আমীন আল রশীদ
হৃদয় স্পর্শ করা একটি রিপোর্টের শিরোনাম: ‘অভাব টান দিয়েছে ঘরের আসবাবে’। সংবাদটি ছাপা হয় ৬ জুলাই আজকের পত্রিকায়।
খবরটি চিত্রশিল্পী নাজির হোসেনকে নিয়ে। নাজির শাহবাগ, চারুকলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। সব সময় টি-শার্ট পরেন। মাথায় বাংলাদেশের পতাকার প্রতিকৃতি পেঁচিয়ে রাখেন।
নাজির মূলত একজন পটুয়া, মানে পটচিত্র আঁকেন। বিষয় হিসেবে বাঘ তাঁর পছন্দ। এ কারণে অনেকে তাঁকে ‘টাইগার নাজির’ বলেও ডাকেন।
ছবি বিক্রি করে অনেকেই সচ্ছল। অনেকের একটি ছবি কয়েক লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। কিন্তু নাজির হোসেন এখনো সেই মাপের শিল্পী নন। চারুকলার সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি বিক্রি করেন। কিছু গ্যালারিতে তাঁর ছবি আছে বটে। স্ত্রীও একটা স্কুলে পড়াতেন। সব মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু করোনা এলোমেলো করে দিয়েছে তাঁদের জীবন। খবরে বলা হচ্ছে, রাজধানীর যে বাসায় নাজির থাকেন, সেখানে তিন মাসের ভাড়া বকেয়া। আয় বন্ধ। কিন্তু পাকস্থলী সেটা বোঝে না। বাড়ির মালিকের কাছেও এই অজুহাতের কোনো অর্থ নেই। তাহলে নাজির কী করবেন? আসবাব বিক্রি করে দিচ্ছেন। নিজের আঁকা ছবি, সংগ্রহ করা বই ও ক্যাটালগগুলো বিক্রি করে দিতে চান। লকডাউন উঠলেই স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে দেবেন নিজের শহর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সেখানেও ভাড়া বাসায় থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকার চেয়ে সেখানে ভাড়া কম। সব ঠিক হয়ে গেলে আবার ঢাকায় ফিরবেন। সবকিছু কবে ঠিক হবে, তা কেউ জানে?
গত মাসের ১ জুন দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল:` ঘরে খাবারের কষ্ট, রাজশাহীতে ফ্রিল্যান্সারের লাশ উদ্ধার'। খবরে বলা হয়, এক মাসের মধ্যে টাকা না পেলে একযোগে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন কথিত আউটসোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার প্রায় চার হাজার ফ্রিল্যান্সার। এই ঘোষণার আড়াই মাসের মাথায় সত্যিই আত্মহত্যা করলেন রাজশাহীর এক ভুক্তভোগী। মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে দেশবাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এতে বলেছেন: ‘তিন মাস থেকে আমার ঘরে খাবারের কষ্ট। আমার বউ অনেক কষ্টে খাবার জোগাড় করতেছে। কথাগুলো লিখতে লিখতে অনেক কাঁদলাম।’
এ রকম প্রতারণার শিকার বা শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা ঠিক কত, যাঁরা এই করোনাকালে নানাভাবে ভিকটিম হয়েছেন? কত শত মানুষ এ রকম টেনশনে আছেন? তাঁদের টেনশন দূর করতে রাষ্ট্রের কি কোনো দায় নেই? যে দেশ কৃষিপণ্য ও মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বের রোল মডেল; করোনার মতো মহামারির মধ্যেও যে দেশের অর্থনীতির চাকা খুব বেশি শ্লথ হয়নি বলে দাবি করা হয়, সেই দেশে কোনো মানুষকে খাবারের কষ্টে কেন মরে যেতে হবে?
খুব গর্বের সঙ্গে আমরা বলতে শুনি, বাংলাদেশে এখন আর কেউ না খেয়ে থাকে না। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এসে যদি একজনকেও খাবারের কষ্টে আত্মহত্যা করতে হয়, সেটি শুধু দুঃখজনকই নয়; বরং রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কাও বটে। অতএব রাষ্ট্রকে নির্মোহ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে, পরিসংখ্যান আর বাস্তবের ফারাকগুলো কোথায়। ফারাক ও অসংগতিগুলো মেনে নিতে হবে। যদি করোনার কারণে সত্যিই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিঃসংকোচে সেটি মেনে নিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়নে সুস্পষ্ট, দীর্ঘমেয়াদি ও জনবান্ধব পরিকল্পনা নিতে হবে। বাস্তবতা অস্বীকারের মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
গত ৬ জুলাই প্রথম আলোয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন লিখেছেন, আক্রান্ত ও মৃত্যু যে হারে বাড়ছে, তাতে এটা বোঝা যাচ্ছে, করোনার সঙ্গে আমাদের আরও অনেক দিন বসবাস করতে হবে। ভবিষ্যতে করোনার আরও ঢেউ আসবে। আবারও বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। বারবার এমন বিধিনিষেধের একটা অর্থনৈতিক প্রভাব থাকবেই। জনগণ আয় হারাবে। নতুন করে আবার অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। অর্থনীতির গতি শ্লথ হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, যাঁরা এ রকম নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন, তাঁদের একটা বড় অংশই বিদেশফেরত। তাঁদের অনেকে করোনার আগে দেশে এসে আর যেতে পারেননি। অনেকে করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। কিছুদিন আগেও যাঁদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল, যে মানুষটি ভারী লাগেজ নিয়ে বাড়িতে এলে তাঁকে দেখার জন্য আত্মীয়-পরিজন ভিড় কতে; যাঁর কাছ থেকে আর না হলেও একটি পারফিউম উপহার পাওয়া যেত, সেই মানুষটির ঘরে এখন অভাব কড়া নাড়ছে।
বিদেশফেরতেরা যে খুব বেশি টাকাপয়সা নিয়ে আসতে পেরেছেন, তা-ও নয়। আবার যা এনেছিলেন, অধিকাংশেরই হয়তো ফুরিয়ে গেছে। অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এবং আবার বিদেশে গিয়ে কাজ করতে না পারলে বা দেশে কোনো কাজ বা ব্যবসা শুরু করতে না পারলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আন্দাজ করাও কঠিন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আয়ের কোনো উৎস নেই দেশে ফেরা ৮৭ শতাংশ প্রবাসীর। দেশে ফিরে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি ৯১ শতাংশ। জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ৫২ শতাংশের। প্রশ্ন হলো, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের’ এই দুঃসময়ে রাষ্ট্র কি তাঁদের পাশে ঠিকঠাক দাঁড়াতে পেরেছে?
এ রকম একটি সংকটের কালে রাষ্ট্রকে যথেষ্ট মানবিক, দূরদর্শী ও নিরপেক্ষ হতে হয়। কে কাকে ভোট দিয়েছেন, কে কোন পন্থী, কার বাড়ি কোথায়, কার পূর্বপুরুষ কোন দল করতেন—মহামারিকালে এসব সমীকরণ চলে না। মহামারিকালে সবাই অভিন্ন। আজ যিনি মধ্যবিত্ত, কাল হয়তো তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে। সুতরাং এ রকম কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলায় যে ধরনের জনবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা থাকা দরকার, সেটি বর্তমান আছে কি না, তার নির্মোহ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আবার অনেক জনবান্ধব পরিকল্পনাও মাঠে মারা যায় বাস্তবায়নকারীদের অদক্ষতা ও অসততার কারণে, যার সবশেষ উদাহরণ দেশের বিভিন্ন স্থানে হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ করায় অনেক ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে, যার ছবি এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
রাষ্ট্রের অনেক ভালো উদ্যোগ কীভাবে ভেস্তে যায়, তার আরও অনেক উদাহরণ আছে। প্রতিটি প্রকল্পে যে টাকা বরাদ্দ থাকে, তার কত শতাংশ খরচ হয়; নির্মাণকাজে যে মানের এবং যে পরিমাণের জিনিস দেওয়ার কথা, তার কতটুকু দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। অবশ্য এসব প্রশ্ন করে খুব একটা লাভ হয় না। কারণ, এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদার এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই ভাগ-বাঁটোয়ারার অংশীদার। কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?
এটি সামগ্রিকভাবে সুশাসনের প্রশ্ন। করোনা যতই আঘাত হানুক, সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে যেকোনো সংকট মোকাবিলা করা সহজ। কিন্তু এখানে ঘাটতি থাকলে করোনা চলে গেলেও রাষ্ট্র মানবিক হবে না। অন্যায় বন্ধ হবে না। স্বাধীনতার অন্যতম যে চেতনা সামাজিক সাম্য, সেটি প্রতিষ্ঠিত হবে না। সেটি না হলে নাজির হোসেনের মতো একজন শিল্পীকেও ঘরের আসবাব বেচে দিয়ে বউ-বাচ্চাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর ‘সবকিছু ঠিকঠাক’ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক
হৃদয় স্পর্শ করা একটি রিপোর্টের শিরোনাম: ‘অভাব টান দিয়েছে ঘরের আসবাবে’। সংবাদটি ছাপা হয় ৬ জুলাই আজকের পত্রিকায়।
খবরটি চিত্রশিল্পী নাজির হোসেনকে নিয়ে। নাজির শাহবাগ, চারুকলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। সব সময় টি-শার্ট পরেন। মাথায় বাংলাদেশের পতাকার প্রতিকৃতি পেঁচিয়ে রাখেন।
নাজির মূলত একজন পটুয়া, মানে পটচিত্র আঁকেন। বিষয় হিসেবে বাঘ তাঁর পছন্দ। এ কারণে অনেকে তাঁকে ‘টাইগার নাজির’ বলেও ডাকেন।
ছবি বিক্রি করে অনেকেই সচ্ছল। অনেকের একটি ছবি কয়েক লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। কিন্তু নাজির হোসেন এখনো সেই মাপের শিল্পী নন। চারুকলার সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি বিক্রি করেন। কিছু গ্যালারিতে তাঁর ছবি আছে বটে। স্ত্রীও একটা স্কুলে পড়াতেন। সব মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু করোনা এলোমেলো করে দিয়েছে তাঁদের জীবন। খবরে বলা হচ্ছে, রাজধানীর যে বাসায় নাজির থাকেন, সেখানে তিন মাসের ভাড়া বকেয়া। আয় বন্ধ। কিন্তু পাকস্থলী সেটা বোঝে না। বাড়ির মালিকের কাছেও এই অজুহাতের কোনো অর্থ নেই। তাহলে নাজির কী করবেন? আসবাব বিক্রি করে দিচ্ছেন। নিজের আঁকা ছবি, সংগ্রহ করা বই ও ক্যাটালগগুলো বিক্রি করে দিতে চান। লকডাউন উঠলেই স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে দেবেন নিজের শহর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সেখানেও ভাড়া বাসায় থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকার চেয়ে সেখানে ভাড়া কম। সব ঠিক হয়ে গেলে আবার ঢাকায় ফিরবেন। সবকিছু কবে ঠিক হবে, তা কেউ জানে?
গত মাসের ১ জুন দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল:` ঘরে খাবারের কষ্ট, রাজশাহীতে ফ্রিল্যান্সারের লাশ উদ্ধার'। খবরে বলা হয়, এক মাসের মধ্যে টাকা না পেলে একযোগে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন কথিত আউটসোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার প্রায় চার হাজার ফ্রিল্যান্সার। এই ঘোষণার আড়াই মাসের মাথায় সত্যিই আত্মহত্যা করলেন রাজশাহীর এক ভুক্তভোগী। মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে দেশবাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এতে বলেছেন: ‘তিন মাস থেকে আমার ঘরে খাবারের কষ্ট। আমার বউ অনেক কষ্টে খাবার জোগাড় করতেছে। কথাগুলো লিখতে লিখতে অনেক কাঁদলাম।’
এ রকম প্রতারণার শিকার বা শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা ঠিক কত, যাঁরা এই করোনাকালে নানাভাবে ভিকটিম হয়েছেন? কত শত মানুষ এ রকম টেনশনে আছেন? তাঁদের টেনশন দূর করতে রাষ্ট্রের কি কোনো দায় নেই? যে দেশ কৃষিপণ্য ও মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বের রোল মডেল; করোনার মতো মহামারির মধ্যেও যে দেশের অর্থনীতির চাকা খুব বেশি শ্লথ হয়নি বলে দাবি করা হয়, সেই দেশে কোনো মানুষকে খাবারের কষ্টে কেন মরে যেতে হবে?
খুব গর্বের সঙ্গে আমরা বলতে শুনি, বাংলাদেশে এখন আর কেউ না খেয়ে থাকে না। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এসে যদি একজনকেও খাবারের কষ্টে আত্মহত্যা করতে হয়, সেটি শুধু দুঃখজনকই নয়; বরং রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কাও বটে। অতএব রাষ্ট্রকে নির্মোহ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে, পরিসংখ্যান আর বাস্তবের ফারাকগুলো কোথায়। ফারাক ও অসংগতিগুলো মেনে নিতে হবে। যদি করোনার কারণে সত্যিই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিঃসংকোচে সেটি মেনে নিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়নে সুস্পষ্ট, দীর্ঘমেয়াদি ও জনবান্ধব পরিকল্পনা নিতে হবে। বাস্তবতা অস্বীকারের মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
গত ৬ জুলাই প্রথম আলোয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন লিখেছেন, আক্রান্ত ও মৃত্যু যে হারে বাড়ছে, তাতে এটা বোঝা যাচ্ছে, করোনার সঙ্গে আমাদের আরও অনেক দিন বসবাস করতে হবে। ভবিষ্যতে করোনার আরও ঢেউ আসবে। আবারও বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। বারবার এমন বিধিনিষেধের একটা অর্থনৈতিক প্রভাব থাকবেই। জনগণ আয় হারাবে। নতুন করে আবার অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। অর্থনীতির গতি শ্লথ হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, যাঁরা এ রকম নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন, তাঁদের একটা বড় অংশই বিদেশফেরত। তাঁদের অনেকে করোনার আগে দেশে এসে আর যেতে পারেননি। অনেকে করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। কিছুদিন আগেও যাঁদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল, যে মানুষটি ভারী লাগেজ নিয়ে বাড়িতে এলে তাঁকে দেখার জন্য আত্মীয়-পরিজন ভিড় কতে; যাঁর কাছ থেকে আর না হলেও একটি পারফিউম উপহার পাওয়া যেত, সেই মানুষটির ঘরে এখন অভাব কড়া নাড়ছে।
বিদেশফেরতেরা যে খুব বেশি টাকাপয়সা নিয়ে আসতে পেরেছেন, তা-ও নয়। আবার যা এনেছিলেন, অধিকাংশেরই হয়তো ফুরিয়ে গেছে। অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এবং আবার বিদেশে গিয়ে কাজ করতে না পারলে বা দেশে কোনো কাজ বা ব্যবসা শুরু করতে না পারলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আন্দাজ করাও কঠিন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আয়ের কোনো উৎস নেই দেশে ফেরা ৮৭ শতাংশ প্রবাসীর। দেশে ফিরে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি ৯১ শতাংশ। জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ৫২ শতাংশের। প্রশ্ন হলো, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের’ এই দুঃসময়ে রাষ্ট্র কি তাঁদের পাশে ঠিকঠাক দাঁড়াতে পেরেছে?
এ রকম একটি সংকটের কালে রাষ্ট্রকে যথেষ্ট মানবিক, দূরদর্শী ও নিরপেক্ষ হতে হয়। কে কাকে ভোট দিয়েছেন, কে কোন পন্থী, কার বাড়ি কোথায়, কার পূর্বপুরুষ কোন দল করতেন—মহামারিকালে এসব সমীকরণ চলে না। মহামারিকালে সবাই অভিন্ন। আজ যিনি মধ্যবিত্ত, কাল হয়তো তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে। সুতরাং এ রকম কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলায় যে ধরনের জনবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা থাকা দরকার, সেটি বর্তমান আছে কি না, তার নির্মোহ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আবার অনেক জনবান্ধব পরিকল্পনাও মাঠে মারা যায় বাস্তবায়নকারীদের অদক্ষতা ও অসততার কারণে, যার সবশেষ উদাহরণ দেশের বিভিন্ন স্থানে হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ করায় অনেক ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে, যার ছবি এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
রাষ্ট্রের অনেক ভালো উদ্যোগ কীভাবে ভেস্তে যায়, তার আরও অনেক উদাহরণ আছে। প্রতিটি প্রকল্পে যে টাকা বরাদ্দ থাকে, তার কত শতাংশ খরচ হয়; নির্মাণকাজে যে মানের এবং যে পরিমাণের জিনিস দেওয়ার কথা, তার কতটুকু দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। অবশ্য এসব প্রশ্ন করে খুব একটা লাভ হয় না। কারণ, এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদার এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই ভাগ-বাঁটোয়ারার অংশীদার। কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?
এটি সামগ্রিকভাবে সুশাসনের প্রশ্ন। করোনা যতই আঘাত হানুক, সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে যেকোনো সংকট মোকাবিলা করা সহজ। কিন্তু এখানে ঘাটতি থাকলে করোনা চলে গেলেও রাষ্ট্র মানবিক হবে না। অন্যায় বন্ধ হবে না। স্বাধীনতার অন্যতম যে চেতনা সামাজিক সাম্য, সেটি প্রতিষ্ঠিত হবে না। সেটি না হলে নাজির হোসেনের মতো একজন শিল্পীকেও ঘরের আসবাব বেচে দিয়ে বউ-বাচ্চাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর ‘সবকিছু ঠিকঠাক’ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে