এহসানুল হক টিটো
সুমন চট্টোপাধ্যায়কে তো জানি ছোটবেলা থেকেই, কবীর সুমন হওয়ার অনেক আগে থেকে। অন্য অনেকের মতোই তাঁর গান প্রথম শুনলাম নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। জীবনের গানের সঙ্গে তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে বাংলা গানের মধ্যে আরেক ধরনের ভালোবাসা সুমনের গান শুনে খুঁজে পাই।
এ কথা কেন বললাম, তার একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। গানের ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা পছন্দ আছে। মূলত হার্ড রক, পপ ইত্যাদি ঘরানার গানই আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। সে সময় এ ধরনের গানের প্রতিই ছিল আমার ঝোঁক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটু পরিপক্বতা এলে অন্য ঘরানার গানগুলো শোনা শুরু করেছি। সে রকম একটা সময়েই কবির সুমনের গানের সঙ্গে পরিচয়। সুমনের গান শুনে জীবনবোধ, চিন্তাভাবনার ধরন–সবকিছুই একটা নতুন মাত্রা পেল যেন।
এরপর তিনি গান গাইতে লাগলেন। আমরা অনেকেই সে গান শুনতে লাগলাম এবং একই সঙ্গে গানের ক্যাসেট সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। আমার মেজো ভাই এরশাদুল হক টিংকুর সমর্থন ছিল তাতে। তাঁর মাধ্যমেও ক্যাসেট জোগাড় করা হতো। ফলে সুমনের সঙ্গে বোঝাপড়াটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সেই সুমন চট্টোপাধ্যায় বা পরবর্তীকালের কবীর সুমনের কাছাকাছি হব কখনো–সেটা কল্পনাও করিনি। এখন ডিজিটাল গানের যুগ। আমরা যখন শুনতাম, তখন তা এতটা ছড়িয়ে পড়েনি। আমরা শুনতাম রেডিওতে, কখনো ক্যাসেট প্লেয়ারে। সেটা সিডি যুগ শুরু হওয়ার আগের কথা। এবং হ্যাঁ, সম্ভব হলে রেকর্ড প্লেয়ারেও শোনা হতো গান।
এখন তো সব গানই ডিজিটালাইজ হয়ে গেছে। এখন গান শোনা ও সংগ্রহ করা খুব সহজ হয়ে গেছে। আমাদের তারুণ্যে গান শোনার ব্যাপারটা ছিল কঠিন। চাইলেই মোবাইলে এক স্পর্শে গানের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তখন ছিল না।
সুমনের গান কি শুধু গান হিসেবে শুনতাম? মোটেই নয়। জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবেই দেখতাম গানগুলোকে। সময় কাটতে লাগল, আমরা বড় হলাম, চাকরিতে ঢুকলাম। দীর্ঘ পনেরো বছর রেডিওতে কাজ করেছি যখন, তখনো বড় কাজ ছিল সুরের জগৎ নিয়েই। এ সময় থেকে কত শিল্পী এল-গেল; কিন্তু সুমন রয়ে গেলেন মনের মণিকোঠায়। এর পরই অবাক কাণ্ড!
একদিন ফেসবুকে দেখলাম কবীর সুমনকে, আমি ভালোবাসা থেকেই তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তিনি সে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন, এটা ভাবিনি কখনো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখলাম তিনি এখন থেকে আমার বন্ধু।
এই তো সেদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সবাই শঙ্কিত হলো তাঁকে নিয়ে। করোনা কি না–প্রশ্ন জাগল। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে এখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। করোনা হয়নি।
তিনি এখন বাংলা রাগ নিয়ে কাজ করছেন। হাসপাতালের বিছানায় বসেও গাইছেন গান। এই তো সেদিন অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে স্ট্যাটাস দিলেন।
সংগীত নিয়ে তার অগাধ পড়াশোনা আছে। এখন মজেছেন বাংলা খেয়াল নিয়ে। এটাই তাঁর আসল কাজ এবং শেষ ব্রত বলে তিনি মনে করেন।
এ আমার পরম সৌভাগ্য, প্রতিদিনই অন্য অনেকের মতো আমার ইনবক্সেও কিছু না কিছু বাংলা খেয়ালের রেকর্ডিং পাঠাচ্ছেন। সেগুলো পাওয়ার পর মনে হচ্ছে, কে যেন আমার সামনে একটি নতুন জগতের দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
এই তো সেদিন তিনি লিখেছেন: ‘ক্রমশ সেরে উঠছি। অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই সারা দিন কাটিয়ে দিলাম। এই সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকবৃন্দ, সেবক-সেবিকাবৃন্দ ও কর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতা কোনোদিন ভুলব না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিলেই বাড়ি চলে যাব। ফিরে যাব বাংলা খেয়াল অনুশীলন, রচনা ও শেখানোয়। সেটাই আমার বাকি জীবনের কাজ, ব্রত।
জয় বাংলা
জয় বাংলা ভাষা
জয় বাংলা খেয়াল
কবীর সুমন
২-৭-২১ ’
আমি জানি, তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। আরও অনেক দিন আমার ইনবক্সে তাঁর খেয়ালের মূর্ছনার স্পর্শ পাব।
লেখক: সংগীতপ্রেমী ও বেতারকর্মী
সুমন চট্টোপাধ্যায়কে তো জানি ছোটবেলা থেকেই, কবীর সুমন হওয়ার অনেক আগে থেকে। অন্য অনেকের মতোই তাঁর গান প্রথম শুনলাম নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। জীবনের গানের সঙ্গে তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে বাংলা গানের মধ্যে আরেক ধরনের ভালোবাসা সুমনের গান শুনে খুঁজে পাই।
এ কথা কেন বললাম, তার একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। গানের ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা পছন্দ আছে। মূলত হার্ড রক, পপ ইত্যাদি ঘরানার গানই আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। সে সময় এ ধরনের গানের প্রতিই ছিল আমার ঝোঁক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটু পরিপক্বতা এলে অন্য ঘরানার গানগুলো শোনা শুরু করেছি। সে রকম একটা সময়েই কবির সুমনের গানের সঙ্গে পরিচয়। সুমনের গান শুনে জীবনবোধ, চিন্তাভাবনার ধরন–সবকিছুই একটা নতুন মাত্রা পেল যেন।
এরপর তিনি গান গাইতে লাগলেন। আমরা অনেকেই সে গান শুনতে লাগলাম এবং একই সঙ্গে গানের ক্যাসেট সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। আমার মেজো ভাই এরশাদুল হক টিংকুর সমর্থন ছিল তাতে। তাঁর মাধ্যমেও ক্যাসেট জোগাড় করা হতো। ফলে সুমনের সঙ্গে বোঝাপড়াটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সেই সুমন চট্টোপাধ্যায় বা পরবর্তীকালের কবীর সুমনের কাছাকাছি হব কখনো–সেটা কল্পনাও করিনি। এখন ডিজিটাল গানের যুগ। আমরা যখন শুনতাম, তখন তা এতটা ছড়িয়ে পড়েনি। আমরা শুনতাম রেডিওতে, কখনো ক্যাসেট প্লেয়ারে। সেটা সিডি যুগ শুরু হওয়ার আগের কথা। এবং হ্যাঁ, সম্ভব হলে রেকর্ড প্লেয়ারেও শোনা হতো গান।
এখন তো সব গানই ডিজিটালাইজ হয়ে গেছে। এখন গান শোনা ও সংগ্রহ করা খুব সহজ হয়ে গেছে। আমাদের তারুণ্যে গান শোনার ব্যাপারটা ছিল কঠিন। চাইলেই মোবাইলে এক স্পর্শে গানের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তখন ছিল না।
সুমনের গান কি শুধু গান হিসেবে শুনতাম? মোটেই নয়। জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবেই দেখতাম গানগুলোকে। সময় কাটতে লাগল, আমরা বড় হলাম, চাকরিতে ঢুকলাম। দীর্ঘ পনেরো বছর রেডিওতে কাজ করেছি যখন, তখনো বড় কাজ ছিল সুরের জগৎ নিয়েই। এ সময় থেকে কত শিল্পী এল-গেল; কিন্তু সুমন রয়ে গেলেন মনের মণিকোঠায়। এর পরই অবাক কাণ্ড!
একদিন ফেসবুকে দেখলাম কবীর সুমনকে, আমি ভালোবাসা থেকেই তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তিনি সে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন, এটা ভাবিনি কখনো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখলাম তিনি এখন থেকে আমার বন্ধু।
এই তো সেদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সবাই শঙ্কিত হলো তাঁকে নিয়ে। করোনা কি না–প্রশ্ন জাগল। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে এখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। করোনা হয়নি।
তিনি এখন বাংলা রাগ নিয়ে কাজ করছেন। হাসপাতালের বিছানায় বসেও গাইছেন গান। এই তো সেদিন অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে স্ট্যাটাস দিলেন।
সংগীত নিয়ে তার অগাধ পড়াশোনা আছে। এখন মজেছেন বাংলা খেয়াল নিয়ে। এটাই তাঁর আসল কাজ এবং শেষ ব্রত বলে তিনি মনে করেন।
এ আমার পরম সৌভাগ্য, প্রতিদিনই অন্য অনেকের মতো আমার ইনবক্সেও কিছু না কিছু বাংলা খেয়ালের রেকর্ডিং পাঠাচ্ছেন। সেগুলো পাওয়ার পর মনে হচ্ছে, কে যেন আমার সামনে একটি নতুন জগতের দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
এই তো সেদিন তিনি লিখেছেন: ‘ক্রমশ সেরে উঠছি। অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই সারা দিন কাটিয়ে দিলাম। এই সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকবৃন্দ, সেবক-সেবিকাবৃন্দ ও কর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতা কোনোদিন ভুলব না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিলেই বাড়ি চলে যাব। ফিরে যাব বাংলা খেয়াল অনুশীলন, রচনা ও শেখানোয়। সেটাই আমার বাকি জীবনের কাজ, ব্রত।
জয় বাংলা
জয় বাংলা ভাষা
জয় বাংলা খেয়াল
কবীর সুমন
২-৭-২১ ’
আমি জানি, তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। আরও অনেক দিন আমার ইনবক্সে তাঁর খেয়ালের মূর্ছনার স্পর্শ পাব।
লেখক: সংগীতপ্রেমী ও বেতারকর্মী
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে