চিররঞ্জন সরকার
যখন গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের একটি মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল এবং এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানকে আসামি করা হয়েছিল, তখন আমাদের দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
ঘটনাটির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের নাম যুক্ত হওয়ার কারণে তখন অনেক মিডিয়া খবরটি চেপে যায়। অনেক মিডিয়া সায়েম সোবহানের নাম ও ছবি ছাড়া খবর প্রকাশ করে।
তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো সাংবাদিকদের ‘ট্রায়াল’ শুরু হয়। সবার প্রতিক্রিয়া দেখে তখন মনে হয়েছিল দেশে সাংবাদিকদের চেয়ে খারাপ আর কেউ নেই কিছু নেই।
মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকের ঘটনায় পরিস্থিতি বদলে যায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য রোজিনা সচিবালয়ে গেলে সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে হেনস্তা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ‘তথ্য-চুরি’র অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে, একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সবাই সোচ্চার হন। বেশির ভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের মতো অসৎ, দুর্নীতিবাজ খারাপ মানুষ দেশে আর কেউ নেই।
যখনই একটি বিশেষ পেশার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো দুর্বলতা প্রকাশ পায় তখনই আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ নিন্দা-প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাসিয়ে দেন। কখনো পুলিশ, কখনো ডাক্তার, কখনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক, কখনো বুদ্ধিজীবী, কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো ধর্ম ব্যবসায়ী, কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ওঠেন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
নিন্দা, ক্ষোভ, সমালোচনা, চরিত্রহনন সবকিছুই চলে বল্গাহীনভাবে। তারপর একসময় নতুন ইস্যু আসে। পুরোনো ঝড় থেমে যায়। শুরু হয় নতুন চর্চা। কয়েক বছর ধরেই এই ধারা চলছে।
এটা ঠিক যে, শুধু সাংবাদিক কিংবা শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয়, আমাদের দেশে কমবেশি সব পেশাজীবী শ্রেণিই অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে। সবচেয়ে বড় অধঃপতন হয়েছে আমাদের রাজনীতিতে। আর এই নষ্ট রাজনীতির হাত ধরে এদেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে পচন সৃষ্টি হয়েছে। এখন সমাজে ‘ভালো’ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। খুঁজতে হয় ‘মন্দের ভালো’!
তিল তিল করে এই অধঃপতনের খাদে সবাইকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখন এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব কঠিন।
যখন ‘পচন’ সমাজের সব জায়গায় হয়, তখন শুধু একটা-দুটো পেশার মানুষের দিকে সমালোচনা ও ঘৃণার আঙুল উঁচিয়ে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে সমাজের আগাপাছতলা পরিবর্তন করতে হবে। পুরো ব্যবস্থা বদলে ফেলতে হবে।
এর জন্য দরকার ভিন্ন ধরনের রাজনীতি, ভিন্ন ধরনের সংগঠন। ভিন্ন স্বর ও ভিন্ন চিন্তা।
যেসব সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত শ্রেণি ‘ভালো মানুষীর ভান’ ধরে সমালোচনা আর ক্ষোভে ভাসিয়ে দেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া, তাদের দিয়েও তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের কে, কতটুকু সৎ, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
আসলে এ দেশে যা দরকার, তা হলো বিপ্লব। এ জন্য দরকার বিপ্লবী দল বা সংগঠন।
আমাদের দেশে এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন কিংবা ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতে পারেন তাদের কারও মধ্যেই বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে সমস্ত কিছু পরিবর্তন করে ইতিবাচক কিছু করার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না। আর নতুন রক্ত ও চেতনার নতুন দল তারও দিশা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
তাই আমাদের সব ক্ষোভ, হতাশা আর প্রত্যাশা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত হলেও নিষ্ফল মনে হয়!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
যখন গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের একটি মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল এবং এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানকে আসামি করা হয়েছিল, তখন আমাদের দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
ঘটনাটির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের নাম যুক্ত হওয়ার কারণে তখন অনেক মিডিয়া খবরটি চেপে যায়। অনেক মিডিয়া সায়েম সোবহানের নাম ও ছবি ছাড়া খবর প্রকাশ করে।
তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো সাংবাদিকদের ‘ট্রায়াল’ শুরু হয়। সবার প্রতিক্রিয়া দেখে তখন মনে হয়েছিল দেশে সাংবাদিকদের চেয়ে খারাপ আর কেউ নেই কিছু নেই।
মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকের ঘটনায় পরিস্থিতি বদলে যায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য রোজিনা সচিবালয়ে গেলে সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে হেনস্তা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ‘তথ্য-চুরি’র অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে, একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সবাই সোচ্চার হন। বেশির ভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের মতো অসৎ, দুর্নীতিবাজ খারাপ মানুষ দেশে আর কেউ নেই।
যখনই একটি বিশেষ পেশার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো দুর্বলতা প্রকাশ পায় তখনই আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ নিন্দা-প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাসিয়ে দেন। কখনো পুলিশ, কখনো ডাক্তার, কখনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক, কখনো বুদ্ধিজীবী, কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো ধর্ম ব্যবসায়ী, কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ওঠেন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
নিন্দা, ক্ষোভ, সমালোচনা, চরিত্রহনন সবকিছুই চলে বল্গাহীনভাবে। তারপর একসময় নতুন ইস্যু আসে। পুরোনো ঝড় থেমে যায়। শুরু হয় নতুন চর্চা। কয়েক বছর ধরেই এই ধারা চলছে।
এটা ঠিক যে, শুধু সাংবাদিক কিংবা শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয়, আমাদের দেশে কমবেশি সব পেশাজীবী শ্রেণিই অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে। সবচেয়ে বড় অধঃপতন হয়েছে আমাদের রাজনীতিতে। আর এই নষ্ট রাজনীতির হাত ধরে এদেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে পচন সৃষ্টি হয়েছে। এখন সমাজে ‘ভালো’ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। খুঁজতে হয় ‘মন্দের ভালো’!
তিল তিল করে এই অধঃপতনের খাদে সবাইকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখন এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব কঠিন।
যখন ‘পচন’ সমাজের সব জায়গায় হয়, তখন শুধু একটা-দুটো পেশার মানুষের দিকে সমালোচনা ও ঘৃণার আঙুল উঁচিয়ে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে সমাজের আগাপাছতলা পরিবর্তন করতে হবে। পুরো ব্যবস্থা বদলে ফেলতে হবে।
এর জন্য দরকার ভিন্ন ধরনের রাজনীতি, ভিন্ন ধরনের সংগঠন। ভিন্ন স্বর ও ভিন্ন চিন্তা।
যেসব সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত শ্রেণি ‘ভালো মানুষীর ভান’ ধরে সমালোচনা আর ক্ষোভে ভাসিয়ে দেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া, তাদের দিয়েও তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের কে, কতটুকু সৎ, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
আসলে এ দেশে যা দরকার, তা হলো বিপ্লব। এ জন্য দরকার বিপ্লবী দল বা সংগঠন।
আমাদের দেশে এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন কিংবা ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতে পারেন তাদের কারও মধ্যেই বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে সমস্ত কিছু পরিবর্তন করে ইতিবাচক কিছু করার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না। আর নতুন রক্ত ও চেতনার নতুন দল তারও দিশা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
তাই আমাদের সব ক্ষোভ, হতাশা আর প্রত্যাশা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত হলেও নিষ্ফল মনে হয়!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
২১ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২১ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২১ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে