ত ভাঙতে না পারলে রাজস্ব ছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাবে না।
আরও বেশ কিছু বিষয় উঠে এল ওই বিশ্লেষকের আলাপে। তবে দুজনের আলোচনা থেকে আমার একটা বিষয় মনে হলো, করোনায় রাজস্ব আয়ের জন্য সরকার হয়তো বেশি চাপ দিতে চায়নি ব্যবসায়ীদের। এটা সরকারের ভালো চাওয়া হলেও বেশ কিছু বাস্তবতা নিয়ে আরেকটু ভাবনাচিন্তা করতে পারত বাজেটের সঙ্গে জড়িতরা। প্রথমত, কোনো নীতিকৌশল প্রণয়নের আগে এর প্রভাব বিশ্লেষণ জরুরি ছিল। এটা না হয়ে থাকলে ঠিক হয়নি। কারণ, স্টাডি না করলে বোঝা যাবে না, সরকার যে রাজস্ব ছাড় দিচ্ছে, তার কতটুকু সুবিধা ভোক্তা পাবে বা ভবিষ্যতে সরকার পাবে। আর ওই সব খাতই–বা কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করবে। রাজস্ব ছাড়ের সুফল নিয়ে অনেক সময় ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হওয়ার ঝুঁকিও কম নয়। বাজেট ঘোষণা হলো মাত্র। আরও এক মাস বিষয়গুলো পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। বাজেটের সঙ্গে জড়িতরা চাইলে এসব বিষয়ে আরও সংশোধনী আনতে পারেন এবং সরকারকে বলতে পারেন তা সংসদে নিয়ে যেতে। যা কিছুই করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত এর সুফল যেন জনগণ ও সরকার
পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে