মনিরুল ইসলাম
‘It was the best of times, it was the worst of times, it was the age of wisdom, it was the age of foolishness, it was the epoch of belief, it was the epoch of incredulity, it was the season of light, it was the season of darkness, it was the spring of hope, it was the winter of despair, we had everything before us, we had nothing before us...’
প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক চার্লস ডিকেন্সের A Tale of Two Cities উপন্যাসের শুরুর এই লাইনগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবোত্তর ‘Reign of Terror’–এর সময়ে ফ্রান্সের প্রকৃত অবস্থাকে চিত্রায়ণ করতে এই কথাগুলো ব্যবহার করেছেন।
১ জুলাই, ২০১৬। সন্ত্রাসীদের হোলি আর্টিজান বেকারি ১২ ঘণ্টা অবরোধকালে ঢাকার চিত্র বোঝাতে এই কথাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক গণ্য করা যায়। কেননা, এই অকল্পনীয় হামলা সমগ্র বাংলাদেশকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা, সীমাহীন আতঙ্ক ও চরম হতাশায় ডুবিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বেকারিতে কী ঘটছে, কারা, কী উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে, কখন এবং কীভাবে এই অবস্থার অবসান হবে– এসবই ছিল অনিশ্চিত। নিরাপত্তার প্রথম ও প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক, এসবিপ্রধান ও পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা আইজিপি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, সাজসরঞ্জামসহ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল ঘটনাস্থল। তারপরও পুরো দেশ ও দেশবাসীর মধ্যে ছিল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কা।
দিনটি ছিল শুক্রবার। রমজান মাসের শেষের দিকে এবং ঈদ প্রায় আসন্ন এমন একটি সন্ধ্যা। গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় খোলামেলা সবুজে ঘেরা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি তখন নৈশভোজে বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে। ওয়েটাররা অতিথিদের পছন্দের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হঠাৎ বোমা, গুলির শব্দ। অতিথিরা বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে নিথর হয়ে যেতে থাকে এক একটি শরীর। এমনই এক সন্ধ্যা ছিল ১ জুলাই, ২০১৬।
রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়া মানবরূপী পাঁচ দানব যুবকের পিঠে ছিল ব্যাকপ্যাক, পরনে কার্গো প্যান্ট ও টি-শার্ট, হাতে একে ২২ রাইফেল। আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে কখনো গুলি চালিয়ে, কখনো কুপিয়ে ও জবাই করে পশুত্বের চূড়ান্তরূপে আবির্ভূত হয় ওই পাঁচ যুবক। একে একে হত্যা করে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ২ জন বাংলাদেশি, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিককে।
রেস্তোরাঁটিতে আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অত্যন্ত দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। চলে গুলি, পাল্টা গুলি এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ। একপর্যায়ে বোমার আঘাতে প্রাণ দেন বাংলাদেশ পুলিশের দুই গর্বিত সদস্য ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন খান। সন্ত্রাসীরা নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি বেশ কিছু নাগরিককে জিম্মি করে রাখে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ২ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শুরু হলে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত এবং নারী-শিশুসহ ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের মাধ্যমে এর অবসান হয়।
হোলি আর্টিজান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের পরিচয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হামলাকারী পাঁচ তরুণ মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল–এর মধ্যে তিনজন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান। অপর দুজন দরিদ্র পরিবারের গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ। হোলি আর্টিজান হামলার কয়েক মাস আগে থেকেই তারা সবাই নিখোঁজ ছিল। তাদের সাংগঠনিক ভাষায় হিজরতের উদ্দেশ্যে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যায়। অতীতে এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে সমাজের অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত অংশ হতে কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আসা তরুণদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী সময়ে এ ধারণা আমূল পাল্টে যায়। র্যাডিকেলাইজেশন অনুকূল পরিবেশ পেলে সমাজের যেকোনো অংশেই সন্ত্রাসবাদের এই বিষবাষ্প ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। এ দেশে রয়েছে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার আগে বিভিন্ন সময় এ দেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা করলেও এ দেশের মানুষ বারবার সেটা রুখে দিয়েছে। কিন্তু ১ জুলাইয়ের এমন নারকীয় ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এ দেশের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন মত, পথ ও ধর্মের মানুষ সন্ত্রাসী হামলার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এর নজির দেখা যায় জঙ্গি হামলায় নিহত জঙ্গিদের লাশ গ্রহণে তাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অস্বীকৃতিতে।
সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসে হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী বিভিন্ন সাঁড়াশি অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশ অনেকগুলো হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করে, ফলে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোল মডেলে পরিণত হয়, যার নিদর্শন গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্সে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি। ২০২০–এ বাংলাদেশ ৩৩তম অবস্থানে উঠে আসে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ২১, ২৫ ও ৩১।
হোলি আর্টিজান–পরবর্তী সময়ে অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের এই প্রশ্ন ছিল যে, এই হামলাটিকে দেশের গোয়েন্দা ব্যর্থতার ফলাফল বলা যায় কিনা। বস্তুত জঙ্গিবাদ একটি আদর্শ এবং জঙ্গিবাদ দমন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি বাস্তবায়নে দেশের সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘকাল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে হোলি আর্টিজান হামলা–পূর্ববর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দ্বারা উদ্বুদ্ধ স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের অস্তিত্ব বিশ্বের কাছে জানান দিতে বড় হামলার প্রস্তুতি নিতে পারে, এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে কোথায়, কবে সে–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। এটাকে Having handful intel with lack of imagination হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রতিবছর বাংলাদেশ হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার দিনটিকে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পালন করে থাকে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজান পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের যে সাফল্য তা ধরে রাখতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াস। আইন প্রয়োগ করে সন্ত্রাসীদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেও সন্ত্রাসবাদকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে হলে প্রয়োজন র্যাডিকেলাইজেশন প্রক্রিয়াকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা। সহিষ্ণুতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রকৃত শিক্ষা, দেশাত্মবোধ ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাই কেবল পারে সন্ত্রাসবাদমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে।
লেখক: প্রধান, বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ। হোলি আর্টিজান হামলার সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, ডিএমপি দায়িত্বে ছিলেন।
‘It was the best of times, it was the worst of times, it was the age of wisdom, it was the age of foolishness, it was the epoch of belief, it was the epoch of incredulity, it was the season of light, it was the season of darkness, it was the spring of hope, it was the winter of despair, we had everything before us, we had nothing before us...’
প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক চার্লস ডিকেন্সের A Tale of Two Cities উপন্যাসের শুরুর এই লাইনগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবোত্তর ‘Reign of Terror’–এর সময়ে ফ্রান্সের প্রকৃত অবস্থাকে চিত্রায়ণ করতে এই কথাগুলো ব্যবহার করেছেন।
১ জুলাই, ২০১৬। সন্ত্রাসীদের হোলি আর্টিজান বেকারি ১২ ঘণ্টা অবরোধকালে ঢাকার চিত্র বোঝাতে এই কথাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক গণ্য করা যায়। কেননা, এই অকল্পনীয় হামলা সমগ্র বাংলাদেশকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা, সীমাহীন আতঙ্ক ও চরম হতাশায় ডুবিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বেকারিতে কী ঘটছে, কারা, কী উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে, কখন এবং কীভাবে এই অবস্থার অবসান হবে– এসবই ছিল অনিশ্চিত। নিরাপত্তার প্রথম ও প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক, এসবিপ্রধান ও পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা আইজিপি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, সাজসরঞ্জামসহ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল ঘটনাস্থল। তারপরও পুরো দেশ ও দেশবাসীর মধ্যে ছিল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কা।
দিনটি ছিল শুক্রবার। রমজান মাসের শেষের দিকে এবং ঈদ প্রায় আসন্ন এমন একটি সন্ধ্যা। গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় খোলামেলা সবুজে ঘেরা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি তখন নৈশভোজে বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে। ওয়েটাররা অতিথিদের পছন্দের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হঠাৎ বোমা, গুলির শব্দ। অতিথিরা বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে নিথর হয়ে যেতে থাকে এক একটি শরীর। এমনই এক সন্ধ্যা ছিল ১ জুলাই, ২০১৬।
রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়া মানবরূপী পাঁচ দানব যুবকের পিঠে ছিল ব্যাকপ্যাক, পরনে কার্গো প্যান্ট ও টি-শার্ট, হাতে একে ২২ রাইফেল। আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে কখনো গুলি চালিয়ে, কখনো কুপিয়ে ও জবাই করে পশুত্বের চূড়ান্তরূপে আবির্ভূত হয় ওই পাঁচ যুবক। একে একে হত্যা করে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ২ জন বাংলাদেশি, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিককে।
রেস্তোরাঁটিতে আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অত্যন্ত দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। চলে গুলি, পাল্টা গুলি এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ। একপর্যায়ে বোমার আঘাতে প্রাণ দেন বাংলাদেশ পুলিশের দুই গর্বিত সদস্য ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন খান। সন্ত্রাসীরা নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি বেশ কিছু নাগরিককে জিম্মি করে রাখে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ২ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শুরু হলে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত এবং নারী-শিশুসহ ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের মাধ্যমে এর অবসান হয়।
হোলি আর্টিজান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের পরিচয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হামলাকারী পাঁচ তরুণ মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল–এর মধ্যে তিনজন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান। অপর দুজন দরিদ্র পরিবারের গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ। হোলি আর্টিজান হামলার কয়েক মাস আগে থেকেই তারা সবাই নিখোঁজ ছিল। তাদের সাংগঠনিক ভাষায় হিজরতের উদ্দেশ্যে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যায়। অতীতে এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে সমাজের অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত অংশ হতে কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আসা তরুণদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী সময়ে এ ধারণা আমূল পাল্টে যায়। র্যাডিকেলাইজেশন অনুকূল পরিবেশ পেলে সমাজের যেকোনো অংশেই সন্ত্রাসবাদের এই বিষবাষ্প ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। এ দেশে রয়েছে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার আগে বিভিন্ন সময় এ দেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা করলেও এ দেশের মানুষ বারবার সেটা রুখে দিয়েছে। কিন্তু ১ জুলাইয়ের এমন নারকীয় ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এ দেশের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন মত, পথ ও ধর্মের মানুষ সন্ত্রাসী হামলার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এর নজির দেখা যায় জঙ্গি হামলায় নিহত জঙ্গিদের লাশ গ্রহণে তাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অস্বীকৃতিতে।
সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসে হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী বিভিন্ন সাঁড়াশি অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশ অনেকগুলো হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করে, ফলে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোল মডেলে পরিণত হয়, যার নিদর্শন গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্সে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি। ২০২০–এ বাংলাদেশ ৩৩তম অবস্থানে উঠে আসে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ২১, ২৫ ও ৩১।
হোলি আর্টিজান–পরবর্তী সময়ে অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের এই প্রশ্ন ছিল যে, এই হামলাটিকে দেশের গোয়েন্দা ব্যর্থতার ফলাফল বলা যায় কিনা। বস্তুত জঙ্গিবাদ একটি আদর্শ এবং জঙ্গিবাদ দমন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি বাস্তবায়নে দেশের সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘকাল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে হোলি আর্টিজান হামলা–পূর্ববর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দ্বারা উদ্বুদ্ধ স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের অস্তিত্ব বিশ্বের কাছে জানান দিতে বড় হামলার প্রস্তুতি নিতে পারে, এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে কোথায়, কবে সে–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। এটাকে Having handful intel with lack of imagination হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রতিবছর বাংলাদেশ হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার দিনটিকে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পালন করে থাকে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজান পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের যে সাফল্য তা ধরে রাখতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াস। আইন প্রয়োগ করে সন্ত্রাসীদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেও সন্ত্রাসবাদকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে হলে প্রয়োজন র্যাডিকেলাইজেশন প্রক্রিয়াকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা। সহিষ্ণুতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রকৃত শিক্ষা, দেশাত্মবোধ ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাই কেবল পারে সন্ত্রাসবাদমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে।
লেখক: প্রধান, বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ। হোলি আর্টিজান হামলার সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, ডিএমপি দায়িত্বে ছিলেন।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে