এ কে এম শামসুদ্দিন
সেই ছোট্টবেলা থেকেই বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত; তা হলো, ‘তুঘলকি কাণ্ড’। বহুল পরিচিত এবং প্রচলিত হলেও প্রবাদটির পেছনের ঘটনা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। এর পেছনের ঘটনার দুটি ব্যাখ্যা আছে এবং ব্যাখ্যা দুটির সঙ্গে তুঘলক রাজবংশের দুজন শাসকের নামও জড়িত। তাঁদের একজন হলেন সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক শাহ, যাঁকে আমরা মুহম্মদ বিন তুঘলক নামে চিনি এবং অপরজন মুহম্মদ বিন তুঘলকেরই বংশধর সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক।
এখানে আমি একজন শাসকের কর্মকাণ্ডের কথাই উল্লেখ করব; তিনি হলেন মুহম্মদ বিন তুঘলক। চতুর্দশ শতাব্দীর দিল্লির এই সুলতান ছিলেন বৈপরীত্যে ভরা এক নাটকীয় চরিত্র। একাধারে তিনি ছিলেন মহানুভব এবং নিষ্ঠুর, বিদ্বান এবং বোকা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং ভীষণ রকম ব্যর্থ। সবকিছু মিলিয়েই তিনি ইতিহাসে ‘পাগলা রাজা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নানান রকম ‘অসংগতিপূর্ণ কীর্তিকলাপ’ই ‘তুঘলকি কাণ্ড’ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি পায়।
তাঁর একটি বড় তুঘলকি কাণ্ড ছিল রাজধানী দিল্লি থেকে দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে (বর্তমান মহারাষ্ট্র) স্থানান্তর। তখন মঙ্গোলীয় আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী দিল্লি। তিনি শত্রুকে মোকাবিলার জন্য নিজ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে জোরদার করার পরিবর্তে খোদ রাজধানীকেই দিল্লি থেকে ৭০০ মাইল দূরে দেবগিরি বা দৌলতাবাদে স্থানান্তর করা নিরাপদ মনে করেছিলেন। শুধু তা–ই নয়, নতুন স্থাপিত রাজধানীকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য তিনি দিল্লিকে মরুভূমিতে পরিণত করে সব জনগণকে দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করেন। রাজধানী স্থানান্তরের ঘটনা মুহম্মদ বিন তুঘলকের বহুবিধ অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের একটি উদাহরণ মাত্র। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড ছিল বাস্তবতাবিরোধী ও অনুপযোগী, যা অধিকাংশ নাগরিক গ্রহণ করেনি। তাই তাঁর এসব তুঘলকি কর্মকাণ্ড পরবর্তী সময়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।
‘তুঘলকি কাণ্ড’–এই প্রবাদের অর্থ হলো ভীষণ বা বড়সড় কোনো ঘটনা, যা অন্যায় এবং জোরজবরদস্তিমূলক। অনেকে একে আবার ‘ভয়ংকর কাণ্ড’ বলে থাকেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগও কমবেশি ৪৮টি আদেশের মাধ্যমে সহস্রাধিক চিকিৎসকের ‘গণবদলি’ করে এমনই একটি ‘ভয়ংকর কাণ্ড’ ঘটিয়েছে, যাকে সংশ্লিষ্ট সবাই ‘অসংগতিপূর্ণ’ ও ‘তুঘলকি কাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন। এমন মন্তব্যের অবশ্য কারণও আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, অন্য অনেক চিকিৎসকের সঙ্গে গণবদলির এই তালিকায় মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। এমনকি মেডিকেল কলেজের বেসিক সাবজেক্টের অধ্যাপক, মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক, যিনি শিক্ষাকার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত, হৃদ্রোগ, চক্ষু ও দন্তবিশেষজ্ঞদের উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে, যেখানে তাঁদের কোনো পদ-ই নেই। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসায় সম্পৃক্ত চিকিৎসকদেরও পদায়ন করা হয়েছে এই আদেশে। এমন কাণ্ডকারখানায় চিকিৎসকেরা সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, সংক্ষুব্ধ এই চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও কর্মকাণ্ড পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
আমাদের দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু থেকেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যে নৈরাজ্য চলে আসছে, তাতে নতুন করে প্রশ্ন ওঠায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর অধীনস্থদের কর্মদক্ষতা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে মিশ্র ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কিছুতেই ঘোচানো যাচ্ছে না। সংসদেও এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। সংসদে কেউ কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অবস্থাগতিকে মনে হচ্ছে, দুর্নাম ঘোচানোর তাগাদাও নেই তাঁদের মধ্যে। এসব নিয়ে দেড় বছর ধরে এত বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে যে, তাঁদের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতেও রুচিতে বাধে।
ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী নিয়ে দেশ এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এর আগে করোনা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে শহরাঞ্চলে বেশি হলেও ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর বড় একটি অংশ এখন গ্রামগঞ্জে দেখা যাচ্ছে এবং এই আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় আইসিইউ ও অক্সিজেন প্রাপ্তির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীতে। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সমস্যা চিহ্নিত করার পরও আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর জুনে সরকারপ্রধান দেশের সব জেলা শহরে আইসিইউর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের অর্ধেকের বেশি জেলা হাসপাতালে এখনো আইসিইউ নেই। গত বছর জুনে সারা দেশে ৭৯টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়ার পরও হাসপাতালের তালিকা চূড়ান্ত করতেই তারা এ বছরের মার্চের শেষ নাগাদ সময় নিয়েছে। সময় পেলেও তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে সেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ প্রজেক্টের কাজও যথাসময়ে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মূল হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা। সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাসময়ে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে আজ এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের অভাবে স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতার ৫০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারার পেছনে যাঁদের গাফিলতি আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে, তাতে দ্রুততার সঙ্গে সারা দেশে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে, মৃত্যুহার আরও বেড়ে যাবে।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসায় শয্যাসংকট, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব–এই সবকিছু মিলিয়ে মহাসংকটের মুখে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। অথচ গত কয়েক দিনে দেশের গণমাধ্যমে দেখেছি, ঢাকার বাইরের অনেক হাসপাতালেই দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের এলাকার হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। এতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। হাসপাতালে অর্ধেক জনবল নেই। ডাক্তারের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে ফার্মাসিস্টরা রোগী দেখছেন। এটি শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার খণ্ডচিত্র নয়; এ যেন দেশের অধিকাংশ মফস্বল শহর হাসপাতালগুলোর করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কথা নতুন করে নাই-বা বললাম। চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয় নিয়ে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির কথা কে না জানে! এই দুর্নীতির বাইরেও আনুমানিক ১৮০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির যে খবর বেরিয়েছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভালো স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে দক্ষ ও পারদর্শী স্বাস্থ্যকর্মীর বিকল্প নেই। কারণ, যোগ্য ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ না দেওয়া গেলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে বাধ্য। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে যদি এখানেও ঘুষ-বাণিজ্য চলে, তাহলে এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কী হতে পারে? স্বাস্থ্য খাতের কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন কিছু মানুষকে পদায়ন করা হয়েছে যে, তাঁদের অতিরিক্ত অর্থলিপ্সা ও নিম্ন মানসিকতাপূর্ণ কার্যকলাপ দেশে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরিস্থিতি মনে হয় সেদিকেই যাচ্ছে। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে, সাংসদদের জোরালো দাবি যেভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। করোনার এই দুর্যোগকালে আমাদের দরকার একজন দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সম্মুখযুদ্ধের যোদ্ধা, যিনি এই কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম। ভেবে অবাক হই, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে, নিজের কর্মদক্ষতার এত ঘাটতি নিয়ে, দুর্নাম কামিয়ে, চারদিকের এত এত সমালোচনার মুখেও মানুষ কীভাবে স্বাভাবিক থাকতে পারে?
নিবন্ধের শুরুতেই তুঘলকি কাণ্ডের ইতিবৃত্ত নিয়ে কথা বলেছি। লেখার শেষ প্রান্তে এসে সে প্রসঙ্গেই না হয় ফিরে যাওয়া যাক। যে শাসকের কর্মকাণ্ডের কথা আমি উল্লেখ করেছি, সেই মুহম্মদ বিন তুঘলকের ন্যায়পরায়ণতার অনেক উদাহরণও আছে ইতিহাসে। কথিত আছে, একদিন তিনি এক জঙ্গলে পশু শিকার করতে গিয়ে ভুলক্রমে আঘাত করে বসেন এক দরিদ্র কৃষকের সন্তানকে। শিকার শেষে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় লজ্জিত ও অনুশোচিত প্রচণ্ড প্রতাপশালী সুলতান কাজির কাছে গেলেন এবং নিজের দোষ স্বীকার করে কাজিকে অনুরোধ করলেন, তাঁকেও যেন অন্য সবার মতো বিচার করা হয়। এরপর কাজি অনুরোধ রক্ষা করতে সেই কৃষকের সন্তানের হাতে চাবুক তুলে দিলেন সুলতানকে আঘাত করার জন্য।
দুর্দান্ত সেই সুলতান কাজির দেওয়া সাজা মাথা পেতে নিলেন। সুলতান নানাবিধ তুঘলকি কাণ্ড ঘটালেও তিনি যে ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, সে কথা তো জানলাম। কিন্তু আমাদের যাঁরা নিয়মিত বিরতিতে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কতটুকু ন্যায়-অন্যায় কাজের বিবেচনাবোধ কাজ করে, তা একটি বড় প্রশ্নই বটে। আমরা বর্তমানে দেশে, এমন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি–কোনটা ন্যায় এবং কোনটা অন্যায়–তার পার্থক্য করতে ভুলে যাচ্ছি। মুহম্মদ বিন তুঘলকের মতো তুঘলকি কাণ্ড ঘটালেও সুলতান এবং আমাদের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমাদের দেহাবরণ এতই পুরু যে, বিরতিহীন এসব অন্যায় কাজ করেও সুলতানের মতো লজ্জা বা অনুশোচনা আমাদের দেহাভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
সেই ছোট্টবেলা থেকেই বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত; তা হলো, ‘তুঘলকি কাণ্ড’। বহুল পরিচিত এবং প্রচলিত হলেও প্রবাদটির পেছনের ঘটনা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। এর পেছনের ঘটনার দুটি ব্যাখ্যা আছে এবং ব্যাখ্যা দুটির সঙ্গে তুঘলক রাজবংশের দুজন শাসকের নামও জড়িত। তাঁদের একজন হলেন সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক শাহ, যাঁকে আমরা মুহম্মদ বিন তুঘলক নামে চিনি এবং অপরজন মুহম্মদ বিন তুঘলকেরই বংশধর সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক।
এখানে আমি একজন শাসকের কর্মকাণ্ডের কথাই উল্লেখ করব; তিনি হলেন মুহম্মদ বিন তুঘলক। চতুর্দশ শতাব্দীর দিল্লির এই সুলতান ছিলেন বৈপরীত্যে ভরা এক নাটকীয় চরিত্র। একাধারে তিনি ছিলেন মহানুভব এবং নিষ্ঠুর, বিদ্বান এবং বোকা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং ভীষণ রকম ব্যর্থ। সবকিছু মিলিয়েই তিনি ইতিহাসে ‘পাগলা রাজা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নানান রকম ‘অসংগতিপূর্ণ কীর্তিকলাপ’ই ‘তুঘলকি কাণ্ড’ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি পায়।
তাঁর একটি বড় তুঘলকি কাণ্ড ছিল রাজধানী দিল্লি থেকে দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে (বর্তমান মহারাষ্ট্র) স্থানান্তর। তখন মঙ্গোলীয় আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী দিল্লি। তিনি শত্রুকে মোকাবিলার জন্য নিজ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে জোরদার করার পরিবর্তে খোদ রাজধানীকেই দিল্লি থেকে ৭০০ মাইল দূরে দেবগিরি বা দৌলতাবাদে স্থানান্তর করা নিরাপদ মনে করেছিলেন। শুধু তা–ই নয়, নতুন স্থাপিত রাজধানীকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য তিনি দিল্লিকে মরুভূমিতে পরিণত করে সব জনগণকে দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করেন। রাজধানী স্থানান্তরের ঘটনা মুহম্মদ বিন তুঘলকের বহুবিধ অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের একটি উদাহরণ মাত্র। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড ছিল বাস্তবতাবিরোধী ও অনুপযোগী, যা অধিকাংশ নাগরিক গ্রহণ করেনি। তাই তাঁর এসব তুঘলকি কর্মকাণ্ড পরবর্তী সময়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।
‘তুঘলকি কাণ্ড’–এই প্রবাদের অর্থ হলো ভীষণ বা বড়সড় কোনো ঘটনা, যা অন্যায় এবং জোরজবরদস্তিমূলক। অনেকে একে আবার ‘ভয়ংকর কাণ্ড’ বলে থাকেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগও কমবেশি ৪৮টি আদেশের মাধ্যমে সহস্রাধিক চিকিৎসকের ‘গণবদলি’ করে এমনই একটি ‘ভয়ংকর কাণ্ড’ ঘটিয়েছে, যাকে সংশ্লিষ্ট সবাই ‘অসংগতিপূর্ণ’ ও ‘তুঘলকি কাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন। এমন মন্তব্যের অবশ্য কারণও আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, অন্য অনেক চিকিৎসকের সঙ্গে গণবদলির এই তালিকায় মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। এমনকি মেডিকেল কলেজের বেসিক সাবজেক্টের অধ্যাপক, মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক, যিনি শিক্ষাকার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত, হৃদ্রোগ, চক্ষু ও দন্তবিশেষজ্ঞদের উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে, যেখানে তাঁদের কোনো পদ-ই নেই। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসায় সম্পৃক্ত চিকিৎসকদেরও পদায়ন করা হয়েছে এই আদেশে। এমন কাণ্ডকারখানায় চিকিৎসকেরা সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, সংক্ষুব্ধ এই চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও কর্মকাণ্ড পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
আমাদের দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু থেকেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যে নৈরাজ্য চলে আসছে, তাতে নতুন করে প্রশ্ন ওঠায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর অধীনস্থদের কর্মদক্ষতা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে মিশ্র ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কিছুতেই ঘোচানো যাচ্ছে না। সংসদেও এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। সংসদে কেউ কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অবস্থাগতিকে মনে হচ্ছে, দুর্নাম ঘোচানোর তাগাদাও নেই তাঁদের মধ্যে। এসব নিয়ে দেড় বছর ধরে এত বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে যে, তাঁদের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতেও রুচিতে বাধে।
ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী নিয়ে দেশ এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এর আগে করোনা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে শহরাঞ্চলে বেশি হলেও ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর বড় একটি অংশ এখন গ্রামগঞ্জে দেখা যাচ্ছে এবং এই আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় আইসিইউ ও অক্সিজেন প্রাপ্তির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীতে। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সমস্যা চিহ্নিত করার পরও আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর জুনে সরকারপ্রধান দেশের সব জেলা শহরে আইসিইউর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের অর্ধেকের বেশি জেলা হাসপাতালে এখনো আইসিইউ নেই। গত বছর জুনে সারা দেশে ৭৯টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়ার পরও হাসপাতালের তালিকা চূড়ান্ত করতেই তারা এ বছরের মার্চের শেষ নাগাদ সময় নিয়েছে। সময় পেলেও তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে সেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ প্রজেক্টের কাজও যথাসময়ে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মূল হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা। সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাসময়ে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে আজ এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের অভাবে স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতার ৫০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারার পেছনে যাঁদের গাফিলতি আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে, তাতে দ্রুততার সঙ্গে সারা দেশে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে, মৃত্যুহার আরও বেড়ে যাবে।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসায় শয্যাসংকট, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব–এই সবকিছু মিলিয়ে মহাসংকটের মুখে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। অথচ গত কয়েক দিনে দেশের গণমাধ্যমে দেখেছি, ঢাকার বাইরের অনেক হাসপাতালেই দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের এলাকার হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। এতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। হাসপাতালে অর্ধেক জনবল নেই। ডাক্তারের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে ফার্মাসিস্টরা রোগী দেখছেন। এটি শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার খণ্ডচিত্র নয়; এ যেন দেশের অধিকাংশ মফস্বল শহর হাসপাতালগুলোর করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কথা নতুন করে নাই-বা বললাম। চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয় নিয়ে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির কথা কে না জানে! এই দুর্নীতির বাইরেও আনুমানিক ১৮০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির যে খবর বেরিয়েছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভালো স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে দক্ষ ও পারদর্শী স্বাস্থ্যকর্মীর বিকল্প নেই। কারণ, যোগ্য ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ না দেওয়া গেলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে বাধ্য। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে যদি এখানেও ঘুষ-বাণিজ্য চলে, তাহলে এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কী হতে পারে? স্বাস্থ্য খাতের কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন কিছু মানুষকে পদায়ন করা হয়েছে যে, তাঁদের অতিরিক্ত অর্থলিপ্সা ও নিম্ন মানসিকতাপূর্ণ কার্যকলাপ দেশে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরিস্থিতি মনে হয় সেদিকেই যাচ্ছে। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে, সাংসদদের জোরালো দাবি যেভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। করোনার এই দুর্যোগকালে আমাদের দরকার একজন দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সম্মুখযুদ্ধের যোদ্ধা, যিনি এই কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম। ভেবে অবাক হই, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে, নিজের কর্মদক্ষতার এত ঘাটতি নিয়ে, দুর্নাম কামিয়ে, চারদিকের এত এত সমালোচনার মুখেও মানুষ কীভাবে স্বাভাবিক থাকতে পারে?
নিবন্ধের শুরুতেই তুঘলকি কাণ্ডের ইতিবৃত্ত নিয়ে কথা বলেছি। লেখার শেষ প্রান্তে এসে সে প্রসঙ্গেই না হয় ফিরে যাওয়া যাক। যে শাসকের কর্মকাণ্ডের কথা আমি উল্লেখ করেছি, সেই মুহম্মদ বিন তুঘলকের ন্যায়পরায়ণতার অনেক উদাহরণও আছে ইতিহাসে। কথিত আছে, একদিন তিনি এক জঙ্গলে পশু শিকার করতে গিয়ে ভুলক্রমে আঘাত করে বসেন এক দরিদ্র কৃষকের সন্তানকে। শিকার শেষে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় লজ্জিত ও অনুশোচিত প্রচণ্ড প্রতাপশালী সুলতান কাজির কাছে গেলেন এবং নিজের দোষ স্বীকার করে কাজিকে অনুরোধ করলেন, তাঁকেও যেন অন্য সবার মতো বিচার করা হয়। এরপর কাজি অনুরোধ রক্ষা করতে সেই কৃষকের সন্তানের হাতে চাবুক তুলে দিলেন সুলতানকে আঘাত করার জন্য।
দুর্দান্ত সেই সুলতান কাজির দেওয়া সাজা মাথা পেতে নিলেন। সুলতান নানাবিধ তুঘলকি কাণ্ড ঘটালেও তিনি যে ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, সে কথা তো জানলাম। কিন্তু আমাদের যাঁরা নিয়মিত বিরতিতে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কতটুকু ন্যায়-অন্যায় কাজের বিবেচনাবোধ কাজ করে, তা একটি বড় প্রশ্নই বটে। আমরা বর্তমানে দেশে, এমন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি–কোনটা ন্যায় এবং কোনটা অন্যায়–তার পার্থক্য করতে ভুলে যাচ্ছি। মুহম্মদ বিন তুঘলকের মতো তুঘলকি কাণ্ড ঘটালেও সুলতান এবং আমাদের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমাদের দেহাবরণ এতই পুরু যে, বিরতিহীন এসব অন্যায় কাজ করেও সুলতানের মতো লজ্জা বা অনুশোচনা আমাদের দেহাভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে