বিভুরঞ্জন সরকার
প্রায় দেড় বছর হতে চলল পৃথিবী এক নতুন কিন্তু ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। এর আগে কখনো পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ মানুষ একই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে একই আতঙ্কে বিপর্যস্ত হয়নি, একই অনিশ্চয়তায় বিপন্ন-বিষণ্ণ বোধ করেনি। এই ভূমণ্ডল ২০১৯ সালের বছরের শেষ দিকে এমন এক শত্রুর কবলে পড়েছে যে শুধু অপরিচিতই নয়, সে অদৃশ্যও। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নামের এই শত্রু পৃথিবীর মানবপ্রজাতির বিরুদ্ধে হত্যার পরোয়ানা নিয়ে ছুটে চলেছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। কোথাও কম তো কোথাও বেশি। জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে মানুষের এত গর্ব, এত অহংকার সব ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। তার সংহার রূপ দেখে সবাই ভীত, বিচলিত, আতঙ্কিত। করোনার জেদ, সে মানুষকে মারবেই। মানুষের জেদ, সে বেঁচে থাকবে। মানুষ পরাজিত হতে জানে না। হোঁচট খায়, বাধা পায়, মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়—কিন্তু ভোলে না জীবনের জয়গান গাইতে। এবার দেখার বিষয় করোনাযুদ্ধ জয়ে মানুষ কতটা ক্ষতির বিনিময়ে কী উপায়ে জয়লাভ করে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এবার করোনাকে প্রতিহত বা পরাস্ত করার অস্ত্র অর্থাৎ ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। তবে সব দেশ সমানভাবে এই টিকার সুবিধা পাচ্ছে না। আবার টিকা নিয়ে রাজনীতি কিংবা প্রভাববলয় বাড়ানোর চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। তারপরও সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে, যেটা কোনোভাবেই ছোট ব্যাপার নয়। অবশ্য টিকা আবিষ্কারের পরও এটা বলা হচ্ছে, করোনাকে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, সহাবস্থান করতে হবে। তবে চরম হতাশ না হওয়ার পক্ষে আপাতত যুক্তি এটাই—করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। প্রতিদিন যেমন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে, তেমনি সুস্থ হয়ে উঠছে। মৃতের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাই বেশি। আমরা শুধু মৃত্যু নয় জীবনকেও দেখতে চাই।
পৃথিবীতে প্রতিবছর ছয় কোটি মানুষ মারা যায়, যার ৭০ শতাংশেরই মৃত্যু হয় সংক্রামক ব্যাধিতে। ক্যানসার ও হৃদ্রোগে মারা যায় তিন কোটি মানুষ। কিন্তু এসব মৃত্যু আমাদের আতঙ্কিত করে না। কারণ এসব মৃত্যু ঘটে নীরবে, গণমাধ্যমে তা বড় খবর হয় না। করোনার গতি তীব্র, মৃত্যুও ঘটছে অভাবিত গতিতে। তাই শুরু থেকেই এ নিয়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় চলছে। স্বাভাবিক আবহাওয়া খবর নয়। খবর তো ঝড়। কিন্তু ঝড় তো স্থায়ী হয় না। ধ্বংসের করাল নৃত্য স্থায়ী হয় না, হতে পারে না। ঝড় যেমন থামে, তেমনি করোনাঝড়ও থামবে। তবে তত দিনে আমাদের এই চেনা পৃথিবীটা হয়তো অনেক বদলে যাবে।
কেমন হতে পারে করোনাপরবর্তী পৃথিবী? যাঁরা চিন্তক-গবেষক-জ্ঞানী, তাঁরা নানাভাবে দেখছেন আগামীর পৃথিবীকে। কারও চোখে সেটা কিছুটা ধুসর, কারও কারও চোখে সেটা রঙিন এবং ঝলমলে। দুর্ভিক্ষ বা অনাহারে মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্যাভাব যদি না-ও দেখা দেয়, তবু কেনার সামর্থ্য থাকবে না অনেক মানুষের। তবে অনাহারে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে আগাম কল্পনা করে ভারাক্রান্ত হওয়ার এখনই দরকার নেই। কয়েক দিনের অনাহারে সাধারণত কারও মৃত্যু হয় না। বয়স, শারীরিক সুস্থতা, ওজন, কাজের মাত্রা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, মনোবল, পরিবেশের তাপমাত্রা প্রভৃতি বিষয় নির্ভর করে অনাহারে একজন মানুষ কত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। মানুষের জীবন ধারণের জন্য পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শুধু পানি পান করে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষ দুই মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম।
তবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য ন্যূনপক্ষে যতটুকু খাবার দরকার, তা দেওয়ার দায়িত্ব বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিতে হবে। উৎপাদন, সরবরাহ, বণ্টনব্যবস্থা বৈষম্য ও ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে খাদ্যঘাটতি আছে, সেসব দেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখা উচিত খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশগুলোর। করোনাপরবর্তী পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করতে হলে অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে অনেক কিছু। আগের মতো চললে হবে না। যে দেশে যে সম্পদ অতিরিক্ত আছে, তাতে সব দেশের মানুষের অধিকার আছে—এই নীতি অনুসরণ করলে সমস্যা অনেক কমে যাবে। তবে এটা বলা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন করা ততটা সহজ নয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন দেশের জাতীয় এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক।
এটা কারও অজানা নয় যে প্রাণীর জীবন ধারণের অন্যতম রসদ হলো খাদ্য। এক হিসাবে দেখা যায়, পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদনের যে সুযোগ আছে, তাতে ৩৪০ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা হতে পারে। অথচ পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৮০ কোটি। সে জন্য অতিরিক্ত খাদ্য জোগানের জন্য এমন সব উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। বন সংহার, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, বেশি মাত্রায় পানি সেচ—এই সবকিছুর যোগফলই হচ্ছে—প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করতে শুরু করছে। অন্যদিকে কৃত্রিম উপায়ে ফসল ফলানোর কারণে খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে। ১৯৫০ সালে একটি টমেটোর পুষ্টিমান ২০২০ সালের ১০টি টমেটোর সমান। আগের একটি কমলালেবু এখন আটটির সমান।
বিজ্ঞানীরা এমন কথাও বলছেন যে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে, ধরন পাল্টে ১ হাজার ২০ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য কৃষির নতুন বিন্যাস দরকার হবে। কোন জায়গায় কোন ফসলের বেশি ফলন হয়, তার অনুসন্ধান করতে হবে, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও করতে হবে। অরণ্য, জলাভূমি ধ্বংসের উন্মত্ততা পরিহার করতে হবে।
জীবন-আবেগ রুধিতে না পারি
লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়,
গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।
মানুষের অপরিণামদর্শিতা দূর না হলে শুধু করোনা কেন, আরও অসংখ্য জীবাণুর আক্রমণের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বনজঙ্গল সাফ করা আর জলাভূমি দখল করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জীবজন্তুর স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হওয়ায় প্রাণিজগতের জীবাণুগুলো মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ বেড়েছে। জীবজন্তুর বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় মানুষ এবং জীবজন্তুর মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে সমস্যা হচ্ছে। এতে প্রাণী থেকে মানবদেহে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। মানুষ এবং জীবজগতের মধ্যে ব্যাধির আদান-প্রদানের ফলেই নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবেও বন্য ও পোষা প্রাণীকেই দায়ী করা হচ্ছে।
করোনাপরবর্তী বিশ্বকে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকেও গতানুগতিক ধারা ও ধারণার বাইরে এসে নতুন পথের সন্ধান করতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গী হয়ে নগরে নগরে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। দিনের পর দিন বর্জ্য মিশে নদীর পানি হচ্ছে দূষিত। বাতাসে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলো সম্পূর্ণ পানির তলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সমুদ্রের পানি ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। নদীগুলোর নাব্য কমছে দ্রুততার সঙ্গে।
করোনার এই দুঃসময়ে ভালো খবর হলো—মানুষ এবং মানুষচালিত জ্বালানিনির্ভর সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকায় প্রকৃতি যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। মানুষের নিঃশ্বাস যখন বন্ধ হয়ে আসছে, প্রকৃতি ও প্রাণিকুল তখন যেন প্রাণখুলে হাসছে। একেই কি বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ!
মানুষ, প্রকৃতি এবং প্রাণিজগতের সবার জন্য পৌষ মাস নিশ্চিত করার কথা যদি আমরা ভাবতে ব্যর্থ হই, করোনার পরেও যদি আমাদের মনোজগতে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচলেও অন্য কোনো নতুন ভাইরাস আমাদের প্রাণ–সংহারে এগিয়ে আসবে।
প্রায় দেড় বছর হতে চলল পৃথিবী এক নতুন কিন্তু ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। এর আগে কখনো পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ মানুষ একই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে একই আতঙ্কে বিপর্যস্ত হয়নি, একই অনিশ্চয়তায় বিপন্ন-বিষণ্ণ বোধ করেনি। এই ভূমণ্ডল ২০১৯ সালের বছরের শেষ দিকে এমন এক শত্রুর কবলে পড়েছে যে শুধু অপরিচিতই নয়, সে অদৃশ্যও। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নামের এই শত্রু পৃথিবীর মানবপ্রজাতির বিরুদ্ধে হত্যার পরোয়ানা নিয়ে ছুটে চলেছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। কোথাও কম তো কোথাও বেশি। জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে মানুষের এত গর্ব, এত অহংকার সব ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। তার সংহার রূপ দেখে সবাই ভীত, বিচলিত, আতঙ্কিত। করোনার জেদ, সে মানুষকে মারবেই। মানুষের জেদ, সে বেঁচে থাকবে। মানুষ পরাজিত হতে জানে না। হোঁচট খায়, বাধা পায়, মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়—কিন্তু ভোলে না জীবনের জয়গান গাইতে। এবার দেখার বিষয় করোনাযুদ্ধ জয়ে মানুষ কতটা ক্ষতির বিনিময়ে কী উপায়ে জয়লাভ করে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এবার করোনাকে প্রতিহত বা পরাস্ত করার অস্ত্র অর্থাৎ ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। তবে সব দেশ সমানভাবে এই টিকার সুবিধা পাচ্ছে না। আবার টিকা নিয়ে রাজনীতি কিংবা প্রভাববলয় বাড়ানোর চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। তারপরও সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে, যেটা কোনোভাবেই ছোট ব্যাপার নয়। অবশ্য টিকা আবিষ্কারের পরও এটা বলা হচ্ছে, করোনাকে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, সহাবস্থান করতে হবে। তবে চরম হতাশ না হওয়ার পক্ষে আপাতত যুক্তি এটাই—করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। প্রতিদিন যেমন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে, তেমনি সুস্থ হয়ে উঠছে। মৃতের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাই বেশি। আমরা শুধু মৃত্যু নয় জীবনকেও দেখতে চাই।
পৃথিবীতে প্রতিবছর ছয় কোটি মানুষ মারা যায়, যার ৭০ শতাংশেরই মৃত্যু হয় সংক্রামক ব্যাধিতে। ক্যানসার ও হৃদ্রোগে মারা যায় তিন কোটি মানুষ। কিন্তু এসব মৃত্যু আমাদের আতঙ্কিত করে না। কারণ এসব মৃত্যু ঘটে নীরবে, গণমাধ্যমে তা বড় খবর হয় না। করোনার গতি তীব্র, মৃত্যুও ঘটছে অভাবিত গতিতে। তাই শুরু থেকেই এ নিয়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় চলছে। স্বাভাবিক আবহাওয়া খবর নয়। খবর তো ঝড়। কিন্তু ঝড় তো স্থায়ী হয় না। ধ্বংসের করাল নৃত্য স্থায়ী হয় না, হতে পারে না। ঝড় যেমন থামে, তেমনি করোনাঝড়ও থামবে। তবে তত দিনে আমাদের এই চেনা পৃথিবীটা হয়তো অনেক বদলে যাবে।
কেমন হতে পারে করোনাপরবর্তী পৃথিবী? যাঁরা চিন্তক-গবেষক-জ্ঞানী, তাঁরা নানাভাবে দেখছেন আগামীর পৃথিবীকে। কারও চোখে সেটা কিছুটা ধুসর, কারও কারও চোখে সেটা রঙিন এবং ঝলমলে। দুর্ভিক্ষ বা অনাহারে মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্যাভাব যদি না-ও দেখা দেয়, তবু কেনার সামর্থ্য থাকবে না অনেক মানুষের। তবে অনাহারে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে আগাম কল্পনা করে ভারাক্রান্ত হওয়ার এখনই দরকার নেই। কয়েক দিনের অনাহারে সাধারণত কারও মৃত্যু হয় না। বয়স, শারীরিক সুস্থতা, ওজন, কাজের মাত্রা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, মনোবল, পরিবেশের তাপমাত্রা প্রভৃতি বিষয় নির্ভর করে অনাহারে একজন মানুষ কত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। মানুষের জীবন ধারণের জন্য পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শুধু পানি পান করে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষ দুই মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম।
তবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য ন্যূনপক্ষে যতটুকু খাবার দরকার, তা দেওয়ার দায়িত্ব বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিতে হবে। উৎপাদন, সরবরাহ, বণ্টনব্যবস্থা বৈষম্য ও ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে খাদ্যঘাটতি আছে, সেসব দেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখা উচিত খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশগুলোর। করোনাপরবর্তী পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করতে হলে অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে অনেক কিছু। আগের মতো চললে হবে না। যে দেশে যে সম্পদ অতিরিক্ত আছে, তাতে সব দেশের মানুষের অধিকার আছে—এই নীতি অনুসরণ করলে সমস্যা অনেক কমে যাবে। তবে এটা বলা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন করা ততটা সহজ নয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন দেশের জাতীয় এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক।
এটা কারও অজানা নয় যে প্রাণীর জীবন ধারণের অন্যতম রসদ হলো খাদ্য। এক হিসাবে দেখা যায়, পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদনের যে সুযোগ আছে, তাতে ৩৪০ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা হতে পারে। অথচ পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৮০ কোটি। সে জন্য অতিরিক্ত খাদ্য জোগানের জন্য এমন সব উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। বন সংহার, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, বেশি মাত্রায় পানি সেচ—এই সবকিছুর যোগফলই হচ্ছে—প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করতে শুরু করছে। অন্যদিকে কৃত্রিম উপায়ে ফসল ফলানোর কারণে খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে। ১৯৫০ সালে একটি টমেটোর পুষ্টিমান ২০২০ সালের ১০টি টমেটোর সমান। আগের একটি কমলালেবু এখন আটটির সমান।
বিজ্ঞানীরা এমন কথাও বলছেন যে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে, ধরন পাল্টে ১ হাজার ২০ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য কৃষির নতুন বিন্যাস দরকার হবে। কোন জায়গায় কোন ফসলের বেশি ফলন হয়, তার অনুসন্ধান করতে হবে, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও করতে হবে। অরণ্য, জলাভূমি ধ্বংসের উন্মত্ততা পরিহার করতে হবে।
জীবন-আবেগ রুধিতে না পারি
লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়,
গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।
মানুষের অপরিণামদর্শিতা দূর না হলে শুধু করোনা কেন, আরও অসংখ্য জীবাণুর আক্রমণের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বনজঙ্গল সাফ করা আর জলাভূমি দখল করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জীবজন্তুর স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হওয়ায় প্রাণিজগতের জীবাণুগুলো মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ বেড়েছে। জীবজন্তুর বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় মানুষ এবং জীবজন্তুর মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে সমস্যা হচ্ছে। এতে প্রাণী থেকে মানবদেহে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। মানুষ এবং জীবজগতের মধ্যে ব্যাধির আদান-প্রদানের ফলেই নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবেও বন্য ও পোষা প্রাণীকেই দায়ী করা হচ্ছে।
করোনাপরবর্তী বিশ্বকে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকেও গতানুগতিক ধারা ও ধারণার বাইরে এসে নতুন পথের সন্ধান করতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গী হয়ে নগরে নগরে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। দিনের পর দিন বর্জ্য মিশে নদীর পানি হচ্ছে দূষিত। বাতাসে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলো সম্পূর্ণ পানির তলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সমুদ্রের পানি ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। নদীগুলোর নাব্য কমছে দ্রুততার সঙ্গে।
করোনার এই দুঃসময়ে ভালো খবর হলো—মানুষ এবং মানুষচালিত জ্বালানিনির্ভর সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকায় প্রকৃতি যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। মানুষের নিঃশ্বাস যখন বন্ধ হয়ে আসছে, প্রকৃতি ও প্রাণিকুল তখন যেন প্রাণখুলে হাসছে। একেই কি বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ!
মানুষ, প্রকৃতি এবং প্রাণিজগতের সবার জন্য পৌষ মাস নিশ্চিত করার কথা যদি আমরা ভাবতে ব্যর্থ হই, করোনার পরেও যদি আমাদের মনোজগতে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচলেও অন্য কোনো নতুন ভাইরাস আমাদের প্রাণ–সংহারে এগিয়ে আসবে।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে