সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
পর্ব-১
ন্যাপের চৌদ্দ দফা এসেছে শেখ মুজিবের ছয় দফার প্রায় চার মাস পরে। ছয় দফার তুলনায় চৌদ্দ দফা ছিল অধিক বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। ছয় দফার মূল কথাটি হচ্ছে: পূর্ববঙ্গের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। এই দাবি চৌদ্দ দফায়ও আছে। তবে সেভাবে নেই, যেভাবে ছয় দফায় রয়েছে। ছয় দফার সঙ্গে ১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গের নির্বাচনের সময়ে দেওয়া যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার মিল রয়েছে। একুশ দফার ১৯ নম্বর দফায় অঙ্গীকার করা হয়েছে যে, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশ-রক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসমূহ) পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে।’ স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে একুশ দফার তুলনায় ছয় দফা আরও অগ্রসর। সেখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছে যে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি–এই দুটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’ মুদ্রা ও অর্থসম্বন্ধীয় ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের একক কর্তৃত্ব থাকবে না। তদুপরি অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর হাতে কর ও শুল্ক ধার্যের সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ পাবে। বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অঙ্গরাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি করার ক্ষমতা পাবে।
অর্থাৎ, স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ ও গুণ উভয় ব্যাপারেই ছয় দফা একুশ দফার তুলনায় আরও অগ্রসর ও পরিষ্কার। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে বিশ্বাসী ও অভ্যস্ত পাকিস্তানের শাসকেরা ছয় দফা মেনে নেবে না–এটা ছিল প্রায় সুনিশ্চিত। কারণ, মুদ্রা, রাজস্ব সংগ্রহ ও বহির্বাণিজ্যের ওপর যদি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তাহলে ১২০০ মাইলের বৈরী ভূখণ্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুই পাকিস্তানকে যতই ফেডারেশন বলা হোক না কেন, সেটি একটি কনফেডারেশনেই পরিণত হবে। বস্তুত ১৯৭১ সালে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের সময়ে ইয়াহিয়ার পরামর্শকেরা মুজিবের পরামর্শকদের কাছে ওই আপত্তিটাই তুলেছিল বলে জানা যায় এবং আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ফেডারেশন নয়, হবে কনফেডারেশন। পাকিস্তানের সুবিধাভোগী শাসকদের পক্ষে পূর্ববঙ্গে স্থাপিত শোষণ-শাসনের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশটি হাতছাড়া করার প্রস্তাবে রাজি হওয়া সম্ভব ছিল না এবং রাজি তারা হয়ওনি। উল্টো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পূর্ববঙ্গের ওপর ওই গণহত্যা চাপিয়ে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে–মুখে যা-ই বলুক, পূর্ববঙ্গকে তারা শোষণের ক্ষেত্র ভিন্ন অন্য কিছু ভাবত না। যদিও পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জনই ছিল পূর্ববঙ্গবাসী এবং যদিও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার কারণেই। আর তার আর্থিক উন্নতির পেছনেও মূল অবদান ছিল পূর্ববঙ্গের পাটচাষিদেরই।
আওয়ামী লীগের নিজের মধ্যেই অবশ্য ছয় দফা সম্পর্কে দ্বিধা ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যিনি সারা পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তাঁর পক্ষেও ছয় দফা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আসলে সোহরাওয়ার্দী যত দিন জীবিত ছিলেন, পূর্ববঙ্গীয় আওয়ামী লীগ তো তত দিন ছয় দফায় উপস্থাপিত স্বায়ত্তশাসনের মতো দাবি নিয়ে হাজির হওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। ১৯৫৭-তে কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ যে ভেঙে গেল, তার একটি প্রধান কারণ ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি। সোহরাওয়ার্দী তো তখন ঘোষণাই করে দিয়েছিলেন, তাঁর অভিভাবকত্বে প্রণীত রাষ্ট্রীয় সংবিধানে পূর্ববঙ্গের জন্য শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হয়ে গেছে। অথচ সংবিধানে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পূর্ব-পশ্চিমে সংখ্যাসাম্য নীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার দরুন পূর্ববঙ্গের ৫৬ জন মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ জনের সমান হয়ে গিয়েছিল; এবং একই সঙ্গে এক ইউনিট স্থাপনের মধ্য দিয়ে আবার সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মানুষকে পাঞ্জাব প্রদেশের কর্তৃত্বাধীন করার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
স্মরণীয় যে, পূর্ববঙ্গের স্বার্থবিরোধী ওই শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্যই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সোহরাওয়ার্দীকে জুরিখ থেকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে করাচিতে নিয়ে এসেছিল–প্রথমে আইনমন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী করা হবে–এই আশ্বাস দিয়ে। আওয়ামী লীগকে যিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেই মওলানা ভাসানী তখন লন্ডনে। সোহরাওয়ার্দী তাঁর পরামর্শ চাইলে পই পই করে তিনি নিষেধ করেছিলেন ওদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিতে। সোহরাওয়ার্দী শোনেননি। তিনি দেশে এসে শাসকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ভাসানী ইউরোপে গিয়েছিলেন পূর্ব জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে। তিনি লন্ডন পর্যন্ত গেছেন; কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কারসাজিতে পূর্ব জার্মানিতে যাওয়ার ভিসা তাঁকে দেওয়া হয়নি। ওদিকে ষড়যন্ত্র-শিরোমণি সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ভাসানী যদি দেশে ফেরেন, তবে বিমানবন্দরেই তাঁকে হত্যা করা হবে। ভাসানী পূর্ব বার্লিনে না গেলেও স্টকহোমের শান্তি সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলা ভাষায় বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অসামান্য একটি ভাষণ দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। কিছুদিন লন্ডনে থেকে ভাসানী কলকাতায় এসে অপেক্ষা করছিলেন–কী করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ওদিকে দলের কাছে পাকিস্তানি শাসকদের প্রস্তাবিত সংখ্যাসাম্য এবং এক ইউনিটকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ভাসানীর সমর্থন ছিল অত্যাবশ্যক। সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩) ও ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬) তখন সারা পাকিস্তানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সোহরাওয়ার্দী ভাসানীকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে কলকাতায় পাঠানো পর্যাপ্ত মনে করেননি, তিনি নিজেও কলকাতায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। সোহরাওয়ার্দী যত দিন জীবিত ছিলেন, তত দিন এটা সম্ভব হয়নি। তিনি এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি চাইছিলেন বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে গঠিত এনডিএফের মধ্যে থেকেই গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন (যদিও এনডিএফের নাম শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল নাথিং ডুইং ফ্রন্ট)। এনডিএফকে পছন্দ করার কারণ, সেখানে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা এবং তাঁর অভিপ্রায় ছিল সর্বদলীয়ভাবে এবং সর্বপাকিস্তানের নেতৃত্বে থাকবেন।
আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর মুজিব যখন ছয় দফা দিলেন, তখন তিনি কিন্তু দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি। কারণ, তিনি জানতেন, ওই প্রশ্নে দলের ভেতর নানা রকমের কূটতর্ক ও বিরোধিতা দেখা দেবে। এবং সেটা ঘটেছিলও। আতাউর রহমান খান অবশ্য আগেই দল ছেড়ে দিয়ে নিজের একটা দল গড়েছিলেন। আবদুস সালাম খান তখনো ছিলেন; কিন্তু তিনি ছয় দফা সমর্থন করেননি। তিনি নূরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
ইতিহাসের বক্রাঘাতটি ঘটল এভাবে–যে স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রশ্নে একদিন মুজিব ভাসানীর অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীর পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৯ বছরের মাথায় সেই স্বায়ত্তশাসনের দাবিকেই স্পষ্ট করে তুলে তিনি ভাসানীর অবস্থানের কাছাকাছি চলে এলেন। তবে পুরোপুরি নয়। কারণ, সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ভাসানীর দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে অপর যে প্রশ্নটি ছিল, সেটি হলো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা। ছয় দফায় অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ বিরোধিতা ছিল পুরোমাত্রায়; কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার কোনো উল্লেখ ছিল না। বরং তখন এমন একটা গুঞ্জন ছিল–আমেরিকানরা ছয় দফা সমর্থন করবে এই বিবেচনায় যে, স্বায়ত্তশাসনের যে দাবি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, সেটা বামপন্থীদের হাতে না গিয়ে ‘উদার গণতন্ত্রী’দের তত্ত্বাবধানে থাকাটাই ভালো। আওয়ামী লীগ আর যাই হোক বামপন্থী তো ছিল না।
ছয় দফা পেয়ে পূর্ববঙ্গের উঠতি মধ্যবিত্ত আশ্বস্ত হয়। কারণ, তারা দেখছিল অবাঙালি শাসকরা তাদের অগ্রগমনের পথ তো আগলে রেখেছেই, নানা উপায়ে জ্বালাতনও করে চলেছে। অপমান করছে পদে পদে। সবচেয়ে খুশি হয়েছে অবশ্য ছাত্রলীগের তরুণ একটি অংশ। এরা স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতার কথাই সে সময়ে ভাবছিল। ষাটের ওই দশকে, বিশ্বের নানা জায়গায় তরুণেরা বিক্ষোভ করছে। ভিয়েতনামে আমেরিকানরা মার খাচ্ছে। ওই যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে খোদ আমেরিকাতেই ছাত্ররা বিক্ষোভ করে চলেছে। বিপ্লবী চে গুয়েভারা নিহত হয়েছেন; কিন্তু তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন বিশ্বব্যাপী তরুণদের জন্য। প্যালেস্টাইনে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ইউরোপজুড়ে বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সেই কবে, ১৮৪৮ সালে, ইউরোপব্যাপী একবার বিপ্লবের যে পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল, যেন সেটাই ফেরত এসেছে। চীনে মাও সে–তুং ডাক দিয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। ডাকটা ছিল তরুণদের কাছে, পার্টির প্রবীণ নেতৃত্বের একটি অংশের বিরুদ্ধে। পূর্ববঙ্গের তরুণেরাও আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ। তারা সামরিক শাসকদের জারি করা শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে। ওই আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্রদের অংশগ্রহণই ছিল প্রধান। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ছাত্রলীগও অংশ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদের একাংশের ওপর বিশ্বব্যাপী সরব সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রভাব তখন এসে পড়তে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়ে এরা হাতে পেল মুজিবের ছয় দফা। ছাত্রলীগের এই অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। ছয় দফা পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছিল–ঠিক এটার জন্যই এত দিন তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। সিরাজুল আলম জানাচ্ছেন, শেখ ফজলুল হক মনি (তখনকার ছাত্রনেতা, শেখ মুজিবের ভাগনে) যখন তাঁকে টাইপ করা একটি কাগজে ছয় দফার বিবরণটি দিলেন, তখন তাঁর প্রতিক্রিয়াটি হয়েছিল এই রকমের:
আমি দুবার কাগজটি পড়লাম। [...] আমি আজ বলতে পারব না আমার মধ্যে তখন কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। কাগজটা পড়ে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। [...] আমি বেরিয়ে এলাম। তারপর কতক্ষণে কীভাবে যে ইকবাল হলে ফিরে এসে রাজ্জাক ও আরেফকে (তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী) খবরটা দিলাম, তা আমি বলতে পারব না। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমরা প্রত্যেকে একবার করে কাগজটি পড়লাম। কারও মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলো না। তিনজন পরস্পরের দিকে তাকালাম। তারপর একে অপরের হাতে হাত রেখে বললাম, এখন থেকে এটাই হবে আমাদের প্রথম কাজ।
এঁরা তিনজন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে একটি ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছিলেন–কিছুটা ব্রিটিশ আমলের অনুশীলন ও যুগান্তর দলের আদলে। গোপনীয়তা রক্ষা বজায় রেখে এবং পরস্পর একসঙ্গে থাকার বিষয়ে ‘রক্তশপথ’ গ্রহণ করে। তখন থেকে ছয় দফাকে জনপ্রিয় করার কাজে এঁরা পুরোদমে মনোযোগ দিয়েছেন। ঘটনা ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারির।
[চলবে]
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পর্ব-১
ন্যাপের চৌদ্দ দফা এসেছে শেখ মুজিবের ছয় দফার প্রায় চার মাস পরে। ছয় দফার তুলনায় চৌদ্দ দফা ছিল অধিক বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। ছয় দফার মূল কথাটি হচ্ছে: পূর্ববঙ্গের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। এই দাবি চৌদ্দ দফায়ও আছে। তবে সেভাবে নেই, যেভাবে ছয় দফায় রয়েছে। ছয় দফার সঙ্গে ১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গের নির্বাচনের সময়ে দেওয়া যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার মিল রয়েছে। একুশ দফার ১৯ নম্বর দফায় অঙ্গীকার করা হয়েছে যে, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশ-রক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসমূহ) পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে।’ স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে একুশ দফার তুলনায় ছয় দফা আরও অগ্রসর। সেখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছে যে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি–এই দুটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’ মুদ্রা ও অর্থসম্বন্ধীয় ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের একক কর্তৃত্ব থাকবে না। তদুপরি অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর হাতে কর ও শুল্ক ধার্যের সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ পাবে। বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অঙ্গরাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি করার ক্ষমতা পাবে।
অর্থাৎ, স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ ও গুণ উভয় ব্যাপারেই ছয় দফা একুশ দফার তুলনায় আরও অগ্রসর ও পরিষ্কার। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে বিশ্বাসী ও অভ্যস্ত পাকিস্তানের শাসকেরা ছয় দফা মেনে নেবে না–এটা ছিল প্রায় সুনিশ্চিত। কারণ, মুদ্রা, রাজস্ব সংগ্রহ ও বহির্বাণিজ্যের ওপর যদি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তাহলে ১২০০ মাইলের বৈরী ভূখণ্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুই পাকিস্তানকে যতই ফেডারেশন বলা হোক না কেন, সেটি একটি কনফেডারেশনেই পরিণত হবে। বস্তুত ১৯৭১ সালে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের সময়ে ইয়াহিয়ার পরামর্শকেরা মুজিবের পরামর্শকদের কাছে ওই আপত্তিটাই তুলেছিল বলে জানা যায় এবং আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ফেডারেশন নয়, হবে কনফেডারেশন। পাকিস্তানের সুবিধাভোগী শাসকদের পক্ষে পূর্ববঙ্গে স্থাপিত শোষণ-শাসনের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশটি হাতছাড়া করার প্রস্তাবে রাজি হওয়া সম্ভব ছিল না এবং রাজি তারা হয়ওনি। উল্টো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পূর্ববঙ্গের ওপর ওই গণহত্যা চাপিয়ে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে–মুখে যা-ই বলুক, পূর্ববঙ্গকে তারা শোষণের ক্ষেত্র ভিন্ন অন্য কিছু ভাবত না। যদিও পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জনই ছিল পূর্ববঙ্গবাসী এবং যদিও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার কারণেই। আর তার আর্থিক উন্নতির পেছনেও মূল অবদান ছিল পূর্ববঙ্গের পাটচাষিদেরই।
আওয়ামী লীগের নিজের মধ্যেই অবশ্য ছয় দফা সম্পর্কে দ্বিধা ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যিনি সারা পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তাঁর পক্ষেও ছয় দফা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আসলে সোহরাওয়ার্দী যত দিন জীবিত ছিলেন, পূর্ববঙ্গীয় আওয়ামী লীগ তো তত দিন ছয় দফায় উপস্থাপিত স্বায়ত্তশাসনের মতো দাবি নিয়ে হাজির হওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। ১৯৫৭-তে কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ যে ভেঙে গেল, তার একটি প্রধান কারণ ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি। সোহরাওয়ার্দী তো তখন ঘোষণাই করে দিয়েছিলেন, তাঁর অভিভাবকত্বে প্রণীত রাষ্ট্রীয় সংবিধানে পূর্ববঙ্গের জন্য শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হয়ে গেছে। অথচ সংবিধানে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পূর্ব-পশ্চিমে সংখ্যাসাম্য নীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার দরুন পূর্ববঙ্গের ৫৬ জন মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ জনের সমান হয়ে গিয়েছিল; এবং একই সঙ্গে এক ইউনিট স্থাপনের মধ্য দিয়ে আবার সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মানুষকে পাঞ্জাব প্রদেশের কর্তৃত্বাধীন করার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
স্মরণীয় যে, পূর্ববঙ্গের স্বার্থবিরোধী ওই শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্যই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সোহরাওয়ার্দীকে জুরিখ থেকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে করাচিতে নিয়ে এসেছিল–প্রথমে আইনমন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী করা হবে–এই আশ্বাস দিয়ে। আওয়ামী লীগকে যিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেই মওলানা ভাসানী তখন লন্ডনে। সোহরাওয়ার্দী তাঁর পরামর্শ চাইলে পই পই করে তিনি নিষেধ করেছিলেন ওদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিতে। সোহরাওয়ার্দী শোনেননি। তিনি দেশে এসে শাসকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ভাসানী ইউরোপে গিয়েছিলেন পূর্ব জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে। তিনি লন্ডন পর্যন্ত গেছেন; কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কারসাজিতে পূর্ব জার্মানিতে যাওয়ার ভিসা তাঁকে দেওয়া হয়নি। ওদিকে ষড়যন্ত্র-শিরোমণি সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ভাসানী যদি দেশে ফেরেন, তবে বিমানবন্দরেই তাঁকে হত্যা করা হবে। ভাসানী পূর্ব বার্লিনে না গেলেও স্টকহোমের শান্তি সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলা ভাষায় বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অসামান্য একটি ভাষণ দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। কিছুদিন লন্ডনে থেকে ভাসানী কলকাতায় এসে অপেক্ষা করছিলেন–কী করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ওদিকে দলের কাছে পাকিস্তানি শাসকদের প্রস্তাবিত সংখ্যাসাম্য এবং এক ইউনিটকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ভাসানীর সমর্থন ছিল অত্যাবশ্যক। সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩) ও ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬) তখন সারা পাকিস্তানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সোহরাওয়ার্দী ভাসানীকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে কলকাতায় পাঠানো পর্যাপ্ত মনে করেননি, তিনি নিজেও কলকাতায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। সোহরাওয়ার্দী যত দিন জীবিত ছিলেন, তত দিন এটা সম্ভব হয়নি। তিনি এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি চাইছিলেন বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে গঠিত এনডিএফের মধ্যে থেকেই গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন (যদিও এনডিএফের নাম শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল নাথিং ডুইং ফ্রন্ট)। এনডিএফকে পছন্দ করার কারণ, সেখানে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা এবং তাঁর অভিপ্রায় ছিল সর্বদলীয়ভাবে এবং সর্বপাকিস্তানের নেতৃত্বে থাকবেন।
আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর মুজিব যখন ছয় দফা দিলেন, তখন তিনি কিন্তু দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি। কারণ, তিনি জানতেন, ওই প্রশ্নে দলের ভেতর নানা রকমের কূটতর্ক ও বিরোধিতা দেখা দেবে। এবং সেটা ঘটেছিলও। আতাউর রহমান খান অবশ্য আগেই দল ছেড়ে দিয়ে নিজের একটা দল গড়েছিলেন। আবদুস সালাম খান তখনো ছিলেন; কিন্তু তিনি ছয় দফা সমর্থন করেননি। তিনি নূরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
ইতিহাসের বক্রাঘাতটি ঘটল এভাবে–যে স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রশ্নে একদিন মুজিব ভাসানীর অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীর পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৯ বছরের মাথায় সেই স্বায়ত্তশাসনের দাবিকেই স্পষ্ট করে তুলে তিনি ভাসানীর অবস্থানের কাছাকাছি চলে এলেন। তবে পুরোপুরি নয়। কারণ, সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ভাসানীর দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে অপর যে প্রশ্নটি ছিল, সেটি হলো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা। ছয় দফায় অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ বিরোধিতা ছিল পুরোমাত্রায়; কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার কোনো উল্লেখ ছিল না। বরং তখন এমন একটা গুঞ্জন ছিল–আমেরিকানরা ছয় দফা সমর্থন করবে এই বিবেচনায় যে, স্বায়ত্তশাসনের যে দাবি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, সেটা বামপন্থীদের হাতে না গিয়ে ‘উদার গণতন্ত্রী’দের তত্ত্বাবধানে থাকাটাই ভালো। আওয়ামী লীগ আর যাই হোক বামপন্থী তো ছিল না।
ছয় দফা পেয়ে পূর্ববঙ্গের উঠতি মধ্যবিত্ত আশ্বস্ত হয়। কারণ, তারা দেখছিল অবাঙালি শাসকরা তাদের অগ্রগমনের পথ তো আগলে রেখেছেই, নানা উপায়ে জ্বালাতনও করে চলেছে। অপমান করছে পদে পদে। সবচেয়ে খুশি হয়েছে অবশ্য ছাত্রলীগের তরুণ একটি অংশ। এরা স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতার কথাই সে সময়ে ভাবছিল। ষাটের ওই দশকে, বিশ্বের নানা জায়গায় তরুণেরা বিক্ষোভ করছে। ভিয়েতনামে আমেরিকানরা মার খাচ্ছে। ওই যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে খোদ আমেরিকাতেই ছাত্ররা বিক্ষোভ করে চলেছে। বিপ্লবী চে গুয়েভারা নিহত হয়েছেন; কিন্তু তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন বিশ্বব্যাপী তরুণদের জন্য। প্যালেস্টাইনে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ইউরোপজুড়ে বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সেই কবে, ১৮৪৮ সালে, ইউরোপব্যাপী একবার বিপ্লবের যে পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল, যেন সেটাই ফেরত এসেছে। চীনে মাও সে–তুং ডাক দিয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। ডাকটা ছিল তরুণদের কাছে, পার্টির প্রবীণ নেতৃত্বের একটি অংশের বিরুদ্ধে। পূর্ববঙ্গের তরুণেরাও আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ। তারা সামরিক শাসকদের জারি করা শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে। ওই আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্রদের অংশগ্রহণই ছিল প্রধান। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ছাত্রলীগও অংশ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদের একাংশের ওপর বিশ্বব্যাপী সরব সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রভাব তখন এসে পড়তে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়ে এরা হাতে পেল মুজিবের ছয় দফা। ছাত্রলীগের এই অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। ছয় দফা পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছিল–ঠিক এটার জন্যই এত দিন তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। সিরাজুল আলম জানাচ্ছেন, শেখ ফজলুল হক মনি (তখনকার ছাত্রনেতা, শেখ মুজিবের ভাগনে) যখন তাঁকে টাইপ করা একটি কাগজে ছয় দফার বিবরণটি দিলেন, তখন তাঁর প্রতিক্রিয়াটি হয়েছিল এই রকমের:
আমি দুবার কাগজটি পড়লাম। [...] আমি আজ বলতে পারব না আমার মধ্যে তখন কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। কাগজটা পড়ে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। [...] আমি বেরিয়ে এলাম। তারপর কতক্ষণে কীভাবে যে ইকবাল হলে ফিরে এসে রাজ্জাক ও আরেফকে (তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী) খবরটা দিলাম, তা আমি বলতে পারব না। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমরা প্রত্যেকে একবার করে কাগজটি পড়লাম। কারও মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলো না। তিনজন পরস্পরের দিকে তাকালাম। তারপর একে অপরের হাতে হাত রেখে বললাম, এখন থেকে এটাই হবে আমাদের প্রথম কাজ।
এঁরা তিনজন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে একটি ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছিলেন–কিছুটা ব্রিটিশ আমলের অনুশীলন ও যুগান্তর দলের আদলে। গোপনীয়তা রক্ষা বজায় রেখে এবং পরস্পর একসঙ্গে থাকার বিষয়ে ‘রক্তশপথ’ গ্রহণ করে। তখন থেকে ছয় দফাকে জনপ্রিয় করার কাজে এঁরা পুরোদমে মনোযোগ দিয়েছেন। ঘটনা ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারির।
[চলবে]
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৬ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৬ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৬ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে