মাহমুদ আজম
সিরিল রেডক্লিফের নাম রেডক্লিফ লাইন পড়ার সময় সবাই শুনেছি। অনেকে তাঁকে দোষ দেন; কিন্তু তাঁর কি আসলেও কোনো দোষ ছিল? খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। তিনি ভারতভাগের আগে কখনো ভারতে আসেননি। ১৯৪৭-এর ৮ জুলাই তিনি প্রথম ভারতে আসেন। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশাল এক দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে দুই ভাগ করার। এটা খুব সহজ কাজ ছিল না।
সবাই বলে ভারতভাগ। আসলে ভাগটা হয়েছিল পাঞ্জাব ও বাংলা। অনেকেই বলেন, তাঁর ভাগে ত্রুটি ছিল।
১৯৭০-এর দিকে এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জানান, তাঁকে যদি আবার একই সুযোগ ও সময় দেওয়া হতো, তাহলেও তিনি তা–ই করতেন। কারণ, তাঁর কাছে সময় ছিল মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। যে ব্যক্তি আগে কখনো ভারতে আসেননি, তাঁর পক্ষে পাঁচ সপ্তাহে প্রতি এলাকায় গিয়ে অবস্থা দেখে ভারসাম্য রেখে একটা ভাগ করার দায়িত্ব পালন অসম্ভব ছিল। তিনি এটাও বলেছেন, ‘যদি আমাকে দুই–তিন বছর সময় দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আমি ভিন্ন কিছু করতে পারতাম।’
এটাই বাস্তবতা। পাঁচ সপ্তাহ একজন বিদেশির জন্য সবাইকে খুশি করার মতো সীমানা নির্ধারণ বাস্তবে দুরূহ কাজ ছিল।
পাকিস্তানিদের অভিযোগ, রেডক্লিফ তাঁদের প্রতি অন্যায় করেছেন। সে ব্যাপারে ১৯৭০ সালে রেডক্লিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানিদের খুশি হওয়া দরকার। কারণ, আমি তাঁদের লাহোর দিয়েছি। লাহোরের জনসংখ্যা ৬০ শতাংশের ওপরে মুসলিম হলেও এর ৮০ শতাংশ ধনসম্পদের মালিক ছিল হিন্দু ও শিখরা।’ রেডক্লিফ বলেন, ‘আমি লাহোর ভারতে দিয়েই দিয়েছিলাম, তবে পরে কলকাতা ভারতে দিয়েছি—এটা চিন্তা করে বড় শহর হিসেবে লাহোর পাকিস্তানকে দিই।’ পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের দুই কমিটিতে দুজন কংগ্রেসের ও দুজন মুসলিম লীগের প্রতিনিধি নিয়ে মোট চারজন সদস্য ছিলেন। রেডক্লিফ ’৭০ সালের সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, বাংলার এক মুসলিম লীগের সদস্য নাকি তাঁকে অনুরোধ করেন দার্জিলিং পাকিস্তানে ফেলতে। কারণ, প্রতিবছর তাঁর পরিবার সেখানে ছুটি কাটাতে যায়। দার্জিলিং ভারতে গেলে সেখানে তাঁর পক্ষে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।
এবার আসি রক্তের ট্রেনে। ১৯৪৭ সালের ব্লাড ট্রেন। ইতিহাসের কুখ্যাত কিছু ট্রেনযাত্রাকে একত্রে এই নামে বলা হয়। ’৪৭-এর দেশভাগের মর্মান্তিক সব গল্পের ৮৫ শতাংশই পাঞ্জাবের। বাংলার সীমান্তে এমন গল্প ১৫ শতাংশের বেশি হবে না।
রেডক্লিফের ঘোষণার পর পাঞ্জাব সীমান্তে মানুষ যেন পশুতে পরিণত হয়। ভাগের সময় কোথাও এটা বলা হয়নি যে পাকিস্তানে হিন্দু বা ভারতে মুসলমান থাকতে পারবে না। জিন্নাহ চেয়েছিলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যেখানে যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করবে। কিন্তু দুই পাশের উগ্র জনতা তা মানতে পারেনি পাঞ্জাবে। এখানে লড়াইটা দ্বিমুখী না হয়ে ত্রিমুখী হয়েছিল। হিন্দু-মুসলিম লড়াইয়ের সঙ্গে শিখও যুক্ত হয়েছিল।
পাঞ্জাবের পাকিস্তানের দিকে উগ্রবাদীরা হিন্দু ও শিখদের বাড়িঘর লুটপাট, নারীদের ধর্ষণ, খুন, হত্যার মতো জঘন্য সব অপরাধ সংঘটিত করে। অন্যদিকে পাঞ্জাবের ভারত অংশেও উগ্রবাদীরা মুসলমানদের সঙ্গে একই রকম জঘন্য আচরণ করে। সবচেয়ে জঘন্য ছিল যাত্রীবোঝাই ট্রেন আক্রমণ।
অমৃতসর থেকে ২ হাজার ৫০০ মুসলিম যাত্রী নিয়ে একটি ট্রেন লাহোরের উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু ট্রেনটি যখন ১৮ আগস্ট লাহোরে পৌঁছায়, তখন ট্রেনে মাত্র দুজন যাত্রী জীবিত ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসার সময়ও ট্রেনে একই রকম হামলা হয়। গর্ভবতী নারীদের হত্যা করা হয়। ট্রেনের কামরায় ঢুকে গুণ্ডারা তিন ধর্মের নামে দেশত্যাগী নারী-পুরুষ-শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। এটা ছিল ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ঘটনা। পাঞ্জাব সীমান্ত ছিল বিশাল। হেঁটে বুড়ো বাবা-মা ও বাচ্চা নিয়ে অন্য দেশে পৌঁছাতে কয়েক দিন লেগে যেত। পথে খাবারেরও অভাব ছিল। এই অবস্থায় উগ্র সাম্প্রদায়িক অমানুষদের হাতে হাজারো মানুষ মারা যায়। এ যেন কোনো কারণ ছাড়াই হত্যার উৎসবে মেতে ওঠা। তুই মুসলিম, তোকে মারব; তুই হিন্দু, তোকে মারব; তুই শিখ, তোকে মারব—এমন এক অবস্থা ছিল। এই ১০ লাখ লোকের মৃত্যু ও দেড় কোটি লোকের দেশত্যাগে বাধ্য করার পেছনে দায়ী ছিল তৎকালীন সব রাজনৈতিক দলের ভুল ও অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল।
মাত্র এক-দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পাঞ্জাবের দুই অংশ মিলে। ২ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। এই ভয়াবহতা দেখে রেডক্লিফ তাঁর সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে লন্ডনে চলে যান এবং সারা জীবনেও আর ভারতে আসেননি। তাঁর পারিশ্রমিক সেই সময়ের তিন হাজার পাউন্ডও তিনি নেননি।
বাংলা সীমান্তেও এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে পাঞ্জাবের ভয়াবহতা এতটাই নির্মম ছিল যে তার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। এটা কোনো স্বাধীনতাযুদ্ধ ছিল না, ব্রিটিশরা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভাগ করেছিল। কখনো কোথাও ভুলেও দাবি করা হয়নি, ভাগ করা হলে অন্য ধর্মের মানুষকে চলে যেতে হবে। কেন যাবে কেউ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে? কিন্তু কতিপয় মানুষ নামের অমানুষের কারণে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়, অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয় ধর্মকে।
সেই বিয়োগান্ত ঘটনার ৭৩ বছর পর তিন দেশের মানুষেরই উচিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির পরিণতি কী হয়, তা সেই সময় পাঞ্জাবের মানুষ এবং কিছুটা বাংলার মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সেই সময় রাজনৈতিক নেতাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল দেশভাগের আগে মানুষের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে না ধরা। এক মাস বড় বড় নেতা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রচারণা চালালে এই লাখো হত্যা থামানো যেত অবশ্যই। কোনো প্রকার কাউনসেলিং ও যথেষ্ট নিরাপত্তা ছাড়াই এভাবে তড়িঘড়ি করে ভারত স্বাধীন করে দেওয়া ব্রিটিশদেরও ভুল ছিল। জোরজবরদস্তি করে কোটি কোটি মানুষকে তাদের বাড়িছাড়া করা হলো।
দুই বছর আগে বিবিসি একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে নতুন প্রজন্মের তিনজন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে, যাঁরা তাঁদের দাদা বা নানার পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যান—সেই সময় কী হয়েছিল তা জানতে ও বুঝতে। এর মধ্যে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অনিতা রানি যান তাঁর শিখ পূর্বপুরুষের দেশ পাকিস্তানে। পাকিস্তানি সামির বাট যান ভারতে, জানতে—কী হয়েছিল সে সময়। ব্রিটিশ ভারতীয় বাঙালি বিনিতা কেইন আসেন বাংলাদেশের নোয়াখালীতে। জানতে চান, তাঁর দাদাকে কেন সব ছেড়ে ভারতে যেতে হয়। অথচ তিনি সে সময় স্থানীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
লেখক∶ গবেষক
সিরিল রেডক্লিফের নাম রেডক্লিফ লাইন পড়ার সময় সবাই শুনেছি। অনেকে তাঁকে দোষ দেন; কিন্তু তাঁর কি আসলেও কোনো দোষ ছিল? খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। তিনি ভারতভাগের আগে কখনো ভারতে আসেননি। ১৯৪৭-এর ৮ জুলাই তিনি প্রথম ভারতে আসেন। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশাল এক দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে দুই ভাগ করার। এটা খুব সহজ কাজ ছিল না।
সবাই বলে ভারতভাগ। আসলে ভাগটা হয়েছিল পাঞ্জাব ও বাংলা। অনেকেই বলেন, তাঁর ভাগে ত্রুটি ছিল।
১৯৭০-এর দিকে এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জানান, তাঁকে যদি আবার একই সুযোগ ও সময় দেওয়া হতো, তাহলেও তিনি তা–ই করতেন। কারণ, তাঁর কাছে সময় ছিল মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। যে ব্যক্তি আগে কখনো ভারতে আসেননি, তাঁর পক্ষে পাঁচ সপ্তাহে প্রতি এলাকায় গিয়ে অবস্থা দেখে ভারসাম্য রেখে একটা ভাগ করার দায়িত্ব পালন অসম্ভব ছিল। তিনি এটাও বলেছেন, ‘যদি আমাকে দুই–তিন বছর সময় দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আমি ভিন্ন কিছু করতে পারতাম।’
এটাই বাস্তবতা। পাঁচ সপ্তাহ একজন বিদেশির জন্য সবাইকে খুশি করার মতো সীমানা নির্ধারণ বাস্তবে দুরূহ কাজ ছিল।
পাকিস্তানিদের অভিযোগ, রেডক্লিফ তাঁদের প্রতি অন্যায় করেছেন। সে ব্যাপারে ১৯৭০ সালে রেডক্লিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানিদের খুশি হওয়া দরকার। কারণ, আমি তাঁদের লাহোর দিয়েছি। লাহোরের জনসংখ্যা ৬০ শতাংশের ওপরে মুসলিম হলেও এর ৮০ শতাংশ ধনসম্পদের মালিক ছিল হিন্দু ও শিখরা।’ রেডক্লিফ বলেন, ‘আমি লাহোর ভারতে দিয়েই দিয়েছিলাম, তবে পরে কলকাতা ভারতে দিয়েছি—এটা চিন্তা করে বড় শহর হিসেবে লাহোর পাকিস্তানকে দিই।’ পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের দুই কমিটিতে দুজন কংগ্রেসের ও দুজন মুসলিম লীগের প্রতিনিধি নিয়ে মোট চারজন সদস্য ছিলেন। রেডক্লিফ ’৭০ সালের সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, বাংলার এক মুসলিম লীগের সদস্য নাকি তাঁকে অনুরোধ করেন দার্জিলিং পাকিস্তানে ফেলতে। কারণ, প্রতিবছর তাঁর পরিবার সেখানে ছুটি কাটাতে যায়। দার্জিলিং ভারতে গেলে সেখানে তাঁর পক্ষে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।
এবার আসি রক্তের ট্রেনে। ১৯৪৭ সালের ব্লাড ট্রেন। ইতিহাসের কুখ্যাত কিছু ট্রেনযাত্রাকে একত্রে এই নামে বলা হয়। ’৪৭-এর দেশভাগের মর্মান্তিক সব গল্পের ৮৫ শতাংশই পাঞ্জাবের। বাংলার সীমান্তে এমন গল্প ১৫ শতাংশের বেশি হবে না।
রেডক্লিফের ঘোষণার পর পাঞ্জাব সীমান্তে মানুষ যেন পশুতে পরিণত হয়। ভাগের সময় কোথাও এটা বলা হয়নি যে পাকিস্তানে হিন্দু বা ভারতে মুসলমান থাকতে পারবে না। জিন্নাহ চেয়েছিলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যেখানে যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করবে। কিন্তু দুই পাশের উগ্র জনতা তা মানতে পারেনি পাঞ্জাবে। এখানে লড়াইটা দ্বিমুখী না হয়ে ত্রিমুখী হয়েছিল। হিন্দু-মুসলিম লড়াইয়ের সঙ্গে শিখও যুক্ত হয়েছিল।
পাঞ্জাবের পাকিস্তানের দিকে উগ্রবাদীরা হিন্দু ও শিখদের বাড়িঘর লুটপাট, নারীদের ধর্ষণ, খুন, হত্যার মতো জঘন্য সব অপরাধ সংঘটিত করে। অন্যদিকে পাঞ্জাবের ভারত অংশেও উগ্রবাদীরা মুসলমানদের সঙ্গে একই রকম জঘন্য আচরণ করে। সবচেয়ে জঘন্য ছিল যাত্রীবোঝাই ট্রেন আক্রমণ।
অমৃতসর থেকে ২ হাজার ৫০০ মুসলিম যাত্রী নিয়ে একটি ট্রেন লাহোরের উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু ট্রেনটি যখন ১৮ আগস্ট লাহোরে পৌঁছায়, তখন ট্রেনে মাত্র দুজন যাত্রী জীবিত ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসার সময়ও ট্রেনে একই রকম হামলা হয়। গর্ভবতী নারীদের হত্যা করা হয়। ট্রেনের কামরায় ঢুকে গুণ্ডারা তিন ধর্মের নামে দেশত্যাগী নারী-পুরুষ-শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। এটা ছিল ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ঘটনা। পাঞ্জাব সীমান্ত ছিল বিশাল। হেঁটে বুড়ো বাবা-মা ও বাচ্চা নিয়ে অন্য দেশে পৌঁছাতে কয়েক দিন লেগে যেত। পথে খাবারেরও অভাব ছিল। এই অবস্থায় উগ্র সাম্প্রদায়িক অমানুষদের হাতে হাজারো মানুষ মারা যায়। এ যেন কোনো কারণ ছাড়াই হত্যার উৎসবে মেতে ওঠা। তুই মুসলিম, তোকে মারব; তুই হিন্দু, তোকে মারব; তুই শিখ, তোকে মারব—এমন এক অবস্থা ছিল। এই ১০ লাখ লোকের মৃত্যু ও দেড় কোটি লোকের দেশত্যাগে বাধ্য করার পেছনে দায়ী ছিল তৎকালীন সব রাজনৈতিক দলের ভুল ও অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল।
মাত্র এক-দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পাঞ্জাবের দুই অংশ মিলে। ২ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। এই ভয়াবহতা দেখে রেডক্লিফ তাঁর সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে লন্ডনে চলে যান এবং সারা জীবনেও আর ভারতে আসেননি। তাঁর পারিশ্রমিক সেই সময়ের তিন হাজার পাউন্ডও তিনি নেননি।
বাংলা সীমান্তেও এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে পাঞ্জাবের ভয়াবহতা এতটাই নির্মম ছিল যে তার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। এটা কোনো স্বাধীনতাযুদ্ধ ছিল না, ব্রিটিশরা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভাগ করেছিল। কখনো কোথাও ভুলেও দাবি করা হয়নি, ভাগ করা হলে অন্য ধর্মের মানুষকে চলে যেতে হবে। কেন যাবে কেউ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে? কিন্তু কতিপয় মানুষ নামের অমানুষের কারণে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়, অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয় ধর্মকে।
সেই বিয়োগান্ত ঘটনার ৭৩ বছর পর তিন দেশের মানুষেরই উচিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির পরিণতি কী হয়, তা সেই সময় পাঞ্জাবের মানুষ এবং কিছুটা বাংলার মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সেই সময় রাজনৈতিক নেতাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল দেশভাগের আগে মানুষের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে না ধরা। এক মাস বড় বড় নেতা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রচারণা চালালে এই লাখো হত্যা থামানো যেত অবশ্যই। কোনো প্রকার কাউনসেলিং ও যথেষ্ট নিরাপত্তা ছাড়াই এভাবে তড়িঘড়ি করে ভারত স্বাধীন করে দেওয়া ব্রিটিশদেরও ভুল ছিল। জোরজবরদস্তি করে কোটি কোটি মানুষকে তাদের বাড়িছাড়া করা হলো।
দুই বছর আগে বিবিসি একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে নতুন প্রজন্মের তিনজন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে, যাঁরা তাঁদের দাদা বা নানার পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যান—সেই সময় কী হয়েছিল তা জানতে ও বুঝতে। এর মধ্যে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অনিতা রানি যান তাঁর শিখ পূর্বপুরুষের দেশ পাকিস্তানে। পাকিস্তানি সামির বাট যান ভারতে, জানতে—কী হয়েছিল সে সময়। ব্রিটিশ ভারতীয় বাঙালি বিনিতা কেইন আসেন বাংলাদেশের নোয়াখালীতে। জানতে চান, তাঁর দাদাকে কেন সব ছেড়ে ভারতে যেতে হয়। অথচ তিনি সে সময় স্থানীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
লেখক∶ গবেষক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৩ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে