লাভা মাহমুদা
স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সংগ্রাম। সেই অর্থে আমাদের আত্মারও মুক্তির সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারী-পুরুষের সামষ্টিক অংশগ্রহণ ছিল। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তার মানবসম্পদের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর পুরুষ ও নারী মিলেই একটি দেশের মানবসম্পদ। নারীকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা চিন্তা করলে তা হবে খণ্ডিত। তাই নারীর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করলে সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়বে দেশ।
অথচ স্বামীর অনুমতি না নিয়ে বাইরে যাওয়া, বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল না হওয়া, স্বামীর সঙ্গে তর্ক করা, যৌন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানানো, খাবার পুড়িয়ে ফেলার মতো অতি তুচ্ছ যেকোনো অন্তত একটি কারণে পুরুষের কাছে মার খান নারী এবং এই মার খাওয়াকেও যৌক্তিক মনে করেন দেশের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে এবং যাঁরা বিবাহিত। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বছর দুয়েক আগের হিসাব এটি। নারীরা পুরুষের হাতে মার খাচ্ছেন এবং কিছুসংখ্যক নারী তাতে সমর্থন দিচ্ছেন।
এই সমর্থন দেওয়া নারী আসলে কারা? নিশ্চিতভাবে এঁরা পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ। এঁদের সমর্থনের কারণে পুরুষেরা অনায়াসেই সেই অপকর্মটি করে পার পেয়ে যান।
এমন মানসিকতা যে দেশের নারীদের, সে দেশে পুরুষ ওত পেতে থাকবেই। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি নারীর আর মানুষ হওয়া হয় না। ভ্রূণ যখন লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়, তখনই নারীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় নিশ্চিতভাবেই। এখনো ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তানটি ছেলে হলে পরিবারে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। কন্যা হলে এমনটি দেখা যায় না। তখন পরিবারের অনেকেই ব্যর্থ ফিকে হাসি দিয়ে বলে, ‘সমস্যা নেই, পরেরবার নিশ্চয়ই ছেলে হবে।’ এই যে সংরক্ষিত অধিকার নিয়ে কন্যাসন্তানটি পৃথিবীর মুখ দেখল, মৃত্যু অবধি তার আর পরিবর্তন ঘটল না। দুঃখের বিষয়, নারী বুঝতেই পারল না যে, সে তীব্র বৈষম্যের শিকার।
জীবনের বাঁকে বাঁকে বহুমাত্রিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত নারীদের সাধ আর সাধ্য অধরাই থেকে যায়।
পিতার সম্পত্তিতে সে ভাইয়ের সমান হলো না, স্বামীর সংসারেও সে অপাঙ্ক্তেয়ই থেকে গেল। ‘নারীর পূর্ণতা মাতৃত্বে’—এজাতীয় বাক্যে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টামাত্র। সেই পূর্ণতাও আবার পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার মধ্যে নিহিত।
সাফল্যের চূড়ায় বসে থাকা অল্প কয়েকজন নারী গোটা সমাজের প্রতিভূ নন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের সূচকই নারীর বাস্তবতা। আর গোটাকয় নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পেছনের কাহিনিটাও কম কষ্টের নয়। নারীদের শিক্ষিত ও সচেতন হওয়ার আনুপাতিক হার বাড়ার কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে নারীকে শৃঙ্খলিত করার ধরন এবং প্রকৃতিও।
নারীমাত্রই জানেন, প্রতিনিয়ত কতটা অবহেলা, অসম্মান আর আত্মগ্লানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কত নারী বুকসমান হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, অবহেলা, আক্ষেপ নিয়ে নির্ঘুম রাত পার করেন, সেই হিসাবটা শুধু নারীরাই জানেন। যে দেশে, সমাজে, পরিবারে আজও মেয়েদের মানুষ ভাবতেই শেখেনি, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্যায়ন করতে জানে না, সেখানে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাববার সময় কই! এত মানুষের ভিড়ে একাকিত্ব আর তীব্র দহনে নারীদের দীর্ঘশ্বাস শুধু চার দেয়ালের মধ্যেই ঘুরপাক খায়।
যৌতুকের মতো মধ্যযুগীয় নোংরা প্রথা এখনো সমাজে ভয়ংকরভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ঘুষখোর ছেলের হাতে অনেক অর্থ বা পণের বিনিময়ে মেয়েকে তুলে দেন তাঁর অভিভাবকেরা। যৌতুক এবং ঘুষ—রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধ হলেও সমাজ এই দুটোকেই অলিখিত স্বীকৃতি দিয়ে আদর করে জড়িয়ে রেখেছে। আমরা যে পঙ্কিল সমাজে বাস করি, তাতে যূথবদ্ধভাবে নারীকে অবদমন করা হয় ব্যক্তিগত, দলগত, গোষ্ঠীগত, সমাজগতভাবে। তাই নারীদের অন্ধকার থেকে আলোয় বেরিয়ে আসাও সহজ হয় না।
বিংশ শতকের এই সময়েও নারীর অধিকার আর মর্যাদা অন্য কোথাও শিকলে বাঁধা। সেই বাঁধনের দৃঢ়তা বা শিথিলতার ওপর নির্ভর করে তার মান, মর্যাদা, আকাঙ্ক্ষা, সম্ভ্রমসহ প্রায় সবকিছুই। কন্যা, জায়া, জননীর প্রতিচ্ছায়া দিয়ে যতই মহিমান্বিত করা হোক না কেন, পশ্চাৎপদ প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এ সমাজে নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তাকে পদে পদে শৃঙ্খল পরানো হয়, পেরোতে হয় নানামুখী অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা। পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ তাকে অর্থনৈতিকভাবে অকর্মণ্যতার দিকে ঠেলে দেয় প্রতিনিয়ত। সামষ্টিক বিচারে গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে নারীর স্পষ্ট অবদান থাকলেও স্বীকৃতি নেই। অথচ সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই রোবটিকস যুগ পর্যন্ত সমাজের বিবর্তন, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় নারীর সর্বজনীন উপস্থিতিই প্রমাণ করে তাঁর বৈচিত্র্যময় বহুমুখিতা (Versatility)।
জীবনযুদ্ধে পাড়ি দিতে গিয়ে নারী পদে পদে হোঁচট খান, আবার উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে তা ওই চেষ্টামাত্রই। যে সমাজ তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠতে থাকা বানরের মতো নারীকে পেছন থেকে টানতে থাকে, সেখানে নারীর জীবন অপাঙ্ক্তেয়ই। অথচ প্রতিটা মানুষের জীবন তার নিজের। সেখানে চিন্তায়, চেতনায়, ভাবনায়, দর্শনে সে নিজেই দার্শনিক।
তাই নারীর আত্মমর্যাদা ও সম্মান বাড়াতে তাঁদের নিজেদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। নিজেকে শিক্ষায়, স্বাতন্ত্র্যে নিজের মতো করে পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। বাড়াতে হবে দক্ষতা, নিশ্চিত করতে হবে অর্থনৈতিক অবস্থান। সেটা সম্ভব হলেই শুধু নারী আর নারী থাকবেন না, মানুষ হবেন। উপভোগ করতে পারবেন নিজের জীবন, স্বাধীনতা।
তবে সবকিছুর আগে সংস্কৃতিগতভাবে নারীকে সমৃদ্ধ হতে হবে। কারণ, সংস্কৃতি যেকোনো মানুষকে পরিশীলিত করে, ঋদ্ধ করে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। আমাদের সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের ভয়ংকর প্রভেদের মূল কারণ সমাজে বিদ্যমান অপসংস্কৃতি, অশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় অনুভূতি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পুরুষকে দিয়েছে সর্বময় ক্ষমতা, অন্যদিকে নারীকে করে রেখেছে গৃহমুখী। কিন্তু, বিশ্বের উন্নয়নে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সংস্কৃতির পরিবর্তন খুবই জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক ভূমিকা ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তির মাধ্যমে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সচেতনতা, সুযোগ, নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং সর্বোপরি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তবেই নারী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
তীব্র ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে একদিন নারী তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। তখনই সভ্যতার আলো জ্বলবে। নতুন সূর্য উঠবে।
তার আগে বুঝতে হবে...পুরুষশাসিত সমাজ কিছু সস্তা অজুহাতে শৃঙ্খল পরিয়েছে নারীকে, নিজের স্বার্থে। সে অধিকার বঞ্চিত, উপেক্ষিত, অবহেলিত।
সংস্কারের পলেস্তারা খসাতে হবে নারীকেই। শিরদাঁড়া সোজা করে তাকাতে হবে সামনের পানে। হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন যুদ্ধ তো করতেই হয়। এবার যুদ্ধটা হোক নিজের সঙ্গে, জীবন জয়ের যুদ্ধ।
লেখক: প্রাবন্ধিক
স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সংগ্রাম। সেই অর্থে আমাদের আত্মারও মুক্তির সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারী-পুরুষের সামষ্টিক অংশগ্রহণ ছিল। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তার মানবসম্পদের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর পুরুষ ও নারী মিলেই একটি দেশের মানবসম্পদ। নারীকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা চিন্তা করলে তা হবে খণ্ডিত। তাই নারীর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করলে সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়বে দেশ।
অথচ স্বামীর অনুমতি না নিয়ে বাইরে যাওয়া, বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল না হওয়া, স্বামীর সঙ্গে তর্ক করা, যৌন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানানো, খাবার পুড়িয়ে ফেলার মতো অতি তুচ্ছ যেকোনো অন্তত একটি কারণে পুরুষের কাছে মার খান নারী এবং এই মার খাওয়াকেও যৌক্তিক মনে করেন দেশের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে এবং যাঁরা বিবাহিত। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বছর দুয়েক আগের হিসাব এটি। নারীরা পুরুষের হাতে মার খাচ্ছেন এবং কিছুসংখ্যক নারী তাতে সমর্থন দিচ্ছেন।
এই সমর্থন দেওয়া নারী আসলে কারা? নিশ্চিতভাবে এঁরা পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ। এঁদের সমর্থনের কারণে পুরুষেরা অনায়াসেই সেই অপকর্মটি করে পার পেয়ে যান।
এমন মানসিকতা যে দেশের নারীদের, সে দেশে পুরুষ ওত পেতে থাকবেই। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি নারীর আর মানুষ হওয়া হয় না। ভ্রূণ যখন লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়, তখনই নারীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় নিশ্চিতভাবেই। এখনো ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তানটি ছেলে হলে পরিবারে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। কন্যা হলে এমনটি দেখা যায় না। তখন পরিবারের অনেকেই ব্যর্থ ফিকে হাসি দিয়ে বলে, ‘সমস্যা নেই, পরেরবার নিশ্চয়ই ছেলে হবে।’ এই যে সংরক্ষিত অধিকার নিয়ে কন্যাসন্তানটি পৃথিবীর মুখ দেখল, মৃত্যু অবধি তার আর পরিবর্তন ঘটল না। দুঃখের বিষয়, নারী বুঝতেই পারল না যে, সে তীব্র বৈষম্যের শিকার।
জীবনের বাঁকে বাঁকে বহুমাত্রিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত নারীদের সাধ আর সাধ্য অধরাই থেকে যায়।
পিতার সম্পত্তিতে সে ভাইয়ের সমান হলো না, স্বামীর সংসারেও সে অপাঙ্ক্তেয়ই থেকে গেল। ‘নারীর পূর্ণতা মাতৃত্বে’—এজাতীয় বাক্যে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টামাত্র। সেই পূর্ণতাও আবার পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার মধ্যে নিহিত।
সাফল্যের চূড়ায় বসে থাকা অল্প কয়েকজন নারী গোটা সমাজের প্রতিভূ নন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের সূচকই নারীর বাস্তবতা। আর গোটাকয় নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পেছনের কাহিনিটাও কম কষ্টের নয়। নারীদের শিক্ষিত ও সচেতন হওয়ার আনুপাতিক হার বাড়ার কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে নারীকে শৃঙ্খলিত করার ধরন এবং প্রকৃতিও।
নারীমাত্রই জানেন, প্রতিনিয়ত কতটা অবহেলা, অসম্মান আর আত্মগ্লানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কত নারী বুকসমান হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, অবহেলা, আক্ষেপ নিয়ে নির্ঘুম রাত পার করেন, সেই হিসাবটা শুধু নারীরাই জানেন। যে দেশে, সমাজে, পরিবারে আজও মেয়েদের মানুষ ভাবতেই শেখেনি, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্যায়ন করতে জানে না, সেখানে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাববার সময় কই! এত মানুষের ভিড়ে একাকিত্ব আর তীব্র দহনে নারীদের দীর্ঘশ্বাস শুধু চার দেয়ালের মধ্যেই ঘুরপাক খায়।
যৌতুকের মতো মধ্যযুগীয় নোংরা প্রথা এখনো সমাজে ভয়ংকরভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ঘুষখোর ছেলের হাতে অনেক অর্থ বা পণের বিনিময়ে মেয়েকে তুলে দেন তাঁর অভিভাবকেরা। যৌতুক এবং ঘুষ—রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধ হলেও সমাজ এই দুটোকেই অলিখিত স্বীকৃতি দিয়ে আদর করে জড়িয়ে রেখেছে। আমরা যে পঙ্কিল সমাজে বাস করি, তাতে যূথবদ্ধভাবে নারীকে অবদমন করা হয় ব্যক্তিগত, দলগত, গোষ্ঠীগত, সমাজগতভাবে। তাই নারীদের অন্ধকার থেকে আলোয় বেরিয়ে আসাও সহজ হয় না।
বিংশ শতকের এই সময়েও নারীর অধিকার আর মর্যাদা অন্য কোথাও শিকলে বাঁধা। সেই বাঁধনের দৃঢ়তা বা শিথিলতার ওপর নির্ভর করে তার মান, মর্যাদা, আকাঙ্ক্ষা, সম্ভ্রমসহ প্রায় সবকিছুই। কন্যা, জায়া, জননীর প্রতিচ্ছায়া দিয়ে যতই মহিমান্বিত করা হোক না কেন, পশ্চাৎপদ প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এ সমাজে নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তাকে পদে পদে শৃঙ্খল পরানো হয়, পেরোতে হয় নানামুখী অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা। পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ তাকে অর্থনৈতিকভাবে অকর্মণ্যতার দিকে ঠেলে দেয় প্রতিনিয়ত। সামষ্টিক বিচারে গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে নারীর স্পষ্ট অবদান থাকলেও স্বীকৃতি নেই। অথচ সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই রোবটিকস যুগ পর্যন্ত সমাজের বিবর্তন, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় নারীর সর্বজনীন উপস্থিতিই প্রমাণ করে তাঁর বৈচিত্র্যময় বহুমুখিতা (Versatility)।
জীবনযুদ্ধে পাড়ি দিতে গিয়ে নারী পদে পদে হোঁচট খান, আবার উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে তা ওই চেষ্টামাত্রই। যে সমাজ তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠতে থাকা বানরের মতো নারীকে পেছন থেকে টানতে থাকে, সেখানে নারীর জীবন অপাঙ্ক্তেয়ই। অথচ প্রতিটা মানুষের জীবন তার নিজের। সেখানে চিন্তায়, চেতনায়, ভাবনায়, দর্শনে সে নিজেই দার্শনিক।
তাই নারীর আত্মমর্যাদা ও সম্মান বাড়াতে তাঁদের নিজেদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। নিজেকে শিক্ষায়, স্বাতন্ত্র্যে নিজের মতো করে পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। বাড়াতে হবে দক্ষতা, নিশ্চিত করতে হবে অর্থনৈতিক অবস্থান। সেটা সম্ভব হলেই শুধু নারী আর নারী থাকবেন না, মানুষ হবেন। উপভোগ করতে পারবেন নিজের জীবন, স্বাধীনতা।
তবে সবকিছুর আগে সংস্কৃতিগতভাবে নারীকে সমৃদ্ধ হতে হবে। কারণ, সংস্কৃতি যেকোনো মানুষকে পরিশীলিত করে, ঋদ্ধ করে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। আমাদের সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের ভয়ংকর প্রভেদের মূল কারণ সমাজে বিদ্যমান অপসংস্কৃতি, অশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় অনুভূতি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পুরুষকে দিয়েছে সর্বময় ক্ষমতা, অন্যদিকে নারীকে করে রেখেছে গৃহমুখী। কিন্তু, বিশ্বের উন্নয়নে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সংস্কৃতির পরিবর্তন খুবই জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক ভূমিকা ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তির মাধ্যমে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সচেতনতা, সুযোগ, নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং সর্বোপরি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তবেই নারী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
তীব্র ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে একদিন নারী তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। তখনই সভ্যতার আলো জ্বলবে। নতুন সূর্য উঠবে।
তার আগে বুঝতে হবে...পুরুষশাসিত সমাজ কিছু সস্তা অজুহাতে শৃঙ্খল পরিয়েছে নারীকে, নিজের স্বার্থে। সে অধিকার বঞ্চিত, উপেক্ষিত, অবহেলিত।
সংস্কারের পলেস্তারা খসাতে হবে নারীকেই। শিরদাঁড়া সোজা করে তাকাতে হবে সামনের পানে। হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন যুদ্ধ তো করতেই হয়। এবার যুদ্ধটা হোক নিজের সঙ্গে, জীবন জয়ের যুদ্ধ।
লেখক: প্রাবন্ধিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে