তোফায়েল আহমেদ
প্রতিবছর জাতীয় জীবনে ৭ জুন তথা ‘ছয় দফা দিবস’ ফিরে আসে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা দিনটি পালন করি। এবার ‘করোনাভাইরাস’ মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ’ তথা ‘মুজিববর্ষ’, ‘গণহত্যা দিবস’, ‘স্বাধীনতা দিবস’, ‘বাংলা নববর্ষ’, ‘মুজিবনগর দিবস’ এবং ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত রাষ্ট্রীয় ও দলীয় অনুষ্ঠানাদি সীমিত করা হয়েছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকার এবং দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ছয় দফা দাবি আদায়ে ৭ জুনের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৬৬-র এই দিনে শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা। পরবর্তী সময়ে’ ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সূচনালগ্নে ছয় দফা দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসমেত এগারো দফায় ধারিত হয়ে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে’ ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বিচক্ষণ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর হৃদয়ের গভীরে প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা তাঁর ছিল না। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
স্বাধিকার অর্জন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ৭ জুন সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বাঙালি জাতিকে গোলামির শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধে’ ৬৬-র ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর কনভেনশনে ‘বাঙালির মুক্তিসনদ’খ্যাত ‘ছয় দফা’ উত্থাপন করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু। সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ‘ছয় দফা’ নিয়ে আলোচনায় অস্বীকৃত হন। বঙ্গবন্ধু ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘ছয় দফা’ দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ‘ছয় দফা’র পক্ষে জনমত সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু ’৬৬-র ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ‘ছয় দফা’কে ‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের আসন্ন কাউন্সিল সামনে রেখে ‘ছয় দফা’র যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি একের পর এক জনসভা করে জনতার দরবারে বক্তব্য পেশ করেন। ’৬৬-র ১৮,১৯ ও ২০ মার্চ ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল সভায় পুস্তিকাটি বিলি করা হয়। দলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন আরম্ভ হয়। কাউন্সিল সভায় আগত ১৪৪৩ জন কাউন্সিলর বঙ্গবন্ধুকে দলের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে। ‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ দলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে ‘ছয় দফা’ এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বাংলার ঘরে ঘরে এই পুস্তিকা সযত্নে রক্ষিত হয়। ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ কাউন্সিলের শেষদিন প্রতিকূল আবহাওয়ায় পল্টনের জনসভায় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকারের এই বাণী লয়ে আপনারা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দেন—দেশের জন্য, দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য সবকিছু জেনে-শুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক পথে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’ সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ছয় দফার প্রশ্নে কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়, এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ছয় দফা আদায় করতে হবে। কোনো হুমকিই ছয় দফা আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ছয় দফা হচ্ছে বাঙালির মুক্তিসনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরুর গান, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা চলতে হয় চলব। ভবিষ্যৎ ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।’ আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলটি ছিল বাঙালির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন। যা ’৬৯-এর মহান গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল।
সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় বক্তৃতা করেন। লাগাতার জনসভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় ‘ছয় দফা’র সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নেমে আসে নির্মম গ্রেপ্তার-নির্যাতন। প্রত্যেক জেলা থেকে জারিকৃত ওয়ারেন্ট বলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ‘ছয় দফা’ প্রচারকালে মাত্র আড়াই মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ ‘মে দিবস’ স্মরণে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক-জনতার মহাসমাবেশে ভাষণদান শেষে ৮ মে রাত ১টায় বাসায় ফিরলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘ছয় দফা’ দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং দেশরক্ষা আইনে আওয়ামী লীগের ওপর গ্রেপ্তার-নির্যাতন চালান। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের জনসভায় ‘ছয় দফা’র প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। দলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেপ্তার করা হলে সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেতারা গ্রেপ্তার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘সাতই জুন’ সর্বব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে পূর্ব বাংলার বিক্ষুব্ধ মানুষ স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়।
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আব্দুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে—আমরা সেদিন হরতাল কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সেদিনের হরতাল কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশবাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে তেজগাঁয় শ্রমিক মনু মিয়া, আদমজীতে মুজিবুল্লাহসহ ১১ জন শহীদ হন এবং প্রায় ৮০০ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সফল হরতাল পালন করেন। ১৯৫২-র মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে’ ৬২-র ‘শিক্ষা আন্দোলন’; ‘৬৬-র ‘ছয় দফা আন্দোলন’; ’ ৬৯-এর ‘গণ-আন্দোলন/গণ-অভ্যুত্থান’; আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৫,১৬, ১৭,১৮, ১৯,২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রদান; এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি সব রাজবন্দীর মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ‘মুক্তমানব শেখ মুজিব’কে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান এবং স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করে নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, জয় করে নেয় বাংলার মানুষের হৃদয়, সৃষ্টি করে ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ৭ জুনের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের পথে অনন্য নজির স্থাপন করে। তাই তো বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস।’ আর বাংলার মেহনতি মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমায় শাসকগোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয়, বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ‘ছয় দফা’ই হচ্ছে বাঙালির জাতীয় মুক্তির একমাত্র পথ। প্রকৃতপক্ষে ৭ জুন ছিল স্বাধিকার থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার সূচনাবিন্দু। আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এই দিনটিতে।
ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে কারান্তরালে বসে ৫ জুন ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছুসংখ্যক শ্রমিক নেতা—যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে, তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই। ৭ই জুন হরতালের জন্য এরা পথসভা ও মিছিল বের করেই চলেছে। পোস্টার ছিঁড়ে দিলেও নতুন পোস্টার লাগাইতেছে, প্যামফ্লেট বাহির করছে। সত্যই এতটা আশা আমি করতে পারি নাই।’ পৃষ্ঠা: ৬৫-৬৬। বাংলার মানুষের প্রতি অপরিসীম আস্থা ব্যক্ত করে ৬ জুন লিখেছেন, ‘পূর্ব বাংলার জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দীদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয় দফা সমর্থন করবে।’ ‘ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে যেতে নাও পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। কারাগারের পাষাণ প্রাচীর আমাকেও পাষাণ করে তুলেছে। এ দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মা-বোনের দোয়া আছে আমাদের উপর। জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমেই আদর্শের জয় হয়।’ পৃষ্ঠা: ৬৭-৬৮। ৭ জুন সফল হরতালের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘১২টার পরে খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন। তাঁরা ৬ দফা সমর্থন করে আর মুক্তি চায়। বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তিস্বাধীনতা চায়, শ্রমিকের ন্যায্য দাবি, কৃষকের ন্যায্য দাবি, কৃষকদের বাঁচার দাবি তাঁরা চায়, এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়েই গেল।’ পৃষ্ঠা: ৬৯। পরদিন ৮ জুন, ঐতিহাসিক আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘তবে এদের ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই দেশের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করবার জন্য যখন জীবন দিতে শিখেছে তখন জয় হবেই, কেবলমাত্র সময় সাপেক্ষ। শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কৃষকেরা কাজ বন্ধ করেছে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্ররা স্কুল-কলেজ ছেড়েছে। এত বড় প্রতিবাদ আর কোনোদিন কি পাকিস্তানে হয়েছে? ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি—পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষক-শ্রেণি যে আর পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরিব জনসাধারণকে শোষণ বেশি দিন করতে পারবে না, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ই জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামেগঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষু রাঙানি তাদের দমাতে পারবে না। পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য শাসকগোষ্ঠীর ছয় দফা মেনে নেওয়া উচিত। যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কালো রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যেভাবে এ দেশের ছাত্র-জনসাধারণ জীবন দিয়েছিল তারই বিনিময়ে বাংলা আজ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা। রক্ত বৃথা যায় না। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিল, আহত হলো, গ্রেপ্তার হলো, নির্যাতন সহ্য করল তাদের প্রতি এবং তাদের সন্তানসন্ততিদের প্রতি নীরব প্রাণের সহানুভূতি ছাড়া জেলবন্দী আমি আর কি দিতে পারি! আল্লাহর কাছে এই কারাগারে বসে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হাত তুলে মোনাজাত করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেবো না, সংগ্রাম চালিয়ে যাব। যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ ত্যাগের দাম দেয়। ত্যাগের মাধ্যমেই জনগণের দাবি আদায় করতে হবে।’ পৃষ্ঠা: ৭৩-৭৪।
‘ছয় দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তারপরও যখন ‘ছয় দফা’ আন্দোলন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলা দেন। সেদিন ‘ছয় দফা’ দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে আমরা ছাত্ররা ’৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪টি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয় দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলে ছয় দফা ধারিত এগারো দফা আন্দোলনের সপক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিল। দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিল। শাসকশ্রেণি গণ-আন্দোলন নস্যাৎ করতে আমাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করেছিল। তাদের অপপ্রয়াসের জবাব দিতে ’৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শপথ দিবসের জনসমুদ্রে স্লোগান তুলেছিলাম: ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করব।’ ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করে স্লোগানের প্রথম অংশ এবং জাতির পিতার নির্দেশে’ ৭১-এর ২৬ মার্চ হাতিয়ার তুলে নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়ন করেছি। আমরা মুক্তিসংগ্রামের ন্যায্যতা প্রমাণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছি ৭ জুনের কর্মসূচি পালনকালে শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মদান থেকে।
৭ জুনের সফল হরতালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ভীতসন্ত্রস্ত হন। ছয় দফা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেন। ‘ছয় দফা’র পক্ষে জনমত তৈরিতে দৈনিক ইত্তেফাকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে’ ৬৬-র ১৬ জুন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার এবং দা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করেন। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের ফলে দৈনিক ইত্তেফাক এবং বাজেয়াপ্তকৃত নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস ফেরত প্রদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়। ৭ জুন অনেক স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি গভীরভাবে অনুভূত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে আমার জীবন ধন্য। ৭ জুনের চেতনাবহ এই দিনটি জাতীয় জীবনে অম্লান হয়ে আছে। ৭ জুন যেসব শহীদ ভাই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তির পথকে প্রশস্ত করে গিয়েছেন, আজ তাঁদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। তাঁদের অমর প্রাণের বিনিময়ে সংগ্রাম পরম্পরায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে মুজিবাদর্শের ভিত্তিতে, আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। সাতই জুন, আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার দিন, ঐতিহাসিক এই দিনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্তব্য বলে মনে করি।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
প্রতিবছর জাতীয় জীবনে ৭ জুন তথা ‘ছয় দফা দিবস’ ফিরে আসে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা দিনটি পালন করি। এবার ‘করোনাভাইরাস’ মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ’ তথা ‘মুজিববর্ষ’, ‘গণহত্যা দিবস’, ‘স্বাধীনতা দিবস’, ‘বাংলা নববর্ষ’, ‘মুজিবনগর দিবস’ এবং ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত রাষ্ট্রীয় ও দলীয় অনুষ্ঠানাদি সীমিত করা হয়েছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকার এবং দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ছয় দফা দাবি আদায়ে ৭ জুনের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৬৬-র এই দিনে শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা। পরবর্তী সময়ে’ ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সূচনালগ্নে ছয় দফা দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসমেত এগারো দফায় ধারিত হয়ে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে’ ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বিচক্ষণ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর হৃদয়ের গভীরে প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা তাঁর ছিল না। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
স্বাধিকার অর্জন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ৭ জুন সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বাঙালি জাতিকে গোলামির শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধে’ ৬৬-র ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর কনভেনশনে ‘বাঙালির মুক্তিসনদ’খ্যাত ‘ছয় দফা’ উত্থাপন করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু। সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ‘ছয় দফা’ নিয়ে আলোচনায় অস্বীকৃত হন। বঙ্গবন্ধু ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘ছয় দফা’ দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ‘ছয় দফা’র পক্ষে জনমত সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু ’৬৬-র ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ‘ছয় দফা’কে ‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের আসন্ন কাউন্সিল সামনে রেখে ‘ছয় দফা’র যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি একের পর এক জনসভা করে জনতার দরবারে বক্তব্য পেশ করেন। ’৬৬-র ১৮,১৯ ও ২০ মার্চ ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল সভায় পুস্তিকাটি বিলি করা হয়। দলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন আরম্ভ হয়। কাউন্সিল সভায় আগত ১৪৪৩ জন কাউন্সিলর বঙ্গবন্ধুকে দলের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে। ‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ দলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে ‘ছয় দফা’ এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বাংলার ঘরে ঘরে এই পুস্তিকা সযত্নে রক্ষিত হয়। ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ কাউন্সিলের শেষদিন প্রতিকূল আবহাওয়ায় পল্টনের জনসভায় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকারের এই বাণী লয়ে আপনারা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দেন—দেশের জন্য, দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য সবকিছু জেনে-শুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক পথে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’ সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ছয় দফার প্রশ্নে কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়, এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ছয় দফা আদায় করতে হবে। কোনো হুমকিই ছয় দফা আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ছয় দফা হচ্ছে বাঙালির মুক্তিসনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরুর গান, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা চলতে হয় চলব। ভবিষ্যৎ ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।’ আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলটি ছিল বাঙালির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন। যা ’৬৯-এর মহান গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল।
সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় বক্তৃতা করেন। লাগাতার জনসভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় ‘ছয় দফা’র সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নেমে আসে নির্মম গ্রেপ্তার-নির্যাতন। প্রত্যেক জেলা থেকে জারিকৃত ওয়ারেন্ট বলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ‘ছয় দফা’ প্রচারকালে মাত্র আড়াই মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ ‘মে দিবস’ স্মরণে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক-জনতার মহাসমাবেশে ভাষণদান শেষে ৮ মে রাত ১টায় বাসায় ফিরলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘ছয় দফা’ দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং দেশরক্ষা আইনে আওয়ামী লীগের ওপর গ্রেপ্তার-নির্যাতন চালান। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের জনসভায় ‘ছয় দফা’র প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। দলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেপ্তার করা হলে সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেতারা গ্রেপ্তার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘সাতই জুন’ সর্বব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে পূর্ব বাংলার বিক্ষুব্ধ মানুষ স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়।
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আব্দুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে—আমরা সেদিন হরতাল কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সেদিনের হরতাল কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশবাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে তেজগাঁয় শ্রমিক মনু মিয়া, আদমজীতে মুজিবুল্লাহসহ ১১ জন শহীদ হন এবং প্রায় ৮০০ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সফল হরতাল পালন করেন। ১৯৫২-র মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে’ ৬২-র ‘শিক্ষা আন্দোলন’; ‘৬৬-র ‘ছয় দফা আন্দোলন’; ’ ৬৯-এর ‘গণ-আন্দোলন/গণ-অভ্যুত্থান’; আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৫,১৬, ১৭,১৮, ১৯,২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রদান; এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি সব রাজবন্দীর মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ‘মুক্তমানব শেখ মুজিব’কে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান এবং স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করে নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, জয় করে নেয় বাংলার মানুষের হৃদয়, সৃষ্টি করে ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ৭ জুনের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের পথে অনন্য নজির স্থাপন করে। তাই তো বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস।’ আর বাংলার মেহনতি মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমায় শাসকগোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয়, বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ‘ছয় দফা’ই হচ্ছে বাঙালির জাতীয় মুক্তির একমাত্র পথ। প্রকৃতপক্ষে ৭ জুন ছিল স্বাধিকার থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার সূচনাবিন্দু। আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এই দিনটিতে।
ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে কারান্তরালে বসে ৫ জুন ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছুসংখ্যক শ্রমিক নেতা—যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে, তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই। ৭ই জুন হরতালের জন্য এরা পথসভা ও মিছিল বের করেই চলেছে। পোস্টার ছিঁড়ে দিলেও নতুন পোস্টার লাগাইতেছে, প্যামফ্লেট বাহির করছে। সত্যই এতটা আশা আমি করতে পারি নাই।’ পৃষ্ঠা: ৬৫-৬৬। বাংলার মানুষের প্রতি অপরিসীম আস্থা ব্যক্ত করে ৬ জুন লিখেছেন, ‘পূর্ব বাংলার জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দীদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয় দফা সমর্থন করবে।’ ‘ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে যেতে নাও পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। কারাগারের পাষাণ প্রাচীর আমাকেও পাষাণ করে তুলেছে। এ দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মা-বোনের দোয়া আছে আমাদের উপর। জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমেই আদর্শের জয় হয়।’ পৃষ্ঠা: ৬৭-৬৮। ৭ জুন সফল হরতালের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘১২টার পরে খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন। তাঁরা ৬ দফা সমর্থন করে আর মুক্তি চায়। বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তিস্বাধীনতা চায়, শ্রমিকের ন্যায্য দাবি, কৃষকের ন্যায্য দাবি, কৃষকদের বাঁচার দাবি তাঁরা চায়, এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়েই গেল।’ পৃষ্ঠা: ৬৯। পরদিন ৮ জুন, ঐতিহাসিক আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘তবে এদের ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই দেশের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করবার জন্য যখন জীবন দিতে শিখেছে তখন জয় হবেই, কেবলমাত্র সময় সাপেক্ষ। শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কৃষকেরা কাজ বন্ধ করেছে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্ররা স্কুল-কলেজ ছেড়েছে। এত বড় প্রতিবাদ আর কোনোদিন কি পাকিস্তানে হয়েছে? ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি—পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষক-শ্রেণি যে আর পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরিব জনসাধারণকে শোষণ বেশি দিন করতে পারবে না, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ই জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামেগঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষু রাঙানি তাদের দমাতে পারবে না। পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য শাসকগোষ্ঠীর ছয় দফা মেনে নেওয়া উচিত। যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কালো রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যেভাবে এ দেশের ছাত্র-জনসাধারণ জীবন দিয়েছিল তারই বিনিময়ে বাংলা আজ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা। রক্ত বৃথা যায় না। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিল, আহত হলো, গ্রেপ্তার হলো, নির্যাতন সহ্য করল তাদের প্রতি এবং তাদের সন্তানসন্ততিদের প্রতি নীরব প্রাণের সহানুভূতি ছাড়া জেলবন্দী আমি আর কি দিতে পারি! আল্লাহর কাছে এই কারাগারে বসে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হাত তুলে মোনাজাত করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেবো না, সংগ্রাম চালিয়ে যাব। যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ ত্যাগের দাম দেয়। ত্যাগের মাধ্যমেই জনগণের দাবি আদায় করতে হবে।’ পৃষ্ঠা: ৭৩-৭৪।
‘ছয় দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তারপরও যখন ‘ছয় দফা’ আন্দোলন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলা দেন। সেদিন ‘ছয় দফা’ দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে আমরা ছাত্ররা ’৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪টি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয় দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলে ছয় দফা ধারিত এগারো দফা আন্দোলনের সপক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিল। দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিল। শাসকশ্রেণি গণ-আন্দোলন নস্যাৎ করতে আমাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করেছিল। তাদের অপপ্রয়াসের জবাব দিতে ’৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শপথ দিবসের জনসমুদ্রে স্লোগান তুলেছিলাম: ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করব।’ ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করে স্লোগানের প্রথম অংশ এবং জাতির পিতার নির্দেশে’ ৭১-এর ২৬ মার্চ হাতিয়ার তুলে নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়ন করেছি। আমরা মুক্তিসংগ্রামের ন্যায্যতা প্রমাণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছি ৭ জুনের কর্মসূচি পালনকালে শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মদান থেকে।
৭ জুনের সফল হরতালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ভীতসন্ত্রস্ত হন। ছয় দফা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেন। ‘ছয় দফা’র পক্ষে জনমত তৈরিতে দৈনিক ইত্তেফাকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে’ ৬৬-র ১৬ জুন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার এবং দা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করেন। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের ফলে দৈনিক ইত্তেফাক এবং বাজেয়াপ্তকৃত নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস ফেরত প্রদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়। ৭ জুন অনেক স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি গভীরভাবে অনুভূত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে আমার জীবন ধন্য। ৭ জুনের চেতনাবহ এই দিনটি জাতীয় জীবনে অম্লান হয়ে আছে। ৭ জুন যেসব শহীদ ভাই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তির পথকে প্রশস্ত করে গিয়েছেন, আজ তাঁদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। তাঁদের অমর প্রাণের বিনিময়ে সংগ্রাম পরম্পরায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে মুজিবাদর্শের ভিত্তিতে, আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। সাতই জুন, আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার দিন, ঐতিহাসিক এই দিনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্তব্য বলে মনে করি।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে